দশম শ্রেণীর জয় গোস্বামীর রচিত অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতাটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপনা করা হয়েছে। যে প্রশ্নগুলি এ বছর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আসার সম্ভাবনা প্রবল সেই প্রশ্নগুলির উত্তর খুব সুন্দর ভাবে ছাত্রছাত্রীদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের অনুরোধ প্রশ্নের উত্তর দেখার পাশাপাশি উত্তর লেখার কৌশলটি ভালোভাবে লক্ষ্য কর।
1.আমি এখন হাজার হাতে পায়ে উক্তিটির তাৎপর্য কি?
উঃ) “অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান” কবিতায় কবি জয় গোস্বামী অস্ত্রের বিরুদ্ধে গানকে হাতিয়ার করেছেন। এই গান কবি সহস্র উপায়ে বাঁধতে চান। গানের মাধ্যমে কবি পৃথিবীতে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে চান।
তাৎপর্য: সামাজিক অস্থিরতার পরিস্থিতিতে কবির শুধুমাত্র একটি কোকিলের প্রয়োজন। যার সাহায্যে তিনি সহস্র উপায়ে গান বাঁধবেন। অর্থাৎ সমাজে হাজার হাজার অপরাধী থাকলেও কবির কাছে একটি মাত্র কোকিলের কন্ঠ গীতিই যথেষ্ট। মাথার উপর হাজার চিল শকুন ঘুরে বেড়ালেও কবির কাছে একটি মাত্র কোকিল এর মধুর গান যথেষ্ট। এর সাহায্যে কবি সমাজে শান্তির বার্তা সকলের কাছে পৌঁছে দিতে চান।
2.গান বাঁধবে সহস্র উপায়ে উক্তিটির তাৎপর্য কি
উঃ) অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতায় উক্তিটি বক্তা হলেন আধুনিক কবি জয় গোস্বামী।
তাৎপর্য: বর্তমান সময়ে সামাজিক অস্থিরতা, মানুষে মানুষে হিংসা ভেদাভেদ, সাম্রাজ্য লোলুপ শক্তির উত্থান মানুষের বাঁচার আশ্বাসকে ধুলিস্যাৎ করে দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কবি সকল সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন করেছেন, অস্ত্র ফেলে দিতে। অস্ত্রকে পায় রাখতে। কবি এখন হাজার হতে পারে এগিয়ে আসছেন । হাত নাড়িয়ে তিনি বুলেটকে তাড়াচ্ছেন। কেননা তিনি অস্ত্রের বিরুদ্ধে গানকে হাতিয়ার করে এগিয়ে আসছেন। গানের ধর্ম তিনি গায়ে পড়েছেন। অর্থাৎ সাধারণ মানুষকে তিনি গানের দ্বারা প্রভাবিত করে অস্ত্র বিমুখ করতে চাইছেন তাই কবি সকলকেই গানের পায়ে অস্ত্র ফেলে দিতে বলেছেন।।
অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতার বিষয়বস্তু
বর্তমান সামাজিক এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার পটভূমিকায় “অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান” কবিতাটি রচিত। সামাজিক অস্থিরতা, রাজনৈতিক অরাজগতা সাম্প্রদায়িক উস্কানি, এবং সর্বোপরি পারস্পরিক হিংসা হানাহানিতে মানুষের সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশ বেঁচে থাকার আশ্বাসটুকু মানুষ হারিয়ে ফেলেছে। মাথার উপর চারিদিকে চিল শুকুনির মত সর্বদা বিপদ ঘুরে বেড়াচ্ছে। চারিদিকে যেন মানুষের হাতে হাতে অস্ত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ব এখন অস্ত্রে অস্ত্রে বলিয়ান হয়ে উঠেছে। যে কোন মুহূর্তে পৃথিবী ধ্বংস ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতি আধুনিক কবি জয় গোস্বামী “অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান” কবিতায় জনসাধারণকে মারাত্মক অস্ত্র ফেলে দিয়ে গানকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে বলছেন। কবি এই বর্তমান সামাজিক অস্থিরতা এবং রাজনৈতিক অরাজগতার বিরুদ্ধে কবি গান আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাইছেন।
সকলের কাছেই তিনি বিনীত অনুরোধ করেছেন, অস্ত্র ফেলে দাও অস্ত্র পায়ে রাখ। কারণ অস্ত্রের দ্বারা কখনো শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। বরং হিংসা হানাহানি বেড়ে যায়। তাই কবি এখন হাজার হাতে পায়ে এগিয়ে এসে গান ধরে বন্দুকের বুলেটকে তাড়াবার চেষ্টা করছেন। আকাশে চিল শকুন উড়ে বেড়ালেও কবির শুধু একটা কোকিল দরকার। যে সহস্র উপায়ে গান বাঁধবে। তাই কবি শেষে বলেছেন, অস্ত্র ফেলে বর্ম খুলে চারিদিকে চেয়ে দেখো, একজন খালি গায়ে ঋষি বালক মাথায় ময়ূর পালক নিয়ে নদীতে গ্রামে গান গেয়ে বেড়াচ্ছেন অর্থাৎ মানুষকে ভালোবাসার কথা শোনাচ্ছেন। মানুষকে অস্ত্রের বদলে ভালোবাসার গান শোনাচ্ছেন।
অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতার মূল বক্তব্য
অস্ত্র সর্বদাই ভীতি প্রদর্শন করে। অস্ত্রের দ্বারা কখনোই পৃথিবীতে শান্তি আনতে পারবেনা। অস্ত্র মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে। অস্ত্রের দ্বারা মানুষকে হত্যা করে মানুষের মধ্যে হিংসা ভরিয়ে তোলে। তাই কবি এই মারাত্মক অস্ত্রের বিরুদ্ধে গানকে হাতিয়ার করেছেন। কারণ গান হল সেই মধুর সুরেলা আওয়াজ, যার দ্বারা মানুষকে হিংসা করতে ভুলিয়ে দেয়। যুদ্ধ করতে ভুলিয়ে দেয়। অস্ত্র ধরার পরিবর্তে মানুষকে আপন করতে শেখায়। মানুষকে ভালবাসতে শেখায়। মানুষের মধ্যে মানবিক গুনাবলির উদয় ঘটে। তাই কবি বর্তমান সামাজিক এবং রাজনৈতিক চরম অস্থিরতার সময়ে সকলকে গান গাইতে বলেছেন এবং এই গানের পায়েই সমস্ত অস্ত্র ফেলে দিয়ে, একে অপরের ভালোবাসায় মেতে উঠতে বলেছেন। তবেই পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। তবেই পৃথিবীতে বাঁচার আলো দেখা যাবে। এজন্য কবি কবিতার শেষে, এক খালি গায়ে ঋষি বালকের প্রসঙ্গ এনেছেন। যিনি সারা পৃথিবীতে ভালবাসার গান গেয়ে বেড়াচ্ছেন।
1.গান দাঁড়ালো ঋষি বালক ঋষি বালক এখানে কিসের প্রতীক
উঃ) ঋষি বালক এখানে শান্তির বার্তাবহকের প্রতীক । যিনি নদীতে, দেশগাঁয়ে শান্তির বার্তা গেয়ে বেড়াচ্ছেন।
2.অস্ত্র রাখো গানের দুটি পায়ে অস্ত্র কীসের প্রতীক
উঃ) “অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান” কবিতায় অস্ত্র হিংসার প্রতীক। মৃত্যুর প্রতীক। মানুষের মানবিক গুণাবলীর বিরুদ্ধের প্রতীক।
3.অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতায় কবি অস্ত্র ফেলতে বলেছেন কেন
উঃ) অস্ত্র মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে। মানুষের মধ্যে হিংসা ভরিয়ে তোলে। অস্ত্রের দ্বারা শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয় না। তাই কবি জয় গোস্বামী “অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান” কবিতায় অস্ত্র ফেলে দিতে বলেছেন।
4.অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থের
উঃ) “অস্ত্রের বিরুদ্ধে” গান কবিতাটি কবি জয় গোস্বামীর রচিত “ভুতুমভগবান” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে
5.অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতায় কবি হাত নাড়িয়ে কি তারান
উঃ) “অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান” কবিতায় কবি জয় গোস্বামী হাত নাড়িয়ে বন্ধুকে বুলেট তাড়ান
6.মাথায় কত শকুন বা চিল শকুন বা চিল বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উঃ) শকুন বা চীন বলতে কবি জয় গোস্বামী সন্ত্রাসবাদীর দল তথা সাম্রাজ্যবাদী রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে বুঝিয়েছেন। যারা অস্ত্রের দ্বারা সমাজে ভীতির পরিবেশ গড়ে তুলেছে।
7.আমি এখন হাজার হাতে পায়ে এগিয়ে আসি বক্তা কে?
উঃ) “আমি এখন হাজার হাতে পায়ে এগিয়ে আসি” এই উক্তির বক্তা হলেন আধুনিক কবি জয় গোস্বামী।
8.অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতায় কবি অস্ত্র রাখতে বলেছেন কোথায়?
উঃ) “অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান” কবিতায় কবি জয় গোস্বামী অস্ত্র পায়ে রাখতে বলেছেন। অর্থাৎ তিনি গানের দুটি পায়ে অস্ত্র ফেলে দিতে বলেছেন
9.“গানের বর্ম আজ পরেছি গায়ে গানের বর্ম পরিধান করে কবি কোন কাজ করতে পারেন”
উঃ) কবি জয় গোস্বামী গানের বর্ম পরিধান করে হাত নাড়িয়ে বুলেট তাড়াতে চান এবং এই গানকে আঁকড়ে ধরেই রক্ত অর্থাৎ হিংসা হানাহানি মুছে দিতে চান।