Slst বা msc পশ্চিমবঙ্গের স্কুল সার্ভিস কমিশনের wbcssc মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায়, বাংলা সাবজেক্টের পাঠ্যগ্রন্থগুলির মধ্যে নবম শ্রেণীর পাঠ্য বই: হল সাহিত্য সঞ্চয়ন। দশম শ্রেণীর সাহিত্য সঞ্চয়নের একটি কবিতা ঘর । কবি আমিয় চক্রবর্তী রচিত। এই ঘর কবিতাটির খুঁটিনাটি বিষয়, বিষয়বস্তু তাৎপর্য গভীরে এবং নমুনা প্রশ্ন বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা বাংলা বিষয় আরও প্রশ্ন-উত্তর জানতে click here
ঘর কবিতার বিষয়বস্তু
পটভূমিকা– কবি অমিও চক্রবর্তী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্য সচিব ছিলেন এবং রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তিনি পারস্য মধ্যপ্রাচ্য সহ বহু জায়গায় ভ্রমণ করেছেন। তার ইচ্ছা ছিল বিশ্ব নাগরিক হওয়ার এবং তার বেশিরভাগ জীবনই বিদেশেই কেটেছে। এমনকি তিনি আমেরিকাতে পাকাপাকিভাবে থাকতেও শুরু করেন। তার জীবনের শেষ দিকে তিনি তার নিজের জন্মভূমি ভিটেই এসেছিলেন। তার রচিত তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ খসড়া। এই কাব্যগ্রন্থটি বিদেশে থাকাকালীন সময়ে রচিত। এই কাব্যগ্রন্থেই তার ঘরে ফেরার আকুতি তার সেই জন্মভূমি ভিটের কথা বারবার ফুটে উঠেছে বিভিন্ন কবিতায়। সেই কাব্যগ্রন্থটি একটি কবিতা ঘর। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যে কবি আসলে বিদেশ থেকে নিজের ঘরে ফেরার যে অনুভূতি যে স্বপ্নময় নিজের ঘরে ফিরে তার যে আত্মতৃপ্তি বা আত্মার শান্তি সেটা এই কবিতাই আমরা দেখতে পাই।
কবিতার বিষয়বস্তু:- ঘর কবিতার কথক কবি নিজেই । কবি বিদেশ থেকে বাড়ি ফিরেছেন । পূর্বেই উল্লেখিত হয়েছে যে, কবি তার বেশিরভাগ জীবনেই বিদেশেই কাটিয়েছেন। তাই বিদেশ থেকে বাড়ি ফেরার একটা তীব্র আকাঙ্ক্ষা বা ছেলেবেলার স্মৃতিবিজড়িত গ্রামের বাড়ি তার কাছে একটা স্বর্গের মতো। সেই বিদেশ থেকে তিনি তার ছেলেবেলার স্মৃতি বিজড়িত ঘরে অর্থাৎ নিজের জন্মভূমিতে ফিরেছেন। তাই কবিতার প্রথম লাইনই কবি বলেছেন বাড়ি ফিরেছি। আর কবির সেই গ্রামের বাড়ি অর্থাৎ তার দেশের বাড়ি, তার জন্মভূমির ঘর কেমন– না সেখানে জারুলের বেড়া। আর কাঁকড়ের পথ। যে পথ তার দরজায় গিয়ে থামবে। কবি বলেছেন এইখানেই তার পৃথিবী শেষ। এখানে কবি বেড়া হিসেবে জারুলের কথা বলেছেন।
তাছাড়া এই জারুল গাছ গ্রাম বাংলার একটা প্রতীক। যেটা কবি ভালবেসেই বলেছেন জারুলের বেড়া। আর রাস্তাকে তিনি বলেছেন কাকর পথ কেননা গ্রামের কাঁচা মাটির মেঠো পথ কবির কাছে অতি পরিচিত। কবি বহু দেশ ঘুরেছেন। নিজের চোখের পিপাসা মিটিয়েছেন। তার সংসার দূরে অর্থাৎ তিনি আমেরিকায় পাকাপাকি থাকার কথা বলেছেন। সেখানে তার মনের মধ্যে এই গ্রামের বাড়ি– স্মৃতির ঢিবি হিসেবে উঠে আসে। আজ কিন্তু তা নেই। কবি যেন তার নিজের জন্মভূমি ঘরে ফিরে প্রণাম করে যেন নতুনভাবে নিজের গ্রামের ঘর কে চিনতে পারলেন। তিনি বেড়া পেরিয়ে এগিয়ে গেলেন।
তার পা চলল বাড়ির দিকে। অমনি তার বাড়ির সিঁড়ির কাছে একটা চেনা কচি গলার আওয়াজ। এই আওয়াজ হয়তো আমাদের বলে দিচ্ছে যে, কবির স্মৃতি বিজড়িত ছেলেবেলা। যে জানতে চাইছে, এতদিন কোথায় ছিলে আমাকে ছেড়ে ? গাছের আড়াল থেকে কেউ যেন অভিমানী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। আলো নিয়ে ফিরে আসার সন্ধ্যার সাজের মত অর্থাৎ কবি কিন্তু ফিরেছেন সন্ধ্যা বেলা।গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা যিনি তিনি কোন নারী হতে পারেন যিনি অভিমান করে গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে আছেন।
উৎস – নবম শ্রেণীর সাহিত্য সঞ্চয়ন বইয়ের পাঠ্য “ঘর” কবিতাটি অমিয় চক্রবর্তীর তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ “খসড়া” থেকে নেওয়া হয়েছে। খসড়া কাব্যগ্রন্থটি ১৯৩৮ সালে প্রকাশিত।
ঘর কবিতার সারাংশ
বিষয়বস্তুর তাৎপর্য:- ঘর কবিতায় কবি অমিয় চক্রবর্তী নিজের জন্মভূমি তথা স্বদেশ ভূমির প্রতি আবেগ প্রকাশ করেছেন। দীর্ঘদিন বিদেশে থাকার সূত্রে তিনি তার নিজের ঘরকে খুঁজে বেরিয়েছেন। তার ঘরে ফেরার তীব্র বাসনা দেখা গেছে। এই কবিতায় গ্রাম বাংলার পরিবেশ যেমন ফুটিয়ে তুলেছেন তেমনি গ্রাম বাংলার স্নেহময় মমতা যে ঘর তাকে খুবই অপরূপ সৌন্দর্য মহিমায় এই কবিতায় তুলে ধরেছেন। আমাদের গ্রামের ঘর সর্বদাই আমাদের কাছে স্বর্গ । সেই গ্রাম আমাদের শান্তি । সেই গ্রামের ঘরেই আমাদের স্বর্গবাস । তাই কবি এই কবিতায় বলেছেন আমার পৃথিবী এখানে শেষ।
কবিতাটির নামকরণ:- কবিতাটির নামকরণ যত প্রযুক্ত কিনা তা কবিতাটির বিষয়বস্তু বা অন্তর্নিহিত তাৎপর্য লক্ষ্য করলেই বোঝা যায়, পূর্বেই আলোচনা করা হয়েছে কবিতাটির অন্তর্নিহিত তাৎপর্য। এই কবিতার মাধ্যমে কবি গ্রামের ঘরের অপরূপ সৌন্দর্যের কথা তুলে ধরেছেন । গ্রামের চেনা পথ গ্রামের পরিবেশ এই ঘর কবিতায় ফুটে উঠেছে। কবি বিদেশ থেকে নিজের ঘরে ফিরেছেন। ঘরে ফিরে তার চেনা যে পরিবেশ অর্থাৎ তার নিজের ঘরের যে চেনা পরিবেশ তার চোখের সামনে ভেসে উঠেছে। তাই বলা যায় কবিতাটি নামকরণ সার্থক হয়েছে।
শব্দার্থ টিকা:- জারুলের বেড়া- জারুল হল গ্রাম বাংলার অতি পরিচিত একটি গাছ । যার ফুল বেগুনি রঙের হয়। ছোট মাঝারি সাইজের গাছ। গ্রামে অধিকাংশ বাড়িতে এই জারুলের বেড়া দেখা যায়। ছোট ছোট চারা গাছে দিয়ে এই বেড়া করা হয়। তবে এই কবিতায় গ্রাম বাংলার একটি অতি পরিচিত গাছ হিসেবেই বা প্রতিক হিসেবে এটা ব্যবহার করা হয়েছে। অনাত্ম– যার সঙ্গে কোন আত্মীয় সম্পর্ক নেই। অর্থাৎ কবি বিদেশে ছিলেন। সেখানকার পরিবেশের সঙ্গে বা ঘরের সঙ্গে কবির কোন আত্মীয় সম্পর্ক নেই।
কচি গলার আওয়াজ:- এই শব্দ বন্ধুগুলি আসলে রূপক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। কচি গলার আওয়াজ বলতে কবির ছেলেবেলার স্মৃতি বিজড়িত আওয়াজকে বোঝানো হয়েছে। যে আওয়াজ হয়তো বলতে চেয়েছে এতদিন কোথায় ছিলে? গাছের আড়ালে:- কবি যখন নিজের ঘরে ফিরেছেন তখন তার কোন নিকট আত্মীয়। এখানে হতে পারে কোন নারী বা মহিলা যিনি অভিমান করে গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে আছেন স্থির ভাবে।
কবি সম্পর্কিত তথ্য:– আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম প্রধান কবি অমিয় চক্রবর্তী। তিনি রবীন্দ্র ঠাকুরের ব্যক্তিগত সাহিত্য সচিব ছিলেন। তিনি বেশিরভাগ জীবনে বিদেশে কাটিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে পারস্য মধ্যপ্রাচ্য গিয়েছেন । তার বিখ্যাত রচিত কাব্যগ্রন্থ গুলির মধ্যে রয়েছে “এক মুঠো”, “পারাপার”, “পালাবদল”, “পুষ্পিত ইমেজ”, “ঘরে ফেরার দিন”, খসড়া” ইত্যাদি । কবি সম্পর্কিত আরো তথ্য তোমরা যে কোন সাহিত্যের বই থেকে পেয়ে যাবে।
ঘর কবিতার প্রশ্ন উত্তর pdf
স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনে বাংলা বিষয়ে বেশ কিছু নমুনা প্রশ্ন এই কবিতা থেকে তুলে ধরা হলো–
১. “আমার পৃথিবী এইখানে শেষ”-উল্লিখিত পংক্তিটি কোন কবিতা থেকে গৃহীত হয়েছে
- ঘর
- নোংর
- সাতটি তারার তিমির
- এই তার পরিচয় উঃ ঘর
২. “বেড়া পার হল, পা, চলো “- উল্লিখিত পঙক্তিটির কবি হলেন –
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- অমিয় চক্রবর্তী
- বেগম রোকেয়া
- নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী উঃ অমিয় চক্রবর্তী
৩. অমিয় চক্রবর্তীর রচিত “ঘর” কবিতায় কোন গাছের বেড়ার কথা বলা আছে?
- জাম গাছ
- জারুল গাছ
- আম গাছ
- কাঁঠাল গাছ উঃ জারুল গাছ
৪. “বেড়া পার হলো, পা, চলো”- কোন গাছের এই বেড়া কোন গাছ দিয়ে তৈরি হয়েছে?
- জারুল গাছ
- জাম গাছ
- আম গাছ
- কাঁঠাল গাছ উঃ জারুল গাছ
৬. “নূতন হলেন প্রণামে/ এই/ আপন ঘরের গ্রামে”- কবির গ্রামের ঘরের পথ কিসের?
- কাঁকর
- মাটির
- মোরাম
- কাদার উঃ কাঁকড়
৭. অমিয় চক্রবর্তীর রচিত ঘর কবিতাটির উৎস কি?
- একমুঠো
- পারাবার
- পালাবদল
- খসড়া, উঃ খসড়া
৮. “বাড়ি ফিরেছি”- কোথা থেকে ফিরেছেন?
- বিদেশ থেকে
- গ্রাম থেকে
- শহর থেকে
- বাইরে থেকে উঃ বিদেশ থেকে
৯. “আমার পৃথিবী/ এইখানে শেষ”- পৃথিবী বলতে বোঝানো হয়েছে –
- বিদেশ
- গ্রাম
- বাড়ি
- ঘর উঃ ঘর
১০. “আমার পৃথিবী /এইখানে শেষ” এইখানে বলতে কোথায় বোঝানো হয়েছে-
- বিদেশে
- দেশে
- গ্রামে
- ঘর উঃ ঘর
বিশেষ টিপস:- মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন এবং স্কুল সার্ভিস কমিশনে বাংলা বিষয়ে প্রশ্ন mcq হয় তাই কবিতাটির লাইন বারবার রিডিং পড়বে। এই কবিতা থেকে লাইনগুলি পূর্বাপর রিডিং পড়ে মনে রাখতে হবে এবং বিষয়বস্তু ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে। কবিতার লাইনগুলি ঠিকঠাক মনে থাকলে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া খুব সহজ হবে। তাই কবিতাটি অন্তত প্রতিদিন একবার করে রিডিং করতে হবে। যাতে লাইনগুলি পরপর মনে থাকে। কেননা স্কুল সার্ভিস কমিশনের বাংলা বিষয়ে পরীক্ষায় বেশিরভাগ লাইন তুলে প্রশ্ন হয়। তাই লাইনগুলি বারবার ভালোভাবে মনে রাখার চেষ্টা করতে হবে।
এসএলএসটি বা মাদ্রাসার বাংলা বিষয়ে আরো প্রশ্নের উত্তর জানতে এবং বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা জানতে- click Here