> চর্যাপদ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন একাদশ শ্রণী » Qবাংলা

চর্যাপদ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন একাদশ শ্রণী

চর্যাপদ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন একাদশ শ্রণী-  এই সিরিজে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর খুব সুন্দর ভাবে সংক্ষিপ্ত আকারে উপস্থাপনা করা হয়েছে | বিশেষ করে  চর্যাপদ , শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য,রামায়ণ মহাভারতের অনুবাদক, চন্ডীদাস গোবিন্দ দাস থেকে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর সহজ ভাবে দেওয়া আছে | বাংলা class 11 আরও প্রশ্ন-উত্তর জানতে click here

শিল্প ও সাহিত্য সংস্কৃতির ইতিহাস

চর্যাপদ class 11
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন class 11

অনুবাদ সাহিত্য

class11

রামায়ণ অনুবাদক

class11

বৈষ্ণব পদাবলী

class 11

চন্ডীদাস

class 11

চৈতন্য জীবনী সাহিত্য

class 11

গোবিন্দ দাস 

class11
বড়ু চন্ডীদাস  class11
বিদ্যাপতি class11

চর্যাপদের শ্রেষ্ঠ কবি কে

১) “চর্যা” শব্দের অর্থ কি? চর্যাপদগুলির মূল বিষয় কি?
উঃ বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন হল চর্যাপদ। চর্যা শব্দের অর্থ হল আচরণীয়।চর্যাপদগুলি রচনা করেছেন বৌদ্ধ সহজিয়া আচার্যরা। চর্যাপদ গুলির মূল বিষয় হলো- বৌদ্ধ সহজিয়াদের সাধন তত্ত্ব। বৌদ্ধ সহযোগী ধ্যান, ধারণা, দর্শন এবং সাধনার কথা এই পদগুলিতে গীত হয়েছে অর্থাৎ এই পদগুলি মূলত সাধন সংগীত। সাধক কবিরা তাদের সাধনার লক্ষ্য এবং পদ্ধতি গানের মাধ্যমে প্রচার করেছেন।

২) চর্যাপদের পুঁথি  কে, কত খ্রিস্টাব্দে, কোথা থেকে আবিষ্কার করেন?
উঃ মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয়, ১৯০৭ সালে, নেপালের রাজ দরবার থেকে “চর্যাচর্যবিনিশ্চয়” এর সঙ্গে আরও তিনটি গ্রন্থ আবিষ্কার করেন। যা পরবর্তী সময়ে ১৯১৬ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে “হাজার বছরের পুরান বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধ গান ও দোহা” নামে প্রকাশিত হয়।

৩) হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ‘চর্যাপদের’ সঙ্গে আর কোন কোন পুথি আবিষ্কার করেন? চর্যাপদের ভাষা যে বাংলা তা প্রথম প্রমাণ করেন কে?
উঃ হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় চর্যাপদের সঙ্গে আরও তিনটি গ্রন্থ আবিষ্কার করেন।তা হল-

  • সরোপাদের দোহা
  • কৃষ্ণপাদের দোহা এবং
  • ডাকার্নব
  • চর্যাপদের ভাষা যে বাংলা তা প্রথম বলেন, সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় তার ODBL গ্রন্থে।

৪) চর্যাপদ কত খ্রিস্টাব্দে, কার সম্পাদনায়, কি নামে প্রকাশিত হয়?
উঃ চর্যাপদের পুঁথি হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় এর সম্পাদনায় ১৯১৬ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে “হাজার বছরের পুরান বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধ গান ও দোহা” নামে প্রকাশিত হয়।

৫) মুনি দত্ত কে? ছিলেন বাংলা সাহিত্যে তার অবদান কি? 
উঃ মুনি দত্ত ছিলেন চর্যাপদ সংকলনের সংস্কৃত টিকাকার। তার টিকার নাম “নির্মলগীরা” তিনি তার টিকা গ্রন্থে মূল বাংলা পদটি লিখে পরের সংস্কৃত ভাষায় টীকা লিখেছেন। প্রবোচন্দ্র বাগচী আবিষ্কৃত তিব্বতি টীকা গ্রন্থটি মুনি দত্তের গ্রন্থেরই অনুবাদ। এই অনুবাদ থেকে চর্যাপদের বিষয়ে বহু তথ্য পাওয়া গেছে। তাই বলা যায়, বাংলা সাহিত্যে মুনিদত্তের টীকা গ্রন্থটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ‌।

for more question answers click here-  বাড়ির কাছে আরশি নগর 

৬) চর্যাপদের ভাষাকে “সন্ধ্যাভাষা” বলা হয় কেন? চর্যাপদের প্রথম পথটি কার নামে রচিত?
উঃ বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন চর্যাপদ গুলি, দুর্বোধ্য রহস্যময় ভাষায় রচিত হয়েছে। পন্ডিতেরা এই হেঁয়ালি পূর্ণ দুর্বোধ্য ভাষার নাম দিয়েছেন “সন্ধ্যাভাষা”- যার অর্থ যে ভাষা রহস্যময় এবং যা বুঝতে বিলম্ব হয়। অথবা যার অর্থ সম্যক ধ্যানের দ্বারা বুঝতে হয়- তাই হলো “সন্ধ্যাভাষা” | ‘সন্ধ্যা’ শব্দের অর্থ সম্যক ধ্যান।
চর্যাপদের প্রথম পদটি লুই পাদের নামে রচিত।

৭) নবচর্যাপদ কি?
উঃ ডক্টর শশীভূষণ দাসগুপ্ত মহাশয় নেপালের তরাই ভূমি থেকে চর্যার আরো কিছু পদ ১৯৬৩ সালে সংগ্রহ করেন। তা অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে “নবচর্যাপদ” নামে ১৯৮৯ সালে প্রকাশ পায়। মোট ৯৮ টি পদ তাতে সংকলিত হয়েছে।

৮) চর্যাগীতি সংকলনে মোট কতজন পতাকারের নাম আছে? চর্যাপদের রচনাকাল উল্লেখ কর।
উঃ চর্যাগীতির সংকলনে মোট ২৩ জন পতাকারের ৫০ টি পদ সংকলিত হয়েছে। তবে কারো কারো মতে ২৪ জন পদকর্তার ৫১ টি পদ আছে বলে মনে করেন।
চর্যাপদগুলির রচনাকাল আনুমানিক দশম থেকে দাদু শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময় বলে জানা যায়।

৯) চর্যাগীতির সংকলনের প্রথম পথটি কার লেখা? তিনি কোন শতাব্দীর লোক?
উঃ চর্যাপদ সংকলনের প্রথম পদটি লুইপাদের নামে রচনা। তিনি আনুমানিক অষ্টম শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে নবম শতাব্দীর প্রথম ভাগ পর্যন্ত জীবিত ছিলেন বলে জানা যায়।

১০) চর্যাপদের ভাষা সন্ধ্যা ভাষায় লেখার উদ্দেশ্য কি?
উঃ ধর্মীয় গূঢ়তত্ত্বই সিদ্ধাচার্যরা তাদের গানের তুলে ধরেছেন। পদকারগণ সহজিয়া ধর্মের সব বিষয় পদের মধ্যে বলতে চেয়েছেন, যা বিধর্মীদের কাছে বক্তব্যের বিষয় নয়, তাই পদকরগণ প্রতীক বা সংকেত ব্যবহারের মাধ্যমে সম্প্রদায়ের বাইরের মানুষের কাছে, পদের বিষয়গুলিকে দুর্বোদ্ধ করে তুলেছেন। চর্যার হেঁয়ালি ভাষার অর্থ গুরুর কাছ থেকে জেনে নিতে হবে।

১১) হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আবিষ্কৃত পুথিটির প্রকৃত নাম কি? তিনি পুঁথির কি নাম দেন?
উঃ হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আবিষ্কৃত পুথিটির প্রকৃত নাম ছিল “চর্যাগীতিকোষবৃত্তি”
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় চর্যাপদের পুঁথিটির নাম দেন “চর্যাচার্যবিনিশ্চয়”

১২) চর্যাপদে কোন ছন্দ ব্যবহৃত হয়েছে? চর্যাপদের প্রাপ্ত পুঁথিতে কোন কোন পদ পাওয়া যায়নি?
উঃ চর্যাপদে পজ্ঝটিকা বা পাদাকুলক ছন্দ ব্যবহৃত হয়েছে।
চর্যাপদে প্রাপ্ত পুঁথিতে ২৪, ২৫ এবং ৪৮ নম্বর পদ সম্পূর্ণভাবে লুপ্ত আছে এবং ২৩ নম্বর পদটি শেষ অংশ লুপ্ত হয়েছে।

১৩) হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আবিষ্কৃত চর্যাপদের প্রকৃত পদসংখ্যা কত? কতজন পদকর্তার নামে পদ পাওয়া গেছে?
উঃ হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় চর্যাপদের মোট ৫০টি পদ আবিষ্কার করেন। তার মধ্যে তিনটি পদ সম্পূর্ণ এবং একটি পদের শেষ অংশ লুপ্ত হয়েছে। তাই হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় সাড়ে ৪৬ টি পদ উদ্ধার করেন। বর্তমান গ্রন্থে সাড়ে ৪৬ টি পদে সংরক্ষিত হয়েছে।

১৪) “গুরু পুছিঅ জান”- পথটি কার রচনা? পুছিঅ শব্দের অর্থ কি?
উঃ “গুরু পুছিঅ জান”- এই পথটি পদকর্তা লুই পাদের রচনা।
‘পুছিঅ’ শব্দের অর্থ হল- জিজ্ঞাসা কর।

১৫) বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন কোনটি? সেগুলি কারা রচনা করেন?
উঃ বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন “চর্চাগীতি”, যা “চর্যাপদ” নামে বাংলা সাহিত্যে পরিচিত। চর্যাপদগুলি বৌদ্ধ সহজিয়া সিদ্ধাচার্যরা রচনা করেন, আনুমানিক দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে।

১৬) চর্যাপদের গুরুত্ব কি ?
উঃ বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন পাওয়া যায় চর্যাগীতিকায়। পদগুলি গানের আকারে লেখা। প্রত্যেকটি পদের মাথায় রাগ রাগিনীর নাম উল্লেখ আছে, ধর্মের গূঢ় তত্ত্ব ব্যাখ্যা করাই চর্যা কবিদের উদ্দেশ্য হলেও, ধর্মের গূঢ় তত্ত্ব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে চর্যাপদকারগন আবাসে, ইঙ্গিতে, অপূর্ব বাক প্রতিমায়, ব্যঞ্জনাময় ভাষায়, ছন্দে ও অলংকারে সমৃদ্ধ করে তুলেছেন। তাই বাংলা সাহিত্যে চর্যার গুরুত্ব অপরিসীম।

১৭) বাংলা সাধন সংগীতের সূত্রপাত হয়েছিল কোন রচনা থেকে? সেটি কত সালে প্রকাশিত হয়?
উঃ বাংলা সাধন সংগীতের সূত্রপাত “চর্যাগীতি” রচনার মধ্যে দিয়ে সূত্রপাত হয়েছিল।
চর্যাপদ প্রকাশিত হয়েছিল হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় এর সম্পাদনায় ১৯১৬ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে।

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য কে আবিষ্কার করেন

১) রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা বিষয়ক প্রথম আখ্যান কাব্যটির নাম কি? কাব্যটি কত সালে প্রকাশিত হয়?
উঃ রাধা কৃষ্ণের প্রেমলীলা বিষয়ক প্রথম আখ্যান কাব্যটির নাম “শ্রীকৃষ্ণকীর্তন”। কাব্যটি রচয়িতা হলেন বড় চন্ডীদাস। কাব্যটি ১৯১৬ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে প্রকাশিত হয়।

২) “শ্রীকৃষ্ণকীর্তন” কাব্যটি কোন সময় রচনা? কাব্যটি কে, কত সালে আবিষ্কার করেন?
উঃ আদি মধ্যযুগের একমাত্র নিদর্শন “শ্রীকৃষ্ণকীর্তন” কাব্যটি। অনুমান করা হয় যে, কাব্যটি পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথম দিকেই রচিত হয়েছিল। কাব্যটি আবিষ্কার করেন বসন্ত রঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ ১৯০০৯ সালে।

৩) “শ্রীকৃষ্ণকীর্তন” কাব্যটির রচয়িতার নাম কি? কাব্যটি কত সালে কোথা থেকে প্রকাশিত হয়?
উঃ “শ্রীকৃষ্ণকীর্তন” কাব্যটির রচয়িতার নাম বড়ু চন্ডীদাস। কাব্যটি ১৯১৬ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে প্রকাশিত হয়।

৪) “শ্রীকৃষ্ণকীর্তন” কাব্যের প্রাপ্ত পুঁথির চিরকুটে কি নাম লেখা ছিল? কাব্যটি কোথা থেকে আবিষ্কৃত হয়?
উঃ “শ্রীকৃষ্ণকীর্তন” কাব্যের প্রাপ্ত পুঁথির চিরকুটে “শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ” নামটি উল্লেখ ছিল।
“শ্রীকৃষ্ণকীর্তন” কাব্যটি ১৯০৯ সালে বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের নিকটবর্তী কা্ঁকিল্যা গ্রাম নিবাসী দেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের গোয়াল ঘরের মাচা থেকে আবিষ্কৃত হয়।

৫) “শ্রীকৃষ্ণকীর্তন” কাব্যটি কে, কত সালে, কোথা থেকে আবিষ্কার করেন?
উঃ “শ্রীকৃষ্ণকীর্তন” কাব্যটি বসন্ত রঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ ১৯০৯ সালে বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের নিকটবর্তী কাঁকিল্যা গ্রাম নিবাসী শ্রী নিবাস আচার্যের দৌহিত্র বংশধর দেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের গোয়াল ঘরের মাচা থেকে আবিষ্কার করেন।

৬) “শ্রীকৃষ্ণকীর্তন” কাব্যটিকে কে “রাধা কৃষ্ণের ধামালি” বলেছেন? কাব্যটিতে মোট কটি খন্ড আছে? দুটি খন্ডের নাম লেখ?
উঃ বিমানবিহারী মজুমদার “শ্রীকৃষ্ণকীর্তন” কাব্যটিকে “রাধা কৃষ্ণের ধামালি” বলেছেন। কাব্যটিতে মোট তেরোটি খন্ড আছে। দুটি খন্ডের নাম ১) জন্ম খন্ড ২) নৌকা খন্ড।

৭) শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যটির গুরুত্ব কি? 
উঃ “শ্রীকৃষ্ণকীর্তন” কাব্যটি রাধা-কৃষ্ণ বিষয়ক প্রথম কাহিনী কাব্য। কাব্যটি প্রণয় মূলক আখ্যান ধর্মী কাব্য। কেউ কেউ নাটকীয়তা ও গীতিময়তা লক্ষ্য করে একে নাটগীতিকাব্য বলেছেন।
ভাষা ভঙ্গিমা, চরিত্র চিত্রায়ন, বিচক্ষণতা, কাহিনীর বাঁধুনী ও নাটকীয় চমৎকারিত্বের বিচারে বড়ু চন্ডীদাসের “শ্রীকৃষ্ণকীর্তন” একটি অনন্য সাধারণ কাব্য।

৮) “শ্রীকৃষ্ণকীর্তন” কাব্যে কতগুলি খন্ড আছে? খন্ডগুলির নাম লেখ?
উঃ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যে মোট ১৩ টি খন্ড আছে।
খন্ডগুলির নাম হল- ১) জন্ম খন্ড ২) তাম্বুল খন্ড ৩) দান খন্ড ৪) নৌকা খন্ড ৫) ভারখণ্ড ৬) ছত্র খন্ড ৭) বৃন্দাবন খন্ড ৮) কালীয়দমন খন্ড ৯) যমুনা খন্ড ১০) হার খন্ড ১১) বান খন্ড ১২) বংশী খন্ড ১৩) রাধা বিরহ

৯) বড়ু চন্ডীদাস কোন জেলার অধিবাসী? তার রচিত কাব্যের নাম কি?
উঃ বড়ু চন্ডীদাসের নিবাস সম্পর্কে কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজেকে বাসুলি সেবক বলেছেন। তাই অনুমান করা হয় যে, তিনি বাঁকুড়া জেলার ছাতনা গ্রামের বাসিন্দা।
 তার রচিত কাব্যের নাম “শ্রীকৃষ্ণকীর্তন”

১০) আদি মধ্যযুগের সাহিত্য নিদর্শন কি? কে কোথা থেকে সেই নিদর্শন আবিষ্কার করেন?
উঃ আদি মধ্যযুগের সাহিত্য নিদর্শন হল- “শ্রীকৃষ্ণকীর্তন” কাব্য
বসন্ত রঞ্জন রায় মহাশয় এই কাব্যটি বাঁকুড়ার কাকিলা গ্রামের দেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের গোয়াল ঘরের মাচা থেকে আবিষ্কার করেন।

১১) “শ্রীকৃষ্ণকীর্তন” নামটি কার দেওয়া? কাব্যটির প্রকৃত নাম কি ছিল?
উঃ “শ্রীকৃষ্ণকীর্তন” নামটি সম্পাদক বসন্ত রঞ্জন রায়ের দেওয়া।
আবিষ্কৃত পুঁথির আদি, মধ্য ও অন্তের কয়েকটি পাতা ছেঁরা বা নষ্ট থাকায় পুঁথির প্রকৃত নাম জানা যায়নি। একটা চিরকুটে “শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ” নামটি লেখা থাকলেও এটা যে, এই পুঁথির নাম তা, নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে অনেকেই মনে করেন, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের প্রকৃত নাম “শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ”

১২) শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য আবিষ্কার হবার পর বাংলা সাহিত্যে কোন কোন সমস্যা সৃষ্টি হয়? এবং কেন?
উঃ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য আবিষ্কার হবার পর চন্ডীদাস সমস্যা সৃষ্টি হয়। কারণ চন্ডীদাস নামের বহু কবির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এক শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের রচয়িতা নাম পাওয়া গেছে চন্ডীদাস, আবার পদাবলীর চন্ডীদাসও পাওয়া গেছে। ফলে বাংলা সাহিত্যে “চন্ডীদাস সমস্যা” এক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হয়ে উঠেছে।

১৩) “শ্রীকৃষ্ণকীর্তন” কাব্যে কোটি চরিত্র আছে? চরিত্র গুলির নাম কি কি? কোন চরিত্রটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ?
উঃ “শ্রীকৃষ্ণকীর্তন” কাব্যে তিনটি চরিত্র প্রাধান্য পেয়েছে। যথা- রাধা, কৃষ্ণ এবং বড়াই। এই কাব্যে রাধা চরিত্রটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই চরিত্রটি সবচেয়ে বেশি বিকাশধর্মী, জীবন্ত এবং সক্রিয় ও হৃদয়গ্রাহী।

১৪) “শ্রীকৃষ্ণকীর্তন” কাব্যের শেষ খন্ডের নাম কি? অন্যান্য খন্ডের সঙ্গে এই খন্ডের পার্থক্য কি?
উঃ “শ্রীকৃষ্ণকীর্তন” কাব্যের শেষ খন্ডের নাম “রাধাবিরহ”। অন্যান্য খন্ডের নামের সঙ্গে খন্ড কথাটি যুক্ও, শেষ খন্ডে তা নেই । অন্যান্য খন্ডে নাটধর্মের প্রাধান্য, শেষ খন্ডে গীতিধর্মিতার প্রাধান্য। ভাষা মার্জিত ও উন্নত। তাই অনেকে শেষ খন্ডটিকে প্রক্ষেপ বলে মনে করেন।

১৫) “শ্রীকৃষ্ণকীর্তন” কাব্যটিকে অনেকে অশ্লীল বলেছেন কেন?
উঃ “শ্রীকৃষ্ণকীর্তন” কাব্যে আদি রসের অধিক প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। সম্ভোগচিত্র বর্ণনা ও নারীসৌন্দর্য বর্ণনায় শ্লীলতাকে অতিক্রম করার জন্যই অনেকেই কাব্যটিকে অশ্লীল বলেছেন।

১৬) “শ্রীকৃষ্ণকীর্তন” কাব্যে কোন কোন কাব্যের প্রভাব আছে? কাব্যটি কি জাতীয় কাব্য?
উঃ “শ্রীকৃষ্ণকীর্তন” কাব্যে কবি জয়দেবের গীতগোবিন্দ কাব্য, ভাগবতের দশম, একাদশ, দ্বাদশ স্কন্দ, পদ্মপুরাণ, বিষ্ণুপুরাণ, হরিবংশ ইত্যাদি প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
“শ্রীকৃষ্ণকীর্তন” কাব্যটি একটি নাটগীতি কাব্য। নাটকীয়তা এবং গীতিধর্মিতা এই উভয় বৈশিষ্ট্যই কাব্যে রয়েছে। তিনটি চরিত্রের সংলাপের মধ্যে দিয়েই কাহিনীকে গতিশীল ভাবে পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলেই কাব্যটিকে নাট্যগীতি কাব্য বলা হয়।

অনুবাদ সাহিত্য কাকে বলে

১) মালাধর বসু কোন জেলার অধিবাসী ছিলেন? তার কাব্যের নাম কি?
উঃ মালাধর বসু, বর্ধমান জেলার জামালপুর থানার অন্তর্গত কুলিন গ্রামের অধিবাসী ছিলেন।
তার রচিত কাব্যের নাম “শ্রীকৃষ্ণবিজয়” বা “গোবিন্দমঙ্গল”

২) গুনরাজ খাঁন কার উপাধি? কে এই উপাধি প্রদান করেন? তিনি কোন সময়ের কবি ছিলেন?
উঃ গগুরাজ খাঁন ভগবতের অনুবাদক মালাধর বসুর উপাধি ছিল।
এই উপাধি প্রদান করেন তার পৃষ্ঠপোষক রুকনুদ্দিন বরবক শাহ
তিনি পঞ্চদশ শতাব্দীর কবি ছিলেন। একমাত্র তার কাব্যেই সন তারিখ উল্লেখ পাওয়া যায়।

৩) মধ্যযুগের কার কাব্যে সাল, তারিখ উল্লেখ পাওয়া যায়? সালটি উল্লেখ করে, তার কাব্যের নাম লেখ?
উঃ মধ্যযুগের একমাত্র মালাধর বসুর রচিত কাব্যেই সাল তারিখ উল্লেখ পাওয়া যায়,
তার কাব্যটির নাম “শ্রীকৃষ্ণবিজয়”। যে সালটি পাওয়া যায়, সেটি হল ১৪৭৩ – ১৪৮০ সাল।

৪)  মালাধর বসুর কাব্যের নাম কি ? তার কাব্যে কটি খন্ড এবং কি কি ?
উঃ মালাধর বসুর কাব্যের নাম “শ্রীকৃষ্ণবিজয়”।
তার কাব্যে তিনটি খন্ড আছে। যথা ১) বৃন্দাবন লীলা ২) মথুরা লীলা এবং ৩) দ্বারকা লীলা।

৫) “তেরশ পঁচাশি শকে গ্রন্থ আরম্ভন / চতুর্দশ দুই শকে হইল সমাপন”- এটি কার রচনা? উল্লেখিত সালটি উল্লেখ কর।
উঃ উল্লেখিত রচনাটি ভাগবতের অনুবাদক মালাধর বসুর “শ্রীকৃষ্ণবিজয়” কাব্যের অংশ।
উল্লিখিত অংশটির সালটি হল ১৪৭৩- ১৪৮০।

৬) মালাধর বসুর উপাধি কি? তিনি ভগবতের কোন কোন অংশ অনুবাদ করেন?
উঃ  মালাধর বসুর উপাধি গুনরাজ খাঁন
তিনি ভগবতের দশম ও একাদশ স্কন্ধের অনুবাদ করেন।

রামায়ণ অনুবাদক কৃত্তিবাস ওঝা

১) কৃত্তিবাস ওঝা কোন জেলার অধিবাসী ? তার রচিত কাব্যের নাম কি?
উঃ রামায়ণের অনুবাদক কৃত্তিবাস ওঝা নদিয়া জেলার ফুলিয়া গ্রামের অধিবাসী ।
তার রচিত কাব্যের নাম “শ্রীরামপাঁচালী”

২) কৃত্তিবাস ওঝার পিতার নাম কি? তাদের প্রকৃত উপাধি কি?
উঃ কৃত্তিবাস ওঝার পিতার নাম বনমালী ওঝা। তাদের প্রকৃত উপাধি মুখোপাধ্যায়

৩) কৃত্তিবাস ওঝা কোন গৌড়েশ্বরের রাজসভা অলংকৃত করতেন?
উঃ কৃত্তিবাস কোন বছরে গৌড়েশ্বরের সভায় হাজির হয়েছিলেন সেটা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। অনেকেই মনে করেন যে, রাজা দনুজমর্দন কংস গণেশের সভা অলংকৃত করতেন, আবার অনেকের মতে গৌড়েশ্বর রুকনুদ্দিন বরবক শাহের সভা অলঙ্কৃত করতেন।

৪) রামায়ণের প্রথম বাংলা অনুবাদ কে করেন? তিনি কোন শতাব্দীর কবি?
উঃ  রামায়ণের প্রথম বাংলায় অনুবাদ করেন কবি কৃত্তিবাস ওঝা।
তিনি পঞ্চদশ শতাব্দীর কবি বলে মনে করা হয়‌।

৫) কৃত্তিবাসের রামায়ণের প্রথম মুদ্রিত সংস্করণ কোনটি? কত সালে তা প্রকাশিত হয়?
উঃ কৃত্তিবাসী রামায়ণের প্রথম মুদ্রিত সংস্করণ হলো শ্রীরামপুর মিশন থেকে প্রকাশিত “কৃত্তিবাস রামায়ণ”
এটি প্রকাশিত হয় ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে।
মহাভারতের অনুবাদক- কাশীরাম দাস

১) মহাভারতের শ্রেষ্ঠ অনুবাদক কে? তিনি কোন শতাব্দীতে আবির্ভূত হন?
উঃ  মহাভারতের শ্রেষ্ঠ অনুবাদক নিঃসন্দেহে কাশীরাম দাস।
 তিনি ষোড়শ শতাব্দীতে আবির্ভূত হন। সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে কাব্য রচনা শুরু করেন।

২) কাশীরাম দাস কোন জেলার অধিবাসী ছিলেন? তার রচিত কাব্যের নাম কি?
উঃ কাশীরাম দাস বর্ধমানের কাটোয়া মহকুমার অন্তর্গত সিঙ্গী বা সিদ্ধি গ্রামে অধিবাসী ছিলেন। তার রচিত কাব্যের নাম “ভারত পাঁচালী”

৩) কাশীরাম দাসের প্রকৃত পদবী কি? তার পিতার নাম কি?
উঃ কাশীরাম দাসের প্রকৃত পদবী দেব। তার পিতার নাম কমলাকান্ত।

৫) কাশীরাম দাস কার নির্দেশে কাব্য রচনা করেছেন? কাব্যটির আনুমানিক রচনাকাল কত?
উঃ কাশীরাম দাস হরিহরপুরের অভিরাম মুখুটির নির্দেশে ও আশীর্বাদে কাব্য রচনা আরম্ভ করেন।কাব্যটির আনুমানিক রচনাকাল- ১৬০৪  সাল অর্থাৎ সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম দিকেই রচিত হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়।

বৈষ্ণব পদাবলী প্রশ্ন উত্তর pdf

১) বিদ্যাপতি কোন অঞ্চলের মানুষ ছিলেন? তিনি কোন ভাষায় পদ রচনা করেন?
উঃ বিদ্যাপতি মিথিলা রাজ্যের মানুষ ছিলেন। তিনি মৈথিলি ভাষায় পদ লিখেছেন। পরে ব্রজবুলি নামের এক কৃত্রিম ভাষায় পদ রচনা করেন।

২) অভিনব জয়দেব কাকে বলা হয় এবং কেন?
উঃ চৈতন্য পূর্ববর্তী বৈষ্ণব পদকর্তা বিদ্যাপতিকে অভিনব জয়দেব বলা হয়। কারণ, তিনি জয়দেবের প্রভাব শীরোধার্য করে, তার কাব্যের বিষয়কে অবলম্বন করেছেন। জয়দেবের ভঙ্গিতেই রাধা কৃষ্ণ লীলা বিষয়ক পদ রচনা করেছেন বিদ্যাপতি । তাই তাকে “অভিনব জয়দেব” বলা হয়ে থাকে।

৩) বিদ্যাপতি কার কার পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন? তার পৃষ্ঠপোষক এর উদ্দেশ্যে লেখা দুটি গ্রন্থের নাম লেখ।
উঃ বিদ্যাপতি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজার সভা অলংকৃত করেছেন এবং তাদের উদ্দেশ্যেই বিভিন্ন কাব্য রচনা করেছেন। যেমন রাজা কীর্তি সিংহ এর উদ্দেশ্যে লিখেছেন “কীর্তিলতা”
দেব সিংহ এর উদ্দেশ্যে লিখেছেন “ভূ পরিক্রমা”

৪) “বিদ্যাপতি মিথিলার কবি”- এ কথা প্রথম কে বলেন? বিদ্যাপতি কোন ভাষায় পদ রচনা করেছেন?
উঃ “বিদ্যাপতি মিথিলার কবি”- এ কথা প্রথম বলেন জন বিমস।
বিদ্যাপতি মৈথিলী ভাষায় পদ রচনা করেন। পরে ব্রজবুলি নামক এক কৃত্রিম ভাষায় পদ রচনা করেন।

৫) বিদ্যাপতির জন্ম কোথায় ? তার পিতার নাম কি?
উঃ বিদ্যাপতির জন্ম মিথিলার দ্বারভাঙা জেলার মধুবনী পরগনার অন্তর্গত বিসফী গ্রামে। তার পিতার নাম গণপতি।

৬) ব্রজবুলি ভাষা কি? ব্রজবুলি ভাষায়  পদ রচনা করেন এমন একজন পদকর্তার নাম লেখ।
উঃ ব্রজবুলি ভাষা একটি কৃত্রিম ভাষা। মৈথিলী এবং বাংলা ভাষার মিশ্রণকেই ব্রজবুলি ভাষা বলা হয়ে থাকে।
ব্রজবুলি ভাষায় পদ রচনা করেছেন এমন একজন পদকর্তা হলেন বিদ্যাপতি

৭) বিদ্যাপতি রচিত চারটি গ্রন্থের নাম উল্লেখ কর। তিনি কোন পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবি?
উঃ বিদ্যাপতি রচিত চারটি গ্রন্থের নাম- ১)কীর্তিলতা ২) ভূ-পরিক্রমা ৩) পুরুষপরীক্ষা ৪) গঙ্গাবাক্যাবলি
বিদ্যাপতি প্রার্থনা পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবি।  

৮) বিদ্যাপতির পোদ গুলি জনপ্রিয়তার মূল কারণ কি?
উঃ বিদ্যাপতি রাধা কৃষ্ণের প্রণয় লীলাকে শব্দ মাধুর্য দিয়ে মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করেছেন। তাছাড়া তার রচিত পদের ঝংকারময় ভাষা, শ্রুতি মধুর শব্দ নির্বাচন, ছন্দ-লালিত্য, গীতি-মাধুর্য এবং ভাব- ব্যঞ্জনা- এতটাই যে মানুষ শুনলে মুগ্ধ হয়ে যেত। এই কারণে বিদ্যাপতির পথগুলি এত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

৯) মৈথলীর কোকিল “ কাকে বলা হয় ?
উঃ মিথিলার বিশিষ্ট কবি বিদ্যাপতি কে ।

১০) বৈষ্ণব পদাবলী ছাড়া বিদ্যাপতি কি কি গ্রন্থ লিখেছিলেন ?
উঃ কীর্তিলতা , কীর্তিপতাকা , ভু – পরিক্রমা , দুর্গাভক্তিতরঙ্গীনি , হরগৌরী বিষয়ক পদাবলী ।

চন্ডীদাস সমস্যা pdf

১) চন্ডীদাসের পদাবলীর বৈশিষ্ট্য গুলি সংক্ষেপে লেখ।
উঃ পদাবলির চণ্ডীদাসের রচনা বৈশিষ্ট্য-
 (ক) কাব্যের বাণী সহজ সরল সুন্দর স্বচ্ছ। শব্দের ঐশ্বর্য অপেক্ষা শব্দের অগ্ধতাই ইঙ্গিতে বেশি কার্যকরী। (খ) চেষ্টাকৃত কবিত্ব প্রকাশের প্রয়াস দেখা যায় না। (গ) চণ্ডীদাসের পদাবলিতে রূপকের আড়ালের এমন একটা আধ্যাত্মিক জগৎ লুকিয়ে আছে—যার মাধুরী ভক্তের কাছে অপরিসীম। (ঘ) সর্বজনীন ও সার্বভৌম রসাবেদন। ঙ) ভাষা সাদামাটা গ্রাম্য ও সরল তাতে অলংকার বাহুল্য নেই।

২) “ বঁধু কি আর বলিব আমি। / জীবনে মরণে জনমে জনমে / প্রাণনাথ হইয়ো তুমি।”
—কবি কে ? তিনি কোন সময়ের কৰি ?
কবি চণ্ডীদাস। এই চণ্ডীদাস চৈতন্য পূর্ববর্তী না পরবর্তী তা নিয়ে বিতর্ক আছে। অনেকে একে শ্রীচৈতন্যের সমসাময়িক বলেও মনে করেন।

৩) “এ ঘোর যামিনী মেঘের ঘটা / কেমনে আইল বাটে। / আঙিনার কোণে বঁধুয়া ভিজিছে / দেখিয়া পরাণ ফাটে।‘’ —কার লেখা ? কোন্ সময়ে ?
উঃ পদটি প্রখ্যাত বৈষ্ণব পদাবলিকার চণ্ডীদাসের লেখা।
চণ্ডীদাস কোন্ সময়ের কোন্ চণ্ডীদাস তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও অনুমান করা হয়ে থাকে এই চন্ডীদাস চৈতন্য পূর্ববর্তী চন্ডীদাস।

৪) চন্ডীদাস সমস্যা কি? 
উঃ বাংলা সাহিত্যে চন্ডীদাস নামে একাধিক পদকর্তার পদ পাওয়া গেছে। যেমন বড়ু চন্ডীদাস, চন্ডীদাস, দ্বিজ চন্ডীদাস, দিন চন্ডীদাস- ইত্যাদি । এর ফলে চন্ডীদাস আসলে কজন ব্যক্তি- এই নিয়ে পন্ডিত মহলে বিতর্কের শেষ নেই । চন্ডীদাসের এই সমস্যায় বাংলা সাহিত্যে “চন্ডীদাস সমস্যা” নামে সুপরিচিত।

৫) বৈষ্ণব পদাবলীর সাহিত্যে “মরমিয়া কবি” নামে কে পরিচিত? তিনি কোন সময়ের কবি?
উঃ বৈষ্ণব পদাবলীর সাহিত্যে “মরমিয়া কবি” নামে খ্যাত ছিলেন পদকর্তা চন্ডীদাস।
তিনি প্রাক চৈতন্য যুগের পদকর্তা ছিলেন।

৬) বৈষ্ণব পদকর্তা চন্ডীদাস কত খ্রিস্টাব্দে, কোথায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন?
উঃ প্রাক চৈতন্য যুগের বৈষ্ণব পদকর্তা চন্ডীদাস বীরভূমের নান্নুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন আনুমানিক ১৪১৭ খ্রিস্টাব্দে।

গোবিন্দ দাস 

১) কাকে “ দ্বিতীয় বিদ্যাপতি” বলা হয় এবং কেন? 
উঃ চৈতন্য পরবর্তী পদকর্তা গোবিন্দ দাস কবিরাজকে দ্বিতীয় বিদ্যাপতি বলা হয় কারণ তিনি ছিলেন বিদ্যাপতির ভাব শিষ্য বিদ্যাপতির ভাষা ও আদর্শকে অনুসরণ করি তিনি পদ লিখেছেন।

২) গোবিন্দ দাসকে কে “কবিরাজ” উপাধি প্রদান করেন? গোবিন্দ দাস কত খ্রিস্টাব্দে, কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
উঃ গোবিন্দ দাসকে “কবিরাজ” উপাধি প্রদান করেন বৃন্দাবনের জীব গোস্বামী। ইনি বৃন্দাবনের বিখ্যাত ষড়গোস্বামীর একজন ছিলেন। গোবিন্দ দাস ১৫৩৭ খ্রিস্টাব্দে বর্ধমানের শ্রীখন্ডে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।

৩) কে, কোথায় গোবিন্দ দাস কে “ দ্বিতীয় বিদ্যাপতি” বলেছেন?
উঃ পদকর্তা বল্লভ দাস তার একটি পদে গোবিন্দদাসকে সম্মান জানাতে গিয়ে তাকে “দ্বিতীয় বিদ্যাপতি” বলেছেন।

৫) চৈতন্যে পূর্ব যুগের দুজন বিশিষ্ট বৈষ্ণব পদ কর্তার নাম লেখো ?
উ:- বিদ্যাপতি ও চন্ডীদাস ।

৬) চৈতন্য পরবর্তী যুগের তিনজন বিশিষ্ঠ পদ কর্তার নাম লেখো ?
উঃ:- গোবিন্দ দাস , জ্ঞান দাস , বলরাম দাস ।

জ্ঞানদাস

১) কাকে চন্ডীদাসের ভাবছিস্য বলা হয় এবং কেন?
উঃ চৈতন্য পরবর্তী বৈষ্ণব পদকর্তা জ্ঞানদাসকে চন্ডীদাসের “ভাব শিষ্য” বলা হয়। কারণ, চন্ডীদাসের ভাব অনুসরণ করেই জ্ঞানদাসের শ্রেষ্ঠ পদ রচিত। উভয়ের ভাব ভাষায় এতটাই মিল যে, একজনের পদে, অন্যজনের নাম বসিয়ে দিলে বোঝা যায় না।

২) জ্ঞানদাস কত সালে, কোথায় জন্মগ্রহণ?
উঃ জ্ঞানদাস ১৫২০ খ্রিস্টাব্দে , বর্ধমান জেলার কাঁদড়া গ্রামে, এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

৩) চন্ডীদাস ও জ্ঞানদাসের মধ্যে পার্থক্য কি?
উঃ চন্ডীদাস এবং জ্ঞানদাস উভয়ই রাধা কৃষ্ণ লীলা বিষয়ক পদ রচনা করেছেন। তাদের মধ্যে পার্থক্য হল- ১) চন্ডীদাস প্রাকচৈতন্য যুগের পদকর্তা, জ্ঞানদাস চৈতন্য পরবর্তী যুগের পদকর্তা। ২) চন্ডীদাসের উপর চৈতন্য ও গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মের প্রভাব নেই, জ্ঞানদাসের উপর তা আছে, কারণ তিনি বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত ছিলেন। ৩) চন্ডীদাস আগে কবি পরে  ভক্ত, জ্ঞানদাস আগে ভক্ত, পরে কবি। ৪) চন্ডীদাসের রাধার ভাব যতটা গভীর, জ্ঞানদাসের রাধার ভাব ততটা গভীর নয়। ৫)  চন্ডীদাস ব্রজবুলি ভাষায় পদ লিখেননি কিন্তু জ্ঞানদাস ব্রজবুলি ভাষায় পদ লিখেছেন।

চৈতন্য জীবনী সাহিত্য (বৃন্দাবন দাস এবং কৃষ্ণদাস কবিরাজ)

১) বাংলা ভাষায় কে প্রথম চৈতন্য জীবনী কাব্য রচনা করেন? কাব্যটির নাম কি?
উঃ  বাংলা ভাষায় প্রথম চৈতন্য জীবনী কাব্য রচনা করেন বৃন্দাবন দাস।
তার কাব্যের নাম “চৈতন্যমঙ্গল” পরে নাম পরিবর্তন করে, নতুন নামকরণ করা হয় “চৈতন্যভাগবত”

২) বৃন্দাবন দাস কত খ্রিস্টাব্দে, কোথায় জন্মগ্রহণ করেন? তার কাব্যের নাম কি?
উঃ  বৃন্দাবন দাস শ্রীবাস পন্ডিতের ভ্রাতুষ্পুত্রী নারায়নীর পুত্র। তিনি ১৫১৯ খ্রিস্টাব্দে বৃন্দাবনে জন্মগ্রহণ করেন।
 তার রচিত কাব্যের নাম “চৈতন্যভাগবত” 

৩) বৃন্দাবন দাস তার কাব্যের নাম চৈতন্য মঙ্গল পরিবর্তন করে চৈতন্য ভাগবত কেন করেছিলেন?
উঃ  বৃন্দাবন দাসের সমকালেই লোচনদাস “চৈতন্যমঙ্গল” নামে একটি চৈতন্য জীবনী কাব্য রচনা করেন। তাই নিজের কাব্যের স্বতন্ত্র রক্ষার জন্য নাম পরিবর্তন করেন। তাছাড়া ভগবতের বিষয় ও বর্ণনাভঙ্গির সঙ্গে মিল থাকায় ভাগবতের অনুসরণের “চৈতন্যভাগবত” নামকরণ করেন।

৪) বৃন্দাবন দাসের কাব্যের নাম কি? কাব্যটিতে কটি খন্ড আছে? খন্ডগুলোর নাম কি কি?
উঃ বৃন্দাবন দাসের কাব্যের নাম “চৈতন্যভাগবত”। কাব্যটিতে তিনটি খন্ড আছে-আদিখন্ড , মধ্য খন্ড এবং অন্ত খন্ড- মোট ৫১ টি অধ্যায়ের সমাপ্ত খন্ড।

৫) কৃষ্ণদাস কবিরাজ কোথায় জন্মগ্রহণ করেন? তার কাব্যের নাম কি?
উঃ কৃষ্ণদাস কবিরাজ শ্রেষ্ঠ চৈতন্য জীবনীকার। তিনি বর্ধমান জেলার কাটোয়ার নিকটবর্তী ঝামুটপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার গ্রন্থের নাম “চৈতন্যচরিতামৃত”।

৬) চৈতন্যচরিতামৃত গ্রন্থটি কার রচনা? গ্রন্থটিতে কটি খন্ড এবং কোটি পরিচ্ছেদ আছে?
উঃ “চৈতন্যচরিতামৃত” গ্রন্থটি কৃষ্ণদাস কবিরাজের রচনা। গ্রন্থটিতে তিনটি খন্ড আছে। যথা- আদি লীলা, মধ্যলীলা এবং অন্ত লীলা। তিনটি লীলায় মোট ৬২ টি পরিচ্ছেদ আছে।

৭) “চৈতন্য চরিতামৃত” গ্রন্থের গুরুত্ব কি? / অথবা শ্রীকৃষ্ণদাস কবিরাজের “চৈতন্যচরিতামৃত” গ্রন্থের বিশেষত্ব কি?
উঃ বৈষ্ণব দর্শন, ভক্তি শাস্ত্র ও চৈতন্য তত্ত্ব নিয়ে কাব্যটি পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা থাকার জন্য চৈতন্য জীবনী কাব্য হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছে। চৈতন্য জীবনের গভীর তাৎপর্য, উদ্দেশ্য ও পরিণাম এবং তারই সঙ্গে ভক্তি শাস্ত্র, দর্শন ও গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মের মূল তথ্য কথার জন্য গ্রন্থটি বাংলা সাহিত্যে বিশেষ স্মরণীয় হয়ে আছে।

সংক্ষিপ্ত রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর( প্রতিটি প্রশ্নের মান-৫)
১) চর্যাপদের সমাজ চিত্র সংক্ষেপে আলোচনা কর। /  অথবা- চর্যাপদে সমাজের কোন কোন চিত্র ফুটে উঠেছে, তার সংক্ষেপে আলোচনা কর।

হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আবিষ্কৃত চর্যাগীতিকাগুলি বাংলা সাহিত্যের আদি যুগের নিদর্শন । চর্যার সিদ্ধাচার্য কবিরা সহজিয়া সাধন পদ্ধতি ও ধর্মীয় তত্ত্ব কথাকে প্রকাশ করতে গিয়ে তৎকালীন সমাজ ও লৌকিক জীবনের নানা চিত্রের আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। ফলে চর্যাপদগুলিতে  তৎকালীন পরিবেশ, প্রকৃতি ও সমাজের জীবন্ত খণ্ডচিত্র ফুটে উঠেছে। বলা যায় যে, চর্যাগীতিকা গুলিতে তৎকালীন সমাজ জীবন প্রতিফলিত হয়েছে।

  1. চর্যার বিভিন্ন পদে তৎকালীন সমাজের অন্তজশ্রেণীর মাঝিমাল্লা, তাঁতি, শবর, মাহুত, শুঁড়ি,কাপালিক, নট প্রভৃতি সম্প্রদায় এবং নৌকা বাওয়া, দুগ্ধ দোহন,চাঙারি বোনা, পশু শিকার, তাঁতবোনা প্রভৃতি জীবিকার পরিচয় পাওয়া। “হাঁড়িত ভাত নাহি নিতি আবেশী “-পদটিতে তখনকার শ্রমজীবী নিম্ন শ্রেণীর মানুষের দারিদ্র্য লাঞ্ছিত জীবনের বাস্তবচিত্র উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
  2. সমাজের অবস্থা ছিল অরাজক। চোর-ডাকাত, জলদস্যুর ভয় ছিল। তারও প্রমাণ  দুষ্প্রাপ্য নয়।যেমন- “কানেট চৌরে নিল” অথবা “সোনা রূঅ মোর কিম্পি ণ থাকিউ”‌
  3. তবে সমাজে যেমন চোর ডাকাত দস্যুর উৎপাত ছিল, তেমনি বিচার ব্যবস্থার অস্তিত্বের ও প্রমাণ মেলে। চোর ধরার জন্য “দুষাধী” অর্থাৎ দারোগা এবং শাস্তির জন্য “উআরি” অর্থাৎ থানার ব্যবস্থার কথা ও চর্যাপদ থেকে জানা যায়।
  4. সমাজে মানুষ ভাত, মাছ, হরিণের মাংস, দুধ, ফলমূল ইত্যাদি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করত। এছাড়া একশ্রেণীর মানুষের মাদকাসক্তি ও নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির উন্মত্ত আচরণের ও স্পষ্ট ছবি চর্যাপদে  মুদ্রিত আছে।
  5.  বিবাহ উৎসবে যৌতুক প্রথা ও প্রচলিত ছিল। “জাউতুকে কি অ আনতু ধাম” – পঙ্কতি বিবাহে যৌতুক দেওয়া রীতির পরিচয় পাওয়া যায়।

চর্যাপদে তৎকালীন জীবনের বাস্তব চিত্র পাওয়া যায়। যে বাস্তব চিত্র চর্যাপদে  পাওয়া যাচ্ছে  তা অন্ত্যজ জীবনের। দেশের রাজনৈতিক বা উচ্চশ্রেণির মানুষের কথা এখানে  পাওয়া যায় না। ভণ্ড সাধু, চোর, চরিত্রহীন মানুষের কথা পাওয়া যাচ্ছে। সমাজের মধ্যে বিভেদ ছিল তা চর্যাপদে উল্লেখ রয়েছে। সংসার জীবন অপেক্ষা যোগী জীবনকে বড় করে দেখানো হয়েছে, কেননা চর্যাপদে সাধনার ইঙ্গিত সেদিকেই। চর্যাপদের সামাজিক জীবনচিত্র সুখপ্রদ নয়। মুখ্যত জীবনের তমসার দিকটিই বেশি ফুটে

ছে।

Leave a Comment

Discover more from Qবাংলা

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading