> শিল্প ও সাহিত্য সংস্কৃতির ইতিহাস class12 » Qবাংলা

শিল্প ও সাহিত্য সংস্কৃতির ইতিহাস class12

দ্বাদশ শ্রেণীর wbchse বাংলা বিষয়ের দ্বিতীয় পাঠ্য বই বাঙালির শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস। এই বই থেকে কমনযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর খুব সুন্দর ভাবে সাজানো হয়েছে। প্রিয় ছাত্র-ছাত্রী তোমাদের অনুরোধ উত্তরগুলি দেখার পাশাপাশি উত্তর লেখার কৌশলটি লক্ষ্য কর | বিভিন্ন প্যারা এবং তার কতটুকু উত্তর লিখতে হয় সমস্ত কিছু বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। উত্তর লেখার ধরনটি ভালোভাবে লক্ষ্য করো। দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের অন্যান্য আরো প্রশ্ন উত্তর দেখতে click here

শিল্প ও সাহিত্য সংস্কৃতির ইতিহাস সাজেশন

১) বাংলা গানের ধারায় অতুলপ্রসাদ সেনের অবদান লেখো।
উঃ বাংলা সংগীতের ধারায় অতুলপ্রসাদ সেন একটি বিশিষ্ট নাম। তার লেখা গানগুলি “কাকলি”, “কয়েকটি গান”, ও “গীতগুঞ্জ”- এই তিনটি বইয়ে সংকলিত হয়েছে। বাংলা গানের জগতে অতুলপ্রসাদ সেনের গানকে কয়েকটি শ্রেণীতে ভাগ করে, আলোচনা করা যায়। যেমনঃ-

রাগাশ্রয়ী গানঃ- অতুলপ্রসাদ সৃষ্ট রাগাশ্রয়ী গানগুলি অপূর্ব মধুর। এই গানগুলি কাব্য, বাণী, ছন্দ এবং সুরের মিলনে রাগাশ্রয়ী হয়ে উঠেছে। যেমন- “ডাকে কোয়েলা বারে বারে”, (গৌড়মল্লার)। মুরলী কাঁদে রাধে রাধে (আশাবরী) ইত্যাদি বহু রসোত্তীর্ণ গান অতুলপ্রসাদ বাঙালি শ্রোতাদের উপহার দিয়েছেন।

গজল, টপ্পা, ঠুংরিঃ- বাংলা ভাষায় গজল রচনায় তিনি ছিলেন পথিকৃৎ। এই প্রসঙ্গে “জল বলে চল”, “কত গান তো হলো গাওয়া” প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। টপ্পা গানেও তার অবদান আছে। যেমন- “তবু তোমারে ডাকি বারে বারে” এছাড়াও কিছু ঠুংরি গানও রচনা করেছিলেন। যেমন- “কে আবার বাজায় বাঁশি”- ইত্যাদি গান অতুল প্রসাদ রচিত রসসিদ্ধ ঠুংরির উদাহরণ।

স্বদেশী সংগীতঃ- অতুল প্রসাদ সেনের লেখা বহু স্বদেশী সংগীত, সেই সময় চূড়ান্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল এবং এখনো তা বর্তমান আছে। যেমন- “ওঠো গো ভারত লক্ষ্মী”, “বলো বলো বলো সবে”, “ভারতভানু কোথায় লুকালে” ইত্যাদি বহু স্বদেশী সংগীত বাঙালি মনে আজও গেঁথে আছে। এছাড়াও ঋতুসংগীত, বাউল, কীর্তন, রামপ্রসাদী, ভাটিয়ালি প্রভৃতি দেশজ সুরে অনেক চমৎকার গান তিনি রচনা করেছিলেন। অতল প্রসাদী গানের গায়ক-গায়িকাদের মধ্যে, রেনুকা দাশগুপ্ত, কৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় ও সবিতাব্রত দত্ত বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখেন।

২) বাংলা গানের ধারায় নজরুল ইসলামের অবদান লেখ।
উঃ বাংলা গানের দিক পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা যিনি গ্রহণ করেছিলেন, তিনি কাজী নজরুল ইসলাম। বাংলা গানের আসরে তিনি বৈচিত্র্যপূর্ণ পসরা নিয়ে আসেন। ১৪ বছরে আনুমানিক ৩২৪৯ টি গান তিনি রচনা করেছেন। তার গানগুলিকে মোটামুটি কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়।

রাগাশ্রয়ী গানঃ- নজরুল বিভিন্ন রাগ-রাগিনী ব্যবহার করে অসংখ্য গান রচনা করেছেন। যেমন- “ভোরের হাওয়া এলে” (রামকেলি), নারায়নী উমা (নারায়ণী),। তিনি নিজেও বেশ কয়েকটি রাগ উদ্ভাবন করেছেন। যেমন- “দোলনচাঁপা বনে দোলে” (দোলনচাঁপা), “রুমঝুম রুমঝুম কে বাজায় জল  ঝুমি ঝুমি” (নির্ঝরনী) তিনি বেশ কয়েকটি খেয়াল গানও রচনা করেছেন।

গজলঃ- গজল রচনাতেও তার অবদান অনস্বীকার্য। মধ্যপ্রাচ্যের গজল অনুসারে আরবি-ফার্সির শব্দ ব্যবহার করে, তিনি গজল সৃষ্টি করেছিলেন। এই প্রসঙ্গে, “বাগিচায় বুলবুলি তুই”। “গুল বাগিচায় বুলবুলি আমি” ইত্যাদি গানগুলি তার স্মরণীয় হয়ে আছে।

ঋতুসংগীতঃ-নজরুলের বহু গানে ঋতুর প্রসঙ্গ এসেছে। তার লেখা ঋতুসংগীত গানগুলির মধ্যে- নিদাঘের খরতাপে”, বর্ষাঋতু এলো বিজয়ীর সাজে”, “হৈমন্তিকা এসো এসো”, ইত্যাদি বহু ঋতুসংগীত গান বাঙালি শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছে। এছাড়াও তিনি প্রেম প্রকৃতি, ইসলামী গান এবং ভক্তিগীতি ও লোকগীতি, স্বদেশ সংগীত, হিন্দি গান, গীতিনাট্য, নতুন তালের গানে, ইত্যাদি বহু গানে তিনি তার কৃতিত্ব রেখে গেছেন।

৩) বাংলা গানের জগতে মান্না দের অবদান লেখো।
উঃ আধুনিক বাংলা গানের স্বর্ণযুগের অবিস্মরণীয় এক শিল্পী মান্না দে। প্রকৃত নাম প্রবোচন্দ্র দে। বাংলা চলচ্চিত্রে শিল্পী হিসেবে এবং আধুনিক গানের ক্ষেত্রে তিনি অদ্বিতীয়। ১৯৪২ সালে “তামান্না” ছবিতে “জাগো ওই ঊষা” গানটির মধ্যে দিয়ে তিনি নেপথ্য শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

তিনি সর্বমোট প্রায় ১২৫০ টি বাংলা গান গেয়েছেন। তার মধ্যে ৬১১টি চলচ্চিত্রের এবং ৩৫৬টি আধুনিক গান এছাড়াও রবীন্দ্র সংগীত, শ্যামা সংগীত সহ আরো অনেক গান তিনি গিয়েছেন। বাংলা ও হিন্দি ছাড়াও ভোজপুরি, পাঞ্জাবি, অসমীয়া, ও উড়িয়া, মারাঠি ইত্যাদি ভাষাতেও গান গেয়েছেন।

উল্লেখযোগ্য ছবি ও গানঃ- তিনি বেশ কয়েকটি ছবিতে নেপথ্য শিল্পী হিসেবে গান গেয়েছেন। যেমন- গণদেবতা, দেবদাস, ভোলাময়রা, মর্জিনা-আবদুল্লা, মৌচাক, ছদ্মবেশী, ফুলেশ্বরী, বসন্তবিলাপ ইত্যাদি বহু ছবিতে গাওয়া তার গানগুলি বাঙালি অমূল্য সম্পদ। তার বিখ্যাত কতগুলি গান, যেমন- “কফি হাউসের সেই আড্ডাটা”, “সব খেলার সেরা”, “আমি শ্রী শ্রী ভজহরি মান্না”, দীপ ছিল শিখা ছিল ইত্যাদি বহু গান বাঙালির অক্ষয় সম্পদ। সঙ্গীত শিল্পে তার অবদানের জন্য, ভারত সরকার তাকে বিভিন্ন সময়ে, পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, দাদাসাহেব ফালকে, পুরস্কারে ভূষিত করেছেন। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে বঙ্গভীভূষণ সম্মানের সম্মানিত করেন।

গুরুত্বপূর্ণ আরো প্রশ্নের উত্তর

৪) বাংলা গানের ধারায় সলিল চৌধুরীর অবদান লেখ।
উঃ বাংলা গানে পাশ্চাত্য রীতির ব্যবহারে যিনি অন্যতম যুগপুরুষের স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য, তিনি হলেন সলিল চৌধুরী। ১৯৪৯ এ “পরিবর্তন” ছবির সংগীত পরিচালক রূপে চলচ্চিত্র জগতে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে। ১৯৫৩ সালের “দো বিঘা জমিন” ছবির সূত্রে তিনি হিন্দি ছায়াছবি দুনিয়ায় পা রাখেন।

গানের ধারায় অবদানঃ- তার সঙ্গীত পরিচালনায় বাংলা ছবিগুলির মধ্যে বাঁশের কেল্লা, বাড়ি থেকে পালিয়ে, কিনুগোয়ালার গলি, লাল পাথর, রক্তাক্ত বাংলা, হারানের নাতজামাই প্রকৃতি উল্লেখযোগ্য আর হিন্দি ছবিগুলির মধ্যে জাগতে রহ, মুসাফির, মধুমতি, হাফটিকিট, উল্লেখযোগ্য। পাশ্চাত্য সংগীতের ব্যবহারে তিনি নানা উদ্ভাবন ক্ষমতা দেখান। পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি তিনি বম্বে ইয়ুথ কেয়ার প্রতিষ্ঠা করেন এবং পলিফনিক কেয়ার বা বহুস্বর পদ্ধতি চালু করেছিলেন। “মানবো না বন্ধনে”, “আমার প্রতিবাদের ভাষা”, “ও আলোর পথযাত্রী” প্রভৃতি গানগুলি তার কালজয়ী হয়েছে।

আবার বিমল চন্দ্র ঘোষ এর লেখা “উজ্জ্বল এক ঝাঁক পায়রা” গানটিতে পাশ্চাত্য সংগীতের ক্রিসক্রস গতি বা প্যাটার্ন এবং পিয়ানোতে হারমোনিক কর্ড ব্যবহার করেছেন। “সুরের এই ঝরঝর ঝরনা” গানটিতে  প্রয়োগ করেছেন ভোকাল হারমনি।

৫) বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে রামকিঙ্কর বেইজ এর অবদান সংক্ষেপে লেখ।
উঃ বাংলার চিত্রকলার ইতিহাসে একজন অসামান্য প্রতিভাবান চিত্রশিল্পী হলেন রামকিঙ্কর বেইজ। তিনি শুধু শিল্পচর্চায় করেননি, সেই সঙ্গে ভাস্কর্য চর্চাও করেছেন তিনি তেল রং ও জলরঙে বহু ছবি এঁকেছেন। তার জীবন যাপন ছিল অতি সাধারণ।

সিমেন্ট আর বোলপুরের কাঁকড় মাটি মিশিয়ে রামকিঙ্কর খোলা জায়গায় তৈরি করেছিলেন কিছু বিশাল আকৃতির ভাস্কর্য। তার ভাস্কর্য ও চিত্রচর্চার মূল বিষয়েই ছিল তার চারপাশের সাধারণ গ্রামীণ মানুষের জীবন এবং প্রকৃতি কেন্দ্রিক। রামকিঙ্করের উন্মুক্ত ভাস্কর্যের অন্যতম কয়েকটি কাজ হল- হাটের পথে, সাঁওতাল দম্পতি, সুজাতা ইত্যাদি। ছাত্র হিসেবে এবং শিক্ষকতায় কলাভবনেই তার জীবন কেটে যায়। দারিদ্র সত্বেও দেশের দীপ্ত মুখছবিকে সারা বিশ্বের কাছে উপহার দিয়ে গেছেন এই সার্থক ভাস্কর্য চিত্রশিল্পী।

৬) বাংলা চলচ্চিত্রে জগতে সত্যজিৎ রায়ের অবদান লেখো।
উঃ বাংলা তথা ভারতীয় সিনেমাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমহিমায় যিনি তুলেছিলেন, তিনি হলেন সত্যজিৎ রায়। তিনি বাংলা সিনেমাকে তথা ভারতীয় সিনেমাকে শিল্পগুণ এবং রুচিসম্পম্মত করে, আন্তর্জাতিক দর্শকের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন। তিনি সাহিত্য থেকে গল্প নিয়ে একের পর এক জনপ্রিয় ছবি বানিয়েছিলেন।

সত্যজিৎ রাই ছিলেন বিখ্যাত শিশু সাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর পুত্র এবং সুকুমার রায়ের পুত্র। তিনি “সন্দেশ” পত্রিকার অন্যতম সম্পাদক ও শিশু সাহিত্যিক রূপে অসামান্য প্রতিভা ও খ্যাতির অধিকারী হলেও চলচ্চিত্র জগতেই তিনি তার খ্যাতির সাম্রাজ্য নির্মাণ করেছিলেন।

সত্যজিৎ রায়ের অবদান –তার জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজ “পথের পাঁচালীর” চলচ্চিত্র নির্মাণ। টাকার অভাবে বহুবার শুটিং বন্ধ হয়ে গেছে শেষের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায়ের উদ্যোগে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আর্থিক সাহায্যে এই সিনেমাটি শেষ হয়। এই চলচ্চিত্রের হাত ধরেই ভারতীয় সিনেমা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছায়। ১৯৫৫ সালে ২৬ আগস্ট এই চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। ছবিটির সংগীত পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন পন্ডিত রবি শংকর এবং ক্যামেরায় ছিলেন সুব্রত মিত্র শিল্প নির্দেশক ছিলেন বংশীচন্দ্র গুপ্ত । কান চলচ্চিত্র উৎসবে “দ্য বেস্ট হিউম্যান ডকুমেন্ট” পুরস্কারের শিরোপা পায়। “পথের পাঁচালী” পরের অংশের কাহিনী নিয়ে তিনি তৈরি করলেন- “অপরাজিতা” এবং “অপুর সংসার” যা “অপু ট্রিলজি” নামে সমাদৃত।

এছাড়াও তিনি “ঘরে বাইরে”, “গুপি গাইন বাঘা বাইন”, “হীরক রাজার দেশে”, “সোনার কেল্লা”, “জয় বাবা ফেলুনাথ” ইত্যাদি বহু বাংলা চলচ্চিত্র ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতকে সমৃদ্ধ করে তুলেছিল।

৭) বাংলা চলচ্চিত্র ধারায় মৃনাল সেনের অবদান লেখো।
উঃ বাংলা তথা ভারতীয় সিনেমাকে আন্তর্জাতিক দর্শকের কাছে যিনি তুলে ধরেছিলেন তিনি হলেন খ্যাতিমান পরিচালক মৃণাল সেন। বাংলা সিনেমায় শিল্পসম্মত রুচি এবং দর্শক মনের সঙ্গে সামঞ্জস্য পূর্ণ করে বহু বাংলা চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন তিনি। চলচ্চিত্র পরিচালনার পাশাপাশি তিনি অভিনয় জগতেও বিশেষ ছাপ ফেলেছিলেন।তবে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবেই তিনি দেশজোড়া খ্যাতি লাভ করেছিলেন।

চলচ্চিত্রে অবদান:- ১৯৬৯ সালে তার তৈরি বিখ্যাত “ভুবন সোম” (হিন্দি) ছবিটি তাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়। গুজরাটে বসবাসকারী এই কড়া নিয়মনিষ্ঠ ব্যুরোক্র্যাটের সঙ্গে এক গ্রাম্য বালিকার সম্পর্ক নিয়ে সিনেমা। কিন্তু গল্প বলার ভঙ্গি, সিনেমার বয়ান ও চিত্রভাষা তৎকালীন ভারতীয় হিন্দি সিনেমাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। সিনেমার প্রধান চরিত্রে উৎপল দত্তের অভিনয় দর্শকমন্ডলী। চিরস্থায়ী ছাপ ফেলে যায়। সত্তরের দশকের কলকাতার রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি “ইন্টারভিউ” “কলকাতা’৭১”, “পদাতিক” “কোরাস” প্রভৃতির ছবিগুলি নির্মাণ করেন। মৃণাল সেনের তৈরি বিখ্যাত ছবিগুলির মধ্যে “ওকা উড়ি কথা”, “পরশুরাম”, “একদিন প্রতিদিন”, “খারিজ”, “খণ্ডহর”, “অকালের সন্ধানে” ছবিগুলোতে সামাজিক শোষণ ও বঞ্চনা থেকে ধীরে ধীরে মধ্যবিত্ত জটিলতার প্রতি মনোযোগ দিতে থাকে।

৮) রামায়ণে বর্ণিত দাবা খেলার স্রষ্টা কে ? দাবা খেলায় বিখ্যাত বাঙালি দাবারুর নাম লেখ | দাবা খেলায় বাঙালির অবদান সংক্ষেপে লেখ।
উঃ সুপ্রাচীন মহাকাব্য রামায়ণে বর্ণিত কাহিনী অনুসারে বলা হয় রামায়ণের স্ত্রী মন্দদরীই দাবা খেলা স্রষ্টা। তাছাড়া নৃতাত্বিক গবেষকেরা হরপ্পা মহেঞ্জোদারো সভ্যতায় দাবা খেলা যে প্রচলিত ছিল তার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ উপস্থাপিত করেছেন। বাংলায় দাবা খেলার সূচনা মূলত উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে John Cochrane এর উদ্যোগে।

১৯৫৯ সালে “ওয়েস্ট বেঙ্গল চেস এসোসিয়েশন” গড়ে ওঠে। এই এসোসিয়েশন “অল ইন্ডিয়া চেজ ফেডারেশন স্বীকৃত। ক্রমে অ্যাসোসিয়েশন দাবা প্রতিযোগিতার আয়োজন শুরু করে, জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ এদেরই উদ্যোগে শুরু হয়। ১৯৬১ সালে প্রথম রাজ্য দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হয়, যাতে বিজয়ী হন প্রাণকৃষ্ণ কুন্ডু। দাবায় রাজ্যের সম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী ছয়জন গ্র্যান্ড মাস্টার, নজন ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার, দুজন মহিলা গ্র্যান্ড মাস্টার এবং একজন মহিলা ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার রয়েছেন। ১৯৯১ সালে দিব্যেন্দু বড়ুয়া, আমাদের রাজ্য থেকে প্রথম গ্র্যান্ড মাস্টার হন দিব্যেন্দু বড়ুয়া।

তিনি অর্জুন পুরস্কারের সম্মানিত হয়েছেন। মাত্র ১৯ বছর বয়সে গ্র্যান্ড মাস্টার হয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন সূর্যশেখর গাঙ্গুলী। তিনি ছবার জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে জাতীয় রেকর্ড করেছেন। ২০০৫ সালে অর্জুন পুরস্কারের ভূষিত হন। বিশ্বনাথন আনন্দের সহযোগী হিসেবে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে প্রতিযোগিতায় সূর্যশেখর কাজ করেছেন।

৯) বাঙালির বিজ্ঞান চর্চার ইতিহাসে প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ এর অবদান লেখো।
উঃ বাঙালির বিজ্ঞান চর্চার ইতিহাসে প্রশান্তচন্দ্র মহলান বেশ এক বিশিষ্ট নাম। তিনি আধুনিক ভারতীয় রাশি বিজ্ঞানের জনক। বিশ্বের পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে ভারতীয়রা যে অগ্রগণ্য তার মূলে রয়েছে প্রশান্তচন্দ্রের উদ্যোগ ও অনুপ্রেরণা। ১৯৩২ সালে প্রশান্তচন্দ্রের রাশি বিজ্ঞানের ভিত্তিতে বায়ুমন্ডল সম্পর্কে দুটি মৌলিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়।

বিজ্ঞান চর্চায় অবদান:- ভারতীয় ছাত্রদের রাশিবিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সুবিধার জন্য প্রশান্তচন্দ্র ১৯৩১ সালে তাঁর জীবনের অক্ষয় কীর্তি “ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউট” প্রতিষ্ঠা করেন। নৃবিজ্ঞানে রাশি বিজ্ঞানের প্রয়োগ করে, তিনি “মহলানবিশ ডিসট্যান্স” নামে নতুন তথ্য আবিষ্কার করেন। ১৯৪১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম রাশিবিজ্ঞান বিভাগ খোলা হয়। প্রশান্ত চন্দ্র এই বিভাগের প্রধান নিযুক্ত হন। ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত বাংলা সরকারের রাশিবিজ্ঞান সম্বন্ধীয় উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। ১৯৪৬ সালে বাংলায় প্রথম স্ট্যাটিস্টিক্যাল ব্যুরো স্থাপিত হয়। ১৯৪৭ সালে রাশিবিজ্ঞানকে একক শাখা হিসেবে গণ্য করা হয়। ১৯৫৭ সালে তিনি “ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটের” অবৈতনিক সভাপতি নির্বাচিত হন এবং পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বর্ণপদক লাভ করেন। তিনি পদ্মবিভূষণ লাভ করেন ১৯৬৮ সালে।

১০) বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চায় অক্ষয় কুমার দত্ত এবং রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর অবদান লেখ।
উঃ বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে প্রাবন্ধিক অক্ষয় কুমার দত্ত এবং রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর অবদান অবিস্মরণীয় এই দুই বাঙালির লেখা বিজ্ঞানমূলক গ্রন্থ বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চার পথ অনেকটাই প্রশস্ত হয়।

অক্ষয় কুমার দত্তের অবদান:- উনবিংশ শতাব্দীর বাংলার নবজাগরণ যুগের অন্যতম সাহিত্য সাধক এবং তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার সহ-সম্পাদক ছিলেন অক্ষয় কুমার দত্ত। তার বিজ্ঞান সাধনা এই পত্রিকাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল। অক্ষয় কুমার দত্তের বিভিন্ন তত্ত্ববিদ্যা, সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস, পুরাতত্ত্ব, বিজ্ঞান, ভূগোল ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশিত হতো। ১৮৪১ খ্রিস্টাব্দে তার রচিত “ভূগোল” বাংলা ভাষায় প্রকাশিত হয়। এছাড়াও তার সর্বশ্রেষ্ঠ কৃতি হল- “ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায়” নামক বিখ্যাত গবেষণামূলক গ্রন্থটি। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ হল-“বাহ্যবস্তুর সহিত মানব প্রকৃতির সম্বন্ধ বিচার”, “পদার্থবিদ্যা” ইত্যাদি।

রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদীর অবদান:- রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদী মাতৃভাষায় মাধ্যমে বিজ্ঞান চর্চা এবং জ্ঞান বিস্তারের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন। তার বিভিন্ন বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ, মাতৃ ভাষায় বিজ্ঞান চর্চার পথ অনেকটাই প্রশস্ত করেছিল। তার রচিত যে সব গ্রন্থ বিজ্ঞান চর্চায় নিয়োজিত ছিল তা হলো- “জিজ্ঞাসা”, “প্রকৃতি”, “বঙ্গলক্ষী ব্রত কথা”, “পদার্থবিদ্যা”, “নানা কথা”, “কর্ম কথা”, “বিচিত্র জগত”, “জগত কথা” ইত্যাদি। এই দুই বাঙালির সাধনায় বাংলা ভাষার মাধ্যমে বিজ্ঞান চর্চা তথা বিজ্ঞান বিস্তারে ভূমিকা ছিল যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Comment

Discover more from Qবাংলা

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading