একাদশ শ্রেণী WBCHSE একটি অন্যতম বিষয় হল- Class 11 স্বরচিত গল্প- প্রকল্প পরিকল্পনা বা প্রজেক্ট নির্মাণ।একাদশ শ্রেণীতে মোট চারটি বিষয় থাকে সেখান থেকে শিক্ষার্থীদের যেকোনো একটি বেছে নিয়ে রচনা করতে হয়। এগুলি হল।
- কোন গ্রন্থের অনুবাদ
- নিজের হাতে রচিত কোন গল্প
- কোন বিখ্যাত ব্যক্তির সাক্ষাৎকার গ্রহণ
- কোন বিষয়ের উপর প্রতিবেদন রচনা
Class 11 স্বরচিত গল্প – প্রকল্প বা প্রজেক্ট নির্মাণ করতে গেলে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দিকে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই নজর রাখতে হয়। প্রকল্প পেপারটি যত সুন্দর হবে নাম্বার তত বেশি হবে। তাই যে বিষয়গুলি তোমার নজর রাখবে তা হল–
- প্রজেক্টের প্রথম পাতাটি যেটি ফ্রন্ট পেজ খুব সুন্দর করে রং পেন্সিল দিয়ে ফুটিয়ে তুলতে হবে।
- একটি সূচনার সম্বলিত পেপার তৈরি করতে হবে যাতে সিরিয়াল অনুযায়ী সমস্ত বিষয়গুলো উল্লেখ থাকবে
- একটি কৃতজ্ঞতা স্বীকার দিতে হবে
- প্রকল্পের বিষয় উদ্দেশ্য প্রকল্পের নাম শিক্ষার্থীর স্বাক্ষর তারিখ সময় এগুলো উল্লেখ করতে হবে আলাদা আলাদা পেজে।
- মূল প্রকল্পটি শুরু হবে তারপর
নিম্নে একাদশ শ্রেণির একটি প্রকল্প তৈরি করে দেওয়া হল | এটি Class 11 স্বরচিত গল্প-একটি স্বরচিত গল্প | তোমরা এই প্রজেক্টটি তোমাদের প্রজেক্টে ব্যবহার করতে পারো | যারা এই ধরনের আরো পোস্ট চাইছো তারা qbangla.com এই সাইটটিকে অনুসরণ কর।।
Class 11 || স্বরচিত গল্প || Bengali Project Work
গল্পের শিরোনাম- ” মিনাক্ষী ” Class 11 স্বরচিত গল্প
বিদ্যালয়ের নাম……………………………. শিক্ষার্থীর নাম……………………………….. শ্রেণী …………………………………………. রোল নং ……………………………………… শিক্ষাবর্ষ……………………………………… শিক্ষক/শিক্ষিকার স্বাক্ষর……………………. কৃতজ্ঞতা স্বীকার……………………………….
মিনাক্ষী♦ পর্ব ১ ♦
আজ শিক্ষক দিবস। তাই মিনু শিক্ষক শিক্ষিকাদের জন্য অনেক গিফট কিনে ব্যাগের মধ্যে ভরে বিদ্যালয়ে গেছে। বিদ্যালয়ে আজ বিশেষ কিছু ক্লাস হবে না বললেই চলে। সারা ক্লাসময় একটা অনুষ্ঠানের আমেজ। মিনু সাধ্যমত কিছু পেন এবং চকলেট তার প্রিয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য গিফট কিনেছে। গিফটের টাকা অবশ্য মিনু তার বাবার কাছ থেকেই পেয়েছে। বাবার কাছে অনেক অনুনয় করে কিছু টাকা নিয়েছিল। সেই টাকা থেকেই গিফটের ব্যবস্থা। তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু চন্দ্রা। বিদ্যালয়ে চন্দ্রার-সঙ্গে সে সবসময় থাকে। আজ চন্দ্রা কিছু পেন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য নিয়ে এসেছে। চন্দ্রা বলে “ মিনু আমি বেশি কিছু কিনতে পারিনি। শুধু কটা পেন কিনেছি। রমেশবাবু, অভিজিৎ বাবু এবং সুপ্রিয়া ম্যাডামকে দেবো বলে।“
মিনু “আমি প্রত্যেক স্যার এবং ম্যাডামদের জন্য একটি করে পেন এবং একটি করে চকলেট নিয়ে এসেছি। আজকের দিনটা খুব মজা করব চন্দ্রা।“চন্দ্রা “হ্যাঁরে। সত্যিই আজ খুব মজা হবে”। আজ প্রত্যেকেই শাড়ি পড়ে এসেছে। বিদ্যালয়ে একটা অনুষ্ঠানও আছে। বিদ্যালয় চালু হলো। শিক্ষক শিক্ষিকারা দল বেঁধে প্রতিটা ক্লাসে ক্লাসে যাচ্ছেন এবং ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের পছন্দমত উপহার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দিচ্ছেন। ক্লাসে ক্লাসে রঙ্গিন অভ্র। রঙ্গিন টুকরো টুকরো কাগজ উড়ছে। ছেলেরা মাঝেমধ্যে “হ্যাপি টিচার্স ডে স্যার” বলে স্লোগান দিচ্ছে।
♦ পর্ব ২ ♦
শিক্ষক শিক্ষিকর দল এবার মিনুদের ক্লাসে এলো। ক্লাসে শিক্ষকদের প্রবেশ করামাত্রই ছাত্র-ছাত্রীরা সবাই এক সুরে হ্যাপি টিচার্স ডে স্যার ম্যাডাম বলে ধ্বনি উঠলো। শিক্ষক শিক্ষিকারা অনেক খুশি হলেন। প্রত্যেকেই প্রত্যেককে গিফট উপহার করছে। মিনু তার ব্যাগ থেকে গিফটগুলো বার করে প্রত্যেক শিক্ষক এবং শিক্ষাকার হাতে দিয়ে পা ছুঁয়ে প্রণাম করছে। প্রত্যেক শিক্ষক এবং শিক্ষিকা তাকে মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদও করছেন। সুপ্রিয়া ম্যাডাম তাকে খুব ভালবাসেন। সুপ্রিয় ম্যাডাম তাকে বললেন “মিনু অনেক বড় হতে হবে। অনেক পড়াশোনা করতে হবে। তুমি খুব ভালো একটি মেয়ে” শিক্ষিকার কথা শুনে মিনু আনন্দে গদগদ হয়ে গেল।
ক্লাসে ছোটখাটো একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে মিনু রবীন্দ্রনাথের “হঠাৎ দেখা” কবিতাটি পাঠ করে শুনালো। সকলের মন জয় করে ফেলল। বিদ্যালয় জীবনের এমন ছোট ছোট ঘটনা আজীবন স্মৃতি হয়ে থেকে যায়। বিদ্যালয় সুখ স্মৃতি বন্ধুদের সঙ্গে হাসাহাসি ঠাট্টা মজা সব মিলিয়ে বিদ্যালয়ে জীবন এক আলাদা অনুভূতি আলাদা সুখের দিন। মিনু সেটা উপলব্ধি করতে পারে। বাড়ি ফেরার পথে মিনু এবং চন্দ্রা একসঙ্গে ফিরছিল। খুব হাসি ঠাট্টা মজা করেই তারা আজকে বাড়ি ফিরল।
♦ পর্ব ৩ ♦
মিনু পরিবারের একমাত্র মেয়ে। তার নাম মীনাক্ষী। আদর করে সবাই তাকে মিনু বলেই ডাকে। তার বাবা অলক। সরকারি ব্যাংকের স্টাফ। মোটামুটি তাদের সচ্ছল পরিবার। তাদের এক বড় ছেলে ছিল। সাত আট বছর বয়সে এক অজানা জ্বরে ছেলেটি মারা যায়। তাই তাদের পরিবারের একমাত্র আদরের কন্যা এখন মিনাক্ষি। মীনাক্ষী সবে মাধ্যমিক দিয়ে একাদশ শ্রেণীতে পড়ছে। পড়াশোনা মোটামুটি ভালই করে। বাড়িতে খুব আদরেই থাকে। বাবার কাছে যা দাবি করে, বাবা খুব ভালোবেসে তাই এনে দেয়। বাবা তাকে সব সময় বলে, “মা মিনু তোকে অনেক বড় হতে হবে। অনেক পড়াশোনা করতে হবে। পড়াশোনা করে চাকরি করতে হবে। তুই ছাড়া আমাদের কে আর আছে বল? শেষ বয়সে তুই আমাদের একমাত্র ভরসা”
মিনু বাবার এসব কথায় কিছু বুঝতে পারে না। সে শুধু জানে বড় হয়ে বাবা মাকে দেখবে। আজ বিদ্যালয়ের সমস্ত ঘটনা তার মাকে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিল। মা রান্নাঘরে রাত্রে খাবারের জন্য ব্যবস্থা করছে। মিনু বলে, “মা জানোতো আজকে আমাকে সুপ্রিয়া ম্যাম কি বলেছেন?
মা “কি বলেছে বলেছেন”
“বড় হয়ে চাকরি করো”
“হ্যাঁ উনি তো ঠিক কথাই বলেছেন। তোকে অনেক বড় হতে হবে মা” এই বলে তার মা তাকে মাথায় হাত বুলিয়ে রাত্রে খাবারটা দেয়।
“নে খেয়ে নে। ” | মিনুর জগৎ বলতে তার বাবা এবং তার মা এবং বিদ্যালয়ের বান্ধবী চন্দ্রা। এরাই খেলার সাথী। বয়স সবেমাত্র ১৭ পার হয়েছে। তাই অতটা পাকাপোক্ত বুদ্ধি এখনো তৈরি হয়নি।
♦ পর্ব ৪ ♦
একদিন হঠাৎ করেই অলোক বাবুর ব্যাংকের পরিচিত কোন এক স্টাফ বাড়িতে আসে। কি যেন সব কথাবার্তা হয়। মিনু সেদিন বিদ্যালয়ে গিয়েছিল। বিদ্যালয়ের থেকে ফিরে দেখে কোন এক কাকু বাবার সঙ্গে বসে কথা বলছে। মিনু ঘরে প্রবেশ করামাত্র বাবা লোকটির দিকে তাকিয়ে মিনুকে দেখিয়ে বলে “এই হল আমার মেয়ে। একাদশ শ্রেণীতে পড়ছে। বয়স এমন বেশি কিছু না” বলে তিনি চুপ করে গেলেন। লোকটি মিনুর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকালো। মিনু কিছু বুঝতে না পারে তাড়াতাড়ি ঘরের মধ্যে চলে যায়। মাকে জিজ্ঞাসা করে, “মা কে ওই লোকটা”
“আমি ঠিক জানিনা। তোর বাবার কে হয়! কি সব কথাবার্তা বলছে!”
আগত লোকটি বলে “আপনার মেয়ে তো দেখতে খুব সুন্দর । পাত্রপক্ষের দেখামাত্রই পছন্দ হয়ে যাবে”
“কিন্তু আমার মেয়ের…”
লোকটা “ওসব আপনাকে কিছু চিন্তা করতে হবে না। আপনি শুধু রাজি হন। তারপরে ব্যাপারটা আমি দেখে নিচ্ছি”
“সে না হয় ঠিক আছে কিন্তু মেয়ের বয়স… আমার তো এখন বিয়ে দেওয়ার কোন ইচ্ছে নেই”
লোকটা “ পাত্র হাতছাড়া করা উচিত নয়। কি বলেন বৌদি”
মা কিছু বুঝতে না পেরে মাথা হেট করে থাকে।
অলক “আচ্ছা ঠিক আছে। আমি আমার পরিবারের সঙ্গে কথাবার্তা বলি ”।
লোকটা “ মেয়ের বয়স কম তো কি হয়েছে | ছেলে তো ভালো | এতক্ষণে মিনু ব্যাপারটা বোধগম্য করতে পারে। বুঝতে পারে বাড়িতে তার বিয়ের জন্য কথাবার্তা চলছে। মিনু কোথায় যেন একটা হারিয়ে যায়। তার স্বপ্ন যেন কোথাও একটা আঘাত লাগে। তার বিদ্যালয় তার পড়াশোনা তার বাবা মাকে দেখা সব কিছু যেন এলোমেলো হয়ে যায়। সে মাকে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে “মা আমি এখন বিয়ে করবো না। আমি পড়াশোনা করতে চাই। তুমি বাবাকে বারণ করে দাও আমি এখন বিয়ে করব না”
মিনু রাত্রে ঘুমিয়ে পড়লে, অলক মিনুর মায়ের সঙ্গে মিনুর বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে থাকে।
“দেখো। শোনো, ছেলে বলছে সরকারি চাকরি করে, মাইনেও নাকি খুব ভালো। মেনুকে ওখানে বিয়ে দিলে অনেক সুখেই থাকবে তাছাড়া ছেলের যেহেতু চাকরি আছে টাকা পয়সার অভাব হবে না”।
মিনুর মা “সে না হয় ঠিক আছে কিন্তু দেখো মেয়ে আমাদের খুব ছোট। একটাই মাত্র মেয়ে । যা কিছু করবে একটু ভেবেচিন্তে করো”
অলক “ মেয়ের বয়স কম কিন্তু ছেলে সরকারি চাকরি করে, সরকারি চাকরি দেখে বিয়ে দেব”
“ আচ্ছা ।”
♦ পর্ব ৫ ♦
সবকিছু ঠিকঠাক দেখেশুনে অলক তার মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিলেন। সরকারের নিয়মকে তোয়াক্কা না করে অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া যে সরকারি আইন বিরুদ্ধে, তা অলক ভালোভাবেই জানেন কিন্তু সরকারি চাকরিজীবী ছেলেকে হাতছাড়া করবেন না বলে মেয়েকে বিয়েই দিয়ে দিলেন।
মিনু হঠাৎ করে কোথায় যেন একটা অপরিচিত জায়গায় পড়ে গেল। শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে সে যেন কোন দিশা খুঁজে পায় না। সব যেন ওলটপালট হয়ে যায়। সব কিছু যেন তার অপরিচিত মুখ । কোথায় গেল সেই তার পড়াশোনা? কোথায় গেল তার সেই বিদ্যালয়ে জীবন? সবকিছু যেন ধুলিস্যাৎ হয়ে গেল । শ্বশুর বাড়িতে এসে প্রথম প্রথম একটু অসুবিধাই থাকতো। কাউকে চিনতে না পেরে কথা বলত না।
যে মিনু তার বাপের বাড়িতে কোনদিন রান্না পর্যন্ত করেনি। শ্বশুরবাড়িতে এসে সেই রান্না তাকে করতে হচ্ছে। রান্না করে তার স্বামীকে দিতে হচ্ছে। কেননা তার স্বামী সকাল দশটায় অফিসে যাবেন। সেজন্য তার সকাল সকাল খাবার তৈরি করে দিতে হবে। মিনু যেন এবার একটু দায়িত্বশীল হয়ে গেল। বাড়ির সমস্ত রান্না তার ওপর । তার শশুরকে তার শাশুড়িকে সমস্ত কিছুই তার উপর। এমন করে করে কয়েক মাস কেটে যায়। হঠাৎ করে জানা যায় মিনু গর্ভবতী। মিনু মা হতে চলেছে। মিনুর শ্বশুর এবং শাশুড়ি মেনুকে তার বাপের বাড়িতে রেখে যায়, তাদের নিয়ম নাকি প্রথম বাচ্চা মেয়ের বাপের বাড়িতেই হয়। তাই বাপের বাড়িতেই তাকে রেখে যায়।
♦ পর্ব ৬ ♦
একদিন রাত্রে মিনুর হঠাৎ প্রসব যন্ত্রণা ওঠে। অলক এবং মিনুর মা তাকে নিয়ে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। মিনু অসহ্য প্রসব যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে মাঝেমধ্যে কেঁদে উঠছে। তার মা তার পাশে সব সময় রয়েছে। মেনু তার মাকে জড়িয়ে ধরে বলে “মা আমার কিছু হবে না তো”
“না মা তোর কিছু হবে না। সুন্দর একটি ফুটফুটে সন্তান আসবে”
তার মায়ের কথা হালকা হালকা শুনতে পাইনি, তার অসহ্য যন্ত্রণা তাকে কাতর করে তুলেছে। তার স্বামী অফিস থেকে ছুটি করে তাকে দেখতে এসেছেন। তার পাশেই বসে আছে। ডাক্তার বলে দিয়েছেন আজ রাত্রেই প্রসব হতে পারে।
মিনু অসহ্য প্রসবের যন্ত্রণা সহ্য করে এক কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছে। কন্যা সন্তান তা মেনুর মতোই দেখতে হয়েছে। কন্যা সন্তান জীবন দান তো মিনু করে গেল। কিন্তু মিনুকে দাম দিতে হলো তার জীবন দিয়ে। অসহ্য প্রসব যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে মিনু মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে। সেই সঙ্গে শেষ হয়ে গেল সেই উদ্দাম এক মীনাক্ষীর চঞ্চলতাময় জীবনের আনন্দ সুখ স্মৃতিময় জীবন।
ধন্যবাদ। যে সমস্ত শিক্ষার্থী এতক্ষণ ধরে এই পোস্টটি যত্ন সহকারে পড়লে। আশা করছি Class 11 স্বরচিত গল্প বিষয়টি তোমাদের সহজে বোধগম্য হয়েছে |