কবিকঙ্কন মুকুন্দ চক্রবর্তী-2023

ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর – 2023

ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর

অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ কবি তথা মধ্যযুগের শেষ কবি হলেন ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর। অষ্টাদশ শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ কবি ভারতচন্দ্র রায় হলেন। বাংলা সাহিত্যের একজন প্রথম শ্রেণীর মার্জিত রুচি ও বিধব্ধ সারস্বত সাধক।

সূচীপত্র

নিবাস:–  ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর – 2023

ভারতচন্দ্র রায়গুনাকর আনুমানিক ১৭০৫- ১১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে, হাওড়া হুগলি জেলার ভুরশুট পরগনার অন্তর্গত পেঁড়ো গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৭৬০ সালে ৪৮ বছর বয়সে তিনি মারা যান।  ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর – 2023

নবদ্বীপের অধিপতি কৃষ্ণচন্দ্র রায় তার কবিত্ব শক্তিতে মুগ্ধ হয়ে ভারতচন্দ্রকে “রায়গুণাকর” উপাধি প্রদান করেন। কৃষ্ণচন্দ্র রায় হলেন, কৃষ্ণনগরের মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র। ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের পিতা হলেন, নরেন্দ্র নারায়ণ রায়।

সাহিত্য রচনা:–  ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর – 2023

মধ্যযুগের শেষ কবি এবং সমগ্র বাংলা সাহিত্যের অন্যতম একজন শ্রেষ্ঠ কবি ভারতচন্দ্র রায় গুনাকর অনেকগুলি কাব্য রচনা করে গেছেন। তার রচিত বিখ্যাত কাব্য গুলির মধ্যে আছে:-

১) সত্যপীরের পাঁচালী (১৭৩৮)

২) রসমঞ্জরি (১৭৪৯)

৩) নাগাষ্টক (১৭৫০)

৪) চন্ডী নাটক (অসম্পূর্ণ নাটক)

৫) অন্নদামঙ্গল 

 

অন্নদামঙ্গল কাব্যের পরিচয়:-  ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর – 2023

তার সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি অন্নদামঙ্গল কাব্য। যা মঙ্গলকাব্য ধারার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাব্য। অন্নদামঙ্গল কাব্যের জন্যই তিনি বাংলা সাহিত্যে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। অষ্টাদশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাব্য এই অন্নদামঙ্গল।

 

অন্নদামঙ্গল কাব্যটি মূলত তিনটি খন্ডে বিভক্ত। যথা:-

১)  অন্নদামঙ্গল: এই খন্ডে আলীবর্দী কর্তৃক কৃষ্ণচন্দ্রকে কারাগারে বন্দি এবং কৃষ্ণচন্দ্র কর্তৃক অন্নপূর্ণার পূজা করে বিপদ থেকে উদ্ধার কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। এখানে হরিহরের কাহিনী স্থান লাভ করেছে। ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর – 2023

২) কালিকামঙ্গল বা বিদ্যাসুন্দর:- দ্বিতীয় খন্ডটির নাম কালিকামঙ্গল বা বিদ্যাসুন্দর। এই দ্বিতীয় খন্ডে বিদ্যাসুন্দরের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। এই অংশটি ততটা শিল্পগুণ সম্মত হয়নি। যতটা শেষ খন্ড, অন্নপূর্ণা মঙ্গল তথা মানসিংহ কাহিনীতে হয়েছে।

৩) অন্নপূর্ণা মঙ্গল বা মানসিংহ:- অন্নদামঙ্গল কাব্যের শেষ খন্ডে মানসিংহের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে।

 

আরও পড়ুন 

বৈষ্ণব পদাবলী- বিদ্যাপতি

 

কাল ব্যাপক শ্লোক:-

বেদ লয়ে ঋষি রসে ব্রহ্ম নিরুপিলা

সেই শকে এই গীত ভারত রচিলা।                            ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর – 2023

 বেদ=৪  ঋষি=৭  রস=৬, ব্রহ্ম= ১

= ৪৭৬১ অঙ্কশ্য ববামাগতি অর্থাৎ ১৬৭৪+৭৭= ১৭৫২ অর্থাৎ ভারতচন্দ্র ১৭৫২ সালে অন্যতমঙ্গল কাব্য রচনা করেন। কাব্যটিকে তিনি “নূতন মঙ্গল” নামে অভিহিত করেছেন।

কবি ঈশ্বর গুপ্ত সর্বপ্রথম তার সম্পর্কে নানান তথ্য সংগ্রহ করে ১৮৫৫ সালে সংবাদ প্রভাকর পত্রিকায় প্রকাশ করেন। প্রবন্ধের নাম দেন- “কবিবর ভারতচন্দ্র রায়গুনাকরের জীবন বৃত্তান্ত”            ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর – 2023

ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর - 2023

চরিত্র:-    ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর – 2023   

শিব, পার্বতী, দক্ষ, তার স্ত্রী প্রসূতি, গিরিরাজ হিমালয়, মেনকা, উমা, মদন, তার স্ত্রী রতি, ব্যাস, রাজা কৃষ্ণচন্দ্র, আলীবর্দী খাঁ, ভবানন্দ মজুমদার(কুবেরের পুত্র নলকুবর মর্তে আবির্ভূত রূপ)

হরিহর(কুবেরের অনুচর বসুন্ধরার মর্তে আবির্ভূত রূপ) ঈশ্বরী পাটনী,

 

) ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের অন্নদামঙ্গল কাব্যকে নূতন মঙ্গল বলার যুক্তিযুক্ত কতটা অথবা: নতুন মঙ্গল আসে / ভারত সরস ভাষে”- কোন কাব্য কে কে কেন নুতন মঙ্গল বলেছেন?

 অথবা: ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের কাব্যটির সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর।

অথবা: অন্যতমঙ্গল কাব্যটি বাংলা সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ কেন ?

অথবা: বাংলা সাহিত্যে অন্নদামঙ্গল কাব্যটির গুরুত্ব আলোচনা কর। ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর – 2023

উঃ) সমগ্র বাংলা সাহিত্যে একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাব্য অন্নদামঙ্গল। এই কাব্যটি মধ্যযুগের শেষ মঙ্গলকাব্য। কবি ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর কাব্যটিকে নুতন মঙ্গল নামে অভিহিত করেছেন। তার অন্নদামঙ্গল কাব্যটিকে নতুন মঙ্গল বলার পিছনে বেশ কিছু যুক্তি আছে। কারণ তিনি কাব্যটি রচনা করেছেন বেশ কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে: যা মধ্যযুগের পূর্বে রচিত কাব্যগুলি থেকে পৃথক করে তুলেছে।

কবি ভারতচন্দ্র তার কাব্যে পুরাতন বিষয়কে নতুন আধারে, নতুন ভঙ্গিতে পরিবেশন করেছেন। তিনি যথার্থই উপলব্ধি করেছিলেন যে, দীর্ঘ শতাব্দী ধরে একই কাহিনী, একইভাবে পাঠ করতে করতে পাঠক মন ক্লান্ত, অবসন্ন হয়ে পড়েছে অর্থাৎ সেই সমস্ত কাব্য কাহিনীগুলিতে পাঠক কোন রস অনুভব করতে পারছে না। সুতরাং কবি ভারতচন্দ্র মঙ্গল কাব্যের এই পুরাতন রীতিকে অবলম্বন করেই, তাকে নানা বৈচিত্রে মন্ডিত করে, তিনি এক নতুন মঙ্গল রচনা করলেন। যা সমগ্র মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে এক অবিস্মরণীয় সৃষ্টি বলে পরিগণিত হয়েছে।

 কবি দেবী অন্নদাকে কেন্দ্র করে দেব মহাত্ম্য মূলক কাব্য রচনা করেছেন বলে, এটিকে শুধুমাত্র নতুন মঙ্গল বলে অভিহিত করা হয় না, আসলে কবি তার কাব্যে কিছু নতুনতর ভাব এবং রীতি প্রকাশ করেছিলেন বলেই তার কাব্যকে তিনি নতুন মঙ্গল বলেছেন।  ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর – 2023

যে সমস্ত নতুন ভাব ও রীতি তার কাব্যে ফুটে উঠেছে সেগুলি নিম্নে বর্ণিত হলো:-

১) মধ্যযুগের প্রায় প্রতিটি কাব্যেই দেখা যায় কবি স্বয়ং দেবতার কাছ থেকে স্বপ্নাদেশ পেয়ে কাব্য রচনা করেছেন। কিন্তু অন্নদামঙ্গল কাব্যে দেখা যায়, কবি তার পৃষ্ঠপোষক ও আশ্রয়দাতা কৃষ্ণচন্দ্রের আদেশে কাব্য রচনা করেছেন।

২) অন্নদামঙ্গল কাব্যের সূচনায় দেখা যায় রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সভা বর্ণন অংশ আছে। এবং এই অংশে ইতিহাসে প্রসঙ্গ এসেছে। যা পূর্বের অন্য কোন মঙ্গলকাব্যে পাওয়া যায় না 

) তার কাব্যকে তিনি রসালো করে তোলার জন্য যাবনী মিশাল ভাষা ব্যবহার করেছেন, তাছাড়া ছন্দ ও অলংকারের বৈচিত্র এবং অগণিত প্রবাদ প্রবচনের সার্থক প্রয়োগ ঘটিয়েছেন- যা কাব্যকে অনন্য করে তুলেছে।

) মধ্যযুগের মঙ্গলকাব্যের দেবদেবীরা অত্যন্ত নিষ্ঠুর এবং ক্রুর স্বভাব। তারা যেন তেন প্রকারণে পূজা প্রচারে অতিশয় ব্যস্ত। কিন্তু ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল কাব্যে দেবী অন্নদা, এই জাতীয় কোপন স্বভাবা দেবী নন। তিনি শান্ত ও কোমল মূর্তিতে বিরাজিতা।

)মধ্যযুগের অন্যান্য মঙ্গলকাব্যে, নরখণ্ডের কাহিনী ব্যাপক ও বিস্তৃত রুপ লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু অন্নদামঙ্গল কাব্যে, নরখণ্ড সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত। তাছাড়া তিনি তার কাব্যের অবিস্মরণীয় চরিত্র ঈশ্বরী,  এই চরিত্রটির মধ্যে দিয়ে বাঙালি পিতৃ হৃদয়ের একটি চিরকালীন আর্থিকে ফুটিয়ে তুলেছেন। ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর – 2023

এইভাবেই ভারতচন্দ্র রায়গুনাকর মঙ্গলকাব্য ধারার অনুগামী না হয়ে, নতুন দেবী অন্নদাকে কেন্দ্র করে, নতুন মঙ্গল কাব্য রচনায় প্রয়াসী হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন মঙ্গলকাব্য ধারার অন্তিম পর্বের কবি। তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, তার কাব্যকে নতুন রূপে, নতুন রসে, নুতন বৈচিত্রে গড়ে তুলতে না পারলে, পাঠক তাতে আনন্দ বা তৃপ্তি রস পাবে না। তাই নতুন রীতিতে, নতুন ভাবে কাব্যকে মন্ডিত করে, তিনি নূতন মঙ্গলকাব্য রচনা করে মঙ্গল কাব্য ধারায় শেষবারের মতো, তিনি উজ্জ্বল করে তুললেন। ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর – 2023

 

) অন্নদামঙ্গল কাব্যে ব্যবহৃত দুটি প্রবাদ প্রবচনের উদাহরণ দাও।ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর – 2023 

উঃ)১) নগর পুড়িলে দেবালয় কি এড়ায়।

) মন্ত্রের সাধন কিম্বা শরীর পতন।

) আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে

) বাপ ঘরে কন্যা যেতে নিমন্ত্রণ কিবা

 

) বাংলা সাহিত্যে অন্নদামঙ্গল কাব্যটির গুরুত্ব কি? ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর – 2023

উঃ) মধ্যযুগের সমগ্র বাংলা সাহিত্যের একটি অন্যতম অবিস্মরণীয় সৃষ্টি, কবি ভারতচন্দ্র রায়গুণাগরের অন্নদামঙ্গল কাব্যটি। কাব্যটির অসাধারণ শিল্প দক্ষতা, শব্দ নির্বাচন, ছন্দ জ্ঞান, অলংকারের নিপুণ প্রয়োগ, কাব্যটিকে অপূর্ব দ্যুতিময় করে তুলেছে।

কাব্যটি পূর্বের মঙ্গল কাব্যের থেকে রচনা বৈচিত্রে, রীতি ও ভাবে ভিন্ন রসের কাব্য। কাব্যটির অসামান্য দীপ্তির জন্যই রবীন্দ্রনাথ এই কাব্যকে রাজকণ্ঠের মণিমালা বলেছেন।

অন্নদামঙ্গল কাব্যটির একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, কাব্যটির ভাষা। কবি তৎসম, তদ্ভব শব্দের সঙ্গে মুসলমানী অর্থাৎ আরবি, ফারসি, তুর্কি শব্দের অপূর্ব সংমিশ্রণে তৈরি করেছেন যাবনী মিশাল ভাষা।

) ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল কাব্যটির দুটি সমালোচনা লেখো।

উঃ মধ্যযুগের সমগ্র বাংলা সাহিত্যের একটি অসামান্য সৃষ্টি ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের অন্নদামঙ্গল কাব্যটি। কাব্যটি একদিকে যেমন নানা কারণে প্রশংসিত হয়েছে, অন্যদিকে তেমনি সমালোচকদের চোখে নিন্দিত হয়েছে। কাব্যটি কয়েকটি সমালোচনা করা যায় সেগুলি হল:

) কাব্যটির প্রায় সর্বত্রই আদি রসের বাড়াবাড়ি, যার ফলে কাব্যটির অনেক ক্ষেত্রেই তার শিল্পগুণ হারিয়েছে।

) অন্নদামঙ্গল কাব্যে বহু জায়গায় অশ্লীলতার প্রভাব দেখা গেছে। বিশেষ করে উমা ও শিবের বিবাহের সময়, শিবের উলঙ্গ অবস্থা, শিবের কাম-উন্মত্ত চেহারা।

)তার সৃষ্ট সব চরিত্রগুলি টাইপ শ্রেণীর। রক্ত মাংসের জীবন্ত চরিত্র সৃষ্টি তিনি করতে পারেননি। শুধুমাত্র ঈশ্বরী পাঠনী চরিত্রটি বাদ দিলে, বাকি সমগ্র কাব্যের চরিত্রগুলি সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পাওয়ার আগেই সমাপ্ত হয়েছে বা হারিয়ে গেছে।

) তার কাব্যটি অনেক ক্ষেত্রেই কৃত্রিমতার দোষে দুষ্ট হয়েছে অর্থাৎ তার কাব্যে বেশির ভাগই কৃত্রিমতার ছোঁয়া আছে।

 

) ভারতচন্দ্রের কাব্যকে কি যুগসন্ধির কাব্য বলা যায়?

উঃ) যুগ সন্ধি হল, এক যুগ চলে যায়, আর এক যুগ আসে- সেই সন্ধিক্ষন হল যুগসন্ধি। অর্থাৎ এমন এক সন্ধিলগ্নের সময়ে কাব্য রচনা হয় যে, এক যুগ চলে যায়- সেই যুগের রীতি-নীতি, ধ্যান-ধারণার, প্রকাশ যেমন, সেই কাব্যে পরিলক্ষিত হয়, তেমনি আবার নবাগত যুগের ধ্যান-ধারণা, রীতি-নীতি, বৈশিষ্ট্য সেই কাব্যে পরিচয় মেলে। আমাদের আলোচ্য ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল কাব্যে সেই ধ্বনি শোনা গেছে।

একদিকে পুরাতনের পুনরাবৃত্তি, অন্যদিকে নূতনের পদধ্বনি। ভারতচন্দ্র সেই যুগের কবি। অন্নদামঙ্গল সেই যুগের কাব্য। অর্থাৎ যুগসন্ধিক্ষণের কবি ভারতচন্দ্রের কাব্যে দেব মহিমা নয়, মানব মহিমা গুরুত্ব লাভ করেছে। এই কাব্যে তিনি আধুনিক। এখানে তার শিল্পের মুক্তি, এখানে তার অভিনবত্ব। অন্নদামঙ্গল কাব্যটি মধ্যযুগের রচনা হলেও, কাব্যটিতে দেব মহাত্ম্য বর্ণনা, কবি প্রাধান্য দেননি। তার কাব্যে দেবতা মানুষে পরিণত হয়েছে। তিনি দেবতার আদর্শে কাব্য রচনা করেননি। তিনি লিখেছেন, তার পৃষ্ঠপোষক রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের অনুরোধে অর্থাৎ সমকালীন যুগের পরিচয় ভারতচন্দ্রের কাব্যে যেভাবে উপস্থাপিত হয়েছে, অন্যান্য মঙ্গলকাব্যে তেমনভাবে লক্ষ্য করা যায় না। তাই বলা যায় নতুন ও পুরাতনের সন্ধিক্ষণের ছবি আমরা লক্ষ্য করি তার কাব্যে। ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর – 2023

 

) অন্নদামঙ্গল কাব্যটি কে, কত খ্রিস্টাব্দে প্রথম স্বচিত্র সংস্করণ প্রকাশ করেন?

উঃ অন্নদামঙ্গল কাব্যটি ১৮১৬ খ্রিস্টাব্দে গঙ্গা কিশোর ভট্টাচার্য,  প্রথম সচিত্র সংস্করণ প্রকাশ করেন।

) যবনী মিশাল ভাষা কি? এই ভাষায় মধ্যযুগের কোন কবি, তার কাব্যে ব্যবহার করেছেন? কাব্যটির নাম কি?

অথবা “অতএব করি ভাষা যাবনী মিশাল” যবনী মিশাল ভাষা কি? এই ভাষায় কে, কোন কাব্য রচনা করেছেন? কাব্যটির নাম কি?

উঃ) যবনী মিশাল ভাষা হল যবনদের ভাষা। অহিন্দু বা ইউরোপীয় বর্বর জাতিদেরই যবন বলা হত। মূলত আরবি, ফারসি এবং সংস্কৃত তৎসম, তদ্ভব মিশ্রিত ভাষাকেই যবনী মিশিল ভাষা বলা হয়।

এই যবনী মিশাল ভাষাতে কাব্য রচনা করেছেন মধ্যযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি ভারতচন্দ্র রায়গুনাকর। তার কাব্যটির নাম অন্নদামঙ্গল। কাব্যটি রচনাকাল ১৭৫২ খ্রিস্টাব্দ।

you may like

https://en.wikipedia.org/wiki/India

 

 

ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর – 2023

ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর – 2023

ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর – 2023

ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর – 2023

 

) ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের অন্নদামঙ্গল কাব্যকে নূতন মঙ্গল বলার যুক্তিযুক্ত কতটা অথবা: নতুন মঙ্গল আসে / ভারত সরস ভাষে”- কোন কাব্য কে কে কেন নুতন মঙ্গল বলেছেন?

 অথবা: ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের কাব্যটির সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর।

অথবা: অন্যতমঙ্গল কাব্যটি বাংলা সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ কেন ?

অথবা: বাংলা সাহিত্যে অন্নদামঙ্গল কাব্যটির গুরুত্ব আলোচনা কর।

এইভাবেই ভারতচন্দ্র রায়গুনাকর মঙ্গলকাব্য ধারার অনুগামী না হয়ে, নতুন দেবী অন্নদাকে কেন্দ্র করে, নতুন মঙ্গল কাব্য রচনায় প্রয়াসী হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন মঙ্গলকাব্য ধারার অন্তিম পর্বের কবি। তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, তার কাব্যকে নতুন রূপে, নতুন রসে, নুতন বৈচিত্রে গড়ে তুলতে না পারলে, পাঠক তাতে আনন্দ বা তৃপ্তি রস পাবে না। তাই নতুন রীতিতে, নতুন ভাবে কাব্যকে মন্ডিত করে, তিনি নূতন মঙ্গলকাব্য রচনা করে মঙ্গল কাব্য ধারায় শেষবারের মতো, তিনি উজ্জ্বল করে তুললেন।

সাহিত্য রচনা:-

মধ্যযুগের শেষ কবি এবং সমগ্র বাংলা সাহিত্যের অন্যতম একজন শ্রেষ্ঠ কবি ভারতচন্দ্র রায় গুনাকর অনেকগুলি কাব্য রচনা করে গেছেন। তার রচিত বিখ্যাত কাব্য গুলির মধ্যে আছে:-

১) সত্যপীরের পাঁচালী (১৭৩৮)

২) রসমঞ্জরি (১৭৪৯)

৩) নাগাষ্টক (১৭৫০)

৪) চন্ডী নাটক (অসম্পূর্ণ নাটক)

৫) অন্নদামঙ্গল 

 

অন্নদামঙ্গল কাব্যের পরিচয়:-

তার সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি অন্নদামঙ্গল কাব্য। যা মঙ্গলকাব্য ধারার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাব্য। অন্নদামঙ্গল কাব্যের জন্যই তিনি বাংলা সাহিত্যে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। অষ্টাদশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাব্য এই অন্নদামঙ্গল।

 

অন্নদামঙ্গল কাব্যটি মূলত তিনটি খন্ডে বিভক্ত। যথা:-

১)  অন্নদামঙ্গল:- এই খন্ডে আলীবর্দী কর্তৃক কৃষ্ণচন্দ্রকে কারাগারে বন্দি এবং কৃষ্ণচন্দ্র কর্তৃক অন্নপূর্ণার পূজা করে বিপদ থেকে উদ্ধার কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। এখানে হরিহরের কাহিনী স্থান লাভ করেছে।

২) কালিকামঙ্গল বা বিদ্যাসুন্দর:- দ্বিতীয় খন্ডটির নাম কালিকামঙ্গল বা বিদ্যাসুন্দর। এই দ্বিতীয় খন্ডে বিদ্যাসুন্দরের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। এই অংশটি ততটা শিল্পগুণ সম্মত হয়নি। যতটা শেষ খন্ড, অন্নপূর্ণা মঙ্গল তথা মানসিংহ কাহিনীতে হয়েছে।

৩) অন্নপূর্ণা মঙ্গল বা মানসিংহ:- অন্নদামঙ্গল কাব্যের শেষ খন্ডে মানসিংহের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে।

Ratan Das

Learn More

One thought on “ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর – 2023

Comments are closed.