কে বাঁচায়, কে বাঁচে প্রশ্ন উত্তর-2023
পটভূমিকা
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ আর পঞ্চাশের মন্বন্তরের দুর্ভিক্ষ, অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে তুলেছিল। বলা যায় যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ভারতের অর্থনীতিকে একেবারে ধ্বংস করে দিয়েছিল। না ছিল অন্ন, না ছিল বস্ত্র। তার ওপর মন্দার বাজারে রুজি রোজগারের সমস্যাও গ্রামবাসীদের চিন্তিত করে তুলেছিল।আর অন্যদিকে অন্নাভাবে মানুষ মরতে বসেছিল। দুর্ভিক্ষের বীভৎসতা আর অন্যদিকে কালোবাজারিদের দৌরাত্ম সব মিলিয়ে অন্ন অভাবে মানুষের হাহাকার চলছিল।
পঞ্চাশের মন্বন্তরের পিছনে মূলত দুটি কারণ ছিল- প্রথমত, ব্রিটিশ সরকারের নানাবিধ অদূরদর্শি নীতি এবং দ্বিতীয়,- প্রবলভাবে কালোবাজারি করে কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি করা। ব্যবসায়ীদের গোপন গুদামে খাদ্যশস্য মজুদ ছিল কিন্তু সাধারণ মানুষ সেই শস্যের নাগাল পাচ্ছিল না। বাজারে চলছিল একটা কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি এবং আকাশ ছোঁয়া জিনিসপত্রের দাম।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বীরোচিত আমাদের পাঠ্য অংশ “কে বাঁচায় কে বাঁচে” ছোট গল্পটি এই প্রেক্ষাপটেই বিষয়বস্তু আবর্তিত হয়েছে (কে বাঁচায়, কে বাঁচে প্রশ্ন উত্তর-2023)
উৎস কথা (কে বাঁচায়, কে বাঁচে প্রশ্ন উত্তর-2023)

বিষয় সংক্ষেপে (কে বাঁচায়, কে বাঁচে প্রশ্ন উত্তর-2023)
মৃত্যুঞ্জয় অফিসে উচ্চপদস্থ চাকুরিজীবী ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির মানুষ। শহরের নিরালা পরিবেশে তার বাড়ি। ফুটপাথে চলাফেরা করে না বললেই চলে। বাড়ি থেকে বেরিয়েই ট্রামে চড়ে, ট্রাম থেকে নেমেই অফিসের ফটক। বাড়ির বাজার ও কেনাকাটা নিজে করে না। চাকর কিংবা ছোটো ভাই সামাল দেয়।।
অফিস আসার পথে দৈবক্রমে ফুটপাথে দুর্ভিক্ষপীড়িত এক অনাহারীকে সে মরতে দেখে। না খেতে পেয়ে মরার ভয়ানক যন্ত্রণা ও বীভৎসতা তার মনকে এমন আহত করে যে, সে অফিসে এসে মানসিক ও শারীরিক উভয় দিক থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে ও বমি করে। তাকে দেখে তার সমপদস্থ সহকর্মী নিখিলের মনে হয়, বড়ো একটা সমস্যার সঙ্গে সংঘর্ষ চলছে তার মধ্যে। তার বক্তব্যে তার প্রকাশ ঘটে। চারবেলা ভরপেট খেয়ে একশ্রেণির মানুষ দিব্যি স্বচ্ছন্দে বেঁচে থাকল, আর-এক শ্রেণির হতভাগা মানুষ না খেয়ে মরছে—এই অসম বণ্টন আর বৈষম্যজনিত যে অপরাধ, তার প্রায়শ্চিত্ত কী ? মৃত্যুঞ্জয় নিজেকে ওই অপরাধীর একজন ভেবে শত ধিক্কার দেয় নিজেকে।
তবে ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য মৃত্যুঞ্জয়ের কিছু করার আন্তরিকতা অকৃত্রিম। সে তার বেতনের সবটাই রিলিফ ফান্ডে দান করে। সে কিছু একটা করতে চায়। রাতে তার ঘুম হয় না, খেতে বসে খেতে পারে না। একবেলা খায় আর তাদের স্বামী-স্ত্রীর একবেলার খাবার ভুখা মানুষদের বিলিয়ে দেয়। তাতেও তার শান্তি নেই। সে যেন ভিতরে ভিতরে পুড়তে থাকে।
তার মধ্যে দ্রুত পরিবর্তন ঘটতে থাকে। অফিস, সংসার সবকিছু থেকে ধীরে ধীরে মুক্ত হয়ে দুর্ভিক্ষপীড়িত নিরন্ন মানুষের সান্নিধ্যে তাদের ভয়ংকর কঠিন ও যন্ত্রণাদায়ক জীবনযাত্রার সঙ্গে একাত্ম হতে চায়। অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করে তাদের ভাষা, বলার ভঙ্গি। বুঝতে পারে তাদের বুকে কারও বিরুদ্ধে নালিশ বা প্রতিবাদ নেই। কী থেকে তাদের এই দুর্দশা, তা জানতেও চায় না তারা। তারা অদৃষ্টনির্ভর। তাদের মুখে একই দুঃখের কাহিনি।
মৃত্যুঞ্জয় আরও উপলদ্ধি করে তার যথাসর্বস্ব দিয়েও ওদের নিরন্নতার প্রতিকার করা সম্ভব নয়। ওই অসহায়তা ও হতাশা তাকে ক্রমশ মুষড়ে ফেলে। পরিশেষে মৃত্যুঞ্জয় তাদেরই একজন হয়ে যায়। তাদের মতনই ফুটপাথের ভুখা মানুষ হয়ে খাবারের জন্য বিনীত আর্জি রাখে। মহত্তম মানবতাবোধের টানে মধ্যবিত্ত স্তর পেরিয়ে মৃত্যুঞ্জয় নেমে আসে সর্বহারাদের স্তরে। সমষ্টি মানুষের ভিড়ে ব্যক্তি মানুষের উপস্থিতি। এই। জীবনদর্শন লেখকের মার্কসীয় জীবনদর্শনেরই প্রতিচ্ছবি যেন। (কে বাঁচায়, কে বাঁচে প্রশ্ন উত্তর-2023)
মূল কথা (কে বাঁচায়, কে বাঁচে প্রশ্ন উত্তর-2023)
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ‘কে বাঁচায় ,কে বাঁচে ’ গল্পে ১৩৫০ বঙ্গাব্দের মন্বন্তরকে কেন্দ্র করে কলকাতার বুকের এক মর্মান্তিক মৃত্যুর ছবি এঁকেছেন। না খেতে পাওয়া মানুষের মৃত্যুর ছবি। মূল চরিত্র মৃত্যুঞ্জয় । তার চোখ দিয়ে একের পর এক ভূমিকা দৃশ্যপট আমাদের সামনে এসেছে এবং একে কেন্দ্র করে নায়ক মৃত্যুঞ্জয়ের চরিত্রে উত্তরণ ঘটেছে ।
নিরীহ , শান্ত , দরদি মৃত্যুঞ্জয় আদর্শবাদ ও নৈতিকতার কারণেই স্থির থাকেনি । উচ্চবিত্তের ঔদাসীন্য বা মধ্যবিত্তের স্বার্থপরতায় জড়িয়ে না পড়ে মৃত্যুঞ্জয় ক্ষুধিত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে যথার্থ মানসিক সত্তা নিয়ে । শেষপর্যন্ত গল্পে মৃত্যুঞ্জয়ের পরিণতি মনুষ্যত্ববোধের প্রতীক হয়ে উঠেছে ।
কলকাতা শহরের ফুটপাথে দুর্ভিক্ষপীড়িত বুভুক্ষু মানুষের অনাহারে মৃত্যু। মৃত্যুর প্রত্যক্ষ দর্শনের প্রতিক্রিয়ায় মৃত্যুঞ্জয় মানসিক ও শারীরিক উভয় দিক থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তারই প্রভাবে মৃত্যুঞ্জয় চরিত্রের ও তার ভাবাদর্শের পরিবর্তন ও ট্র্যাজিক পরিণতির কাহিনিই গল্পের প্রতিপাদ্য বিষয়। তার চরিত্র ও তার অনুসৃত আদর্শের স্বাতন্ত্র তাকে নায়ক চরিত্রের ব্যক্তিত্বে ভূষিত করেছে।
মৃত্যুঞ্জয় সাম্যবাদী চিন্তা চেতনায় বিশ্বাসী ছিল। সে বিশ্বাস তার বিশ্বাস ছিল যে, এই দুনিয়ায় একজন উচ্চবিত্ত শ্রেণীর মানুষ যদি ভাত খেতে পায়, তাহলে একজন নিম্নবিত্ত শ্রেণীর মানুষও ভাত পাওয়া উচিত। সমাজে যতক্ষণ অন্ন বস্ত্রের যোগান আছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তার সম বন্টন হওয়া উচিত। এছাড়া মৃত্যুঞ্জয় মনে করত, একজন মানুষ অভুক্ত থেকে যদি অন্য মানুষ খেয়ে তার স্বাভাবিক জীবন যাপনে মগ্ন থাকে, তবে তা অন্যায়। (কে বাঁচায়, কে বাঁচে প্রশ্ন উত্তর-2023)
নামকরণ (কে বাঁচায়, কে বাঁচে প্রশ্ন উত্তর-2023)
সাহিত্যের ক্ষেত্রে নামকরণ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের পাঠ্য “কে বাঁচায়, কে বাঁচে” শীর্ষক ছোটগল্পটির নামকরণ যথার্থ হয়েছে কিনা, তা গল্পটির বিষয়বস্তুর প্রতি আলোকপাত করলে পরিস্থিত হবে (কে বাঁচায়, কে বাঁচে প্রশ্ন উত্তর-2023)
••কথা সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় কে বাঁচায় কে বাঁচে গল্পটি পঞ্চাশের ভয়াবহ মন্বন্তরের পটভূ ভূমিকায় রচনা করেছেন। মন্বন্তরের সময় মর্মান্তিক এক মৃত্যুর দৃশ্য এই গল্পে তুলে ধরেছেন লেখক। মৃত্যুঞ্জয় অফিসে যাওয়ার পথে হঠাৎ অনাহারে অর্থাৎ না খেতে পাওয়া এক মানুষের মৃত্যু দৃশ্য দেখে এই দৃশ্য দেখার পর তার মানসিক টানা পড়েন চলতে থাকে। আদর্শবাদ নীতিবোধ তাকে তার মনের গভীরে যন্ত্রণায় দগ্ধ করতে থাকে নিজেকে অপরাধী মনে করে।
কারণ সে রোজ চার বেলা যাচ্ছে। এরপর দেখা যায় মৃত্যুঞ্জয়ের মানসিক এবং শারীরিক উভয় উভয় ভাবেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বহুক্ষু মানুষদের জন্য কিছু করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে তার মাইনের সমস্ত টাকাটা নিখিলকে রিলিফ ফান্ডে জমা করে দিতে বলে এমন কি তার নিজের সংসার সম্পর্কেও উদাসীন হয়ে পড়ে ধীরে ধীরে অফিস যাওয়া বন্ধ করে দেয়। চুপচাপ বসে থাকে নিজে নম্বর খানায় গিয়ে ফুটপাত বাসীদের সঙ্গে তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
শেষ পর্যন্ত দেখা যায় নিখিল এই বুভুক্ত মানুষদের হৃদয়ের অন্তরের না খাওয়ার যন্ত্রণা নিজের শরীরে অনুভব করার জন্য, ওই সমস্ত মানুষদের সঙ্গে মিশে যায় এবং তার মুখ থেকে বেরিয়ে আসে সেই, অভুক্ত মানুষদের হৃদয় বিদারক কথা-
“গা থেকে এইচি। খেতে পায়নে বাবা। আমায় খেতে দাও।“
অর্থাৎ গল্পে লেখক মেখক, দরদী সমাজবাদীদের মুখোশ খুলে দেয়ার জন্য, মৃত্যুঞ্জয়ের মধ্যে দিয়ে সমাজের আসল চেহারা দেখালেন অর্থাৎ নিজে বাঁচবো আর অন্য কেউ বাঁচাব- এই কাঙ্খিত পথটি লেখক গল্পে প্রকাশ করতে চেয়েছেন। এই দিক দিয়ে বিচার করলে দেখা যায় যে, গল্পটির নামকরণ সার্থক হয়েছে।
প্রশ্ন-উত্তর মালা
বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্নাবলী (MCQ) (কে বাঁচায়, কে বাঁচে প্রশ্ন উত্তর-2023)
১) সঠিক উত্তরটি বাছাই করে নিয়ে লেখ।
১.১) “আজ চোখে পরলো প্রথম”- কি প্রথম চোখে পড়েছিল ?
ক) ফুটপাতে লোকের ভিড় খ) ফুটপাতে দুর্ঘটনা গ) অনাহারে মৃত্যু ঘ) না খেতে পাওয়া মানুষ
উঃ গ) অনাহারে মৃত্যু
১.২) মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়িটা শহরের কোন দিকে ? (কে বাঁচায়, কে বাঁচে প্রশ্ন উত্তর-2023)
ক) শহরের কেন্দ্রস্থলে খ)শহরের এক প্রান্তে গ)শহরের বাইরে ঘ)এক নিরিবিলি অঞ্চলে
উঃ ঘ)এক নিরিবিলি অঞ্চলে
১.৩) “সংসারে তার নাকি মন নেই” – সংসারে কার মন নেই ?ক) মৃত্যুঞ্জয় খ) মৃত্যুঞ্জয়ের স্ত্রীর গ) নিখিলের ঘ) নিখিলের স্ত্রীর
উঃ ক)মৃত্যুঞ্জয় (কে বাঁচায়, কে বাঁচে প্রশ্ন উত্তর-2023)
১.৪) মৃত্যুঞ্জয় কে নিখিল পছন্দ করে কেন ?
ক) মৃত্যুঞ্জয় অত্যন্ত বন্ধু বৎসল খ) মৃত্যুঞ্জয় নিরীহ ও ভালোমানুষ গ) মৃত্যুঞ্জয় আদর্শবাদের কল্পনা তাপস ঘ)মৃত্যুঞ্জয় অনের বিপদে পাশে দাঁড়াতে জানে
উঃ ঘ) মৃত্যুঞ্জয় আদর্শবাদের কল্পনা তাপস (কে বাঁচায়, কে বাঁচে প্রশ্ন উত্তর-2023)
১.৫) “এ অপরাধের প্রায়শ্চিত কি?”- বক্তা এখানে কোন বিষয়টিকে অপরাধ মনে করেন ?
ক) নিজের বেঁচে থাকাকে খ)নিজের চারবেলা করে ভাত খাওয়াকে গ)যথাযথ রিলিফ ফান্ডে টাকা না দেওয়া ঘ)নিজের উদাসীন থাকাকে
উঃ খ) নিজের চারবেলা করে ভাত খাওয়াকে
১.৬) “নিখিল চুপ করে থাকে” – নিখিলের এই চুপ করে থাকার কারন কি?
ক)সে তার ভুল বুঝতে পেরেছ খ)মৃত্যুঞ্জয় তাকে চুপ করতে বলেছে গ) নিখিল অপরাধ করেছে ঘ)মৃত্যুঞ্জয়ের চোখ ছল ছল করে উটেছে
উঃ ঘ)মৃত্যুঞ্জয়ের চোখ ছল ছল করে উটেছে
১.৭) “সেটা হয় অনিয়ম” – এই অনিয়মটি কী ? (কে বাঁচায়, কে বাঁচে প্রশ্ন উত্তর-2023)
ক) বাস্তব নিয়ম উল্টে মধুর আধ্যাতিক নীতিতে পরিণত করা খ) নিজের কাজকর্ম ছেড়ে রীলিফে অংশ নেওয়া গ) রিলিফ ফান্ডে টাকা না দেওয়া ঘ) অনাহারে না খেতে পেয়ে মানুষদের সাহায্য না করা
উঃ ক)বাস্তব নিয়ম উল্টে মধুর আধ্যাতিক নীতিতে পরিণত করা
১.৮) বিক্ষুব্ধ চিত্তে এইসব কথা ভাবতে ভাবতে নিখিল সংবাদপত্রটি তুলে নিল” – সংবাদপত্রে কোন বিষয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছিল ? (কে বাঁচায়, কে বাঁচে প্রশ্ন উত্তর-2023)
ক)দেশে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে খ)শহরের পথে ঘাটে বহু অনহারী মানুষের মৃত্যু ঘটেছে গত) অনাহারী মানুষদের জন্য রিলিফ ফান্ড করা হয়েছে ঘ) গোটা কুড়ি মৃতদেহকে স্বর্গে পাঠানো হয়নি
উঃ ঘ) গোটা কুড়ি মৃতদেহকে স্বর্গে পাঠানো হয়নি
১.৯) “নিখিল ভাবছিল বন্ধুকে বুঝিয়ে বলবে” – নিখিল বন্ধুকে বুঝিয়ে কি বলে ?
ক) এভাবে দেশের লোককে বাঁচানো যায় না খ) রিলিফ ফান্ডে টাকা না দিতে বলা গ) স্ত্রীর স্বাস্থ্যের প্রতি মৃত্যুঞ্জয়ের যত্ন নেওয়া উচিত ঘ)নিজে না খেয়ে অন্যকে বাঁচানো যায় না
উঃ ক)এ ভাবে দেশের লোকে বাঁচানো যায় না
১.১০) “না খেয়ে মরাটা উচিত নয় ভাই” – কথাটি কে বলেছে?
ক)মৃত্যুঞ্জয় খ) নিখিল গ)মৃত্যুঞ্জয়ের ছোটো ভাই ঘ)টুনুর মা
উঃ গ) নিখিল
১.১১) “ওটা পাশবিক স্বার্থপরতা” – কোন বিষয়টিকে “পাশবিক স্বার্থপরতা ” বলা হয়েছে ?
ক) না খেতে পাওয়া মানুষকে সাহায্য না করা খ)না খেতে পাওয়া মানুষদের রিলিফ ফান্ডে টাকা না দেওয়া গ) দশজনকে খুন করার চেয়ে নিজেকে না খাইয়ে মারা বড় পাপ ঘ) ফুটপাত বাসিকে না খেতে দেওয়া
উঃ গ)দশজনকে খুন করার চেয়ে নিজেকে না খাইয়ে মারা বড় পাপ
১.১২) “নিখিল ধীরে ধীরে টাকাটা গুনল”- কিসের টাকা ?
ক)মানুষকে অর্থ সাহায্য করার টাকা খ) মৃত্যুঞ্জয়ের মাইনের টাকাটা গ) সরকারি টাকা ঘ) রিলিফ ফান্ডের টাকা
উঃ খ) মৃত্যুঞ্জয়ের মাইনের টাকাটা
১.১৩) “নিখিল কে বার বার আসতে হয়”- নিখিলকে কোথায় বারবার আসতে হয় ?
ক) মৃত্যুঞ্জয়ের কাছে খ) মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়িতে গ) মৃত্যুঞ্জয়ের অফিসে ঘ) ফুটপাতে মৃত্যুঞ্জয়ের কাছে
উঃ খ) মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়িতে
১.১৪) মৃত্যুঞ্জয় নিখিলের থেকে কত টাকা মাইনে বেশি পায় ?
ক) কুড়ি টাকা খ) পঞ্চাশ টাকা গ) একশো টাকা ঘ) তিরিশ টাকা
উঃ খ) পঞ্চাশ টাকা
১.১৫) নিখিল দেখেছিলো যে মৃত্যুঞ্জয় সর্শিতে আটকানো মৌমাছির মতো –
ক)উড়ে বেড়াচ্ছে খ) মধু খাচ্ছে গ)গুন গুন করছে ঘ)মাথা খুঁড়ছে
উঃ খ) মাথা খুঁড়ছে
১.১৬) নিখিলকে প্রতি মাসে কিছু কিছু টাকা পাঠাতে হয় –
ক) দুই জয়াগায় খ)তিন জায়গায় গ) চার জায়গায় ঘ)পাঁচ জায়গায়
উঃ খ) তিন জায়গায়
১.৭) মৃত্যুঞ্জয় কিভাবে অফিসে অফিসে যায় ?
ক) ট্রেনে খ) ট্রামে গ) বাসে ঘ) হেঁটে
উঃ খ) ট্রামে
১.১৮) “ক্রমে ক্রমে নিখিলকে হাল ছেড়ে দিতে হয়”- কেন নিখিল হাল ছেড়ে দেয় ?
ক)নিখিল অসুস্থ্য হয়ে পড়েছিল খ) নিখিল মৃত্যুঞ্জয় কে বুঝিয়ে পারে না গ)নিখিল অফিসের কাজে ব্যস্ত হয় পড়ে ঘ) নিখিলের যুক্তি মৃত্যুঞ্জয়ের অভিজ্ঞার কাছে অর্থহিন হয়ে পড়ে
উঃ ঘ) নিখিলের যুক্তি মৃত্যুঞ্জয়ের অভিজ্ঞার কাছে অর্থহিন হয়ে পড়ে
১.১৯) “দারুন একটা হতাশা জেগেছে ওর মনে” –হতাশা জাগার কারণ কি ?
ক) টুনুর মা অসুস্থ খ) দিনদিন অনাহার–মৃত্যু বাড়ছে গ)যতাসর্বশ দান করলেও সে দুর্ভিক্ষ পিরীত দের ভালো করতে পারবে না ঘ) অফিসে যেতে ইচ্ছাই করে না
উঃ ঘ) যতাসর্বশ দান করলেও সে দুর্ভিক্ষ পিরীতদের ভালো করতে পারবে না
১.২০) “টুনুর মা তাকে সকাতর অনুরোধ জানাই”- টুনুর মা অনুরোধ করে–
ক)নিখিল যেন মৃত্যুঞ্জয়ের প্রতি নজর রাখে
খ)মৃত্যুঞ্জয় যেন মাইনের পুরো টাকা টা রিলিফ ফান্ডে না দেয়
গ)মৃত্যুঞ্জয়ের চাকরিটা যাতে না যায়
ঘ)নিখিল যেন মৃত্যুঞ্জয়কে ফিরিয়ে আনে
উঃ ক) নিখিল যেন মৃত্যুঞ্জয়ের প্রতি নজর রাখে
১.২১) মৃত্যুঞ্জয় নিখিলের থেকে পঞ্চাশ টাকা বেশি মাইনে পেত।– কারণ–
ক)মৃত্যুঞ্জয় বেশি কাজ করতো খ) মৃত্যুঞ্জয় অফিসে প্রতিদিন যেত গ) মৃত্যুঞ্জয় অফিস এ বাড়তি দায়িত্ব পালন করতো ঘ) মৃত্যুঞ্জয় মৃত্যুঞ্জয় দেরিতে বাড়ি আসতো
উঃ গ) মৃত্যুঞ্জয় অফিস এ বাড়তি দায়িত্ব পালন করতো
১.২২) মৃত্যুঞ্জয় রোজ অফিসে যায়—
ক)বাসে করে খ) ট্রামে চেপে গ) পায়ে হেঁটে ঘ) নিজের গাড়িতে
উঃ খ) ট্রামে চেপে
১.২৩) মৃত্যুঞ্জয় এর রকম দেখেই নিখিল অনুমান করতে পারলো …. ।”—নিখিল অনুমান করলো —
ক)তার শরীর ভালো নেই খ) বড়ো একটা সমস্যার সঙ্গে তার সংঘর্ষ হয়েছে গ) তার মন ভালো নেই ঘ) তার শরীর অসুস্থ হয়ে পড়েছে
উঃ খ) বড়ো একটা সমস্যার সঙ্গে তার সংঘর্ষ হয়েছে।
১.২৪) মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়ির বাজার ও কেনাকাটা করে—
ক) মৃত্যুঞ্জয় নিজে খ) তার ভাই ও চাকর গ) টুনুর মা ঘ) মৃত্যুঞ্জয় ও তার চাকর
উঃ খ) তার ভাই ও চাকর
১.২৫) “সেদিন অফিস যাবার পথে মৃত্যুঞ্জয় প্রথম মৃত্যু দেখলো”- মৃত্যুর কারণ
ক) রোগ খ) দুর্ঘটনা গ) হত্যা করা হয়েছে ঘ) অনাহার
উঃ ঘ) অনাহার
১.২৬) মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়িতে কতজন লোক থাকে থাকে ?
ক) দশ জন লোক খ) পাঁচ জন লোক গ) সাত জন লোক
ঘ) ন’জন লোক
উঃ ঘ) ন’জন লোক
১.২৭) “নিখিল সন্তর্পনে প্রশ্ন করলো।”— মিছিল কি প্রশ্ন করেছিল?
ক) তোমার কি হল ? খ) কি হল তোমার ? গ) কি হল হে তোমার ? ঘ) কি হয়েছে তোমার ?
উঃ গ) কি হল হে তোমার ?
১.২৮)নিখিল রোগা, তীক্ষ্ণবুদ্ধি এবং একটু—
ক) আলসে প্রকৃতির লোক খ) সাহসী প্রকৃতির লোক
গ) তীক্ষ্ণ বুদ্ধি প্রকৃতির লোক ঘ) বাস্তব প্রকৃতির লোক
উঃ ক) আলসে প্রকৃতির লোক
১.২৯) “ফুটপাথে হাঁটা তার বেশি প্রয়োজন হয় না”- কেন ফুটপাতে হাটা প্রয়োজন হয় না?
ক) বাড়ির সামনেই অফিস খ) বাড়ি থেকে বাসে যায় গ) ফুটপাতে সে হাঁটে না ঘ) বাড়ি থেকে বেরিয়েই দু পা হেঁটেই ট্রামে ওঠে
উঃ ঘ) বাড়ি থেকে বেরিয়ে দু পা হেঁটেই ট্রমে ওঠে
১.৩০) নিখিল অবসর জীবন কীভাবে কাটাতে চায়?
ক) দুস্থ মানুষের সেবা করে খ) দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করে গ) গান শুনে ও নাটক দেখে ঘ) বই পড়ে আর একটা চিন্তার জগৎ গড়ে তুলে
উঃ ঘ) বই পড়ে আর একটা চিন্তার জগৎ গড়ে তুলে
১.৩১) ‘গ্রুয়েল’ কথাটির অর্থ হলো—
ক) এক ধরনের টনিক খ) ভাতের ফ্যান গ) ফলের সরবত ঘ) সুস্বাদু খাবার
উঃ খ) ভাতের ফ্যান
১.৩২) “কয়েক মিনিটে মৃত্যুঞ্জয়ের সুস্থ শরীরটা অসুস্থ হয়ে গেল। কারণ—
ক) অফিসে কাজের প্রবল চাপ ছিল খ) প্রচণ্ড গরমের মধ্যে হেঁটে সে অফিসে এসেছিল গ) প্রথমবার অনাহারে মৃত্যু দেখে সে প্রবল আঘাত পেয়েছিল ঘ)মৃত্যুঞ্জয় আগে থেকেই অসুস্থ ছিল
উঃ গ) প্রথমবার অনাহারে মৃত্যু দেখে সে প্রবল আঘাত পেয়েছিল
2. অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর ধর্মী প্রশ্নাবলী
২.১ মৃত্যুঞ্জয় সেদিন অফিস আসার পথে কী দেখল?
উঃ “কে বাঁচায়, কে বাঁচে” শীর্ষক ছোটগল্পে, মৃত্যুঞ্জয় সেদিন অফিস আসার পথে প্রথম না খেতে পাওয়া মানুষের মৃত্যু দেখলো অর্থাৎ অনাহারে মৃত্যুর দৃশ্য দেখল।
২.২) “এতদিন শুধু শুনে আর পড়ে এসেছিল..” এতদিন কী শুনে বা পড়ে এসেছে?
উ: মৃত্যুঞ্জয় অফিস যাওয়ার পথে প্রথম অনাহারে, না খেতে পেয়ে মানুষের মৃত্যুর দৃশ্য দেখেছিল এই ঘটনা, মৃত্যুঞ্জয় এতদিন শুনে বা পড়ে পড়ে এসেছিল এই ফুটপাতে মৃত্যুর কথা।
২.৩) “কয়েক মিনিটে মৃত্যুঞ্জয়ের সুস্থ শরীরটা অসুস্থ হয়ে গেল” —মৃত্যুঞ্জয়েৱ সুস্থ শরীরটা কয়েক মিনিটে অসুস্থ হয়ে পড়ল কেন?
উ:। “কে বাঁচাই, কে বাঁচে” শীর্ষক ছোটগল্পে মৃত্যুঞ্জয় ফুটপাতে প্রথম অনাহারে মৃত্যুর দৃশ্য দেখে। এই দৃশ্য দেখার পর তার মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হয়। মানসিক বেদনাবোধের সঙ্গে চলতে থাকে তার শারীরিক কষ্ট। এজন্য তার শরীরটা অসুস্থ হয়ে গেল।
২.৪) “তখন সে রীতিমতো কাবু হয়ে পড়েছে” – কে, কেন কাবু হয়ে পড়েছিল?
উঃ মৃত্যুঞ্জয় অফিস যাওয়ার পথে প্রথম ফুটপাতে অনাহারে মৃত্যুর দৃশ্য দেখে। এই দৃশ্য দেখার পর তার শরীরটা অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার মানসিক বেদনাবোদের সঙ্গে চলতে থাকে শারীরিক কষ্টবোধ। তাই অফিসে ঢুকেই মৃত্যুঞ্জয় রীতিমতো কাবু হয়ে পড়েছিল।
আরও পড়ুন
মহুয়ার দেশ- কবিতার প্রশ্নোত্তর – সাজেশন
২.৫) মৃত্যুঞ্জয়ের সহকর্মী নিখিল কেমন প্রকৃতির মানুষ ?
উঃ মৃত্যুঞ্জয়ের সহকর্মী নিখিল একই অফিসে চাকরি করে এবং প্রায় সমপদস্থ । চেহারা ও প্রকৃতির দিক থেকে রোগা, তীক্ষবুদ্ধি এবং আলসে প্রকৃতির মানুষ।
২.৬) নিখিল তার অবসৱ জীবনটা কীভাবে কাটাতে চায় ?
উঃ মৃত্যুঞ্জয়ের সহকর্মী নিখিল তার অবসর জীবনটা বই পড়ে আর একটা চিন্তাজগৎ গড়ে তুলে কাটিয়ে দিতে চায়।
২.৭) “…আর্তনাদ করে উঠল মৃত্যুঞ্জয়” –মৃত্যুঞ্জয় কী বলে আর্তনাদ করে উঠল ?
উঃ মৃত্যুঞ্জয় ফুটপাতে অনাহারে মৃত্যুর দৃশ্য দেখে তার মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হয় এবং অফিসে তার শরীরটা অসুস্থ হয়ে পড়ে। ‘মরে গেল! না খেয়ে মরে গেল। আনমনে বলে মৃত্যুঞ্জয় আর্তনাদ করে উঠল।
২.৮) “ধিক। শত ধিক আমাকে।”—মৃত্যুঞ্জয় নিজেকে ধিক্কার জানাল কেন ?
উ: ফুটপাতে অনাহারে মৃত্যুর দৃশ্য দেখে মৃত্যুঞ্জয়ের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হয়। সে নিজেকে ধিক্কার দেয়, কারণ এতকাল সে জেনে শুনে চার বেলা পেট ভরে খেয়ে এসেছে। যথেষ্ট রিলিফ ওয়ার্ক হচ্ছে না। তাছাড়া লোকের অভাবে আরো এদিকে ভেবে পাইনা যে, কি করে সময় কাটবে। তাই নিজেকে ধিক্কার জানিয়েছে ।
২.৯) “একটা কাজ করে দিতে হবে ভাই”- কে, কি কাজ করে দিতে বলেছে ?
উ: মৃত্যুঞ্জয় নিখিলকে তার মাইনের সমস্ত টাকা দেয় এবং নিখিলকে বলে যে, এই টাকাটা কোন রিলিফ ফান্ডে দিয়ে আসতে। এই কাজটিই মৃত্যুঞ্জয় নিখিলকে করতে বলেছে ।
২.১০) মৃত্যুঞ্জয় ও টুনুৱ মা একবেলা খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে কেন ?
উ: মত্যয় আর টুনুর মা একবেলা খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে, কারণ তাদের সেই বেলার ভাত দুর্ভিক্ষপীড়িত ক্ষুধার্ত মানুষদের বিলিয়ে দেয়।
২.১১) “দারুন একটা হতাশা জেগেছে ওর মনে”-, কার মনে, কেন হতাশা জেগেছে ?
উ: “ কে বাঁচায়, কে বাঁচে”- নামক ছোট গল্পে টুনুর মা নিখিলকে জানায় যে, মৃত্যুঞ্জয়ের কেমন একটা ধারণা জন্মেছে, তার যথাসর্বস্ব দান করলেও কিছুই ভালো করতে পারছে না এজন্য মৃত্যুঞ্জয়ের মনে হতাশা জেগেছে ।
২.১২) “তখন সে রীতিমতো কাবু হয়ে পড়েছে”- সে কাবু হয়ে পড়েছিল কেন ?
উ: মৃত্যুঞ্জয় ফুটপাথে মানুষকে প্রথম অনাহারে মরতে দেখে শরীরে কষ্ট ও মনে বেদনাবোেধ নিয়ে অফিসে নিজের চেয়ারে বসে রীতিমতো কাবু হয়ে পড়ে।
প্রশ্ন ২৪। অন্য সকলের মতো মৃত্যুঞ্জয়কে সেও খুব পছন্দ করে।”—কী কারণে ‘সে’ মৃত্যুঞ্জয়কে পছন্দ করে ?
উ: মৃত্যুঞ্জয় শান্ত, নিরীহ, দরদি, ভালো মানুষ ; তা ছাড়া মানবসভ্যতার সবচেয়ে পুরোনো ও পচা আদর্শবাদের কল্পনা তাপস। এইজন্য নিখিল মৃত্যুঞ্জয়কে খুব পছন্দ করে।
২.১৪) মৃত্যুঞ্জয় নিখিলের থেকে বেশি মাইনে পায় কেন ?
উ: মৃত্যুঞ্জয় এবং নিখিল একই অফিসে কাজ করে এবং প্রায় সমপদস্থ। মাইনে প্রায় একই কিন্তু একটা বাড়তি দায়িত্বের জন্য মৃত্যুঞ্জয় নিখিলের থেকে পঞ্চাশ টাকা বেশি পায় ।
রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর
৩.১ “কে বাঁচায়, কে বাঁচে” শীর্ষক গল্পের মৃত্যুঞ্জয় চরিত্রটি বিশ্লেষণ কর।
( অথবা পাঠ্য বইয়ের যে কোন লাইন তুলে মৃত্যুঞ্জয়ের চরিত্র বিশ্লেষণ করতে বলবে। অর্থাৎ যে লাইনটি তুলবে সেই লাইনটির কিছু অর্থ প্রশ্ন করে, এই প্রসঙ্গে মৃত্যুঞ্জয় চরিত্র বিশ্লেষণ কর এরম প্রশ্ন হতে পারে)
উঃ “ কে বাঁচায়, কে বাঁচে” শীর্ষক গল্পে কথাশিল্পী মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় পঞ্চাশের মন্বন্তরের এক মর্মান্তিক চিত্র তুলে ধরেছেন পাঠ্য গল্পে । গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র মৃত্যুঞ্জয়ের চোখ দিয়েই সেই সমস্ত দৃশ্যপট আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন।
•• মৃত্যুঞ্জয় একজন শান্ত , নিরীহ, সরল এবং মধ্যবিত্ত চাকুরিজীবী মানুষ । নয়জনের সংসার তার একার মাইনেতে না চলায় প্রতিমাসে ধার করতে হয় । তবুও চাকরিজীবী হওয়ার সুবাদে তার সাংসারিক জীবন সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবেই চলত।
•• মৃত্যুঞ্জয় আবেগপ্রবণ , অনুভূতিশীল । অফিস যাওয়ার পথে ফুটপাতে অনাহারে মৃত্যুর দৃশ্য দেখে মৃত্যুঞ্জয় শারীরিক এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং মানসিক কষ্ট যন্ত্রনায় দগ্ধ হতে থাকে। ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকে তার জীবন । তার সমস্ত কিছু দান করে সেই সমস্ত অভূক্ত মানুষদের জীবন বাঁচাতে চেয়েছিল মৃত্যুঞ্জয়।
••মৃত্যুঞ্জয় ফুটপাতের এমন মর্মান্তিকভাবে, না খেতে পাওয়া মানুষের মৃত্যু দেখে আত্ম অনুশোচনায় কষ্ট পেতে থাকে এবং তার শরীর অসুস্থ হয়। সংবেদনশীল মৃত্যুঞ্জয় ফুটপাথের মৃত্যুর জন্য নিজেকে দায়ী করেছিল । অনাহারে মৃত্যু তার মধ্যে তৈরি করেছিল অনন্ত জিজ্ঞাসা।
অন্নহীন মানুষদের বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছে মৃত্যুঞ্জয় । একবেলা খাওয়া বন্ধ করেছে , মাইনের সমস্ত টাকা পাঠিয়েছে রিলিফ ফান্ডে । কিন্তু নিজের অক্ষমতা বুঝে নিজেই বদলে গিয়েছে । অফিসের দায়িত্ব এবং সংসারের কর্তব্য পেরিয়ে সে হাজির হয়েছে বুভুক্ষ মানুষদের পাশে । পরিণতিতে মৃত্যুঞ্জয় অন্নহীনদের ভিড়ে মিশে গিয়েছে, তাদের একজন হয়ে । নিরীহ , শান্ত , দরদি মৃত্যুঞ্জয় আদর্শবাদ ও নৈতিকতার কারণেই স্থির থাকেনি । সমাজের স্বার্থপরতায় জড়িয়ে না পড়ে মৃত্যুঞ্জয় ক্ষুধিত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে যথার্থ মানসিক সত্তা নিয়ে । শেষপর্যন্ত গল্পে মৃত্যুঞ্জয়ের পরিণতি মনুষ্যত্ববোধের প্রতীক হয়ে উঠেছে । তার মুখ থেকে বেরিয়ে আসে, অভুক্ত মানুষদের সেই বেদনাদায়ক কথা-
“ খেতে পায়নে বাবা। আমায় খেতে দাও”
____________________________________
৩.২। কে বাঁচায় কে বাঁচে গল্পে নিখিলের চরিত্রটি বিশ্লেষণ কর। (অথবা পাঠ্য গল্পের যেকোন প্রশ্ন যে কোন লাইন তুলে লাইনটির অর্থ জানতে চেয়ে সেই প্রসঙ্গে নিখিলের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ কর, এমন প্রশ্ন হবে)
উঃ ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ শীর্ষক ছোটগল্পে মৃত্যুঞ্জয় এর পাশাপাশি নিখিল চরিত্রটিও উজ্জ্বলভাবে আমাদের পাঠ্যে ফুটে উঠেছে। নিখিল মৃত্যুঞ্জয়ের অফিসেই কাজ করে এবং তারা দুজনেই সমপদস্থ সরকারি চাকরিজীবী।
•••নিখিল শুধুমাত্র মৃত্যুঞ্জয়ের অফিসের সহকর্মীই নয়, মৃত্যুঞ্জয়ের অত্যন্ত কাছের সুহৃদয় বন্ধুও। নিখিল সর্বদা মৃত্যুঞ্জয়ের পাশে দাঁড়িয়েছে। মৃত্যুঞ্জয় ফুটপাতে অনাহারে মৃত্যুর দৃশ্য দেখে তার পরিবারের অবস্থা যখন শোচনীয় হয়, তখন নিখিলই তার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছিল। এমনকি নিখিলেই অফিসে বলে মৃত্যুঞ্জয়ের ছুটির ব্যবস্থা করে দিয়েছিল । নিখিলের মধ্যে কোন স্বার্থপরতা ছিল না। সে ছিল চরম বাস্তববাদী এবং সমাজের সত্যি তাকে সে উপলব্ধি করেছিল। সে প্রতিমাসে তিন জায়গায় অর্থসাহায্য পাঠাত। তা ছাড়া, দীর্ঘদিন ধরে সে মৃত্যুঞ্জয়কে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট থেকেছে। সে মৃত্যুঞ্জয়ের পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছে এবং মৃত্যুঞ্জয় অফিস যাওয়া বন্ধ করলে তার ছুটির ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
•••নিখিল ছিল এক নিঃস্বার্থ পরায়ন ব্যাক্তি । অফিসের সমপদস্থ সহকর্মী মৃত্যুঞ্জয়ের মাইনে নিখিলের থেকে সামান্য কিছু বেশি হলেও অন্য সকলের মতো নিখিল তাকে বেশ পছন্দই করত।তবে মৃত্যুঞ্জয়ের মানসিক শক্তির কাছে নিখিল কিছুটা যেন নিস্তেজ ছিল।
নিখিল এক হৃদয়বান যুবক কিন্ত তা হলেও পুরোপুরি আবেগ দ্বারা পরিচালিত নয় । বাস্তববুদ্ধি দিয়ে সে বুঝেছিল যে মৃত্যুঞ্জয় বা সে তাদের যথাসাধ্য শক্তি দিয়ে রুখে দাঁড়ালেও সমস্ত নিরন্ন মানুষদের মুখে তারা অন্ন জোগাতে পারবে না ।নিখিল দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতা উপলব্ধি করেলও প্রিয় বন্ধু মৃত্যুঞ্জয়ের মতো ভেঙে পড়েনি। সে মৃত্যুঞ্জয়ের মতো বাস্তব জ্ঞানহীন ছিল না। মৃত্যুঞ্জয় মাইনের পুরো টাকা ত্রান-তহবিলে দান করলে, সে তার প্রতিবাদ করেছে এ কথা ভেবে
“এ ভাবে দেশের লোককে বাঁচানো যায় না ”
_______________________________________
৩.৩ “তখন সে রীতিমতো কাবু হয়ে পড়েছে” – কে, কি কারনে রীতিমতো কাবু হয়ে পড়েছিল? কাবু হয়ে পড়ার কি কি লক্ষণ তার মধ্যে দেখা দিয়েছিল? [১+২+২]
উঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের “কে বাঁচায়, কে বাঁচে” শীর্ষক ছোটগল্পে, মৃত্যুঞ্জয় অফিস যাওয়ার পথে অনাহারে তথা না খেতে পাওয়া মানুষের মৃত্যুর করুন দৃশ্য দেখেছিল। এই দৃশ্য দেখার পর তার মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হয়। কয়েক মিনিটেই তার সুস্থ শরীরটা অসুস্থ হয়ে পড়ে। নিজের অফিসে পৌঁছে ছোট্ট কুঠুরিতে ঢুকেই ধপ করে বসে পড়েছিল। এই সময় মৃত্যুঞ্জয় রীতিমত কাবু হয়ে পড়েছিল।
ফুটপাতে অনাহারে মৃত্যুর করুন দৃশ্য দেখে মৃত্যুঞ্জয়ের ধারণা পাল্টে যায়। এতদিন মৃত্যুঞ্জয় শুধু শুনে অথবা পড়ে এসেছিল ফুটপাতে অনাহারে মৃত্যুর কথা । এখন সে নিজের চোখে এই অনাহারে মৃত্যুর করুন চিত্র দেখলো । প্রথম এইরকম অনাহারে মৃত্যু দেখে তার মনের মধ্যে প্রচন্ড আঘাত লাগে ।তার মনের মধ্যে চলে প্রচন্ড সংঘাত অর্থাৎ মানসিকভাবে মৃত্যুঞ্জয় প্রচন্ড আঘাত পায় । যার প্রতিক্রিয়া শরীরে দেখা যায়। তার মানসিক বেদনা বদের সঙ্গে চলতে থাকে শারীরিক কষ্ট। এই কারণে মৃত্যুঞ্জয় রীতিমতো কাবু হয়ে পড়েছিল
মৃত্যুঞ্জয়ের মানসিক কষ্টবোধের পাশাপাশি তার শারীরিক লক্ষণও দেখা গেল। অফিসে ঢুকেই একটুখানি বসে, তারপর আবার উঠে চলে গেল কল ঘরে। দরজা বন্ধ করে দেয়। বাড়ি থেকে পেট ভরে যা কিছু খেয়ে এসেছিল যেমন ভাজা, ডাল, তরকারি, মাছ, দই আর ভাত। মৃত্যুঞ্জয়ের শারীরিক এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং নিজেকে কষ্টবোধের যন্ত্রণায় মানসিকভাবে আঘাত পায়।
_______________________________
৩.৪) “ওটা পাশবিক স্বার্থপরতা”- কে কাকে কোন প্রসঙ্গে এ উক্তি করেছেন ?উদ্ধৃত অংশে তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।
উঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায় কে বাঁচে’ গল্পে, মৃত্যুঞ্জয় তার অফিসের সহকর্মী নিখিলকে আলোচিত মন্তব্যটি করেছে।
চাকুরীজীবী মৃত্যুঞ্জয় অনাহারে মৃত্যুর দৃশ্য দেখে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। মানসিক যন্ত্রণায় দগ্ধ হতে থাকে। সহকর্মী নিখিল তাকে নানাভাবে বোঝাতে থাকে এবং বলে “সমাজ ধর্মের দিক থেকে বিচার করলে দশ জনকে খুন করার চেয়ে নিজেকে না খাইয়ে মারা বড় পাপ।“ নিখিলের এ মন্তব্য শুনে মৃত্যুঞ্জয় উদ্ধৃত উক্তিটি করেছেন।
••• মৃত্যুঞ্জয় নিরীহ, শান্ত, দরদী ও ভালো মানুষ। তাই সে অনাহারে মৃত্যুর জন্য নিজেকে অপরাধী মনে করে এবং প্রায়শ্চিত্তের জন্য সমস্ত মাইনে ও খাদ্য বিলিয়ে দিতে চেয়েছে । কিন্তু নিখিল কিছুতেই মৃত্যুঞ্জয়ের এরূপ কাজকে সমর্থন করেনি। সে মৃত্যুঞ্জয়কে বলেছে ভুরিভোজনটা অন্যায়। তবে না খেয়ে মারা উচিত নয়। নিখিল আরো বলেছে বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু খাদ্য প্রয়োজন তা কাউকে না দিয়ে নিজেই তা খাবে।তবে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ করা তার মতে অন্যায়।জনকল্যাণের জন্য যতটা সম্ভব খাওয়া কমিয়ে দেওয়া যেতে পারে বলে মন্তব্য করে নিখিল। নিখিলের এরূপ পাশবিক স্বার্থপরতার পরিচয় পেয়ে মৃত্যুঞ্জয় বলে
“তুই পাগল নিখিল। বদ্ধ পাগল।“
গল্পে মৃত্যুঞ্জয়ের জীবনের যে ট্রাজেডি কোনো কাহিনী বা ঘটনা নয়।শুধু চরিত্রের মানবিক ভাবনার কারণে এরূপ পরিণতি ঘটে। তার মানবতাবাদী ভাবনার একটি বড় দিক হলো সে যুক্তিবাদী হলেও আদর্শবাদ ও সংবেদনশীলতা তার মধ্যে প্রধান। তার যুক্তি এতটাই অর্থপূর্ণ ও জোড়ালো যে, তা তার পরিবার পরিজনদের কাছে বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মৃত্যুঞ্জয়ের মনে হয়েছে সামাজিক দায়িত্ব পালনের জন্য সে অনায়াসে পারিবারিক দায়িত্ব বিসর্জন দিতে পারবে। শুধু লক্ষ লক্ষ ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো ও তাদের বাঁচানো একমাত্র কর্তব্য।
■ মৃত্যুঞ্জয় ক্ষুদার্থ মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর কথা নিখিলকে জানালে নিখিল তা সমর্থন করে। কিন্তু নিখিল জানায় নিজে না খেয়ে অন্যকে খাওয়ানোটা শুধু নিজেকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে অপরকে বাঁচানো। নিখিল আরো জানায় এভাবে দেশের মানুষকে বাঁচানো যায় না। নিজেকে না খাওয়ানো দশ জনকে খুন করার চেয়েও বড় পাপ। নিখিলের যুক্তির উপরেই মৃত্যুঞ্জয় জানায়” ওটা পাশবিক স্বার্থপরতা”- অর্থাৎ সৎ সরল ও দরদী হওয়ায় মৃত্যুঞ্জয় নিখিলের মত স্বার্থপর হয়ে বেঁচে থাকতে চায়নি।
. __________________________________________________
_____________________________________
৩.৫) “মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়ির অবস্থা শোচনীয়”- মৃত্যুঞ্জয় কে? তার বাড়ির অবস্থা শোচনীয় কেন?
উঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের “কে বাঁচায়, কে বাঁচে” গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র মৃত্যুঞ্জয়। মৃত্যুঞ্জয় আর নিখিল একই অফিসে কাজ করে । সরকারি চাকুরিজীবী। মৃত্যুঞ্জয় একজন আদর্শবাদী, সহানুভূতিশীল, সৎ ও সরল প্রকৃতির মানুষ।
** মন্বন্তরপিড়িত কলকাতার বুকে মৃত্যুঞ্জয় অফিস যাওয়ার পথে অনাহারে অর্থাৎ না খেতে পাওয়া মানুষের মৃত্যুর দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে। এমন করুন দৃশ্যে দর্শন করার ফলে তার মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। ঘটনার নিষ্ঠুরতা তার শরীর ও মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে। মনে জাগে সীমাহীন প্রশ্ন। বিবেকের তাড়নায় দগ্ধ হতে থাকে। খুঁজে ফিরতে থাকে প্রায়শ্চিত্তের পথ।
■ সমস্ত সাংসারিক দায়িত্বকে প্রায় এক প্রকার অস্বীকার করে মৃত্যুঞ্জয় নিজের মাইনের সমস্ত টাকাটা রিলিফ ফান্ডে দেবার অনুরোধ করে নিখিলকে । অথচ মাইনের পুরো টাকাতেও তার সংসার চলে না। বাড়িতে নয়জন লোক। স্ত্রী শয্যাশায়ী। ক্ষুধার তাড়নায় তার বাচ্চারা অহরহ কাঁদতে থাকে।
■ ধীরে ধীরে মৃত্যুঞ্জয় তার অফিস যাওয়া বন্ধ করে দেয়। কাজে ভুল করে। চুপচাপ বসে থাকে। আবার একসময় বেরিয়ে পড়ে। বাড়িতে থাকে পাওয়া যায় না। শহরের আদি অন্তহীন ফুটপাথ ধরে সে ঘুরে বেড়ায়। সংসার সম্পর্কে সে একেবারেই উদাসীন হয়ে পড়ে। তার স্ত্রী পুত্রদের দিকে সে নজর দিতে পারেনা। কারণ সে জানায়,
“আমায় কিছু একটা করতেই হবে ভাই। রাতে ঘুম হয় না, খেতে বসলে খেতে পারি না।“
নির্বিকার মৃত্যুঞ্জয় শহরের ফুটপাতে লঙ্গরখানা ঘুরে খুঁজে ফেরে। নিরন্ন মানুষের যন্ত্রণার কারণ সবকিছুই বোঝে উঠে না । কিছু না করতে পারার অক্ষমতায তাকে সব সময় পীড়া দেয়। পরিবার-পরিজন থেকে দূরে সরে যায়। এইভাবে ক্রমশ মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়ির অবস্থা শোচনীয় হয়ে ওঠে।
____________________________________
৩.৬) “মৃত্যুঞ্জয়ের সুস্থ শরীরটা অসুস্থ হয়ে গেল”- মৃত্যুঞ্জয় কেন অসুস্থ হয়ে পড়েছিল? শেষপর্যন্ত মৃত্যুঞ্জয়ের কী পরিনতি লক্ষ করা যায়?
“কে বাঁচায়, কে বাঁচে” নামাঙ্কিত ছোটগল্পে মৃত্যুঞ্জয় অফিসে যাওয়ার পথে ফুটপাতে অনাহারে অর্থাৎ না খেতে পাওয়া এক মানুষের মৃত্যুর করুন চিত্র লক্ষ্য করে । এর ফলেই তার মানসিক অবস্থার বিপর্যয় ঘটে। এতদিন ধরে সে শুধু শুনেই এসেছিল বা পড়ে এসেছিল, ফুটপাতে মৃত্যুর কথা। কিন্তু আজ নিজের চোখে দেখে মৃত্যুঞ্জয়ের মানসিক কষ্টবোধের যন্ত্রণায় ভুগতে থাকে । অনাহারে মৃত্যুর দৃশ্য এর আগে মৃত্যুঞ্জয় চোখে পড়েনি, তাই তার ধারণা ছিল আলাদা।সেই জন্য অফিসে পৌঁছেই, এমন করুন মৃত্যুর দৃশ্য দেখে, মৃত্যুঞ্জয়ের শরীরটা কয়েক মিনিটের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে যায়।
**এমন করুন মর্মান্তিক ঘটনা দেখার পর মৃত্যুঞ্জয় দৈহিক এবং মানসিক উভয়ভাবেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। অনাহারে এই মৃত্যু মৃত্যুঞ্জয়ের মানসিক বোঝে চরম আঘাত হানে এবং নিজেকে এই ঘটনার তাই মনে পড়ে। কারণ সে বলে,-
“ জেনে শুনেও এতকাল চারবেলা করে খেয়েছি পেট ভরে”
দিনদিন মৃত্যুঞ্জয় অফিসের কাজে অমনোযোগী হয়ে পড়ে। দেরি করে অফিসে আসে, কাজে ভুল করে। চুপ করে বসে ভাবে। বাড়িতে থাকে পাওয়া যায় না। শহরের আদি অন্তহীন ফুটপাত ধরে সে ঘুরে ঘুরে বেড়ায়। ক্ষুধার্ত মানুষের ভিড়ে মিশে যায়। কেমন করে সব ওলটপালট হয়ে গেল। সবকিছু বুঝেও মৃত্যুঞ্জয় কিছু করতে না পারার অক্ষমতার জন্য নিজেকে বদলে দেয় । শেষ পর্যন্ত মৃত্যুঞ্জয় অফিস যাওয়া ছেড়ে দেয়। বাড়ি ফেরা ভুলে যায়। ক্ষুধার্ত মানুষের দলে মিশে যায়। সে তার দাড়ি ভরা মুখ খালি গা ছেড়া ন্যাকড়া পড়ে মৃত্যুঞ্জয় লঙ্গরখানার লাইনে দাঁড়িয়ে কাড়াকাড়ি মারামারি করে খিচুড়ি খায় , আর বলে-
“ খেতে পাইনি বাবা আমায় খেতে দাও”
অর্থাৎ মৃত্যুঞ্জয় মেকি, দরদী মানসিকতার মানুষ নয়। অনাহারে না খেতে পাওয়া মানুষদের বুকের ভেতরের যে যন্ত্রনা, সেটা তার শরীরে অনুভব করার জন্য, নিজের শরীরের ভেতরে সেই কষ্টটাকে অনুভব করার জন্য, সেই সমস্ত দিন- দরিদ্র ফুটপাত বাসি মানুষের সঙ্গে মিশে যায় এবং মিকি সমাজ দরদী মানুষদের করা জবাব দিয়ে যায়।
_______________________________
কে বাঁচায়, কে বাঁচে প্রশ্ন উত্তর-2023 কে বাঁচায়, কে বাঁচে প্রশ্ন উত্তর-2023 কে বাঁচায়, কে বাঁচে প্রশ্ন উত্তর-2023 কে বাঁচায়, কে বাঁচে প্রশ্ন উত্তর-2023 কে বাঁচায়, কে বাঁচে প্রশ্ন উত্তর-2023 কে বাঁচায়, কে বাঁচে প্রশ্ন উত্তর-2023 কে বাঁচায়, কে বাঁচে প্রশ্ন উত্তর-2023
you may like