> কে বাঁচায় কে বাঁচে প্রশ্ন উত্তর-2024 » Qবাংলা

কে বাঁচায় কে বাঁচে প্রশ্ন উত্তর-2024

প্রিয় ছাত্র-ছাত্রী ,
দ্বাদশ শ্রেণীর WBCHSE বাংলা পাঠ্য বিষয়ের মধ্যে একটি অন্যতম গল্প “কে বাঁচায় কে বাঁচে” গল্পটি | গল্পটি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত। এই গল্প থেকে গুরুত্বপূর্ণ রচনাধর্মী অর্থাৎ বড় প্রশ্নের উত্তর খুব সুন্দরভাবে তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীদের যাতে কোন অসুবিধা না হয়, সেই দিকটা বজায় রেখে বেশ কিছু অংশে গুরুত্বপূর্ণ টিপস দেওয়া রয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীরা ভালোভাবে পড়ে তা অনুসরণ করলে পরীক্ষায় পূর্ণ নম্বর পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা বেড়ে যাবে।

কে বাঁচায় কে বাঁচে প্রশ্ন উত্তর

৩.১ “কে বাঁচায়, কে বাঁচে” শীর্ষক গল্পের মৃত্যুঞ্জয় চরিত্রটি বিশ্লেষণ কর। অথবা:- পাঠ্য বইয়ের যে কোন লাইন তুলে মৃত্যুঞ্জয়ের চরিত্র বিশ্লেষণ করতে বলবে। অর্থাৎ যে লাইনটি তুলবে সেই লাইনটির কিছু প্রশ্ন করে, এই প্রসঙ্গে মৃত্যুঞ্জয় চরিত্র বিশ্লেষণ কর এরম প্রশ্ন হতে পারে

উঃ) “কে বাঁচায়, কে বাঁচে” শীর্ষক গল্পে কথাশিল্পী মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় পঞ্চাশের মন্বন্তরের এক মর্মান্তিক চিত্র তুলে ধরেছেন পাঠ্য গল্পে । গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র মৃত্যুঞ্জয়ের চোখ দিয়েই সেই সমস্ত দৃশ্যপট আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন।

নিরীহ ও সরল: মৃত্যুঞ্জয় একজন শান্ত , নিরীহ, সরল এবং মধ্যবিত্ত চাকুরিজীবী মানুষ । নয়জনের সংসার তার একার মাইনেতে না চলায় প্রতিমাসে ধার করতে হয় । তবুও চাকরিজীবী হওয়ার সুবাদে তার সাংসারিক জীবন সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবেই চলত।

আবেগপ্রবণ: মৃত্যুঞ্জয় আবেগপ্রবণ , অনুভূতিশীল । অফিস যাওয়ার পথে ফুটপাতে অনাহারে মৃত্যুর দৃশ্য দেখে মৃত্যুঞ্জয় শারীরিক এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং মানসিক কষ্ট যন্ত্রনায় দগ্ধ হতে থাকে। ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকে তার জীবন । তার সমস্ত কিছু দান করে সেই সমস্ত অভূক্ত মানুষদের জীবন বাঁচাতে চেয়েছিল মৃত্যুঞ্জয়।

অনুশোচনা: মৃত্যুঞ্জয় ফুটপাতের এমন মর্মান্তিকভাবে, না খেতে পাওয়া মানুষের মৃত্যু দেখে আত্ম অনুশোচনায় কষ্ট পেতে থাকে এবং তার শরীর অসুস্থ হয়। সংবেদনশীল মৃত্যুঞ্জয় ফুটপাথের মৃত্যুর জন্য নিজেকে দায়ী করেছিল । অনাহারে মৃত্যু তার শরীর ও মনের মধ্যে বিরাট প্রভাব পড়েছিল এবং নানা প্রশ্ন তৈরি করেছিল।

বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা : অন্নহীন মানুষদের বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছে মৃত্যুঞ্জয় । একবেলা খাওয়া বন্ধ করেছে , মাইনের সমস্ত টাকা পাঠিয়েছে রিলিফ ফান্ডে । কিন্তু নিজের অক্ষমতা বুঝে নিজেই বদলে গিয়েছে । অফিসের দায়িত্ব এবং সংসারের কর্তব্য পেরিয়ে সে হাজির হয়েছে বুভুক্ষ মানুষদের পাশে । পরিণতিতে মৃত্যুঞ্জয় অন্নহীনদের ভিড়ে মিশে গিয়েছে, তাদের একজন হয়ে ।

শেষ কথা : নিরীহ , শান্ত , দরদি মৃত্যুঞ্জয় আদর্শবাদ ও নৈতিকতার কারণেই স্থির থাকেনি । সমাজের স্বার্থপরতায় জড়িয়ে না পড়ে মৃত্যুঞ্জয় ক্ষুধিত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে যথার্থ মানসিক সত্তা নিয়ে । শেষপর্যন্ত গল্পে মৃত্যুঞ্জয়ের পরিণতি মনুষ্যত্ববোধের প্রতীক হয়ে উঠেছে । তার মুখ থেকে বেরিয়ে আসে, অভুক্ত মানুষদের সেই বেদনাদায়ক কথা:- “ খেতে পায়নে বাবা। আমায় খেতে দাও”


বিশেষ দ্রষ্টব্য : মৃত্যুঞ্জয়ের চরিত্র প্রশ্নের উত্তর লেখার ক্ষেত্রে পয়েন্ট নাও দিতে পারো। প্যারা করে লেখাও উত্তর ভালো হবে| চরিত্র বিশ্লেষণ করতে গিয়ে নির্দিষ্ট চরিত্রের বলা একটা বা দুটো উক্তি বা কোটেশন তুলে লেখার চেষ্টা করলে উত্তরের মান অনেকটাই বেড়ে যাবে এবং উত্তর খুব সুন্দর এবং মানসম্পন্ন হবে।

কে বাঁচায়, কে বাঁচে প্রশ্ন উত্তর-2024
কে বাঁচায়, কে বাঁচে প্রশ্ন উত্তর-2024

৩.২। কে বাঁচায় কে বাঁচে গল্পে নিখিলের চরিত্রটি বিশ্লেষণ কর।
অথবা পাঠ্য গল্পের যেকোন প্রশ্ন যে কোন লাইন তুলে লাইনটির অর্থ জানতে চেয়ে সেই প্রসঙ্গে নিখিলের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ কর, এমন প্রশ্ন হবে

উঃ) ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ শীর্ষক ছোটগল্পে মৃত্যুঞ্জয় এর পাশাপাশি নিখিল চরিত্রটিও উজ্জ্বলভাবে আমাদের পাঠ্যে ফুটে উঠেছে। নিখিল মৃত্যুঞ্জয়ের অফিসেই কাজ করে এবং তারা দুজনেই সমপদস্থ সরকারি চাকরিজীবী।

সহযোগী ভালো বন্ধু:নিখিল শুধুমাত্র মৃত্যুঞ্জয়ের অফিসের সহকর্মীই নয়, মৃত্যুঞ্জয়ের অত্যন্ত কাছের সুহৃদয় বন্ধুও। নিখিল সর্বদা মৃত্যুঞ্জয়ের পাশে দাঁড়িয়েছে। মৃত্যুঞ্জয় ফুটপাতে অনাহারে মৃত্যুর দৃশ্য দেখে তার পরিবারের অবস্থা যখন শোচনীয় হয়, তখন নিখিলই তার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছিল। এমনকি নিখিলেই অফিসে বলে মৃত্যুঞ্জয়ের ছুটির ব্যবস্থা করে দিয়েছিল ।

নিঃস্বার্থ ব্যক্তি:নিখিলের মধ্যে কোন স্বার্থপরতা ছিল না। সে ছিল চরম বাস্তববাদী এবং সমাজের সত্যি তাকে সে উপলব্ধি করেছিল। সে প্রতিমাসে তিন জায়গায় অর্থসাহায্য পাঠাত। তা ছাড়া, দীর্ঘদিন ধরে সে মৃত্যুঞ্জয়কে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট থেকেছে। সে মৃত্যুঞ্জয়ের পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছে এবং মৃত্যুঞ্জয় অফিস যাওয়া বন্ধ করলে তার ছুটির ব্যবস্থা করে দিয়েছে।

বাস্তববুদ্ধি: নিখিল এক হৃদয়বান যুবক কিন্ত তা হলেও পুরোপুরি আবেগ দ্বারা পরিচালিত নয় । বাস্তববুদ্ধি দিয়ে সে বুঝেছিল যে মৃত্যুঞ্জয় বা সে তাদের যথাসাধ্য শক্তি দিয়ে রুখে দাঁড়ালেও সমস্ত নিরন্ন মানুষদের মুখে তারা অন্ন জোগাতে পারবে না ।নিখিল দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতা উপলব্ধি করেলও প্রিয় বন্ধু মৃত্যুঞ্জয়ের মতো ভেঙে পড়েনি। সে মৃত্যুঞ্জয়ের মতো বাস্তব জ্ঞানহীন ছিল না। মৃত্যুঞ্জয় মাইনের পুরো টাকা ত্রান-তহবিলে দান করলে, সে তার প্রতিবাদ করেছে এ কথা ভেবে :“এ ভাবে দেশের লোককে বাঁচানো যায় না ”

শেষ কথা : নিখিল ছিল এক স্বার্থহীন মানুষ । সমপদস্থ মৃত্যুঞ্জয়ের মাইনে তার থেকে সামান্য কিছু বেশি |তা সত্ত্বেও, অন্য সবার মতো নিখিল মৃত্যুঞ্জয়কে পছন্দ করে।কিন্তু মৃত্যুঞ্জয়ের মানসিক শক্তির কাছে নিখিল কিছুটা নিস্তেজ ছিল।

suggestion for class 12 , please click here- class 12 suggestion 

৩.৩ “তখন সে রীতিমতো কাবু হয়ে পড়েছে” – কে, কি কারনে রীতিমতো কাবু হয়ে পড়েছিল? কাবু হয়ে পড়ার কি কি লক্ষণ তার মধ্যে দেখা দিয়েছিল?

উঃ) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের “কে বাঁচায়, কে বাঁচে” শীর্ষক ছোটগল্পে, মৃত্যুঞ্জয় অফিস যাওয়ার পথে অনাহারে তথা না খেতে পাওয়া মানুষের মৃত্যুর করুন দৃশ্য দেখেছিল। এই দৃশ্য দেখার পর তার মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হয়। কয়েক মিনিটেই তার সুস্থ শরীরটা অসুস্থ হয়ে পড়ে। নিজের অফিসে পৌঁছে ছোট্ট কুঠুরিতে ঢুকেই ধপ করে বসে পড়েছিল। এই সময় মৃত্যুঞ্জয় রীতিমত কাবু হয়ে পড়েছিল।

ফুটপাতে অনাহারে মৃত্যুর করুন দৃশ্য দেখে মৃত্যুঞ্জয়ের ধারণা পাল্টে যায়। এতদিন মৃত্যুঞ্জয় শুধু শুনে অথবা পড়ে এসেছিল ফুটপাতে অনাহারে মৃত্যুর কথা । এখন সে নিজের চোখে এই অনাহারে মৃত্যুর করুন চিত্র দেখলো । প্রথম এইরকম অনাহারে মৃত্যু দেখে তার মনের মধ্যে প্রচন্ড আঘাত লাগে ।তার মনের মধ্যে চলে প্রচন্ড সংঘাত অর্থাৎ মানসিকভাবে মৃত্যুঞ্জয় প্রচন্ড আঘাত পায় । যার প্রতিক্রিয়া শরীরে দেখা যায়। তার মানসিক বেদনা বদের সঙ্গে চলতে থাকে শারীরিক কষ্ট। এই কারণে মৃত্যুঞ্জয় রীতিমতো কাবু হয়ে পড়েছিল

মৃত্যুঞ্জয়ের মানসিক কষ্টবোধের পাশাপাশি তার শারীরিক লক্ষণও দেখা গেল। অফিসে ঢুকেই একটুখানি বসে, তারপর আবার উঠে চলে গেল কল ঘরে। দরজা বন্ধ করে দেয়। বাড়ি থেকে পেট ভরে যা কিছু খেয়ে এসেছিল যেমন ভাজা, ডাল, তরকারি, মাছ, দই আর ভাত। মৃত্যুঞ্জয়ের শারীরিক এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং নিজেকে কষ্টবোধের যন্ত্রণায় মানসিকভাবে আঘাত পায়।

৩.৪) “ওটা পাশবিক স্বার্থপরতা”- উক্তিটির বক্তা কে ?উক্তিটির প্রসঙ্গ উল্লেখ কর এই প্রসঙ্গে উক্তিটি তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর | অথবা: উদ্ধৃত অংশে তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।

উঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায় কে বাঁচে’ গল্পে, মৃত্যুঞ্জয় তার অফিসের সহকর্মী নিখিলকে আলোচিত মন্তব্যটি করেছে। চাকুরীজীবী মৃত্যুঞ্জয় অনাহারে মৃত্যুর দৃশ্য দেখে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। মানসিক যন্ত্রণায় দগ্ধ হতে থাকে। তার অন্যতম সুহৃদয় বন্ধু নিখিল তাকে বিভিন্নভাবে বোঝায় |তার যুক্তি হল- “সমাজ ধর্মের দিক থেকে বিচার করলে দশ জনকে খুন করার চেয়ে নিজেকে না খাইয়ে মারা বড় পাপ।“ নিখিলের এ হেন কথা শুনে মৃত্যুঞ্জয় প্রশ্নে উল্লেখিত উক্তিটি করেছেন।

উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ: মৃত্যুঞ্জয় অনাহারে মৃত্যুর জন্য নিজেকে অপরাধী মনে করে এবং প্রায়শ্চিত্তের জন্য সমস্ত মাইনে ও খাদ্য বিলিয়ে দিতে চেয়েছে । কিন্তু নিখিল কিছুতেই মৃত্যুঞ্জয়ের এরূপ কাজকে সমর্থন করেনি। নিখিল মৃত্যুঞ্জয়ীকে জানায় যে ভুড়িভোজন টা অন্যায়। কিন্তু না খেয়ে মারা যাওয়া ঠিক নয়। শুধু তাই নয় নিখিলের যুক্তি- বেঁচে থাকতে গেলে যেটুকু খাবার প্রয়োজন সেটুকু খাবার কাউকে না দিয়ে নিখিল নিজেই খাবে।তবে বেশি খাবার গ্রহণ করা তার মতে ঠিক নয়।জনকল্যাণের জন্য যতটুকু সম্ভব খাওয়া কমিয়ে দেওয়া যায় বলে নিখিল জানায়। নিখিলের এহেন পশুর মত স্বার্থপরতার পরিচয় পেয়ে মৃত্যুঞ্জয় বলে :- “তুই পাগল নিখিল। বদ্ধ পাগল।“

মৃত্যুঞ্জয়ের মানবতাবাদী ভাবনার যুক্তি এতটাই অর্থপূর্ণ ও জোড়ালো যে, শুধু লক্ষ লক্ষ ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো ও তাদের বাঁচানো তার একমাত্র কর্তব্য। সৎ সরল ও দরদী হওয়ায় মৃত্যুঞ্জয় নিখিলের মত স্বার্থপর হয়ে বেঁচে থাকতে চায়নি।

৩.৫) “মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়ির অবস্থা শোচনীয়”- মৃত্যুঞ্জয় কে? তার বাড়ির অবস্থা শোচনীয় কেন?

উঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের “কে বাঁচায়, কে বাঁচে” গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র মৃত্যুঞ্জয়। মৃত্যুঞ্জয় আর নিখিল একই অফিসে কাজ করে । সরকারি চাকুরিজীবী। মৃত্যুঞ্জয় একজন আদর্শবাদী, সহানুভূতিশীল, সৎ ও সরল প্রকৃতির মানুষ।

** মন্বন্তরপিড়িত কলকাতার বুকে মৃত্যুঞ্জয় অফিস যাওয়ার পথে অনাহারে অর্থাৎ না খেতে পাওয়া মানুষের মৃত্যুর দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে। এমন করুন দৃশ্যে দর্শন করার ফলে তার মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। ঘটনার নিষ্ঠুরতা তার শরীর ও মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে। মনে জাগে সীমাহীন প্রশ্ন। বিবেকের তাড়নায় দগ্ধ হতে থাকে। খুঁজে ফিরতে থাকে প্রায়শ্চিত্তের পথ।সমস্ত সাংসারিক দায়িত্বকে প্রায় এক প্রকার অস্বীকার করে মৃত্যুঞ্জয় নিজের মাইনের সমস্ত টাকাটা রিলিফ ফান্ডে দেবার অনুরোধ করে নিখিলকে । অথচ মাইনের পুরো টাকাতেও তার সংসার চলে না। বাড়িতে নয়জন লোক। স্ত্রী শয্যাশায়ী। ক্ষুধার তাড়নায় তার বাচ্চারা অহরহ কাঁদতে থাকে।

ধীরে ধীরে মৃত্যুঞ্জয় তার অফিস যাওয়া বন্ধ করে দেয়। কাজে ভুল করে। চুপচাপ বসে থাকে। আবার একসময় বেরিয়ে পড়ে। বাড়িতে থাকে পাওয়া যায় না। শহরের আদি অন্তহীন ফুটপাথ ধরে সে ঘুরে বেড়ায়। সংসার সম্পর্কে সে একেবারেই উদাসীন হয়ে পড়ে। তার স্ত্রী পুত্রদের দিকে সে নজর দিতে পারেনা। কারণ সে জানায়,:- “আমায় কিছু একটা করতেই হবে ভাই। রাতে ঘুম হয় না, খেতে বসলে খেতে পারি না।“ । কিছু না করতে পারার অক্ষমতায তাকে সব সময় পীড়া দেয়। পরিবার-পরিজন থেকে দূরে সরে যায়। এইভাবে ক্রমশ মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়ির অবস্থা শোচনীয় হয়ে ওঠে।

৩.৬) “মৃত্যুঞ্জয়ের সুস্থ শরীরটা অসুস্থ হয়ে গেল”- মৃত্যুঞ্জয়ের শরীরটা কি কারনে অসুস্থ হয়ে গেল? গল্পে মৃত্যুঞ্জয়ের পরিণতি কি হয়েছিল? অথবা গল্পে, শেষপর্যন্ত মৃত্যুঞ্জয়ের কী পরিনতি লক্ষ করা যায়?

“কে বাঁচায়, কে বাঁচে” নামাঙ্কিত ছোটগল্পে মৃত্যুঞ্জয় অফিসে যাওয়ার পথে ফুটপাতে অনাহারে অর্থাৎ না খেতে পাওয়া এক মানুষের মৃত্যুর করুন চিত্র লক্ষ্য করে । এর ফলেই তার মানসিক অবস্থার বিপর্যয় ঘটে। এতদিন ধরে সে শুধু শুনেই এসেছিল বা পড়ে এসেছিল, ফুটপাতে মৃত্যুর কথা। কিন্তু আজ নিজের চোখে দেখে মৃত্যুঞ্জয়ের মানসিক কষ্টবোধের যন্ত্রণায় ভুগতে থাকে । অনাহারে মৃত্যুর দৃশ্য এর আগে মৃত্যুঞ্জয় চোখে পড়েনি, তাই তার ধারণা ছিল আলাদা।সেই জন্য অফিসে পৌঁছেই, এমন করুন মৃত্যুর দৃশ্য দেখে, মৃত্যুঞ্জয়ের শরীরটা কয়েক মিনিটের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে যায়।

**এমন করুন মর্মান্তিক ঘটনা দেখার পর মৃত্যুঞ্জয় দৈহিক এবং মানসিক উভয়ভাবেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। অনাহারে এই মৃত্যু মৃত্যুঞ্জয়ের মানসিক বোঝে চরম আঘাত হানে এবং নিজেকে এই ঘটনার তাই মনে পড়ে। দিনদিন মৃত্যুঞ্জয় অফিসের কাজে অমনোযোগী হয়ে পড়ে। দেরি করে অফিসে আসে, কাজে ভুল করে। চুপ করে বসে ভাবে। শহরের আদি অন্তহীন ফুটপাত ধরে সে ঘুরে ঘুরে বেড়ায়। ক্ষুধার্ত মানুষের ভিড়ে মিশে যায়।সবকিছু বুঝেও মৃত্যুঞ্জয় কিছু করতে না পারার অক্ষমতার জন্য নিজেকে বদলে দেয় । শেষ পর্যন্ত মৃত্যুঞ্জয় অফিস যাওয়া ছেড়ে দেয়। বাড়ি ফেরা ভুলে যায়। ক্ষুধার্ত মানুষের দলে মিশে যায়। মৃত্যুঞ্জয় মুখ ভর্তি দাড়ি , খালি গায়ে ছেড়া জামা লঙ্গরখানার লাইনে দাঁড়িয়ে মারামারি করে খিচুড়ি খায় , আর মুখ থেকে বেরিয়ে আসে  “ খেতে পাইনি বাবা আমায় খেতে দাও”

অর্থাৎ মৃত্যুঞ্জয় মেকি, দরদী মানসিকতার মানুষ নয়। অনাহারে না খেতে পাওয়া মানুষদের বুকের ভেতরের যে যন্ত্রনা, সেটা তার শরীরে অনুভব করার জন্য, নিজের শরীরের ভেতরে সেই কষ্টটাকে অনুভব করার জন্য, সেই সমস্ত দিন- দরিদ্র ফুটপাত বাসি মানুষের সঙ্গে মিশে যায় এবং মিকি সমাজ দরদী মানুষদের করা জবাব দিয়ে যায়।

Leave a Comment

Discover more from Qবাংলা

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading