হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রবন্ধের বড় প্রশ্নের উত্তর হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রবন্ধের এস এ কিউ এবং এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন উত্তর Class 10 Bengali question answer Class 10 Bengali suggestion
রচনাধর্মী প্রশের উত্তর
১. “কালি, কলম, মন লেখে তিনজন’ কিন্তু কলম কোথায়’ – লেখকের এ ধরনের মন্তব্যের কারণ কী? অংশটির তাৎপর্য লেখ।
উঃ “ হারিয়ে যাওয়া কালি কলম” শীর্ষক প্রবন্ধে লেখক নিখিল সরকার কালি কলমের অতীতের ছবি এবং বিবর্তনের পথ ধরে বর্তমানে তার অবস্থানের চমৎকার একটি দলিল পেশ করেছেন।
বাংলায় একটি প্রবাদের কথা প্রসঙ্গে লেখক আলোচিত মন্তব্যটি করেছেন। প্রপ্রবাদ হল “কালি কলম মন লিখে তিনজন”। তিনি যেখানে কাজ করেন সেটা একটা লেখালেখির অফিস। প্রাবন্ধিকের ভাষায় সবাই এখানে লেখক কিন্তু সেখানে কলমের ব্যবহার কেউই করেন না একমাত্র লেখক ছড়া। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি অফিসে কলম ব্যবহার করেন। বাকিরা সবাই কাজ করেন কম্পিউটারে। এমনকি লেখক যা লেখেন তারা ভালোবেসে লেখকের লেখাকেও ছাপার অক্ষরে তৈরি করে দেন। ফলে তাদের কলমের প্রয়োজন নেই। অথচ সেটা একটা লেখালেখির অফিস। যার আবশ্যিক উপাদান হল—কালি, কলম ও মন। অর্থাৎ কম্পিউটার এসে কালি এবং কলমের গুরুত্বকে কমিয়ে দিয়েছে। তাই হয়তো, এ প্রসঙ্গেই লেখক বলেছেন – কালি, কলম মন লেখে তিনজন।
2. ‘আমার মনে পড়ে প্রথম ফউন্টেন পেন কেনার কথা—লেখকের প্রথম ফাউন্টেন পেন কেনার অভিজ্ঞতা লেখ।
অথবা- “আমার মনে পড়ে প্রথম ফাউন্টেন কেনার কথা”- বক্তার আসল নাম কী ? তাঁর ফাউন্টেন কেনার ঘটনাটি সংক্ষেপে বিবৃত কর। ১+৪ [মাধ্যমিক ২০২০] হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রবন্ধের বড় প্রশ্নের উত্তর
উ: লেখক শ্রীপান্থ রচিত “হারিয়ে যাওয়া কালি কলম”- প্রবন্ধে তার প্রথম ফাউন্টেন পেন কেনার অভিজ্ঞতাটি জানিয়েছেন।
আলোচিত উক্তিটির বক্তা হলেন শ্রীপান্থ। বক্তা শ্রীপান্থের আসল নাম নিখিল সরকার। শ্রীপান্থ তার ছদ্মনাম। (দ্বিতীয় প্রশ্নের প্রথম অংশের উত্তর)
প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কয়েক বছর পর, কলেজ স্ট্রিটের এক নামি দোকানে গিয়েছিলেন ফাউন্টেন পেন কেনার জন্য। দোকানি পেনের নাম জানতে চাইলে, লেখক কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান। কারণ লেখকের বিশেষ কোনো পেনের নাম জানা ছিল না। দোকানদার লেখককে একে-একে পেনের নাম বলে যান- পার্কার, শেফার্ড, ওয়াটারম্যান, পাইলট ইত্যাদি। সঙ্গে কোনটার কি দাম তাও তিনি বলে দিচ্ছেন। দোকানদার অবশ্য লেখকের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারেন যে, লেখকের আর্থিক অবস্থা সেরকম নেই।
সেজন্য দোকানদার তাকে একটা শস্তার পাইলট বা জাপানি কলম কিনতে বলেন । কলমটির বিশেষত্ব বোঝানোর জন্য দোকানদার এক প্রান্তে একটি টেবিলের উপর দাঁড়ানো কাঠের বোর্ডের দিকে কলমটির মুখ খুলে ছুঁড়ে দেন এবং তারপর তিনি বোর্ড থেকে কলমটি খুলে নিয়ে দু এক ছাত্র লিখে দিয়ে লেখককে দেখালেন যে, সেটি আগের মতই অক্ষত আছে। সার্কাসে যেমন ছুরির খেলা দেখায় ঠিক সেই রকম। লেখক সেদিন জাপানি পাইলট নিয়ে ঘরে ফিরেছিলেন। যা তার দীর্ঘদিনের সঙ্গী হিসেবে ছিল।
হারিয়ে যাওয়া কালি কলম রচনাধর্মী প্রশ্ন – হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রবন্ধের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর – Hariye Jaoa Kali Kolom Descriptive Questions and Answers হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রবন্ধের বড় প্রশ্নের উত্তর
3 . “ পন্ডিতরা বলেন কলমের দুনিয়ায় যা সত্যি কারের বিপ্লব ঘটায় তা ফাউন্টেন পেন”- ফাউন্টেন পেন কিভাবে বিপ্লব ঘটায় তা প্রবন্ধ অনুসরণে লেখ।
উঃ প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থ ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে তাদের শৈশবকালের দোয়াত কলমের স্মৃতি তুলে ধরেছেন। ফাউন্টেন পেন আসার আগে পর্যন্ত লেখালেখির বিষয় বলতে কলম, দোয়াত, পালক। কিন্তু ফাউন্টেন পেন আবিষ্কারের পর কলমের দুনিয়ায় সতিকারের বিপ্লব ঘটায়।
ফাউন্টেন পেন যাকে বাংলায় বলা হয় ঝরনা কলম। নামটা বোধহয় রবীন্দ্রনাথের দেওয়া। যিনি এই অফুরন্ত কালির ফোয়ারা খুলে দিয়েছিলেন, তিনি হলেন লুইস অ্যাডশন ওয়াটারম্যান। তিনি রিজার্ভার পেনকে অনেক উন্নত করে তৈরি করেছিলেন ফাউন্টেন পেন। লেখক কালি কলমের ভক্ত হলেও তিনি হাই স্কুলে ভর্তির পর কঞ্চির কলমকে ছুটি দিয়ে নিবের কলমকে হাতে তুলে নেন। কালি বানানও বন্ধ হয়ে যায়। আবার ফাউন্টেন পেনের নিব এবং হ্যান্ডেলও ছিল রকমারি । রকমারি চেহারার সস্তা দামি ফাউন্টেন পেন বাজারে ছেড়ে ক্রমে হটিয়ে দেওয়া হলো দোয়াত আর কলমকে।
লেখকরা যখন কলেজে পড়েন তখন প্রত্যেক পড়ুয়ার পকেটেই ফাউন্টেন পেন। কঞ্চির কলম, খাগের কলম, পালকের কলম এইসব উধাও। সত্যি বলতে কলম এখন এতই সস্তা এবং এতই সর্বভোগ্য হয়ে গেছে যে পকেট মাররাও এখন আর কলম নিয়ে হাত ছাপাই এর খেলা দেখায় না। কলম তাদের কাছেও আজ অস্পৃশ্য হয়ে গেছে। এভাবেই কলমের দুনিয়ায় ফাউন্টেন পেন বিপ্লব ঘটিয়েছে।
4. “আমরা কালিও তৈরি করতাম নিজেরাই।”- কারা কালি তৈরি করতেন? তারা কীভাবে কালি তৈরি করতেন ? ১+৪ [মাধ্যমিক ২০১৯]
উঃ প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থ ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে তাদের শৈশবকালের দোয়াত কলমের স্মৃতি তুলে ধরেছেন। শৈশবে বক্তা শ্রীপান্ত কিভাবে নানা উপকরণের সাহায্যে, নিজেরাই কালি তৈরি করতেন- সে সম্পর্কে আলোচিত প্রবন্ধে জানিয়েছেন।
‘আমরা’ বলতে প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থ তাদের বাল্যকালের সময়ে, যারা দোয়াত কালি তৈরি করতেন- তাদের কথা বলতে চেয়েছেন। সে সময়ে বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে, তারা কালি তৈরি করতেন। (প্রশ্নে এই উত্তরটি চাওয়া হলে তবেই লিখবে)
ছোটবেলায় লেখক এবং তাঁরা সমবয়সীরা নিজেরাই ঘরোয়া উপায়ে, কালি তৈরি করতেন। কালি তৈরি সম্পর্কে একটি ছড়ারও উল্লেখ করেছেন লেখক-
“তিল ত্রিফলা শিমুল ছালা
ছাগ দুগ্ধে করি মেলা।।
লৌহপাত্রে লোহায় ঘষি
ছিঁড়ে পত্র না ছাড়ে মসি।।”
এই ছিল কালি তৈরি করার আদর্শ পদ্ধতি। লেখকদের এত আয়োজন ছিল না। তাঁরা কালি তৈরি করতেন সহজ পদ্ধতিতে। কাঠের উনুনে রান্নার পর কড়াইয়ের তলায় যে কালি জমতো, সেই কালি লাউপাতা দিয়ে ঘষে তুলে পাথরের বাটিতে গুলে নিতেন। যারা একটু ওস্তাদ, তারা ওই কালো জলে হরিতকী ঘষত, কখনো বা তার মাকে দিয়ে, আতপ চাল ভেজে পুড়িয়ে সেটা বেটে জলে মেশাত। সেই জলে লাল টকটকে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দেওয়া হতো। জল টগবগ করে ফোটার পর ন্যাকড়ায় ছেঁকে মাটির দোয়াতে ভরা হত। এই ভাবেই লেখকরা শৈশবে নানাবিধ আয়োজন করে, চমকপ্রদভাবে কালি তৈরি করতেন।
5. “আশ্চর্য, সবই আজ অবলুপ্তির পথে।”- কোন্ জিনিস আজ অবলুপ্তির পথে? এই অবলুপ্তির কারণ কী? এ বিষয়ে লেখকের মতামত কী? ১+১+৩ [মাধ্যমিক ২০১৮]
উঃ প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থ তাঁর ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে দোয়াত এবং কলমের অবলুপ্তির কথা স্বীকার করেছেন। অতীতের লেখালেখির অন্যান্য আনুষঙ্গিক জিনিস যেমন, নিব, কালি, দোয়াত, খাগ,পালক ইত্যাদির অবলুপ্তির কথা বলেছেন।
অতীতের এককালে কালি কলমের ব্যাপক ব্যবহার ছিল কিন্তু বর্তমানে কম্পিউটার এসে সেগুলি এখন অবলুপ্তির পথে । লেখক অবশ্য বঙ্কিমচন্দ্রের একটি উদ্ধৃতি দিয়েও বলেছেন “লাঠি তোমার দিন ফুরাইয়াছে” । লেখনী-যন্ত্র হিসেবে কম্পিউটারের ব্যাপক ব্যবহারই- এই অবলুপ্তির কারণ। ( যেহেতু এই প্রশ্নটি ১ নম্বরের তাই এটি সংক্ষেপে লিখতে হয়েছে। যদি এটি দুই বা তিন নম্বরে আসে তাহলে বিস্তারিত একটু লিখতে হবে।)
কলমের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়াতে লেখক বিপন্ন বোধ করেছেন। আসলে তিনি কালি কলমের যুগের মানুষ। শৈশবে তারা বাড়িতেই কালি তৈরি করতেন। ব্যক্তিগতভাবে তিনি কালি কলমের ভক্ত। কিন্তু কম্পিউটার তাদের অবলুপ্তির পথে পাঠিয়ে দিলেও ইতিহাসে তাদের ঠাঁই কিন্তু পাকা। লিপি কুশলীরা আগে মোগল দরবারে অনেক খাতির বা সম্মান পেতেন। এমনকি আমাদের দেশে প্রাচীন যুগে রাজা জমিদাররাও লিপি কুশলীদের সম্মান করতেন। তাদের ভরণ পোষণও ব্যবস্থা করতেন। তিনি যেখানে কাজ করতেন সেটা ছিল লেখালেখির অফিস। সেই অফিসেও এখন স্বমহিমায় জায়গা করে নিয়েছে কম্পিউটার। লেখক সেই অফিসে বসে যা লেখেন সেসব লেখাও তার সহকর্মীরা সাদরে টাইপ করে দেন। আর এইভাবে কলমের গুরুত্ব কমে যাওয়াতে লেখক মর্মাহত হয়েছেন। মানুষের হাত থেকে যদি কলম ছিনিয়ে নেওয়া হয়, মানুষের হাতের লেখা যদি চিরকালের মতো মুছে দেওয়া হয়, তাহলে তো দুঃখ লাগারই কথা।
6. “বিমর্ষ ওয়াটারম্যান মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেন” ওয়াটারম্যান বিমর্ষ হলেন কেন? তিনি কি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন
অথবা- “এর একটা বিহিত তাকে করতেই হবে” এখানে কার কথা বলা হয়েছে? উক্ত ব্যক্তি কিভাবে কিসের বিহিত করেছিলেন?
অথবা – ‘ফাউন্টেন পেন’ বাংলায় কী নামে পরিচিত? নামটি কার দেওয়া বলে উল্লেখ করা হয়েছে? ফাউন্টেন পেনের জন্ম ইতিহাস লেখো। ১+১+৩ [মাধ্যমিক ২০১৭]
উঃ “হারিয়ে যাওয়া কালি কলম” নামাঙ্কিত প্রবন্ধে, প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থ ফাউন্টেন পেন আবিষ্কার বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন। ওয়াটারম্যান নামে এক ব্যবসায়িকের ভাবনা থেকেই ফাউন্টেনের জন্মলাভ বলে, প্রাবন্ধিক জানান।
প্রবন্ধ থেকে জানা যায়, ‘ফাউন্টেন পেন’ বাংলায় ‘ঝরনা কলম’ নামে পরিচিত এবং নামটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেওয়া হতে পারে।
‘ফাউন্টেন পেন’-এর পূর্বনাম ছিল ‘রিজার্ভার পেন’। একেই উন্নত করে ‘ফাউন্টেন পেন’-এর রূপদান করা হয়েছিল। ‘ফাউন্টেন পেন’- এর স্রষ্টা ছিলেন লুইস অ্যাডসন ওয়াটারম্যান নামে জনৈক ব্যবসায়ী। তার জন্মস্থান নিউইয়র্কে। অর্থ উপার্জনের জন্য নানা পেশা অবলম্বন করলেও শেষকালে তিনি বীমা কোম্পানিতে কাজ করেন।
ওয়াটারম্যান ব্যবসাহিক সূত্রে একদিন এক ব্যবসায়িকের সঙ্গে চুক্তিপত্রে আবদ্ধ হতে গিয়ে সই করতে যান। কিন্তু হঠাৎ তার দোয়াত থেকে সমস্ত কালি, ওই পত্রে পড়ে যায় এবং সেটি নষ্ট হয়। পুনরায় তিনি কালির সন্ধানে বের হন। ফিরে এসে শোনেন, ইতিমধ্যে আর একজন তৎপর ব্যবসায়ী সই সাবুদ সম্পন্ন করে চুক্তিপত্র পাকা করে ফেলেছেন। ব্যবসায়ী এই ক্ষতি দেখে তিনি অত্যন্ত বিমর্ষ হন। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন এই মর্মে যে, আর কোনভাবেই এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে দেবেন না। তিনি ঠিক করলেন- “এর একটা বিহিত তাকে করতেই হবে”। তার এই ভাবনা থেকেই, তার আকাঙ্ক্ষায় জন্ম লাভ করে ফাউন্টেন পেন।
(এই প্রশ্নটির উত্তর যে অংশটুকু চাইবে সেই অংশটুকু তোমরা লিখবে)
7. “মুঘল দরবারে একদিন তাদের কতনা খাতির, কতনা সম্মান।”- আলোচ্য অংশে কাদের কথা বলা হয়েছে? তাদের খাতির ও সম্মানের পরিচয় দাও। ১+৪ হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রবন্ধের বড় প্রশ্নের উত্তর
উঃ বিশিষ্ট প্রবন্ধকার নিখিল সরকারের লেখা ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে, সাধারণত যারা ওস্তাদ কলমবাজ অর্থাৎ ক্যালিগ্রাফিস্ট বা লিপি কুশলী, তাদের খাতিরের কথাই এখানে বলা হয়েছে।
যারা হাতের লেখায় দক্ষ অর্থাৎ কলম দিয়ে সুন্দর হস্তাক্ষরে কোন বিষয়ে লিপিবদ্ধ করেন কিংবা নকল করেন তাদের বলা হয় ক্যালিগ্রাফিস্ট বা লিপি কুশলী। মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের আগে পর্যন্ত শিক্ষিত সমাজে লিপিকুশলীদের বিশেষ কদর ছিল।
একসময় মুঘল দরবারে লিপিকুশলীদের অনেক খাতির ও সম্মান ছিল। প্রাবন্ধিকের মতে, বিশ্বের সকল রাজদরবারেই তাদের বিশেষ মর্যাদা ছিল। প্রাচীন বাংলাতেও রাজা-জমিদাররা লিপিকুশলীদের ‘গুণী’ বলে সম্মান করতেন এবং তাদের ভরণপোষণের ব্যবস্থাও করতেন। অনেক সম্ভ্রান্ত পরিবারেও লিপিকরদের দিয়ে পুথি নকল পড়াতেন। তাদের সুন্দর হস্তাক্ষর সম্পর্কে প্রাবন্ধিক বলেছেন, “সমানি সম শীর্ষাণি ঘনানি বিরলানি চ।”
খ্যাতি থাকলেও লিপিকুশলীদের রোজগার খুব বেশি ছিল না। অষ্টাদশ শতকে চারখন্ড রামায়ণ কপি করে একজন লিপিকর নগদ সাত টাকা, কিছু কাপড় ও মিঠাই পেয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, উনিশ শতকের ইংরেজ আমলে, বারো আনা খরচ বত্রিশ হাজার অক্ষর লেখানো যেত। এ থেকেই অনুমান করা যায় যে, লিপি কুশলীরা সে সময়ে যথেষ্ট সম্মান ও খাতির পেতেন।
8. ‘কলমকে বলা হয় তলোয়ারের চেয়েও শক্তিধর’ – কথাটি কে, কোন প্রসঙ্গে বলেছেন? এই মন্তব্যের কারণ কি ?
অথবা- মন্তব্যটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।
অথবা- “ফাউন্টেন পেনও হয়তো আভাসে ইঙ্গিতে তাই বলতে চাই”- কে কোন প্রসঙ্গে কথাটি বলেছেন? ফাউন্টেন পেন আভাসে ইঙ্গিতে কি বলতে চায়?৫
উঃ বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থ ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে কলমের মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে গিয়ে কিছুটা বিষন্নতা বা বেদনাহত অনুভূতি নিয়ে, কলমকে ‘তলোয়ারের চেয়েও শক্তিধর’ বলেছেন।
লেখক শ্রীপান্থ তার কর্মক্ষেত্রে কম্পিউটারের ব্যবহার দেখে, তিনি অত্যন্ত হতাশ হয়েছেন। কারণ আজকাল কালিকলম বা কলম প্রায় অবলুপ্তির পথে। অথচ এই কলমের সাহায্যেই একদা অজস্র রকমের লেখালেখি বা মহৎ কার্য সাধিত হয়েছে। এইসব কথা বলার প্রসঙ্গেই লেখক, সেই কলমের যে কত জোর, কত ক্ষমতা, কত গল্পকথা, লেখা হয়েছে – সেই কথা বলতে গিয়েই, এমন মন্তব্যের করেছেন।
বাংলায় একটি প্রবাদ আছে- “অসির চেয়ে মসি বড়”। এই প্রবাদবাক্যটি গভীর তাৎপর্যপূর্ণ।তলোয়ার তথা অস্ত্র অপেক্ষা কলম বা লেখনী যে প্রচন্ড শক্তিধর, তা বলার অপেক্ষায় রাখে না। তবে লেখক অবশ্য বলেছেন যে, ফাউন্টেন পেনের উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত ‘ব্যারেল’, ‘কার্টিজ’ শব্দের মধ্যে বারুদের গন্ধ কানে আসে।অন্যদিকে ইতিহাসে কিন্তু অনেক পালকের কলমধারীকে সত্যিই কখনো কখনো তলোয়ার হাতে লড়াই করতে হয়েছে, মিথ্যাচারী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। স্বৈরাচারী শাসক তলোয়ারের সাহায্যে প্রতিবাদী মানুষের মুন্ডুপাত করতে পারে বা প্রতিপক্ষকে প্রতিহত করতে পারে। ইতিহাসে বা অতীতে এমন ঘটনার নজির পাওয়া যায় বহু । কিন্তু কলমের লেখনীর এমন এক শক্তি যা স্বৈরাচারী শাসকের সিংহাসনকেউ টলিয়ে দিতে পারে । স্বৈরাচারী শাসকের অস্ত্র যেমন তলোয়ার তেমনি বুদ্ধিজীবীদের কাছে অস্ত্র কলম। কারণ বুদ্ধিজীবীরা কলমের সাহায্যে মানুষকে অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন । তলোয়ারের শাসন দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু কলমের ব্যবহার গোটা বিশ্বে । কলমের আঁচর গোটা বিশ্ববাসীকে জাগিয়ে তুলতে পারে, এই জন্য বলা হয় কলম তলোয়ারের চেয়েও শক্তিধর।
9. “ সব মিলিয়ে লেখালেখি রীতিমতো ছোটোখাটো একটা অনুষ্ঠান। ” লেখালেখি ব্যাপারটিকে ছোটোখাটো অনুষ্ঠান বলা হয়েছে কেন তা বুঝিয়ে দাও। হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রবন্ধের বড় প্রশ্নের উত্তর
উঃ মননশীল প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থের লেখা ‘ হারিয়ে যাওয়া কালি কলম ‘ প্রবন্ধে দোয়াত এবং কলমের মহত্ব সম্পর্কে নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করেছেন।
কালি ও কলমের বিবর্তনের ইতিহাসটিকে আলোচ্য প্রবন্ধে লেখক সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। শৈশবে ছিল লেখকের নিজের হাতে বাঁশের কঞ্চি কেটে তৈরি করা কলম। পরে হাই স্কুলে ভর্তির পর কঞ্চির কলমের ব্যবহার তিনি ছেড়ে দেন। কালি তৈরিও তখন বন্ধ। এর পরিবর্তে বাজারে আসে লাল নীল রংয়ের কালির ট্যাবলেট এবং তাদের বাহারি নামের দোয়াত। বোতলের কালি সংগ্রহ করতেন। এই সমস্তটাই ফাউন্টেন পেনের জন্য। কচ্ছপের খোল বা গরুর সিং থেকে নিব তৈরি হতো। কিংবা শিংয়ের নিবের মুখে হিরে বসানো হতো। কখনো প্লাটিনাম বা সোনা বসিয়ে তাকে আবার দামি এবং পোক্ত করা হতো।
লেখা শুকনো করার জন্য দুটি পদ্ধতির কথাও বলা হয়েছে। প্রথমটি বালির সাহায্যে দ্বিতীয়টি ব্লটিং পেপারের সাহায্যে। পরবর্তীকালে পুরনো কলম দোয়াত কালি ব্লটিং পেপার এইসব উঠে যায় এবং কলেজে পড়ার সময় থেকেই লেখক দেখতে পান ফাউন্টেন পেন বাজারে ছেয়ে গেছে এবং সবার হাতেই ফাউন্টেন পেন। সেইসঙ্গে শিক্ষিত ঘরে কিংবা অফিস আদালতে, টেবিল থেকেও উধাও জোড়া দোয়াত কলম এখন সেগুলো ঘরে সাজিয়ে রাখবার আসবাবপত্রে পরিণত হয়েছে। সব মিলিয়ে লেখালেখি যেন রীতিমতো একটা ছোটখাটো অনুষ্ঠান ছিল।
10. কালি – কলমের প্রতি ভালোবাসা হারিয়ে যাওয়া কালি কলম ‘ প্রবন্ধে কীভাবে ফুটে উঠেছে তা আলোচনা করো।
অথবা , “ কম্পিউটার তাদের জাদুঘরে পাঠাবে বলে যেন প্রতিজ্ঞা করেছে। ” ‘ তাদের ’ বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে ? তাদের ঐতিহ্যের প্রতি লেখক শ্রদ্ধাশীল কেন ?
উঃ প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থ তার “হারিয়ে যাওয়া কালি কলম” নামক প্রবন্ধে, অতীতের দোয়াত কলমের ব্যবহার এবং তার মহত্ত্ব, খুব সুন্দর ভাবে বর্ণনা করেছেন। তখনকার সময়ে কলমের বা দোয়াতের প্রতি একটা আবেগ – অনুভূতি এবং গভীর ভালোবাসা, তিনি আলোচ্য প্রবন্ধে প্রকাশ করেছেন। এবং সেই সঙ্গে সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই দোয়াত কালি কলমের অবলুপ্তির কথাও স্বীকার করেছেন।
“তাদের”- বলতে এখানে আগেকার নানা ধরনের কলম , কালি ও দোয়াত সহ ফাউন্টেন পেন এবং বলপেনের কথা বলা হয়েছে। (দ্বিতীয় প্রশ্নটির প্রথম ভাগের উত্তর)
লেখক শ্রীপান্থের কালি , কলমের শখ থাকায় ছোটোবেলায় নানা ধরনের কলম তিনি ব্যবহার করতেন। তিনি যেখানে কাজ করতেন সেখানে কম্পিউটারের ব্যবহারের কথা বলেছেন এবং লেখালেখির অফিসে কলমের ব্যবহার খুব কম। এজন্য তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে হয়তো বলেছেন- “কালি নেই, কলম নেই, বলে আমি মুন্সি” । লেখক গ্রামের ছেলে। কালি কলমের সঙ্গে তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শৈশবে নিজেরাই কালি তৈরি করতেন। বাঁশের কলম তৈরি করতেন। কলাপাতা, মাটির দোয়াত, বাঁশের কলম- এই ছিল লেখকদের শৈশবের লেখালেখির বিষয়।তারপর সময়ের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বাজারে আসতে থাকে নানা ধরনের ফাউন্টেন পেন। কিন্তু পুরাতন দিনের সেই কালি , কলম এবং দোয়াত এখন সে অবলুপ্তির পথে। তার জায়গা দখল করে নিয়েছে কম্পিউটার। এই প্রসঙ্গেই লেখক হয়তো আক্ষেপ করে বলেছেন- “এত বছর পরে সেই কলম যখন হাতছাড়া হওয়ার উপক্রম, তখন মনে কষ্ট হয় বৈকি”- আমরা এর থেকে বুঝতে পারি, লেখক কলমের প্রতি কতটা অনুরক্ত। তাছাড়া এই সমস্ত প্রাচীন দোয়াত কলমের আসন্ন বিলুপ্তির কথা ভেবেও লেখক আশঙ্কা ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। সব ক্ষেত্রেই তিনি কলমের প্রতি তার গভীর ভালোবাসায় ব্যক্ত করেছেন আলোচিত প্রবন্ধে।
হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রবন্ধের বড় প্রশ্নের উত্তর হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রবন্ধের বড় প্রশ্নের উত্তর হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রবন্ধের বড় প্রশ্নের উত্তর হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রবন্ধের বড় প্রশ্নের উত্তর হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রবন্ধের বড় প্রশ্নের উত্তর হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রবন্ধের বড় প্রশ্নের উত্তর