পরশমণি কবিতা প্রশ্ন উত্তর চন্ডীদাস :-পশ্চিমবঙ্গের স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায়, বাংলা সাবজেক্টের পাঠ্যগ্রন্থগুলির মধ্যে দশম শ্রেণীর পাঠ্য বই: হল সাহিত্য সঞ্চয়ন। দশম শ্রেণীর সাহিত্য সঞ্চয়নের একটি কবিতা পরশমণি। চন্ডীদাসের রচিত। এই পরশমণি কবিতাটির খুঁটিনাটি বিষয়, বিষয়বস্তু তাৎপর্য গভীরে এবং নমুনা প্রশ্ন ও চন্ডীদাসের বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
পরশমণি বিষয়বস্তু:
পরশমণি পদটি পদকর্তা চন্ডীদাসের রচিত।এই পদটিতে প্রথমে রাধার পূর্বরাগের এবং শেষপর্যন্ত, রাধার অনুরাগ পর্যায়ে পর্যবষিত হয়েছে। রাধা প্রথমে শ্রীকৃষ্ণকে নিজের মন সমর্পণ করতে রাজি ছিলেন না।কেননা সামাজিক সম্পর্কে রাধা শ্রীকৃষ্ণের মামী এবং একজন কুলবধূ।তাই রাধা প্রথমত, শ্রীকৃষ্ণকে নিজের মন দিতে চাননি। পরে অবশ্য তিনি শ্রীকৃষ্ণকে দেখে তার অনুরাগ ব্যক্ত করেছেন এই কবিতায়।রাধা যখন তখন শ্রীকৃষ্ণের নাম ধরেন আর গান করেন।যখনই বাঁশির ডাক ডেকে উঠেছে, তখনই রাধা, তার নিজের মনকে স্থির রাখতে পারছেন না।
সর্বদা রাধার চোখ থেকে অশ্রুধরা বর্ষণ হয়ে চলেছে। রাধা একলা মন্দিরে থাকেন কিন্তু কখনো তাকে দেখেননি । শ্রীকৃষ্ণও রাধাকে কখনো দেখেননি। রাধা একজন কুলবতী স্ত্রী।শ্রীকৃষ্ণ কিভাবে তাকে জানলো। হয়তো কোন স্ত্রী শ্রীকৃষ্ণকে তার কথা বলে দিয়েছে। শ্রীকৃষ্ণকে না দেখে রাধা ভালো ছিলেন। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণকে দেখার পর থেকেই তার অকাজ শুরু হল। তাকে এখন না দেখলে প্রাণ কেঁদে উঠছে । চন্ডীদাস বলেন, শ্রীকৃষ্ণ এমন এক পরশমণি। যার মোহের স্পর্শে সবাই মোহিত হয়ে তার ফাঁদে পড়ে যায়।
কবিতাটি সম্পর্কিত কিছু তথ্য: চন্ডীদাসের এই পদটি বিমানবিহারী মজুমদারের সম্পাদিত “চন্ডীদাসের পদাবলী” গ্রন্থের ৪২ সংখ্যক পদ। এই পদটি প্রথমে রাধার পূর্বরাগ বোঝালেও শেষে রাধার অনুরাগে পর্যবসিত হয়েছে। তাই পদটি একটি অনুরাগ পর্যায়ের পদ বলেই ধরা হয়।
শব্দার্থ টিকা:– পরশমণি শব্দটি দুটি শব্দের সমন্বয়ে তৈরি। পরশ এবং মণি। পরশ শব্দটি স্পর্শ শব্দের স্বরভক্তি হয়ে পরশ হয়েছে। যার অর্থ ছোঁয়া বা স্পর্শ পাওয়া । মনি শব্দের অর্থ হলো মূল্যবান রত্ন। কবিতায় পরশমণি বলতে শ্রীকৃষ্ণকে বোঝানো হয়েছে। পরশমণি শব্দটির সমাস হল:- পরশ রুপ মনি =পরমণি । রূপক কর্মধারয় সমাস। সম্বরণ- দমন বা নিবারণ ।শব্দটির সন্ধি হলো সম্+ বরণ। রামা- মহিলা। মোহনিয়া- মনমুগ্ধকর
চন্ডীদাস:- চৈতন্য পূর্ববর্তী যুগের একজন অন্যতম শক্তিশালী বৈষ্ণব পদকর্তা হলেন চন্ডীদাস। তিনি বীরভূমের নান্নুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আনুমানিক পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষ এবং ১৬ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত তিনি জীবিত ছিলেন। কৃষ্ণদাস রচিত “শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত” গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে, চৈতন্যদেব চন্ডীদাসের পদ আস্বাদন করতেন। তার পদের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্যই হল, সহজ ভাষা এবং সহজ ভাব। তিনি বাংলা সাহিত্যে মরমিয়া কবি নামেও পরিচিত।এসএলএসটি বা মাদ্রাসার বাংলা বিষয়ে আরো প্রশ্নের উত্তর জানতে এবং বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা জানতে– click Here
পরশমণি কবিতা প্রশ্ন উত্তর
১.পরশমণি পদটির উৎস কি ?
উঃ বিমানবিহারী মজুমদার সম্পাদিত চন্ডীদাসের পদাবলী গ্রন্থের ৪২ সংখ্যক পদ|
২.পরশমণি পদে কাকে পরশমণি বলা হয়েছে?
উঃ শ্রীকৃষ্ণকে পরশমণি বলা হয়েছে
৩.পরশমণি পদটি কোন পর্যায়ের পদ?
উঃ অনুরাগ পর্যায়ের পদ
৪.“ঠেকে গেলা মোহনিয়া ফাঁদে”- কে মোহনিয়া ফাঁদে পড়ে গেলেন?
উঃ রাধা
৫. “চন্ডীদাস কহে ধনি”- এখানে ধনি কাকে বলা হয়েছে?
উঃ রাধা
৬. চন্ডীদাস কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
উঃ বীরভূমির নান্নুরে
৭. চৈতন্যদেব কার পদ আস্বাদন করতেন?
উঃ চন্ডীদাসের
৮.কোন গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে চৈতন্যদেব চন্ডীদাসের পদ আস্বাদন করতেন?
উঃ শ্রীশ্রীচৈতন্যচরিতামৃত
৯. “আমি কুলবতী রামা”- কুলবতী রামা কে?
উঃ রাধা
১০. “কানু সে পরশমণি”- পরশমণি কোন সমাস?
উঃ রূপক কর্মধারয় সমাস
১১. নিরন্তর ঝুরে আঁখি দুটি”- এখানে কার কথা বলা হয়েছে?
উঃ রাধা
১২.”কোন ধনি কহি দিলা তারে”- তারে বলতে কাকে বলা হয়েছে?
উঃ শ্রীকৃষ্ণকে
১৩. “দেখিয়া অকাজ হল”- কাকে দেখে অকাজ হল?
উঃ শ্রীকৃষ্ণকে
১৪. পরশমণি পদটি চন্ডীদাসের কত সংখ্যক পদ?
উঃ ৪২ সংখ্যক
বিশেষ টিপস:- এই পদটি বিষয়বস্তু ভালোভাবে পড়ে পাঠ্য বিষয়টি বারবার রিডিং পড়ে রাখতে হবে। যাতে পদের লাইনগুলি পর পর মনে থাকে। বিশেষ করে পদের শেষ লাইনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি প্রশ্ন আসে- এই শেষ লাইনটা ধরেই প্রশ্ন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। চন্ডীদাস সম্পর্কিত আরো প্রশ্ন তোমরা সাহিত্যের ইতিহাসের যেকোনো বইতে পেয়ে যাবে।