ঝাড়খন্ডী উপভাষার বৈশিষ্ট্য 2023
ভাষা ও উপভাষা
১) ভাষা কাকে বলে?
উঃ) মানুষের বাগযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত অর্থবহ ধ্বনি সমষ্টি, যার দ্বারা কোন গোষ্ঠীর মানুষেরা, নিজেদের মধ্যে ভাব বিনিময় করে, তাকে ভাষা বলে।
ভাষার অন্য সংজ্ঞা- ভাষা হল মানুষের উচ্চারিত প্রণালী-বদ্ধ ধ্বনি সংকেত, যা দিয়ে এক একটি বিশিষ্ট সমাজ, পরস্পরের সঙ্গে ভাব বিনিময় করতে পারে। ঝাড়খন্ডী উপভাষার বৈশিষ্ট্য 2023
২) উপভাষা কাকে বলে? ঝাড়খন্ডী উপভাষার বৈশিষ্ট্য 2023
উঃ) মূল বা প্রধান ভাষার আঞ্চলিক রূপই হল উপভাষা। অর্থাৎ যখন একটি ভাষা, বিরাট ভৌগোলিক অঞ্চল জুড়ে প্রচলিত থাকে, তখন ওই ভাষার অঞ্চল ভেদে যে পার্থক্য থাকে, তাকে উপভাষা বলে। ঝাড়খন্ডী উপভাষা ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য 2023
৩) ভাষার রূপ কটি এবং কি কি?
উঃ) ভাষার রূপ দুটি যথা ১) আদর্শ রুপ বা সাহিত্যিক রূপ (সাধু) ২) কথ্যরূপ বা উপভাষা (চলিত ভাষা)
৪) আঞ্চলিক উপভাষা কাকে বলে? ঝাড়খন্ডী উপভাষার বৈশিষ্ট্য 2023
উঃ) ভাষার মধ্যে যে আঞ্চলিক পার্থক্য থাকে, তাকে আঞ্চলিক উপভাষা বলে। ঝাড়খন্ডী উপভাষার বৈশিষ্ট্য 2023
৫) বাংলা ভাষায় প্রচলিত উপভাষা গুলো কি কি?
উঃ) বাংলা ভাষায় প্রচলিত উপভাষা পাঁচটি যথা (১) রাঢ়ী উপভাষা (২) ঝাড়খন্ডী উপভাষা (৩) বরেন্দ্রী উপভাষা (৪) বঙ্গালি উপভাষা (৫) কামরূপী উপভাষা।
৬) বিভাষা কাকে বলে বা sub-dialect বলতে কী বোঝো?
উঃ সুকুমার সেন এর মতে- এক একটি উপভাষার মধ্যেও যে নানা আঞ্চলিক রূপভেদ গড়ে ওঠে তাকে বিভাষা বলে। অথবা- এক ব্যক্তির ভাষার সঙ্গে আরেক ব্যক্তির ভাষার মধ্যে যে বৈচিত্র বা ফারাক থাকে তাকে বিভাষা বলে।
৭) রাঢ়ী উপভাষা কোন কোন অঞ্চলে প্রচলিত? এই উপভাষার দুটি বৈশিষ্ট্য লেখ। অথবা- তুমি কোন উপভাষা অঞ্চলে বসবাস করো? সেই উপভাষার দুটি বৈশিষ্ট্য লেখ? ঝাড়খন্ডী উপভাষার বৈশিষ্ট্য 2023
উঃ) রাঢ়ী উপভাষা মূলত বর্ধমান, হাওড়া, হুগলি, বীরভূম, কলকাতা, বাঁকুড়া (পুর্ব) নদীয়া, ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ ইত্যাদি অঞ্চলে প্রচলিত উপভাষা,
রাঢ়ী উপভাষার দুটি বৈশিষ্ট্য:–
১) রাঢ়ী উপভাষার একটি অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল অভিশ্রুতি। অভিশ্রুতি এই উপভাষার মূল বৈশিষ্ট্য। যেমন, করিয়া> কইরা> বলিয়া>বইল্যা> বলে।
অভিশ্রুতি- অপিনিহিত জাত ই কার বা উ কার ঠিক পূর্ববর্তী স্বরের সঙ্গে মিশে যায় এবং পরবর্তী স্বরকে পরিবর্তন করে অর্থাৎ ই এবং উ কার যখন পাশাপাশি স্বরকে প্রভাবিত করে, নিজেও তার সঙ্গে মিশে পরিবর্তিত হয়ে যায় তখন তাকে অভিশ্রুতি বলে। যেমন- কালি>কাইল>কাল, রাতি>রাইত>রাত।
২) রাঢ়ী উপভাষায় স্বরসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়। যেমন, পূজা> পূজো দেশি> দিশি
স্বরসঙ্গতি- স্বরসঙ্গতি হল শব্দের মধ্যে অবস্থিত স্বর ধ্বনির সঙ্গতি বিধান অর্থাৎ একটি স্বর ধ্বনির প্রভাবে শব্দের অন্য স্বরধ্বনি পরিবর্তিত হওয়াই স্বরসঙ্গতি।
অথবা– পাশাপাশি অবস্থিত দুটি স্বরধ্বনি একে অপরকে প্রভাবিত করে বা উভয়ই প্রভাবিত হয়ে, স্বরধ্বনির মধ্যে যে সঙ্গতি বিধান হয় বা স্বরধ্বনির যে পরিবর্তন হয়, তাকে স্বরসঙ্গতি বলে।
স্বরসঙ্গতি তিনটি পর্যায় সম্পন্ন হয় যথা- প্রগত, পরাগত, মধ্যগত, এবং অন্যোন্য
একটি স্বরধ্বনির প্রভাবে শব্দের অন্য স্বরধ্বনি পরিবর্তিত হওয়াই স্বরসঙ্গতি।
স্বরসঙ্গতি উদাহরণ:–
জুতা > জুতো
বিনা > বিনি
মুলা > মুলো ঝাড়খন্ডী উপভাষার বৈশিষ্ট্য 2023
শুনা > শোনা
এছাড়াও, রাঢ়ী উপভাষার আরো কিছু বৈশিষ্ট্য:– ঝাড়খন্ডী উপভাষার বৈশিষ্ট্য 2023
১) রাঢ়ী উপভাষায় অনেক সময় অ স্থানে ও উচ্চারিত হয়। যেমন- মত> মতো, হল> হলো, কর> করো, বল> বলো, ইত্যাদি।
২) রাঢ়ী উপভাষায় নাসিক্যী ভবনের আধিক্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন- চন্দ্র> চাঁদ, বন্ধ> বাঁধ ইত্যাদি।
রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য:– ঝাড়খন্ডী উপভাষার বৈশিষ্ট্য 2023
১) রাঢ়ী উপভাষার সকর্ম ক্রিয়ার দুটি কর্ম থাকে। যথা গৌণ কর্ম এবং মুখ্য কর্ম
২) বহুবচনে অনেক সময় “দের” প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়। যেমন- আমাদের, তোমাদের, লোকেদের, তাদের, ইত্যাদি।
৩) অধিকরণ কারকে এ, তে বিভক্তি লক্ষ্য করা যায়। যেমন- বাড়িতে বাবা নেই। ছেলেটির ঘরে বাস নেই।
নিদর্শন:- “শিক্ষক মহাশয় ছাত্রকে ডেকে বললেন, তুমি পড়া করে এসেছো? ছাত্র বললো, হ্যাঁ আমি পড়ে এসেছি। শিক্ষক মশাই বললেন, ঠিক আছে, তাহলে পড়া বল। ছাত্র পড়া বলল।“
৩) ঝাড়খন্ডী উপভাষা কোন কোন অঞ্চলে প্রচলিত ঝাড়খন্ডী উপভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক এবং রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য লেখ।ঝাড়খন্ডী উপভাষার বৈশিষ্ট্য 2023
উঃ) ঝাড়খন্ডী উপভাষা মূলত মেদিনীপুর (দঃ,পঃ) পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, সিংভূম, মানভূম, ধলভূম প্রভৃতি অঞ্চলে প্রচলিত।
ঝাড়খন্ডী বৈশিষ্ট্য:–
ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য:– ঝাড়খন্ডী উপভাষার বৈশিষ্ট্য 2023
১) ‘ও’-কার লুপ্ত হয়ে ‘অ’-কারে পরিণত হয়েছে।যেমন- লোক >লক, লোটা >লটা, ভালো >ভাল, করো >কর।
২) আনুনাসিক ধ্বনির বহুল ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। যেমন- হাসপাতাল> হাঁসপাতাল, চা>চাঁ ঝাড়খন্ডী উপভাষার বৈশিষ্ট্য 2023
রূপতাত্তিক বৈশিষ্ট্য:–
১) ক্রিয়াপদে স্বার্থিক ‘ক’ প্রত্যয়ের প্রচুর প্রয়োগ।যেমন- যাবেক নাই, খাবেক নাই, করবেক নাই।
২) “আজ” ধাতুর বদলে “বট” ধাতুর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। যেমন- কে বটে আপনি? করি বটে, তোমার নাম কি বটে?
নিদর্শন:-“শিক্ষক মশাই ছাত্রটাকে ডেকে বল্লেক, কই হে, পড়াটা করাছ বটে? ছাত্র বল্লেক, হুঁ আমি পড় আইছি বটে। শিক্ষক বল্লেক, ঠিকই বটে, তাইলে পড়াটা বল কেনে। ছাত্র পড়াটা বল্লেক।
আরও পড়ুন
সমাস কাকে বলে ও তার শ্রণিবিভাগ
৪) বরেন্দ্রী উপভাষার বৈশিষ্ট্য
ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য:- ঝাড়খন্ডী উপভাষার বৈশিষ্ট্য 2023
১) অ এর স্থানে র এর আগমন লক্ষ্য করা যায় যেমন- আম>রাম,
২) যেখানে র থাকে, সেখানে র লোপ পায়।যেমন- রস> অস,
রূপতাত্তিক বৈশিষ্ট্য:-
১) গৌন কর্মে ক বিভক্তি লক্ষ্য করা যায়। যেমন- আমাকে> হামাক, তোর>তক বাবাকে > বাবাক,
২) অধিকরণ কারকে ত বিভক্তি লক্ষ্য করা যায়।যেমন – বাড়ি> বাড়িত , জলে>জলত ঝাড়খন্ডী উপভাষার বৈশিষ্ট্য 2023
নিদর্শন:– “শিক্ষক মশাই ছাত্রটাক্ ডেকে কহলে, তুমি পড়া করে আছো? ছাত্র কহলে, হ হামি পড়া করে আলুম। শিক্ষক মশাই কহলে, ত পড়াটা বল। ছাত্র পড়াটা কহল।
৫) কামরূপী উপভাষা কোন কোন অঞ্চলে প্রচলিত? কামরূপী উপভাষার বৈশিষ্ট্য গুলি সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উঃ কামরূপী উপভাষা মূলত জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, দার্জিলিং, শ্রীহট্ট, কাছাড়, রংপুর, ত্রিপুরা, উত্তর দিনাজপুর ইত্যাদি অঞ্চলে প্রচলিত।
কামরূপী উপভাষার বৈশিষ্ট্য
ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য:-
১) ন ধ্বনি ল ধ্বনিতে পরিনত হয় অথবা ন এবং ল ধ্বনির বিপর্যয় হয়।যেমন- নীল>লীন, লাঙ্গল> নাঙল,
২) কামরূপী উপভাষায় ‘চ’ জায়গায় ‘ৎস’ উচ্চারণ লক্ষ্য করা যায়। যেমন- বচসা> বৎসা,
৩) ‘ছ’ এর জায়গায় ‘স’ উচ্চারণ কামরূপী উপভাষায় লক্ষ্য করা যায়। যেমন- ছাগল> সাগল, পাছে>পাসে।
৪) কামরূপী উপভাষায় অনেক সময় দেখা যায়, শ, ষ, স-এর উচ্চারণ ‘হ’ হয়। যেমন- শাক> হাগ, সাল> হাল।
রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য:– ঝাড়খন্ডী উপভাষার বৈশিষ্ট্য 2023
১) অতীতকাল বাচক ক্রিয়াপদের ‘ল’ প্রত্যয় কামরূপী উপভাষায় দেখা যায়। যেমন- কইল, আইল, জিগাইল ইত্যাদি।
২) কর্মকারকে ‘রে’ বিভক্তির ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। যেমন- তারে, চাকররে ইত্যাদি।
৩) কামরূপী উপভাষার অধিকরণ কারকে ‘ত’ বিভক্তি লক্ষ্য করা যায়। যেমন- বাড়ি>বাড়িত, জলে>জলত ইত্যাদি
নিদর্শন:– হিক্ষক মহাই সাত্ররে ডেকেয়া পুছ করিল্, তুমি পড়াগুলা করিস? তায় ছাত্র কৈল্, হূ আমি পড় আছেচি। হিক্ষক মহাই কৈল্, ঠিক আসে, তাইলে পড়া বইল। ছাত্র পড়া কৈল।“
১) বাংলা ভাষায় মান্য উপভাষা কোনটি এবং কেন সেই উপভাষা মান্য ভাষার মর্যাদা পেয়েছে?
অথবা- বাংলা ভাষায় মান্যচলিত ভাষা কোনটি এবং কেন?
অথবা- বাংলা ভাষায় আদর্শ ভাষা কোনটি এবং কেন? ঝাড়খন্ডী উপভাষার বৈশিষ্ট্য 2023
উঃ) বাংলা ভাষায় প্রচলিত উপভাষা পাঁচটি। যথা- রাঢ়ী উপভাষা, ঝাড়খন্ডী উপভাষা, বরেন্দ্রী উপভাষা, বঙ্গালি উপভাষা এবং কামরূপী উপভাষা। এই পাঁচটি প্রচলিত উপভাষার মধ্যে আদর্শ চলিত মান্য ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে রাঢ়ী উপভাষাকে। রাঢ়ী উপভাষাকে কেন আদর্শ বাংলা ভাষা বা চলিত মান্য ভাষায় মর্যাদা লাভ করেছে? সেই বিষয়ে আলোচনা করার আগে, আদর্শ মান্য ভাষা কাকে বলে- এই বিষয়ে আলোকপাত করা প্রয়োজন।
আদর্শ মান্য উপভাষা বা আদর্শ চলিত ভাষা:-ঝাড়খন্ডী উপভাষার বৈশিষ্ট্য 2023
সাধারণত কোন অঞ্চলে অনেকগুলি উপভাষা প্রচলিত থাকলে, সেই অঞ্চলে, যে কোন একটি উপভাষা, আদর্শ মান্য ভাষায় মর্যাদা লাভ করে এবং সেই উপভাষায় সেই অঞ্চলের সমস্ত কাজকর্ম সম্পন্ন হয়। অর্থাৎ যে উপভাষাকে কেন্দ্র করে, ওই অঞ্চলের সমস্ত উপভাষাগুলি কেন্দ্রীভূত হয় এবং প্রতিটি মানুষ উক্ত ভাষাকে মেনে চলে- তাকে সাধারণত আদর্শ উপভাষা বা মান্য উপভাষা বলা হয়। বাংলা ভাষায় মান্য উপভাষার মর্যাদা বা আদর্শ ভাষার মর্যাদা মর্যাদা লাভ করেছে, রাঢ়ী উপভাষা। বাংলা ভাষায় অনেক উপভাষা থাকা সত্ত্বেও রাঢ়ী উপভাষা, প্রতিটা অঞ্চলে মান্যতা পেয়েছে। অর্থাৎ রাঢ়ী উপভাষায় বাংলা ভাষার সমস্ত কাজকর্ম চলে।
এখন দেখে নেওয়া যাক, আদর্শ মান্য উপভাষা থাকার প্রয়োজনীয়তা কি বা কেন আদর্শ মান্য ভাষার প্রয়োজন অর্থাৎ একটি উপভাষাকে আদর্শ মান্য ভাষায় মর্যাদা দেওয়ার তাৎপর্য হল:–
১) সেই অঞ্চলের সমস্ত সরকারি কাজকর্ম, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, সরকারি প্রকল্প রচনা, প্রভৃতি- এই মান্য উপভাষায় ব্যবহৃত হয়। যাতে সকল উপভাষা ব্যবহারকারী মানুষ সহজে বুঝতে পারে। ঝাড়খন্ডী উপভাষার বৈশিষ্ট্য 2023
২) উক্ত মান্য উপভাষাটি সাহিত্য রচনার আদর্শ ভাষা হবে অর্থাৎ লেখক এই মান্য উপভাষাটিকে কেন্দ্র করেই সাহিত্য রচনা করেন।
৩) আদর্শ মান্য উপভাষাকে কেন্দ্র করেই সেই ভাষার ব্যাকরণ রচিত হয় অর্থাৎ ব্যাকরণ, আদর্শ মান্য ভাষাকে কেন্দ্র করেই রচনা করা হয়।
৪) ইংরেজি থেকে বা অন্য ভাষা থেকে সেই ভাষায় রূপান্তর করতে গেলে, উক্ত অঞ্চলের মান্য ভাষাকে কেন্দ্র করেই অনুবাদ করা হয়। যেমন, ইংরেজি থেকে বাংলা ভাষায় অনুবাদ করতে গেলে, ইংরেজি থেকে রাঢ়ী উপভাষায় অনুবাদ করতে হয়।
৫) যেকোনো অঞ্চলে, নানা উপভাষা প্রচলন থাকলেও, যেহেতু যেকোনো একটি ভাষা আদর্শ মান্য ভাষায় মর্যাদা লাভ করে। তাই উক্ত অঞ্চলের মানুষ জনের দৈনন্দিন কাজ কর্মের কোন ব্যাঘাত ঘটে না। বা তাদের ভাষা সংক্রান্ত কোনো বিরোধ দেখা দেয় না।
এখন আমাদের দেখে নেওয়া প্রয়োজন যে, বাংলা ভাষায় প্রচলিত পাঁচটি উপভাষার মধ্যে রাঢ়ী উপভাষা কি কারনে আদর্শ চলিত বাংলা ভাষা বা মান্য ভাষার মর্যাদা লাভ করেছে:–
রাঢ়ী উপভাষা মূলত কলকাতা কেন্দ্রিক অর্থাৎ কলকাতার আশেপাশে অঞ্চল যথা হুগলী, হাওড়া, নদীয়া, ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান প্রভৃতি অঞ্চলে প্রচলিত। ঐতিহাসিক দিক থেকে এই অঞ্চলটি প্রাচীনকাল থেকেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনৈতিক দিক দিয়েও অনেক সমৃদ্ধ ছিল। তাই বহু অঞ্চলের মানুষ, এই অঞ্চলে যাতায়াত করতো। তাছাড়া ব্রিটিশ সরকারের আমলে, কলকাতা রাজধানী থাকার কারণেও মানুষ জনের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এই অঞ্চলে যাতায়াত ছিল। এর ফলে এই অঞ্চলের ব্যবহৃত ভাষা মানুষের আয়ত্তে চলে আসে।
তাছাড়া কলকাতা অঞ্চল যেহেতু বাঙালির সংস্কৃতির পীঠস্থান। তাই বাংলা ভাষা ভাষীর মানুষ কলকাতা অঞ্চল কেন্দ্রিক প্রচলিত ভাষার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। এই কারণে কলকাতা অঞ্চল কেন্দ্রিক প্রচলিত রাঢ়ী বাংলা উপভাষাটি, সকল বাংলা ভাষা-ভাষী মানুষের কাছে সহজে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে। তাই রাঢ়ি উপভাষাটি বর্তমানে আদর্শ মান্য বাংলা ভাষায় পরিণত হয়েছে।
সাহিত্য ভাষা: ঝাড়খন্ডী উপভাষার বৈশিষ্ট্য 2023
মানুষের মুখের ব্যবহৃত ভাষাই হল কথ্য উপভাষা বা মৌখিক ভাষা। সাহিত্য ভাষা হল সাহিত্যে ব্যবহৃত ভাষা। সাহিত্য ভাষা রচনার জন্য দু’রকম পদ্ধতি ব্যবহার হতে পারে যথা- পদ্য ভাষা এবং গদ্য ভাষা। বাংলা সাহিত্যে প্রাচীনকাল এবং মধ্যযুগ পর্যন্ত পদ্য ভাষাতেই সাহিত্য রচনা হয়ে এসেছে। পরবর্তীকালে উনিশ শতকের শুরু থেকে গদ্য ভাষায় সাহিত্য রচনার চল শুরু হয়। মূলত বিদ্যাসাগরের হাত ধরেই প্রকৃত গদ্য ভাষা রচনার সূত্রপাত হয়। তারপর থেকেই বঙ্কিমচন্দ্র সহ অনেক সাহিত্যিক প্রকৃষ্ট গদ্য ভাষায় সাহিত্য রচনা করেছেন। বাংলা সাহিত্যে গদ্য রচনার শুরুতে প্রায় সকল সাহিত্যিকই সংস্কৃতবহুল শব্দ ব্যবহার করে গদ্য রচনা করেছেন। সাধারণত এই সংস্কৃত বহুল গদ্য ভাষাকেই সাধু ভাষা বলা হয়। অর্থাৎ বাংলা ভাষায় দুই প্রকার ভাষা ব্যবহার হয়। যথা- চলিত ভাষা বা কথ্য ভাষা এবং সাধু ভাষা
সুতরাং সাহিত্যিক ভাষা দুটি যথা- পদ্য এবং গদ্য ভাষা। গদ্য ভাষা আবার দুইভাগে বিভক্ত যথা- সাধু ভাষা এবং চলিত ভাষা।
সাধু ভাষা:– সাধু ভাষা হল সাধু অর্থাৎ বিশিষ্ট জনের ব্যবহৃত ভাষা। সাধারণত সংস্কৃত বহুল শব্দ এবং ক্রিয়া পদের সম্পূর্ণ রূপের ব্যবহার যুক্ত ভাষাই হল সাধু ভাষা।
সাধু এবং চলিত ভাষার পার্থক্য:-ঝাড়খন্ডী উপভাষার বৈশিষ্ট্য 2023
১) সাধু ভাষায় সংস্কৃত বহুল তৎসম শব্দের ব্যবহার বেশি লক্ষ্য করা যায়। অন্যদিকে- চলিত ভাষায় তদ্ভব শব্দ, দেশি, বিদেশি শব্দের ব্যবহার বেশি।
২) সাধু ভাষায়, সাধারণত ক্রিয়া পদের সম্পূর্ণ রূপ ব্যবহার হয়। যেমন:- চলিতেছিল, বলিতেছেন, করিতেছিল, প্রভৃতি। কিন্তু চলিত ভাষায় ক্রিয়া পদের সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহার হয়। যেমন- করে, বলে, চলে ইত্যাদি।
৩) সাধু ভাষায়, সর্বনাম পদের ব্যবহার লক্ষণীয় সাধু ভাষায় সর্বনাম পদ সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার হয় যেমন তাহাদের আমাদিগের তাহাদিগের ইত্যাদি কিন্তু চলিত ভাষায় এই সর্বনাম পদগুলির সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহার হয় যেমন আমাদের তাদের তারা প্রভৃতি
৪) সাধু ভাষায়, সাধারণত, তৎসম অনুসর্গের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। যেমন- কর্তৃক, দ্বারা, প্রভৃতি। অন্যদিকে, চলিত ভাষায় তৎসম, তদ্ভব উভয় অনুসর্গের ব্যবহৃত হয়। যেমন- দিয়ে, জন্যে, থেকে প্রভৃতি।
৫) সাধু ভাষায়, সংস্কৃতের অব্যয়গুলি ব্যবহৃত একই থাকে। যেমন- যদ্যপি, তথাপি, প্রভৃতি। অন্যদিকে, চলিত ভাষায় সংস্কৃতের অব্যয়গুলির কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে ব্যবহৃত হয় যেমন- যদি, তবে, প্রভৃতি।
৬) সাধু ভাষায়, সাধারনত সমাসবদ্ধ-সন্ধিবদ্ধ পদের ব্যবহার বেশি লক্ষ্য করা যায়। অন্যদিকে, চলিত ভাষায়, সমাসবদ্ধ- সন্ধিবদ্ধ পদ অনেক কম ব্যবহৃত হয়।
সাধু থেকে চলিত ভাষায় রূপান্তর ঝাড়খন্ডী উপভাষার বৈশিষ্ট্য 2023
সাধু গদ্য-আজ আমাদিগকে পাঠশালায় যাইতে হইবে। পাঠশালায় গুরুমশাই আমাদিগকে বিশেষ পাঠদান করিবেন। তাই গুরুমশাই সকলকেই পাঠশালায় যাইতে বলিয়াছেন। তাই আমরা সকলেই পাঠশালায় যাইবার জন্য প্রস্তুত হইতেছি।
চলিত গদ্য- আজ আমাদের বিদ্যালয়ে যেতে হবে। বিদ্যালয়ে শিক্ষক মশাই আমাদের বিশেষ শিক্ষাদান করবেন। তাই শিক্ষক মশাই সবাইকেই বিদ্যালয়ে যেতে বলেছেন। তাই আমরা সবাই বিদ্যালয়ে যাবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। ঝাড়খন্ডী উপভাষার বৈশিষ্ট্য 2023
you may like