Slst বা msc পশ্চিমবঙ্গের স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায়, বাংলা সাবজেক্টের পাঠ্যগ্রন্থগুলির মধ্যে দশম শ্রেণীর পাঠ্য বই: হল সাহিত্য সঞ্চয়ন। দশম শ্রেণীর সাহিত্য সঞ্চয়নের একটি কবিতা একাকারে সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত। এই পরশমণি কবিতাটির খুঁটিনাটি বিষয়, বিষয়বস্তু তাৎপর্য গভীরে এবং নমুনা প্রশ্ন বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা বাংলা বিষয় আরও প্রশ্ন-উত্তর জানতে click here
একাকারে সুভাষ মুখোপাধ্যায় পটভূমিকা:
একাকারে কবিতাটি কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের রচিত। কবিতাটি বর্তমান প্রেক্ষাপটের ওপর নির্মিত হয়েছে। বর্তমান সময়ে পৃথিবীর সমস্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। খুন, অত্যাচার, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, একে অপরকে হিংসাত্মক কার্যকলাপের প্ররোচনা দেওয়া– এই সমস্ত ক্রমবর্ধমান সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় এই কবিতাটি রচনা করেছেন। তিনি হিন্দু এবং মুসলমান যে একাত্মা তা এই কবিতার মাধ্যমে বলতে চেয়েছেন এবং এই দুই সম্প্রদায়ের ঐকান্তিক মিলিত প্রার্থনায়, পৃথিবীর উদ্ভূত সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করেন।
একাকারে কবিতার বিষয়বস্তু–পৃথিবীর সমস্ত জল সমস্ত সম্প্রদায়ের মধ্যেই সমানভাবে বন্টিত আছে। জলের ওপর কারো কোন অধিক অধিকার নেই। হিন্দুদের যেমন জল মুসলমানদের তেমনি পানি। এই দুই সম্প্রদায় জলকে একসঙ্গে একাকারে ভরে নিয়ে পান করে। তাই কবি বলেছেন, ঝর্নার সামনে নতজানু হয়ে দুহাত, এক অঞ্জলিতে সকলের জীবনের জন্য জল আর পানি একসঙ্গে ভরে নিতে বলেছেন। অর্থাৎ স্পষ্টই তিনি বলতে চেয়েছেন হিন্দু এবং মুসলমানের মধ্যে কোন ভেদাভেদ নেই, দূর সম্প্রদায় যেন এক আত্মা । তাদের মিলিত ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মানুষের সমূহ বিপদ থেকে উদ্ধার হওয়ার রাস্তা আছে।
উভয় সম্প্রদায়ই জপমালা হাতে একজনের মা আর একজনের আম্মা জগত জোড়া সুখের জন্য এক আসনে বসে শান্তির জন্য এই পৃথিবীর সুস্থ জীবন যাপনের জন্য প্রার্থনা করে চলেছেন। কবি বলেছেন কোরআনের সঙ্গে উপনিষদের মন্ত্র অন্যদিকে সকালে প্রভাতফেরির সঙ্গে ভোরের আজান যেন একসঙ্গে মিলিত হয়ে যাচ্ছে অর্থাৎ উভয় সম্প্রদায়ই যে কোন ভেদাভেদ নেই, তারা যে একই মায়ের সন্তান– মানুষ এবং তাদের মিলিত ঐকান্তিক প্রার্থনার ফলে পৃথিবী যে আবার নতুন ভাবে জেগে উঠবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
একাকারে বিষয়বস্তুর তাৎপর্য-
কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় এই কবিতার মাধ্যমে ভারতবর্ষে দুই সম্প্রদায় হিন্দু এবং মুসলমানের মিলনকে আহবান করেছেন। স্পষ্টই জল আর পানি, মা আর আম্মা যে কোন ভেদাভেদ নেই দুই সম্প্রদায়ের জীবন যাপনে কোন পার্থক্য নেই উভয় সম্প্রদায়ের সুখ দুঃখের কথাও যে এক এবং ঈশ্বরের কাছে তাদের প্রার্থনার পথ যে এক, একথা বারবার তিনি বলেছেন। তাছাড়া দুই সম্প্রদায়ের মিলিত শক্তির ফলেই পৃথিবীর সুস্থ স্বাভাবিক জীবন অর্থাৎ শান্তি ফিরতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে যে সম্প্রদায়িক দাঙ্গা, খুন, হিংসা প্রভৃতি ঘটনা ঘটে চলেছে, তার মূলে সাম্প্রদায়িক উস্কানি কাজ করছে। তাই কবি দুই সম্প্রদায়ের এক আসনে বসে প্রার্থনার আহবান করেছেন।
নামকরণ তাৎপর্য– একা করে শব্দটির অর্থ হলো একেবারে একসঙ্গে মিলেমিশে এক হয়ে যাওয়া এই কবিতার মাধ্যমে হিন্দু এবং মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের একসঙ্গে মিলিত হওয়ার কথা কবি বলেছেন অর্থাৎ উভয় সম্প্রদায় এই একসঙ্গে ১ আসনে বসে প্রার্থনা করলে তবেই যে পৃথিবীর উদ্ভূত সমস্যা থেকে উদ্ধার হওয়া যাবে সে কথা খুবই বারবার বলেছেন স্পষ্টতই মা এবং আম্মা এর মধ্যে যেকোনো পার্থক্য নেই তা কবি এই কবিতার মাধ্যমে বলেছেন।
কবিতাটির উৎস– সুভাষ মুখোপাধ্যায় একাকারের কবিতাটি “বাঘ ডেকেছিল” কাব্যগ্রন্থের ১৯ সংখ্যক কবিতা
কবি সম্পর্কিত তথ্য:–কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় এর প্রথম কাব্যগ্রন্থ পদাতিক প্রকাশিত হয় ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে। এছাড়া তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ গুলির মধ্যে রয়েছে– অগ্নিকোণ, চিরকুট, ফুল ফুটুক, যত দূরেই যায়, কাল মধুমাস, ছেলে গেছে বনে, জল সইতে, একটু পা চালিয়ে ভাই, ধর্মের কল ইত্যাদি এছাড়াও ঢোল গোবিন্দের আত্মদর্শন, ঢোল গোবিন্দের মনে ছিল এই, ফকিরের আলখাল্লা,- ইত্যাদি গ্রন্থও অন্যতম রচনা।
নমুনা প্রশ্ন:
স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনে বাংলা বিষয়ে বেশ কিছু নমুনা প্রশ্ন এই কবিতা থেকে তুলে ধরা হলো
১. “একাকারে মিলিয়ে যাচ্ছে”- এখানে কি মিলিয়ে যাচ্ছে?
উঃ সকালে প্রভাতের সঙ্গে ভোরের আজান
২. “একাকারে প্রার্থনা করছেন”- কে প্রার্থনা করছেন?
উঃ তোমার মা আর আমার আম্মা
৩. “একসঙ্গে একাকারে ভরে নিই”- কি ভরে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে?
উঃ জল বা পানি
৪. “একাকারে কবিতাটির উৎস কি?
উঃ বাঘ ডেকেছিল কাব্যগ্রন্থের ১৯ সংখ্যক কবিতা
৫. “শোনো, কোরআনের সূরাহর সঙ্গে/ উপনিষদের মন্ত্র” এই পংক্তিটি কোন কবিতা থেকে গৃহীত হয়েছে ?
উঃ একাকারে
৬. “দেখো, জপমালা হাতে তোমার মা আর আমার আম্মা”-মা আর আম্মা জপমালা হাতে নিয়ে কি করছেন?
উঃ একাসনে বসে শান্তির জন্য প্রার্থনা করছেন
বিশেষ টিপস:- এই কবিতাটির বিষয়বস্তু ভালোভাবে পড়ে পাঠ্য বিষয়টি বারবার রিডিং পড়ে রাখতে হবে। যাতে পদের লাইনগুলি পর পর মনে থাকে। বিশেষ করে পদের শেষ লাইনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।যদি প্রশ্ন আসে- এই শেষ লাইনটা ধরেই প্রশ্ন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় সম্পর্কিত আরো প্রশ্ন তোমরা সাহিত্যের ইতিহাসের যেকোনো বইতে পেয়ে যাবে। স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা বাংলা বিষয় আরও প্রশ্ন-উত্তর জানতে click here