> বাংলা ভাষা ও শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি ভাষা class12 » Qবাংলা

বাংলা ভাষা ও শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি ভাষা class12

দ্বাদশ শ্রেণীর wbchse বাংলা বিষয়ের দ্বিতীয় পাঠ্য বই বাংলা ভাষা ও শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি ইতিহাস। এই বইয়ের দ্বিতীয় ভাগে ভাষা অংশ আছে|এই বই থেকে কমনযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর খুব সুন্দর ভাবে সাজানো হয়েছে। প্রিয় ছাত্র-ছাত্রী তোমাদের অনুরোধ উত্তরগুলি দেখার পাশাপাশি উত্তর লেখার কৌশলটি লক্ষ্য কর বিভিন্ন প্যারা এবং তার কতটুকু উত্তর লিখতে হয় সমস্ত কিছু বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। উত্তর লেখার ধরনটি ভালোভাবে লক্ষ্য করো। দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের অন্যান্য আরো প্রশ্ন উত্তর দেখতে click here

দ্বিতীয় পর্ব- বাংলা ভাষা ও শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি

১) তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞানের সূত্রপাত কে করেছিলেন ?
উঃ ১৭৮৬ খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম জোন্স তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞানের সূত্রপাত করেছিলেন।

২) তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞানের কাজ কি ?
উঃ তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞান সমগোত্রজ ভাষাগুলির মধ্যে তুলনা করে এবং তাদের উৎস ভাষাকে বা মূল ভাষাকে পুনঃনির্মাণ করে।

৩) বর্ণনামূলক ভাষা বিজ্ঞানের কাজ কি?
উঃ সমকালীন প্রচলিত ভাষার গঠন রীতির বিচার বিশ্লেষণ করা বর্ণনামূলক ভাষাবিজ্ঞানের প্রধান কাজ।

৪) ভাষাবিজ্ঞানের প্রধান শাখা গুলি কি কি? 
উঃ  বিজ্ঞানের প্রধান শাখা গুলি হল তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞান, ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান এবং সমকালীন ভাষাবিজ্ঞান

৫) ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞানের কাজ কি ?
উঃ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাষার যে বিবর্তন হয় এবং সেই বিবর্তনের ফলে যে যে পরিবর্তন ভাষার সংগঠনে দেখা যায় তা নির্দেশ করা- ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞানের প্রধান কাজ।

৬) সমাজ ভাষাবিজ্ঞান কাকে বলে?2022 অথবা- সমাজ ভাষাবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় কি?
উঃ ভাষা কিভাবে সমাজে কাজ করে এবং সমাজ কিভাবে ভাষার উপর প্রভাব বিস্তার করে। ভাষাবিজ্ঞানের যে শাখাটি এই নিয়ে চর্চা করে তাকে বলে সমাজ ভাষাবিজ্ঞান।

৭) শৈলী বিজ্ঞান বলতে কী বোঝো ?
উঃ কোন লেখকের লেখার ধরন বা লেখার শৈলী বিশ্লেষণকেই শৈলী বিজ্ঞান বলা হয়।

৭) LAD এর সম্পূর্ণ নাম কি? 
উঃ LAD এর সম্পূর্ণ নাম হলো- Language Acquisition Device

৮) “Dictionary” শব্দটি কে, কোথায় প্রথম ব্যবহার করেন ?
উঃ স্যার থমাস এলিয়েট ল্যাটিন ইংরেজি অভিধানে “Dictionary” শব্দটি প্রথম ব্যবহার হয় ১৫৩৮ (2022)

৯) পারোল কি ?
উঃ ভাষা ব্যবহারের উপাদান নির্বাচন ও প্রতিস্থাপনের মধ্যে দিয়ে নিজস্ব একটি বিন্যাসে স্পষ্ট ও প্রকট বাচন ক্রিয়া হলো পারোল।

১০) ধ্বনি বিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় কি?
উঃ ধ্বনি বিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় হল- বাগধ্বনির উচ্চারণগত শ্রুতিগত ও ধ্বনি তরঙ্গ গত বিশ্লেষণ করা।

১১) বাংলা ভাষায় মৌলিক স্বরধ্বনির সংখ্যা কটি ?
উঃ বাংলা ভাষায় মৌলিক স্বরধ্বনির সংখ্যা ৭ টি

১২) যুক্ত ধ্বনি কাকে বলে ? 
উঃ যে ব্যঞ্জনধ্বনির সমাবেশগুলি শব্দের আদ্য অবস্থানে বা দলের আদিতে উচ্চারিত হতে পারে সেগুলিকে যুক্ত ধ্বনি বলে। যেমন- প্র (প+র)

১৩) গুচ্ছধ্বনি কাকে বলে ?
উঃ পাশাপাশি উচ্চারিত দুটি ব্যঞ্জনধ্বনির সমাবেশকে গুচ্ছধ্বনি বলে। যেমন- বস্তা, অক্ষয়

১৪) শ্বাসাঘাত বলতে কি বোঝ ?
উঃ শ্বাসাঘাত হল একাধিক দল যুক্ত শব্দের কোন একটি দলকে অপেক্ষাকৃত বেশি জোর দিয়ে উচ্চারিত করা।

১৫)  সুরতরঙ্গ কাকে বলে ? 
উঃ বাক্যে সুরের ওঠা পড়াকে সুর তরঙ্গ বলে। যেমন- বিবৃতি বাক্যে- “মিঠু কাল স্কুল যাবে” এবং প্রশ্নবাক্যে- “মিঠু কাল স্কুলে যাবে?” এই দুটি বাক্যের উচ্চারণে সুরের ওঠাপড়া দু’রকমের।

১৬) ন্যূনতম শব্দজোড় কাকে বলে? একটি উদাহরণ দাও।        
উঃ ন্যূনতম শব্দজোড় হল- যেখানে দুটি ভিন্ন শব্দের মধ্যে উচ্চারণের ন্যূনতম পার্থক্য বর্তমান থাকে। যেমন- তালা-থালা, নরম-গরম।

১৭) ক্র্যানবেরি রূপমূল কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উঃ যে পরাধীন রূপমূলগুলোর আভিধানিক বা ব্যাকরণগত কোনো অর্থ থাকে না, অথচ একটি শব্দকে অন্য শব্দ থেকে পৃথক করতে পারে, তাকেই ক্র্যানবেরি মূল বলে। যেমন- আলাপ, প্রলাপ, বিলাপ শব্দের “লাপ” অংশটি।

১৮) ক্লিপিংস বা সংক্ষেপিত পদ কাকে বলে?
উঃ ক্লিপিংস এমন এক ধরনের প্রক্রিয়া যেখানে শব্দের চেহারার পরিবর্তন ঘটে, আকারে ছোট হয়ে যায় অথচ শব্দের অর্থের পরিবর্তন হয় না। যেমন- টেলিফোন থেকে ফোন এরোপ্লেন থেকে প্লেন।

১৯) জোড়কলম রূপ বলতে কী বোঝো? উদাহরণ দাও।
উঃ জোড়কলম রূপমূল বলতে এমন এক ধরনের রূপকে বোঝায় যার মধ্যে একাধিক রূপমূলের সমবায় থাকে। যেমন ধোঁয়া ও কুয়াশা মিলে হয় ধোঁয়াশা।

২০) বিকল্প বিকল্পন বলতে কি বোঝ?
উঃ বিকল্প এমন এক ধরনের পদ গঠন প্রক্রিয়া যেখানে দুটি পদের পারস্পরিক সম্পর্কের ধ্বনিতাত্ত্বিক চেহারার রূপ স্বাভাবিক নিয়মের আদলে তৈরি হয় না, ব্যতিক্রমী রূপে চোখে পড়ে।
যেমন- ইংরেজি শব্দের ক্ষেত্রে ed যোগ করে অতীতকালে ক্রিয়াপদ বোঝায়। কিন্তু go ক্রিয়াপদের বেলায় অন্য নিয়ম। এখানে goed না হয়ে হয়েছে went । তাই বলা হয় এখানে বিকল্পন ঘটেছে

২১) মুন্ডমাল শব্দ কাকে বলে? দুটি উদাহরণ দাও।
উঃ একটি শব্দগুচ্ছের প্রত্যেকটি শব্দের শুধুমাত্র প্রথম ধ্বনিগুলির সমাবেশ ঘটিয়ে যখন একটি শব্দ তৈরি করা হয়, তার নাম দেওয়া হয় মুন্ডমাল শব্দ। বিশেষত ইংরেজি ভাষায় এর উদাহরণ প্রচুর আছে। যেমন- VIP= Very Important Person
DM=District Magistrate

২২) সঞ্জননি ব্যাকরণ কাকে বলে?
উঃ সমস্ত বাক্য কিভাবে সঞ্জাত হয় তার খবর যে ব্যাকরণ দেয়, তাকে বলা হয় সঞ্জননি ব্যাকরণ।

২৩) যেসব প্রক্রিয়ায় বাক্যের চেহারা বদলে দেয় তাদের কি বলে?
উঃ  সংবর্তন

২৪) থিসরাস কি? একটি বাংলা থিসরাসের উদাহরণ দাও। ২০২০
উঃ শব্দার্থের বিশাল জগতকে সুশৃংখলভাবে বিন্যাস করার একটি নিদর্শন হলো থিসরাস। থিসরাস শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হল রত্নাগার। সংস্কৃত ভাষায় লিখিত “অমরকোষ” এর উদাহরণ।

২৫)  প্রয়োগতত্ত্ব কাকে বলে? সংক্ষিপ্ত উদাহরণ দাও। ২০২০
উঃ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভাষার ব্যবহার ভাষার অর্থের ওপর যে প্রভাব ফেলে তার আলোচনাকেই বলা হয় শব্দার্থের প্রয়োগতত্ত্ব।
উদাহরণ- “আমি তোমাকে যেতে বলছি, তোমাকে নয়”- এই বাক্যটিতে বক্তা একজনকে যেতে বলছেন এবং অন্যজনকে থাকতে বলছেন কিন্তু কাকে কোনটা বলছেন তা শুধুমাত্র ভাষায় ছাড়া বোঝা অসম্ভব অর্থাৎ অঙ্গুলির নির্দেশ না করলে বোঝা অসম্ভব। এটাকেই বলা হয় প্রয়োগতত্ত্ব।

২৬) উপসর্গ কাকে বলে?
উঃ  উপসর্গ হলো শব্দের একেবারে শুরুতে বসা এক প্রকার অব্যয় এই ধরনের অব্যয় পদের মানে বদলে দেয়। যেমন- অ- উপসর্গ যোগে পদ- অজানা, অচেনা ইত্যাদি।

২৭) ভিত্তি কাকে বলে?
উঃ পদের যে অংশ কোন নির্দিষ্ট প্রত্যয়ের বা উপসর্গের ভিত হিসেবে কাজ করে, সেই অংশের নাম ভিত্তি।

২৮) একটি স্বাধীন রূপমূল এবং একটি পরাধীন রূপমূলের উদাহরণ দাও।
উঃ  মানুষকে শব্দটির স্বাধীন রূপমূল হলো মানুষ এবং পরাধীন রূপমূল হল কে

২৯) ঐতিহাসিক শব্দার্থতত্ত্বের আলোচ্য বিষয় কি? ২০১৮
উঃ ঐতিহাসিক শব্দার্থ তত্ত্বের আলোচ্য বিষয় হলো- সময়ের সাথে  ভাষায় অর্থের পরিবর্তনের আলোচনা।

৩০) স্যার উইলিয়াম জোন্স সংস্কৃত ভাষার সঙ্গে যেসব ভাষার প্রচুর মিল খুঁজে পেয়েছিলেন তার মধ্যে দুটি ভাষার নাম লেখ।                                                                                                     ২০১৮
উঃ স্যার উইলিয়াম জোন্স সংস্কৃত ভাষার সঙ্গে যেসব ভাষার প্রচুর মিল খুঁজে পেয়েছিলেন তার মধ্যে দুটি ভাষা হল গ্রিক, ল্যাটিন।

৩১) মুখের মান্য বাংলায় স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনির সংখ্যা কত?                                                ২০১৮
উঃ মুখের মান্য বাংলায় স্বরধ্বনির সংখ্যা-৭
ব্যঞ্জনধ্বনির সংখ্যা-৩০

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

১) শব্দার্থ পরিবর্তনের ধারা কয়টি এবং কি কি? যে কোন একটি ভাগ উদাহরণ সহ বুঝিয়ে দাও।
অথবা- শব্দার্থের পরিবর্তন বলতে কী বোঝো? উদাহরণসহ শব্দার্থের সংকোচ ও প্রসার সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা- উদাহরণ সহযোগে শব্দার্থের পরিবর্তনের ধারা গুলি আলোচনা করো।
উঃ শব্দের অর্থ সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়। একই শব্দ দীর্ঘকাল একই অর্থ বহণ করে না। কালের নিয়মে, সেই শব্দের অর্থ পরিবর্তিত হয়। একেই শব্দার্থ পরিবর্তন বলা হয়। ভাষাবিজ্ঞানীরা এই শব্দার্থ পরিবর্তনের ধারাকে তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করেছেন।যেমন-   শব্দার্থের প্রসার,   শব্দার্থের সংকোচ,শব্দার্থের রূপান্তর।

শব্দার্থের প্রসার- সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যখন কোন শব্দ তার আদি অর্থ ছেড়ে নতুন কোন শব্দকে বোঝায়, তখন তাকে অর্থের প্রসার বলে। এক্ষেত্রে একটি শব্দের মূল অর্থ এবং তার এক বা একাধিক সহযোগী অর্থ থাকে।
উদাহরণ- “কালি” শব্দটির আদি অর্থ ছিল “কালো রঙের তরল বস্তু”। কিন্তু বর্তমানে সময়ের পরিবর্তনের ফলে এই শব্দটির অর্থের প্রসার ঘটেছে। বর্তমানে “কালি” বলতে লাল, নীল, সবুজ নানা রঙের কালিকেই বোঝায়।

শব্দার্থের সংকোচ- যখন কোন শব্দের আদি অর্থ পরিবর্তিত হয়ে বর্তমানে তার অর্থের ব্যাপকতা কম বোঝায়, তখন তাকে অর্থের সংকোচ বলে।
উদাহরণ- অন্য শব্দটির আদি অর্থ যে কোন খাদ্যকেই বোঝাত কিন্তু বর্তমানে এই শব্দটির অর্থ দাঁড়িয়েছে একপ্রকার ভাত অর্থাৎ এখানে অর্থের সংকোচ ঘটেছে।

শব্দার্থের রূপান্তর- শব্দার্থের পরিবর্তনের যে ধারায় একটি শব্দের আদি অর্থ যখন পরিবর্তিত হয়ে অন্য অর্থের রূপান্তরিত হয় তখন তাকে অর্থের রূপান্তর বলে।
উদাহরণ- “গোষ্ঠী” শব্দটির আদি অর্থ হলো গবাদি পশুর থাকার জায়গা। কিন্তু বর্তমানে এর অর্থ রূপান্তরিত হয়ে দাঁড়িয়েছে সমূহ।  (বাংলা ভাষা ও শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি 2023)

২) রূপমূল কাকে বলে? উদাহরণসহ স্বাধীন ও পরাধীন উপমূলের পরিচয় দাও অথবা স্বাধীন এবং পরাধীন রূপমূল বলতে কী বোঝো? উদাহরণসহ আলোচনা কর |
উঃ পদের ছোট ছোট অর্থপূর্ণ ন্যূনতম অংশকে বলা হয় রূপমূল অর্থাৎ পদের ছোট ছোট অর্থপূর্ণ অংশেরই রুপ হল রূপমূল। রূপমূল সাধারণভাবে দুই রকমের হয় যথা- স্বাধীন রূপমূল এবংপরাধীন রূপমূল

স্বাধীন রূপমূল- যে রূপমূল স্বাধীনভাবে বাক্যে ব্যবহার করা যায় তাদের স্বাধীন উপমূল বলে। যেমন- মানুষ গাছ প্রাণী ইত্যাদি।
পরাধীন রূপমূল- যে রূপমূল স্বাধীন রূপমূলের সাথে যুক্ত অবস্থায় থাকে তাকে পরাধীন রূপমূল বলে। অর্থাৎ এই রূপমূল স্বাধীন রূপমূলের উপর নির্ভরশীল।
যেমন- “মানুষকে” শব্দটির “মানুষ” হলো স্বাধীন রূপমূল এবং “কে” হলো পরাধীন রূপমূল

৩) অবিভাজ্য ধ্বনি কাকে বলে? দুটি অবিভাজ্য ধ্বনির পরিচয় দাও। 
উঃ বিভাজ্য ধ্বনিকে মুখের কথার ধ্বনি প্রবাহ থেকে কৃত্রিমভাবে হলেও খণ্ড খন্ড করে বিভাজন করা যায়। যেমন “তুমি” কথাটার উচ্চারণের খন্ড গুলি হল ত্ + উ + ম্ + ই। কিন্তু ভাষায় আরো কিছু ধ্বনি উপাদান থাকে, যেগুলোকে এই রকম কৃত্রিমভাবেও খন্ড করা যায় না। কারণ এইরকম উপাদানগুলি কোন বিভাজ্য ধ্বনির অংশ নয় বরং এগুলি একাধিক ধ্বনি খণ্ড জুড়ে অবস্থান করে। এগুলোকে বলা হয় অবিভাজ্য ধ্বনি। বাংলাতেও এইরকম কয়েকটা অবিভাজ্য ধ্বনি আছে। তবে বাংলায় এই অবিভাজ্য ধ্বনির উপস্থিতির কারণে শব্দের অর্থ পরিবর্তন হয় না। দুটি অবিভাজ্য ধ্বনি হল- 1.শ্বাসাঘাত, 2.সুরতরঙ্গ

শ্বাসাঘাত-  শ্বাসাঘাত হল একাধিক দলযুক্ত শব্দের কোন একটি দলকে অপেক্ষাকৃত বেশি জোর দিয়ে উচ্চারণ করা। বাংলায় সাধারণত শব্দের প্রথম দলটিতে শ্বাসাঘাতের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। শ্বাসাঘাতের উপস্থিতি পুরো দল জুড়ে। কোন নির্দিষ্ট ধ্বনিতে নয়, তাই এটি অবিভাজ্য ধ্বনি।
সুরতরঙ্গ- বাক্যে সুরের ওঠা-পড়াকে সুরতরঙ্গ বলে। যেমন বিবৃতি বাক্যে “মিঠু কাল স্কুলে যাবে” এবং প্রশ্ন বাক্যে “মিঠু কাল স্কুলে যাবে?” এই দুটি বাক্যের উচ্চারণে সুরের ওঠাপড়া দু রকমের। তাই সুরতরঙ্গ একটি অবিভাজ্য ধ্বনি।

৪) উদাহরণসহ ধ্বনিমূল ও সহধ্বনি-র সম্পর্ক বুঝিয়ে দাও।
উঃ ধ্বনিতত্ত্বের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হলো ধ্বনিমূল ও সহধ্বনি। বাংলা বলার সময় আমরা যতগুলি ধ্বনি উচ্চারণ করি, সবকটিকেই সাধনভাবে ধ্বনি বলা হলেও ভাষায় আসলে এগুলি দু ধরনের ভূমিকা পালন করে- একটি ধ্বনিমূল এবং আরেকটি ধ্বনিমূলের সহধ্বনি।

ধ্বনিমূল ও সহধ্বনির সম্পর্ককে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:- প্রথমত- প্রতিটি ধ্বনিমূল হল এক একটি ধ্বনি পরিবার- সহধ্বনিগুলি সেই পরিবারেরই সদস্য। কোনো পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি আবার কোন পরিবারের কম।যেমন- /ল/ পরিবারের সদস্য সংখ্যা তিন। একই পরিবারের সদস্যরা দুটি শর্ত পূরণ করে- (ক) তাদের মধ্যে উচ্চারণগত মিল থাকবে। (খ) সদস্যরা পরস্পরের সঙ্গে পরিপূরক অবস্থানে থাকবে অর্থাৎ

দ্বিতীয়তঃ-ধ্বনিমূল একটি কল্পনা। যার বাস্তব উপলব্ধি হলো সহধ্বনি। অর্থাৎ একাধিক সহধনীর বাস্তব উচ্চারণের আড়ালে একটি করে কাল্পনিক ধ্বনিমূল আছে। যেমন /ল/ এর অস্তিত্ব কাল্পনিক বা মানসিক। এর তিনটি সহধ্বনি হলো ভাষায় বাস্তব বা আসলে উচ্চারিত রূপ।

তৃতীয়ত:–ধ্বনিমূল ভাষায় অর্থের তফাৎ করতে সমর্থক কিন্তু সহধ্বনি অর্থের তফাৎ করতে পারেনা। যেমন “জাল” ও “মাল”। [ল] ধ্বনিমূলের পরিবর্তে “ম” উচ্চারণ করলে আমরা অন্য একটি শব্দ পায়। যার মানে আলাদা কিন্তু যদি “জাল” শব্দটা চেষ্টা করে দন্ত্য /ল/ দিয়ে উচ্চারণ করি, তাহলে কানে একটু অদ্ভুত শোনালেও মানে বদলাবে না অর্থাৎ ভাষায় ধনিমূল ও সহধ্বনি আসলে আলাদা ধরনের দায়িত্ব পালন করে। ধ্বনিমূল কথার অর্থ পরিবর্তন করে, সহধ্বনি উচ্চারণ ঠিক রাখে।

৫) শব্দার্থের উপাদানমূলক তত্ত্বটি উদাহরণসহ আলোচনা কর।
উঃ শব্দার্থের উপাদানমূলক বিশ্লেষণের মূল ধারণা হলো- একটি বস্তুকে যেমন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশে ভেঙ্গে তার অনু-পরমানু বিশ্লেষণ করলে বস্তুটি সম্পর্কে একটা সম্যক ধারণা পাওয়া যায়। তেমনি শব্দার্থকে ভেঙে তার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশকে বিশ্লেষণ করলে সেই শব্দের একটি পরিষ্কার ধারণা এবং অন্যান্য শব্দের সঙ্গে তার সম্পর্কের একটি যথাযথ রূপ পাওয়া সম্ভব। এই ধারণার পরিপ্রেক্ষিতে শব্দ কিছু অর্থ উপাদানের সমষ্টি। এই উপাদানগুলিকে শব্দার্থগত বিষয় শ্রেণী বা শব্দার্থ উপাদান বলা হয়।

উপাদান উপাদান মূলক তথ্য অনুযায়ী শব্দের অর্থ নিয়ে আলোচনা করতে হলে শব্দের অর্থকে ভেঙে এই ক্ষুদ্র শব্দার্থের   উপাদানগুলিকে বার করতে হবে। কতগুলি উদাহরণের সাহায্যে দেখা যায়, কিভাবে শব্দার্থের উপাদানের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন শব্দকে কতগুলি নির্দিষ্ট শ্রেণীতে শ্রেণীভুক্ত করে। যেমন:- পুরুষ: বৃষ, মোরগ | নারী: গাভী, মুরগি|  শিশু: বাছুর,  মোরগছানা |এই শব্দগুলির মধ্যে নারী এবং শিশুর মধ্যের অর্থগত সম্পর্ক এবং গাভী এবং বাছুরের মধ্যের অর্থগত অনুরূপ। একইভাবে পুরুষ এবং নারীর মধ্যের অর্থগত সম্পর্ক এবং মোরগ এবং মুরগির অর্থগত উপাদান উপস্থিত।

শব্দার্থের উপাদানমূলক তত্ত্বের মতে, এই উপাদানগুলির সমষ্টি শব্দের অর্থ সৃষ্টি করে। যার ফলে বিভিন্ন অর্থযুক্ত শব্দের সৃষ্টি হয়। অতএব ওপরের শব্দগুলির প্রথম সারির শব্দগুলিকে কয়েকটি অর্থ উপাদানের সমষ্টি হিসেবে এইভাবে দেখানো যায়:- পুরুষ=+মানবজাতীয়+ প্রাপ্তবয়স্ক +পুরুষজাতীয় | নারী=+মানবজাতীয়+ প্রাপ্তবয়স্ক -পুরুষজাতীয় | শিশু=+মানবজাতীয়-প্রাপ্তবয়স্ক

এই তত্ত্বের মূল উপযোগিতা হলো- এই তত্ত্বের মাধ্যমে শব্দ সমষ্টিকে সহজেই অর্থের ভিত্তিতে শ্রেণীভুক্ত করা যেতে পারে এবং তাদের মধ্যে অন্তর্নিহিত সাধারণ উপাদানগুলিকে সনাক্ত করা যেতে পারে। যার ওপর ভিত্তি করে এই শ্রেণীগুলি তৈরি হয়।

Leave a Comment

Discover more from Qবাংলা

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading