নীলধ্বজের প্রতি জনা বিষয় তাৎপর্য 2023

সূচীপত্র

উৎস- (নীলধ্বজের প্রতি জনা বিষয় তাৎপর্য 2023)

মধুসূদন দত্তের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পত্রকাব্য  “বীরঙ্গনা” কাব্যটিতে মোট 11 টি স্বর্গ আছে। এই কাব্যের একাদশতম তথা শেষ স্বর্গটি হল আমাদের পাঠ্য “নীলধ্বজের প্রতি জনা” এটি একটি অনুযোগ পত্র অর্থাৎ বীরাঙ্গনা কাব্য থেকে আমাদের পাঠ্য অংশটি চয়ন করা হয়েছে। (নীলধ্বজের প্রতি জনা বিষয় তাৎপর্য 2023)

∆ বিষয় সংক্ষেপে- নীলধ্বজের প্রতি জনা বিষয় তাৎপর্য 2023

  ( মহেশ্বরী পুরীর যুবরাজ প্রবীর অশ্বমেধ- যজ্ঞাশ্ব ধরিলে, পার্থ তাহাকে রণে নিহত করেন। নীলধ্বজ রায় পার্থের সহিত বিবাদ পরাঙ্মুখ হইয়া সন্ধি করাতে, রাঞ্জী জনা পুত্র শোকে একান্ত কাতর হইয়া, এই নিম্নলিখিত পত্রিকাখানি রাজসমীপে প্রেরন  করেন পাঠকবর্গ মহাভারত অশ্বমেধ পর্ব পাঠ করিলে ইহার  সবিশেষ বৃত্তান্ত অবগত হইতে পারিবেন )

 (মূল কাব্যে উল্লিখিত অংশ)

 **** মাহেশ্বরীর পুরীর রাজা নীলধ্বজের বীর পুত্র প্রবীর অর্জুনের যজ্ঞাশ্ব ধরলে অর্জুন এর সঙ্গে প্রবীরের যুদ্ধ অনিবার্য হয় যুদ্ধে প্রবীর নিহত হন। রাজা নীলধ্বজ নিজের পুত্রের হত্যার প্রতিশোধ না নিয়ে অর্জুনের সঙ্গে সন্ধি করেন এবং তাকে মিত্র রূপে রাজ সমীপে আহ্বান করেন তাকে  নরনারায়ন জ্ঞানে সম্মান করেন রানী জনা তা দেখে সহ্য করেননি। অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে, তিনি নীলধ্বজের নিকট এই প্রতিবাদ পত্র প্রেরণ করেন। নীলধ্বজের প্রতি জনা বিষয় তাৎপর্য 2023

আরও পড়—

একাদশ শ্রেনির সাজেশান-2023

***** “বাজিছে রাজ তরুণের রনবদ্য আজি……………………………………………………….. ক্ষত্র ধর্ম্ম, ক্ষত্রকর্ম্ম সাধ ভুজবলে।“

রাজ তোরণে, রণবাদ্য বাজছে। ঘোড়া বারবার ডাকছে। হাতি গর্জন করছে। আকাশে রাজ কেতু উড়ছে। রাজ সৈন্যরা মুহুর্মুহু হুংকার ছাড়ছে। কিন্তু কোন কারণে, তাহলে কি নররাজ যুদ্ধ করতে যাচ্ছেন? প্রবীর পুত্রের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে? এই শোকের আগুন কি ফাল্গুনের রক্তে নেভাবেন? এইতো সাজে তোমাকে। তুমি মহারাজ। অর্জুন এর গর্ব ভেঙে দাও। তার শির খণ্ড-খণ্ড করে আন। অন্যায় যুদ্ধে হত্যা করেছে বালককে। তাকে বিনাশ করো তবে এই জালা ভুলবো।  ভুলবো তাড়াতাড়ি। জন্মালে মৃত্যু হয় বিধাতার এটাই নিয়ম আমার পুত্র প্রবীর ক্ষত্রকুলের রত্ন। যুদ্ধের সামনে পড়ে স্বর্গ ধামে  গেছে। তাই বিলাপ করে কোন লাভ নেই। রাজা ক্ষত্রিয় ধর্ম পালন করুন, নিজে বলে

হায় পাগলিনী জনা!তব সভামাঝে ………………………………………… কোথা ধনু: কোথা তূণ, কোথা চর্ম্ম অসি? নীলধ্বজের প্রতি জনা বিষয় তাৎপর্য 2023

হায় পাগলিনী জনা। সভামাঝে নর্তকীরা নাচ করছে। গায়কেরা গান গাইছে। বীণাপাণি শব্দ উঠছে। সিংহাসনের মাঝে বসে আছে পুত্র হত্যাকারী শত্রু অর্জুন। তাকে মিত্র রূপে সিংহাসনে বসানো হয়েছে এবং রাজা তাকে অতিথিরূপে যত্ন করছেন। কি লজ্জা দুঃখের কথা কাকে বলবো? রাজা কি পুত্র হারিয়ে হতজ্ঞান হয়েছে? যেভাবে রাজ্য হারিয়েছেন রাজা সেই ভাবে কি পুত্রকে হারিয়ে জ্ঞান হারিয়েছেন? না হলে বল আমাকে কেন এই পাষণ্ড পান্ডুরথী অর্জুন রাজ্য পুরে অতিথিরূপে এসেছে? কিভাবে তুমি তাকে মিত্র রূপে সম্ভাষণ করো? যার হাত প্রবীরের রক্তে রঞ্জিত। ক্ষত্রিয় ধর্ম কি এটা? কোথায় তোমার ধনু কোথায় অসি?

 না ভিদি রিপুর বক্ষ  ………

                         আ: মরি কি সতী!

শত্রুর বক্ষ রণক্ষেত্রে ভেদ না করে শত্রুর সঙ্গে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলছো কানে কানে? কি বলবে লোকে? বল যখন দেশ-দেশান্তরে লোকের কাছে এই খবর, এই কাহিনী পৌঁছাবে? কি বলবে বলো? ক্ষত্রপতি যারা আছেন? শুনলাম নরনারায়ন জ্ঞানে পার্থকে পুজো করছো। ভক্তিভাবে। এটা কি তোমার ভ্রান্তি। হায় ভজবালা কুন্তি। কে না জানে তাকে। সে স্বৈরিণী। তার জারজ পুত্র অর্জুন। কি গুন দেখে তাকে পূজা করো। রাজনারায়ণ রূপে। হে বিধাতা তোমার একি লীলাখেলা? কি করে বুঝবো? একমাত্র পুত্র দিয়েও তা অকালে নিয়ে নিলেন? একমাত্র মান ছিল সেটাও নাশ করলেন নরনারায়ণ পার্থ

পার্থ নরনারায়ণ? সে তো বেশ্যার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছে। কোন শাস্ত্রে? কোন বেদে? কোন পুরানে? লেখা আছে? এই কাহিনী? দ্বৈপায়ন ঋষি বেদব্যাস, পান্ডবদের সর্বদা তিনি গুনগান করেন। সত্যবতীসুত নামে বিখ্যাত জগতে তার পিতা-মাতা ভাতৃ বধূদের নিয়ে কামকেলি করলেন। কি দেখে বুঝাও? তিনি হচ্ছেন কু- কুলের আচার্য যদি তাই হয়। তিনি যদি নরনারায়ন রুপে যদি অবতীর্ণ হন। তবে তার পদ্মালয়া ইন্দিরা কোথায়? দ্রৌপদী বুঝি! আহা: কি সত্য! নীলধ্বজের প্রতি জনা বিষয় তাৎপর্য 2023

শাশুড়ির যোগ্য বধু!………………………..

                            কি কবো তোমারে? নীলধ্বজের প্রতি জনা বিষয় তাৎপর্য 2023

দ্রৌপদী তার শাশুড়ির যোগ্য বধু। পৌরব সংসারের একমাত্র পদ্ম। ধিক্কার জানাই। হাসি আসে- যদি পাঞ্চালির কথা ভাবি। এই ভ্রষ্টা রমণী নাকি লোকমাতা। নীলধ্বজের প্রতি জনা বিষয় তাৎপর্য 2023

আমি জানি লোকে বলে অর্জুন রথিকুল পতি। কিন্তু মিথ্যা কথা নয় নাথ। তুমি বিবেচনা করে দেখো। তুমি সূক্ষ্ম বিবেচক হিসেবে বিখ্যাত জগতে। অর্জুন ছদ্মবেশ ধারণ করে স্বয়ম্বরসভায় গেলেন। তাকে কেউই বুঝতে পারলেন না। তাকে সবাই ব্রাহ্মণ ভাবলেন। রাজদলে তেই জিতল। কৃষ্ণের সাহায্যে খাণ্ডব দাহন করেছিল। কৌরবদের পিতামহ ভীষ্ম। মহাপাপী অর্জুন যুদ্ধে নিহত করেছেন। তাদের গুরু দ্রোণাচার্য তাকেও নরাধম হত্যা করেছেন। দেখো একবার মনে করে, বসুন্ধরা যখন কর্ণের রথ চাকা গ্রাস করেছিল, তখন এই নরাধম কিভাবে মহাযশা কর্ণকে হত্যা করেছেন। বল আমাকে। আমি শুনি। এটা কি মহারথী প্রথা? অন্যায় ভাবে হরিণকে জালের মধ্যে নিয়ে এসে তাকে হত্যা করা বেদের ভীরুচিত স্বভাবরাজা তুমি সবই জানো। আমি তোমাকে কি আর বলবো?

জানিয়া শুনিয়া তবে কি ছলনে ভুল……………………… এই কি রে ছিল তোর মনে?”নীলধ্বজের প্রতি জনা বিষয় তাৎপর্য 2023

জেনে শুনে তবে কেন এই ভুল করছেন মহারথী? হায় রে কি পাপে রাজ শিরোমনি রাজা নীলধ্বজ আজকে মাথা নত করছেন পার্থের নিকট?কোথায় তোমার বীরদর্প? কোথায় তোমার মানদর্প? চণ্ডালের পায়ের ধুলো কি ব্রাম্ভন এর কপালে? হরিণীর অশ্রুবারি কখনো কি দাবানল নিভেছে? কোকিলের কাকলি শব্দ কবে নীরব থেকেছে? ভীরুতার সাধনা কি তোমায় মানায়? কিন্তু বৃথা গঞ্জনা তোমাকে দেওয়া। তুমি গুরুজন। তোমাকে গঞ্জনা দিলে আমার ভীষন পাপ হবে। আমি কুলনারী। বিধির বিধান এ আমি পরাধীন। আমার শক্তি নেই যে আমি আমার মনের ইচ্ছা পূরণ করব।

কুন্তির পুত্র অর্জুন আমাকে নিঃসন্তান করল তুমি আমার স্বামী। ভাগ্য দোষে আমি তোমার বামাপতি। কি কারনে আর এই ধরাধামে বেঁচে থাকি? হায়রে ! এই জনাকীর্ণ ভবন স্থলে জনা আজ একাকী এই পোড়া কপালে বিধাতা যা লিখল তাই ফল্ল। হায় প্রবীর! এই কারণে তোকে আমি দশ মাস দশ দিন সযত্নে পেটে ধরেছিলাম। কোন জন্মে কোন পাপে তুই আমাকে অভাগিনী করলি? আসার লতা তুই তাইরে ছিড়লি। এইভাবে কি তুই তোর মাতৃ ঋণ শোধ করলি? এই ছিল তোর মনে?? নীলধ্বজের প্রতি জনা বিষয় তাৎপর্য 2023

কেন বৃথা পোড়া আখি——- উত্তরিবে প্রতিধ্বনি কোথায় জনা বলি!” নীলধ্বজের প্রতি জনা বিষয় তাৎপর্য 2023

কেন বৃথা আঁকি, বারিধারা বরিস, এ অবোধ কে মুছবে তোর এই চোখের জল? কেন বা জ্বলিস মন? কে জুড়াবে আজ এই বাক্য সুধারসে তোরে? পান্ডবের শরে খন্ড শিরোমনি তোর। লুকিয়ে লুকিয়ে  কাঁদি। ওরে আমার মনিহারা ফনী

যাও চলি মহাবল। কুরুপুরে, তোমার নতুন মিত্র পার্থর সঙ্গে অভাগী জনা চলল মহাযাত্রা করে পুত্রের উদ্দেশ্যে। আমি ক্ষত্রকুল কন্যা।ক্ষত্রকুলের বধূ। কেমন করে এইসব অপমান সহ্য করি। আমি এই প্রাণ জাহ্নবীর জলে বিসর্জন দেবো। তোমার ওই পদে চিরবিদায় চাইছি। ফিরে এসে রাজপুরে প্রবেশ করে যখন কোথায় জনা বলে ডাক দেবে তখন প্রতিধ্বনি আসবে কোথা জনাব?

অন্তর্নিহিত তাৎপর্য- 

মধুসূদন দত্ত ভারতীয় পৌরাণিক কাহিনী, মহাকাব্য এবং প্রাচীন নাটক থেকে কতগুলি অতিপরিচিত স্ত্রী চরিত্র বেছে নিয়ে তাদের লেখা কল্পিত চিঠির মাধ্যমে সেই সমস্ত নারীর জীবন্ত মূর্তি অঙ্কন করেছেন। এই সমস্ত নারীর মধ্যে অন্যতম বীরাঙ্গণা হলেন আমাদের পাঠ্য “নীলধ্বজের প্রতি জনা”। পত্রকাব্যের চরিত্রটি মহাভারতের অশ্বমেধ পর্বে উল্লেখ আছে। মহাভারতের জনা নারী চরিত্রটিকে মধুসূদন নতুন ভাবে ব্যাখ্যা করে তাকে বীরনারী রূপে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন।  নীলধ্বজের প্রতি জনা বিষয় তাৎপর্য 2023

      **রাজা নীলধ্বজ এবং রাণী জনার বীর পুত্র প্রবীর অর্জুন এর সঙ্গে যুদ্ধে নিহত হয়েছেন। অথচ রাজা নীলধ্বজ কোন রকম, পুত্রের হত্যার প্রতিশোধ না নিয়ে তিনি অর্জুনকে মিত্র রূপে তার সভাকক্ষে আহ্বান করেন এবং তাকে নরনারায়ন রুপে সেবা করেন। রানী রাজার এই আচরণ দেখে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং তিনি চিঠির আকারে তার মনের প্রতিবাদ রাজার উদ্দেশ্যে লিখেছেন। আলোচ্য চিঠিতে জনা নানাভাবে তার স্বামীর সম্মতি ফেরানোর চেষ্টা করেছেন। এমনকি অর্জুন এর বংশ পরিচয় নিয়েও তাকে শুনিয়েছেন। তিনি তার স্বামীকে নানাভাবে অর্জুনের দুর্বলতাগুলোকে তুলে ধরে তার পুত্রের প্রতিশোধের জন্য তাকে জাগ্রত করার চেষ্টা করেন

রানী জনা স্বামীর এমন আচরণ দেখে ক্ষোভে, লজ্জায়, ঘৃণায়, হৃদয় ভরে উঠল। অর্জুনের অন্যায় যুদ্ধ এবং তার পুত্র প্রবীরের মৃত্যুকে কখনোই মেনে নিতে পারছেন না। তাই তিনি ঠিক করেন জাহ্নবীর জলে তিনি জীবন বিসর্জন দেবেন।

বিশেষ তথ্য-নীলধ্বজের প্রতি জনা বিষয় তাৎপর্য 2023 

 রোমক কবি পাবলিয়াস অভিডিয়াস ন্যাসো বা সংক্ষেপে ওভিদের Heroides বা “Epistle Of Heroines”  শীর্ষক পত্র কাব্যের আদলে বাঙালি কবি মধুসূদন ভারতীয় পৌরাণিক কাহিনীর নারীদের নিয়ে এক অভিনব চরিত্র চিত্র অঙ্কন করেছেন “বীরাঙ্গনা কাব্যে।“ অভিদের কাব্যে মোট ২১ টি পত্র ছিল। সেখানে 21 জন নায়িকা তাদের প্রেমিকার উদ্দেশ্যে চিঠি লিখেছিলেন। বাঙালি কবি মধুসূদন তার বীরাঙ্গনা কাব্যে ২১ টি চিঠি লেখার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু নানা ভাবে তা তিনি শেষ করে উঠতে পারেননি। মোট ১১ টি পত্র লিখেছেন ১১ জন পৌরাণিক নায়িকাদের নিয়ে এই এগারটি পত্র হলো নিম্নলিখিত নীলধ্বজের প্রতি জনা বিষয় তাৎপর্য 2023

দুষ্মন্তের প্রতি শকুন্তলা  দশরথের প্রতি কৈকেয়ী   লক্ষণের প্রতি সূর্পনখা  অর্জুনের প্রতি দ্রৌপদী  দুর্যোধনের প্রতি ভানুমতী  জয়দ্রথের প্রতি দুঃখশলা   দ্বারকানাথের প্রতি রুক্মিণী   সোমের প্রতি তারা  শান্তনুর প্রতি জাহ্নবী  পুরুরবার প্রতি ঊর্বশী এবং নীলধ্বজের প্রতি জনা শেষ পত্রটি আমাদের পাঠ্য অংশ

নীলধ্বজের প্রতি জনা বিষয় তাৎপর্য 2023

নামকরণ- নীলধ্বজের প্রতি জনা বিষয় তাৎপর্য 2023

বীরাঙ্গনা” কাব্যের একাদশতম স্বর্গ হল “নীলধ্বজের প্রতি জনা” এই স্বর্গটির নাম কবিকৃত। নামকরণ সাহিত্যের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নামকরণের মধ্যে দিয়েই বিষয়বস্তু প্রতিভাত হয়। আমাদের পাঠ্য “নীলধ্বজের প্রতি জনা” স্বর্গের নামটি যথোপযুক্ত কিনা তা বিষয়বস্তুর প্রতি আলোকপাত করলে বোঝা যাবে

** আলোচিত পত্রটিতে জনা তার স্বামীর প্রতি অনুযোগ করেছেন। তার স্বামী নীলধ্বজ তার পুত্রের মৃত্যুর প্রতিশোধ না নিয়ে তিনি পুত্র হত্যাকারী অর্জুনকে মিত্র রূপে সভামাঝে আহ্বান করেছেন। এবং তাকে নরনারায়ন গুনে সেবা করছেন। জনা তার স্বামীর এরকম বিরূপ আচরণ দেখে তিনি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং বিস্মিত হয়েছেন। তাই তার ক্ষোভের আগুন চিঠির আকারে তার স্বামীর প্রতি লিখেছেন। চিঠিতে তিনি তার স্বামীর নানাভাবে সম্মতি ফেরানোর চেষ্টা করেছেন। সেখানে অর্জুনের বংশ পরিচয় তার দুর্বলতার নানান দিক তার স্বামীর কাছে তুলে ধরে তার হৃত জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করেছেন। যাতে তার স্বামীর সুবুদ্ধি জাগ্রত হয় এবং তার পুত্রের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে উদগ্রীব হয়। নীলধ্বজের প্রতি জনা বিষয় তাৎপর্য 2023

শুধু তাই নয়। জনা একজন নারী। ভাগ্যদোষে তিনি তার স্বামীর অনুগামী তাই ইচ্ছা থাকলেও নিজে প্রতিশোধ নিতে পারবেন না। তিনি এই অপমান সহ্য করতে পারবেন না। তাই তিনি গৃহ ত্যাগ করার পরিকল্পনা করেন এবং জাহ্নবীর জলে জীবন বিসর্জন দেবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেন সুতরাং পত্রটির বিষয়বস্তু আলোচনা সাপেক্ষে বলা যেতেই পারে  কবিকৃত পাঠ্য অংশটির নামকরণ যথার্থ এবং যথোপযুক্ত হয়েছে।।

শব্দার্থ ও টীকা- নীলধ্বজের প্রতি জনা বিষয় তাৎপর্য 2023

রাজ- তোরণে- প্রাসাদের সম্মুখ ভাগ। রণবাদ্য- যুদ্ধের বাজনা বা যুদ্ধের ঢাক। হ্রেষে- ঘোড়ার ডাক। গর্জে- গর্জন করছে। রাজকেতু- রাজপতাকা হুংকারিছে- হুংকার ছাড়ছে। মাতি- মত্ত হয়ে। হেতু- কারণ। প্রবীর- মহেশ্বরী যুবরাজ।নীলধ্বজ এবং জনার একমাত্র পুত্র। অর্জুনের সঙ্গে যুদ্ধে নিহত হন। প্রতিবিধিৎসিতে – প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। শোকাগ্নি- শোকের আগুন ফাল্গুনী- অর্জুন এর আরেক নাম ফাল্গুনী। ক্ষত্রমনি- ক্ষত্রিয়দের রাজা। লোহে- রক্তে মহাবাহু – শক্তিশালী। গজরাজ- হাতিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। যমদন্ডসম-  মৃত্যুর মত শাস্তি। আস্ফালি- আস্ফালন।নিষাদের –  গর্জন করে।

টুট- খর্ব করো বা ভাঙ্গো।  কিরিটি- অর্জুন এর আরেক নাম। কিরিটি কথার অর্থ সূর্যের ন্যায় সমুজ্জ্বল মুকুট রণস্থলে- যুদ্ধক্ষেত্রে শূলদন্ড-শিরে –   দন্ডের মাথায় শূল। মূঢ়- নির্বোধ। নাশিল-  হত্যা করলো মহেষ্বাস- নীলধ্বজ ক্ষত্রকুল-রত্ন- ক্ষত্রিয়দের বংশের রত্ন বিলাপ- হাহাকার   মহীপাল- পৃথিবী পালক।  ক্ষত্রিয়ধর্ম- ক্ষত্রিয়দের ধর্ম। ক্ষত্রকর্ম- ক্ষত্রিয়দের কাজ। ভুজোবলে – বাহুবলে। পুত্রহা- পুত্র হত্যা কারী। রিপু- শত্রু। মিত্রতম -বন্ধুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।

বিহণে- ছাড়া। মহেশ্বরী -পুরীশ্বর- মহেশ্বরীপুর শ্রেষ্ঠ রাজা। এখানে নীলধ্বজ কে বলা হচ্ছে। নৃমণি-রাজাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। তূণ- বান রাখার আধার চর্ম্ম-  ঢাল। শরে- বানে। তুষিছ-, তুষ্ট করছো।  নরনারায়ণ জ্ঞানে-  রাজা নীলধ্বজ অর্জুনকে নরনারায়ন গুনে পুজো করছেন। পাষণ্ড- পাষাণ হৃদয়। পান্ডুরথী -অর্জুন। ভ্রান্তি ভুল। ভোজবালা- ভোজ রাজার কন্যা অর্থাৎ কুন্তী হলেন ভোজরাজের কন্যা। স্বৈরিণী- অসতী। তনয়- পুত্র, সন্তান। জারজ অর্জুনে- ইন্দ্রের ঔরসে অর্জুনের জন্ম হয়েছে বলে জনা এই কথা বলেছেন। দারুন বিধি- বিধাতা নিদারুণ। নাশিলি- বিনাশ করলেন।

কুলটা- অসতী। অর্থাৎ যে সংসার ছেড়ে দিয়েছে। বেশ্যা- বারবনিতা। এখানে জনা কুন্তীকে বেশ্যা বলেছেন কুন্তী হলেন শূরসেনের কন্যা এবং বাসুদেবের ভগিনী। কুন্তীর প্রকৃত নাম পৃথা। শূরসেন, ভোজরাজা কুন্তীভোজ রাজাকে তার কন্যাকে দান করেন এবং পৃথা কুন্তীভোজের  কন্যারূপে পালিত হয়। পরে তার নাম হয় কুন্তী। অল্প বয়সে সূর্যের ঔরসে প্রথম পুত্র কর্ণের জন্ম দেন। পরে ধর্মের প্রার্থনায় যুধিস্থির এবং পবনের প্রার্থনায় ভীম এবং ইন্দ্রের ঔরসে অর্জুনকে লাভ করেন। এই জন্য ক্রোধে উন্মত্ত জনা   কুন্তীকে বেশ্যা বলেছেন। নীলধ্বজের প্রতি জনা বিষয় তাৎপর্য 2023

part-2 নীলধ্বজের প্রতি জনা বিষয় তাৎপর্য 2023

 ঋষিকেশ -নরনারায়ন। দ্বৈপায়ন- ব্যাসদেব মহাভারতের রচয়িতা। যমুনা দ্বীপের জন্ম হওয়ার জন্য তার নাম দ্বৈপায়ন হয়। সত্যবতীসুতো- সত্যবতীর পুত্র। ধীবর জননী- পিতা ব্রাহ্মণ ব্যাসদেবের পিতা মাতা সম্পর্কে বলা হয়েছে। কামকেলি- কামনার খেলা। কুলাচার- কুলের আচার্য। পীতাম্বর-  এখানে নারায়ন পৌরব সরোষে নলিনী পঞ্চপাণ্ডবদের একমাত্র পদ্ম। দ্রৌপদী কে বলা হয়েছে অর্থাৎ তার পঞ্চপতিদের কথা বলেছেন  পাঞ্চালি পাঞ্চাল দেশের রাজকন্যা। রমা লক্ষী।ভ্রষ্টা-রমনী- অসতী নারী রথিকুল-পতি- যোদ্ধাদের অন্যতম শ্রেষ্ট তেই- তাই। তেই সে জিতিলো- তাই সে জয় পেল।

 নরাধম- নিকৃষ্ট। বসুন্ধরা -পৃথিবী। কর্নমহাযশা- কর্ণ অন্যতম শ্রেষ্ঠ  আনায়-মাঝারেপশু শিকারের ফাঁদ  আত্মশ্লাঘা -আত্মগৌরব।  কুরঙ্গী- হরিণ অশ্রুবারি- চোখের জল। নিভায়ে- নেভানো। দাবানলে- অরণ্যের আগুন কাকলি কোকিলের আওয়াজ। উচ্চনাদে- গর্জনকারী প্রভন্জন- প্রবল ঝড়।  গঞ্জনা- খারাপ কথা বলা। ফাল্গুনী- অর্জুন।  বাম- স্ত্রী ভবন- পৃথিবী। জাহ্নবী গঙ্গা নীলধ্বজের প্রতি জনা বিষয় তাৎপর্য 2023

খান্ডবখন্ডব হলো একটি প্রসিদ্ধ অরণ্য অগ্নিদেবের অগ্নিমান্দ্য হলে ব্রহ্মা তাকে পরামর্শ দেন যে, খান্ডব অরণ্য দহন করতে হবে এবং  দগ্ধ পশুর মেদ ভক্ষন করতে হবে। অগ্নিদেব অনেকবার চেষ্টা করেও খাণ্ডবদাহন করতে পারেননি। তাই তিনি ক্ষুধার্ত ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশ ধারণ করে অর্জুনের সাহায্য প্রার্থনা করেন। অর্জুন শর নিক্ষেপ করে খান্ডব অরণ্য দগ্ধ করেন এবং অগ্নিদগ্ধদেব  দগ্ধ পশুর মেদ ভক্ষণ করে তার ক্ষুধামান্দ্য দূর করেন। অর্জুন শর সংযোগে খান্ডব অরণ্য দহন করেছেন বলে জনা এ কথা বলেছেন অর্থাৎ অর্জুন খান্ডব অরণ্য দহন করে অন্যায় করেছেন। নীলধ্বজের প্রতি জনা বিষয় তাৎপর্য 2023

শিখন্ডী-শিখন্ডী হলেন দ্রুপদ রাজার পুত্র। আগের জন্মে ইনি বিচিত্রবীর্যের পত্নী ছিলেন ভীষ্ম বিচিত্রবীর্যের জন্য অম্বা ,অম্বিকা, অম্বালিকা কে হরণ করেন। অম্বা তখন ছিলেন শাল্য রাজের বাগদত্তা।শাল্যরাজ অম্বাকে গ্রহণ করতে অস্বীকার করলে অম্বা যমুনাতীরে চিতা সাজিয়ে আত্মহত্যা করেন। এই অম্বাই নপুংসক শিখণ্ডী রুপে জন্মগ্রহণ করেন। ভীষ্ম প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, তিনি কোন নারী অথবা নারী থেকে পুরুষ হয়েছেন এমন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করবেন না। করুক্ষেত্রের যুদ্ধে সেজন্য শিখন্ডীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেননি। আর সুযোগসন্ধানী অর্জুন এই সুযোগেই শিখন্ডীকে ভীষ্ম এর সামনে রেখে পিতামহ ভীষ্ম কে হত্যা করেছিলেন। নীলধ্বজের প্রতি জনা বিষয় তাৎপর্য 2023

মহারথী-প্রাচীনকালে যুদ্ধের এক রীতি ছিল সম্মুখ যুদ্ধে বিনা অস্ত্রে কেউ কাউকে হত্যা করার রীতি ছিল না। উভয়পক্ষকেই অস্ত্রশস্ত্রে যুদ্ধ করতে হতো। পিছন থেকে তাকে হত্যা করার রীতি ছিল না। সামনাসামনি এই যুদ্ধকেই মহারথী প্রথা বলা হত।

অশ্বমেধ মহাভারতের একটি পর্বের নাম অশ্বমেধ পর্ব। প্রাচীনকালে রাজার আমল থেকেই রাজারা নিজেদের কৃতিত্ব প্রদর্শন করতে অশ্বমেধ যজ্ঞের আয়োজন করতেন। যজ্ঞ সমাপ্ত করে সেই যজ্ঞের চিহ্নিত স্বরূপ একটি ঘোড়া কে ছেড়ে দেয়া হতো। সেই ঘোড়া হেঁটে হেঁটে যে অঞ্চল দিয়ে যাবে সেই অঞ্চল সেই রাজার বশ্যতা স্বীকার করে নিত যদি কোন রাজা সেই ঘোড়া আটকাতো তাহলে তার সঙ্গে যুদ্ধ অনিবার্য হত। নীলধ্বজের প্রতি জনা বিষয় তাৎপর্য 2023

দ্রোণাচার্য -নীলধ্বজের প্রতি জনা বিষয় তাৎপর্য 2023  

ইনি ভরদ্বাজ মুনির পুত্র। ইনি পৌরবদের অস্ত্রগুরু ছিলেন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে তিনি কৌরবদের পক্ষে যোগ দিয়েছিলেন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে ধৃষ্টদ্যুম্ন তাকে হত্যা করেন।

কর্ণ- মহাযশা  – কর্ণ ছিলেন ভীষন খ্যাতিসম্পন্ন। ইনি পান্ডবদের বড় ভাই। এবং কুন্তীর প্রথম পুত্র ছিলেন। পান্ডবদের অস্ত্রগুরু দ্রোণাচার্য কাছে অস্ত্র শিক্ষালাভ না পাওয়ায় তিনি পরশুরামে শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন তিনি নিজের অজ্ঞাতে এক ব্রাহ্মণের হোমধেনু বধ করায় অভিশপ্ত হয়েছিলেন। ব্রাম্ভন অভিশাপ দিয়েছিলেন যে, মৃত্যুকালে তার রথের চাকা মেদিনী গ্রাস করবে। আরো অভিশাপ দেন যে , তার মৃত্যু কালে তার যে ব্রম্ভাস্ত্র ছিল তা কর্ণের স্মরণে থাকবে না। সেজন্য মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কর্ণের রথযাত্রা মেদিনী গ্রাস করেছিল আর সেই সুযোগে অর্জুন কর্ণ কে হত্যা করেছিলেন

you may like it–

https://en.wikipedia.org/wiki/India

 

নীলধ্বজের প্রতি জনা বিষয় তাৎপর্য 2023 নীলধ্বজের প্রতি জনা বিষয় তাৎপর্য 2023 নীলধ্বজের প্রতি জনা বিষয় তাৎপর্য 2023 নীলধ্বজের প্রতি জনা বিষয় তাৎপর্য 2023 নীলধ্বজের প্রতি জনা বিষয় তাৎপর্য 2023 নীলধ্বজের প্রতি জনা বিষয় তাৎপর্য 2023 নীলধ্বজের প্রতি জনা বিষয় তাৎপর্য 2023 নীলধ্বজের প্রতি জনা বিষয় তাৎপর্য 2023 নীলধ্বজের প্রতি জনা বিষয় তাৎপর্য 2023 নীলধ্বজের প্রতি জনা বিষয় তাৎপর্য 2023 নীলধ্বজের প্রতি জনা বিষয় তাৎপর্য 2023 নীলধ্বজের প্রতি জনা বিষয় তাৎপর্য 2023 নীলধ্বজের প্রতি জনা বিষয় তাৎপর্য 2023 নীলধ্বজের প্রতি জনা বিষয় তাৎপর্য 2023

Ratan Das

Learn More