> বাড়ির কাছে আরশিনগর কবিতার আরশিনগর বলতে কি বোঝানো হয়েছে? » Qবাংলা

বাড়ির কাছে আরশিনগর কবিতার আরশিনগর বলতে কি বোঝানো হয়েছে?

একাদশ শ্রেণীর বাংলা বিষয়েরপাঠ্য কবিতা বাড়ির কাছে আরশিনগর এই সিরিজে এই কবিতা থেকে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর আলোচনা করা হয়েছে।এই বই থেকে কমনযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর খুব সুন্দর ভাবে সাজানো হয়েছে। প্রিয় ছাত্র-ছাত্রী তোমাদের অনুরোধ উত্তরগুলি দেখার পাশাপাশি উত্তর লেখার কৌশলটি লক্ষ্য কর বিভিন্ন প্যারা এবং তার কতটুকু উত্তর লিখতে হয় সমস্ত কিছু বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। উত্তর লেখার ধরনটি ভালোভাবে লক্ষ্য করো।  একাদশ শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের অন্যান্য আরো প্রশ্ন উত্তর দেখতে click her

প্রাসঙ্গিক বিস্তারিত আলোচনা-বাড়ির কাছে আরশিনগর 

কবি পরিচিতি:-বাউল সাধনার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাধক এবং গীতিকার হলেন লালন শাহ ফকির তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভা প্রতিভার অধিকারী তিনি কখনো মহাত্মা লালন কখনো লালন সাঁই কখনো ফকির লালন নামেও পরিচিত ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় লালনের কুড়িটি বাউল গান প্রকাশ করেছিলেন তারপর থেকেই গুনগ্রাহী পাঠকেরা লালনের বাউল গানের প্রতি আকর্ষিত হয়লালন ফকিরের বিখ্যাত গান গুলি হল- “‘আমি অপার হয়ে বসে আছি ।“‘ সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে।“, “জাত গেল জাত গেল বলে।“ “খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে ।“ “আপন ঘরের খবর লে না।“ “আমারে কি রাখবেন গুরু চরণদাসী।“ “ মন তুই করলি একি 

লালনের গান গুলি “লালন সংগীতি” আবার কখনো ” লালন সংগীত” নামেও জনসমাজে প্রসিদ্ধ। লালন ফকির নিজে গান রচনা করতেন না। তিনি মুখে মুখে গান গেয়ে গেয়ে গান রচনা করতেন এবং সুর পরিবেশন করতেন। তার বাউল গানগুলি সেই সময়ে সারা বাংলাদেশে জনসমাজে মুখে মুখে প্রচারিত হয়েছিল 

উৎস-  আমাদের পাঠ্যবাড়ির কাছে আরশিনগরশীর্ষক গানটি  লালন সমগ্রগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে এই গ্রন্থটিতে লালনের ৪৩৬নম্বর গানটি হল আমাদের পাঠ্য এই গানটি

পটভূমিকা–  বাতুলথেকেবাউলশব্দটি এসেছে। বাতুল কথার অর্থ পাগল মধ্যযুগের একদল উন্মাদ পাগল মনের মানুষ জাতপাত, বর্ণপ্রথা এর উর্ধ্বে গিয়ে মানবতাকে স্থান দিয়ে নিজেদের সুরে মানবের অন্তরের ব্যথা তুলে ধরতেন, তারাই বাউল নামে পরিচিত ছিল মধ্যযুগে অস্পৃশ্যতা, জাতিভেদ, বর্ণভেদ এবং উচ্চ বর্ণের মানুষের ভন্ডামি বাংলাদেশের সমাজকে কলুষিত করেছিল উক্ত সময়ে একদল মানবদরদী জাতিভেদ প্রথার ঊর্ধ্বে গিয়ে মানুষের জীবনের অন্তরের কথা প্রচার করেন সারা বাংলাদেশে এই জীবন দরদী কথা মানুষের  অন্তর ছুঁয়ে যায় এরাই বাউল সম্প্রদায় নামে পরে পরিচিতি লাভ করে

তাদের বিশ্বাস মানুষের হৃদয় মন্দিরে পরমপুরুষ ভগবানের অবস্থান বাউল সম্প্রদায়েরা তাদের পরপুরুষকে কখনো মনের মানুষ, কখনো পড়শী কখনো সাঁই, বলে ডাকতেন হিন্দুমুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ ছিলেন এদের শিষ্য বাউলেরা ছিলেন দেহাত্মবাদী দেহ সাধনার মধ্য দিয়ে তারা প্রেম সাধনা করেছেন তারা নিরাকার ঈশ্বরে বিশ্বাসী তারা বিশ্বাস করেন যে, মানুষের মনের মধ্যেই তাদের পরম গুরু তথা মনের মানুষের অবস্থান বাবুলেরা তাদের সাধনার কথা আভাসে ইঙ্গিতে, গানের মাধ্যমে প্রকাশ করে থাকেন

বাউলেরা সর্বদা তাদের মনের মানুষের সঙ্গে মিলিত হতে চেয়েছেন কিন্তু এই মনের মানুষের সঙ্গে মিলিত হওয়া সহজ কাজ নয় এর জন্য প্রয়োজন কঠোর তপস্যা তারা তাদের গানের ছন্দে তাদের মনের মানুষের কথা প্রচার করতেন বাউল সাধনায় শ্রেষ্ঠ গীতিকার হলেন আমাদের পাঠ্য লালন ফকির লালনের কাছে হিন্দু মুসলমান কোন ভেদাভেদ ছিল না তিনি মানুষকে অমৃতের পুত্র বলে মনে করতেন

বিষয়- সংক্ষেপে-আমাদের পাঠ্যবাড়ির কাছে আরশীনগরগীতিকাটিতে লালন ফকির তার পরমগুরুমনের মানুষতথা পড়শীর কথা বলেছেন তাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করেছেন

 বাড়িবলতে লালন ফকির মানুষের দেহকে বুঝিয়েছেন এবংআরশীনগরবলতে মানুষের মনের কথা কে বলেছেন আরশীর মধ্যে যেমন মানুষ নিজের প্রতিবিম্ব দেখতে পায়, তেমনি দেহরূপ বাড়ির মধ্যে যে মন আছে, সেই মনের মধ্যে পরমেশ্বরকে প্রতিফলিত করা যায় কিন্তু পরমেশ্বর কে মনের মধ্যে প্রতিফলিত করা এত সহজ নয় অর্থাৎ লালন মনে করেন তার পড়শী তার দেহের মধ্যেই অবস্থান করছেন অথচ তাকে তিনি দেখতে পাচ্ছেন না তাকে তিনি ছুঁতে পাচ্ছেন না

 গীতিকার লালন ফকির তার মনের মানুষ তথা পড়শী তার বাড়ির কাছে থেকেও তিনি তাকে একদিন দেখতে পাননি অথচ এই পড়শী তার বাড়ি অর্থাৎ মনের মধ্যেই অবস্থান করছেন তিনি জানিয়েছেন গ্রাম বেরিয়ে অগাধ পানি , যার কোন কূল কিনারা নেই যেখানে কোন নৌকাতরণী নিয়ে যাওয়া যায় না সেই অপর পারে এই পড়শী বসত করেন তার কাছে পৌঁছাতে গেলে এই অগাধ পানি পেরোতে হবে অগাধ পানি বলতে লালন ফকির  মায়ার বন্ধন, বাধাকষ্ট সাধনা ইত্যাদিকে বলেছেন 

তাই গীতিকার লালন ফকির মনে প্রাণে ইচ্ছা করছেন তাকে দেখবেন কিন্তু তার দেখা পাওয়া সম্ভব নয়তিনি ভেবে পাচ্ছেন না, সেই গাঁয়ে কি করে যায় অর্থাৎ সেই পড়শীর কাছে কি করে যাবেন সেই পড়শীর কাছে যেতে গেলে কঠোর তপস্যা প্রয়োজন অর্থাৎ সেই অগাধ পানি পার করতে হবে লালন ফকির আরো জানিয়েছেন যে, এই পড়শী যেহেত শূন্যে থাকেন, তাকে দেখা যায় না তাই তার হাত পা মাথা কিছুই নেই তিনি কখনও শূন্যে থাকেন আবার কখনও বাড়ির (দেহ) মধ্যেও ভেসে ওঠেন

অন্তর্নিহিত তাৎপর্য – বাড়ির কাছে আরশীনগর গীতিকাটিতে বাউল সাধনার স্বরূপটি আলোচিত হয়েছে বাউল সাধকেরা সারাজীবন তাদের নিজের মনের মধ্যেই পরমেশ্বর কে খুঁজে বেড়ান তারা বিশ্বাস করেন যে, মানুষের মনের মধ্যেই সাঁই তথা ঈশ্বর প্রতিফলিত হয় লালন ফকির পাঠ্য গীতিকাটিতে এই কথাই বারবার বলতে চেয়েছেন। লালন তার মনের মানুষকে পড়শী বলে সম্বোধন করেছেন। এই পড়শী অগাধ পানির ওপারে বাস করে। 

তবে এই কাজটি করা অত সহজ নয়। তাই লালন ফকির তার পড়শীকে দেখতে চেয়েছেন তাকে ছুঁতে চেয়েছেন কিন্তু তাকে দেখতে পাওয়া খুবই কঠিন কাজ। অথচ এই পড়শী তার বাড়ি অর্থাৎ তার মনের মধ্যেই অবস্থান করছেন। লালন ফকির তার মনোবাসনা ব্যক্ত করেছেন। তার পড়শী শূন্যে অবস্থান করছেন তার পা হাত মাথা স্কন্ধ কিছুই নেই। তিনি নিরাকার  

নামকরণ-   পাঠ্য গীতিকাটির নামকরণ যথার্থ হয়েছে কিনা তা বিষয়বস্তুর প্রতি আলোকপাত করলে বোঝা যাবে। যদিও পাঠ্য গীতিকাটির নামকরণ পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ দ্বারা কৃত**বাড়ির কাছে আরশিনগর শীর্ষক সাধন সংগীতে বাউল সাধনায় সাধনতত্ত্বের কথা আলোচিত হয়েছে বাউল সাধনায় মূল পন্থা হলো তাদের মনের মানুষের সন্ধান সেই সন্ধানের রূপটি লালন ফকির বলেছেন। লালন ফকির বলেছেন, “আমার বাড়ির কাছে আরশীনগর” অর্থাৎ বাড়ি হলো দেহ এবং আরশিনগর হল মন। 

সেই “ পড়শী গ্রাম বেরিয়ে অগাধ পানি” অর্থাৎ যেখানে কোন কূল কিনারা নেই সেই গ্রামে এই পড়শী বসবাস করে।  লালন ফকিরের ইচ্ছা তাকে দেখবেন কিন্তু তাকে দেখা এত সহজ নয়। তাকে পেতে গেলে বা দেখতে গেলে কঠোর তপস্যা প্রয়োজন বা -মায়ার বন্ধন থেকে মুক্ত হতে হবে।সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে কবিতাটির বিষয়বস্তুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে  গীতিকাটির  নাম যথোপযুক্ত হয়েছে

বহু বিকল্পধর্মী প্রশ্নোত্তর

১) “পড়শী”   কে ?

  1.  লালনের মনের মানুষ ✓
  2. অন্তরাত্মা
  3. বাহ্য প্রকৃতি
  4. প্রতিবেশী

২) “পড়শীকে” লালন দেখতে পাননি কেন?

  1. লালন তাকে দেখতে যাননি
  2. লালনের সঙ্গে তার পরিচয় নেই
  3. লালন তাকে খুঁজে পাননি ✓
  4. লালন তাকে দেখতে চান না

৩) “পড়শীকে” দেখতে কেমন?

  1. তার পা নেই 
  2. তার চোখ মুখ কান নেই 
  3. তার হাত পা মাথা নেই ✓
  4. তার স্বরূপ নেই

৪) “পড়শী” কোথায় কিভাবে বাস করে ?

  1. সে আকাশে থাকে 
  2. সে জলে থাকে 
  3. সে শূন্যেও থাকে আবার জলেও ✓
  4. সে নদীর পাড়ে থাকে

৫) লালন “পড়শীর”  দর্শন চান কেন?

  1. আনন্দ লাভের জন্য
  2. আশীর্বাদ লাভের জন্য
  3. যম যাতনা দূর করার জন্য ✓
  4. যন্ত্রণা দূর করার জন্য 

৬) “লালনের যম-যাতনা যেত দূরে।“    কিভাবে দূরে যেত ?

  1. লালনের পায়ে ব্যথা কমানোর মলম লাগালে
  2. পড়শী লালনকে স্পর্শ ✓ 
  3. লালনের মৃত্যু হলে 
  4. লালনের সহ্য শক্তি বেড়ে গেলে

৭)  “আরশী” শব্দের অর্থ কি?

  1. আয়না ✓
  2. পড়শী 
  3. কাচ
  4. ছায়া 

৮) আমি একদিনও না— তারে

  1. দেখিলাম ✓
  2. শুনিলাম 
  3.  চিনিলাম 
  4. জানিলাম 

৯) “পড়শী” কোথায় বাস করে ?

  1. রূপনগর
  2. হস্তিনাপুর
  3. আরশীনগর✓
  4.  দিকশূন্যপুর 

১০) “গ্রাম বেড়িয়ে অগাধ পানি।“ এখানে ‘বেড়িয়ে’ শব্দের অর্থ কি?

  1. পার হয়ে ✓
  2. বেষ্টন করে
  3. ঘুরে ঘুরে 
  4. মধ্যে 

১১) বাঞ্ছা শব্দটির অর্থ কি ?

  1. ইচ্ছা ✓
  2. জানা
  3. দেখা
  4. শোনা

১২) “ আমি বাঞ্ছা করি দেখব তারি।“   কাকে দেখার ইচ্ছা?

  1. লালন
  2.  আরশিনগর 
  3. মাঝি
  4. পড়শী ✓

১৩)” আমি কেমনে সে গাঁয় যায় রে”  কেন সেখানে যাওয়া যাবে না ?

  1. মাঝি নেই 
  2. হস্ত পদ নেই 
  3. দেখতে পাওয়া যায় না 
  4. নেই তরণী ✓ 

১৪) পড়শী কোথায় ভাসে ?

  1. জলে 
  2. নদীতে
  3. শূন্যে ✓
  4. আকাশে

১৫) পড়শী যদি আমায় ছুঁত।‌ পড়শী ছুঁলে  কি হবে?

  1. যম যাতনা দূর হবে ✓
  2. বুদ্ধির বিকাশ হবে
  3. কষ্ট লাঘব হবে 
  4. আয়ু বাড়বে 

১৬) লালন ও পড়শীর মাঝে কতখানি ফাঁক?

  1. কয়েক মাইল
  2. লক্ষ যোজন ✓
  3. 100 মিটার
  4. একশ যোজন

১৭) লালন ফকির কে?

  1. কবিয়াল
  2. বাউল ✓
  3. গীতি কবি
  4. বৈষ্ণব ভজন

১৮) লালনের গানগুলিকে কি বলে?

  1. বাউল সংগীত ✓
  2. মারফতি
  3. কবিগান
  4. পদাবলী

১৯) আবার ক্ষণেক ভাসে—–

  1. শূন্যে 
  2. বাড়িতে
  3. নীরে ✓
  4. আকাশে

২০)” আমি বাঞ্ছা করি দেখবো তারি।“ কাকে দেখার বাঞ্ছা করছেন?

  1. প্রতিবেশীকে 
  2. পড়শীকে ✓
  3. আত্মাকে 
  4. ঈশ্বরকে

অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি 

১) “আমি বাঞ্ছা করি …….. “  বাঞ্ছা শব্দের অর্থ কি ? অথবা   “আমি বাঞ্ছা করি …….”। কে কি বাঞ্ছা করেছেন?
উঃ  “বাঞ্ছা” শব্দের অর্থ হলো- ইচ্ছা । “বাড়ির কাছে আরশীনগর” গীতিকাটিতে লালন ফকির “পড়শীকে”  ( মনের মানুষ বা আরাধ্য দেবতা) দেখার ইচ্ছা বা বাঞ্ছা প্রকাশ করেছেন।

২) “পড়শী যদি আমায় ছুঁত।“ পড়শী ছুঁলে কি হতো ?
উঃ মানুষের সবচেয়ে বড় যন্ত্রণা হলো- মৃত্যুযন্ত্রণা। যাকে লালন বলেছেন যম-যাতনা। লালনের “পড়শী” (মনের মানুষ বা পরম আরাধ্য দেবতা) যদি তাকে ছুঁতেন বা স্পর্শ করতেন (দেখা দিতেন) তাহলে লালনের এই মৃত্যু যন্ত্রণা দূর হয়ে যেত অর্থাৎ তিনি জীবন যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতেন।

৩) “আমার যম- যাতনা যেত দূরে।“ যম-যাতনা শব্দটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।
উঃ “যম- যাতনা” কথাটির অর্থ মৃত্যুযন্ত্রণা । “বাড়ির কাছে আরশিনগর” শীর্ষক গীতিকায় লালন ফকির পার্থিব জীবন  অর্থাৎ জীবন যন্ত্রণাকেই যম- যাতনা বলেছেন।

৪) “আমি কেমনে সে গাঁয় যাই রে।“ বক্তা সেই গাঁয়ে যেতে পারছেন না কেন ? অথবা  “আমি কেমনে সে গাঁয় যায় রে।“  বক্তার যাওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা কোথায়?
উঃ লালন ফকিরের “ পড়শী” যে গাঁয়ে বাস করেন,  সেখানে তিনি যেতে পারছেন না। কারণ সেখানে যেতে গেলে অগাধ পানি পেরিয়ে যেতে হবে। এখানে “ অগাধ পানি” বলতে সাধনার পথ বা কঠোর তপস্যার পথ বা মায়ার বন্ধন।

৫) “আমার যম- যাতনা যেত দূরে।“  কিভাবে যম-যাতনা দূরে যেত ?
উঃ গীতিকার লালন ফকিরের পড়শী অর্থাৎ তার পরম আরাধ্য দেবতা বা মনের মানুষ যদি তাকে ছুঁয়ে দিতেন বা স্পর্শ করে দিতেন (এখানে দেখা  দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে) তাহলে তার মৃত্যু যন্ত্রণা তথা যম-যাতনা দূরে যেতো।

৬) “ও এক পড়শী বসত করে।“ পড়শী কোথায় বাস করে?
উঃ গীতিকার লালন ফকিরের দেহ স্বরূপ বাড়ির কাছে আরশীনগর অর্থাৎ মনের অবস্থান। এই মনের মধ্যেই তার পরম আরাধ্য দেবতা তথা “পড়শী” বসত করেন । যার কাছে যেতে গেলে অগাধ পানি পেরিয়ে যেতে হবে।

৭) “আমার বাড়ির কাছে আরশীনগর।“  “আরশীনগর” কথাটির অর্থ কি?
উঃ “বাড়ির কাছে আরশীনগর” শীর্ষক গানটিতে “আরশীনগর” কথাটির অর্থ হল দর্পণ বা আয়না কিন্তু লালন ফকির দর্পণ বা আয়না বলতে মনকে বুঝিয়েছেন।

৮) “ও এক পড়শী বসত করে।“  এই পড়শী কে ?
উঃ “বাড়ির কাছে আরশিনগর” শীর্ষক গানটিতে  “পড়শী” বলতে গীতিকার লালন ফকিরের পরম আরাধ্য দেবতা তথা মনের মানুষ  কে বুঝিয়েছেন।

৯) “বলব কি সেই পড়শীর কথা।“ পড়শী দেখতে কেমন ?
উঃ “বাড়ির কাছে আরশীনগর” নামক গানটিতে লালনের “পড়শী” তথা “মনের মানুষের” হাত- পা- মাথা- কাঁধ কিছুই নেই অর্থাৎ তিনি নিরাকার।

১০) আমি একদিনও না দেখিলাম তারে । এখানে “তারে” বলতে কাকে বলা হয়েছে ?
উঃ লালন ফকির “বাড়ির কাছে আরশীনগর” শীর্ষক গানটিতে “তারে” বলতে তার পরম আরাধ্য দেবতা তথা মনের মানুষ কে বলেছেন।

১১) লালনের “পড়শী” কোথায় ভেসে ওঠেন ?
উঃ বাড়ির কাছে আরশীনগর শীর্ষক গানটিতে লালনের পড়শী নীরে অর্থাৎ জলে ভেসে ওঠেন।

১২) “আমি একদিনও ….তারে”।  লালন ফকির তাকে দেখতে পাননি কেন? অথবা  লালন ফকির তার “পড়শীকে” দেখতে পাননি কেন ?
উঃ গীতিকার লালন ফকির তারপর “পড়শী” অর্থাৎ তার আরাধ্য দেবতা বা মনের মানুষকে দেখতে পাননি। কারণ তাকে তিনি খুঁজে পাননি। তিনি নিরাকার। মহাশূন্যে অবস্থান করেন। তাই তাকে তিনি দেখতে পান নি।

১৩) “তবু লক্ষ ….ফাঁক রে।“   এ কথার অর্থ কি?
অথবা   “ তবু লক্ষ যোজন ফাঁক রে ।“কার সঙ্গে এই ব্যবধান?| অথবা  এই ফাঁক কেন?
উঃ লালন আর তার পরম আরাধ্য দেবতা তথা মনের মানুষ এক জায়গাতেই আছেন । তবুও তাদের মধ্যে দুস্তর ব্যবধান। কারণ মনের মানুষকে উপলব্ধি করতে গেলে কঠোর তপস্যা প্রয়োজন।

১৪) লালন ফকির তার “পড়শীর” কাছে কি প্রার্থনা করেছেন?
উঃ লালন ফকির তার পড়শীর কাছে অর্থাৎ তার পরম আরাধ্য দেবতা তথা মনের মানুষের কাছে ছোঁয়ার বা দেখা করার প্রার্থনা করেছেন। কারণ পড়শী যদি তাকে ছুঁয়ে দেন তাহলে তার যম-যাতনা দূর হবে।

১৫) লালন ফকিরের পড়শী কোথায় কোথায় থাকেন?
উঃ লালন ফকিরের  “পড়শী” তথা তার পরম আরাধ্য দেবতা বা মনের মানুষ, কখনো শূন্যের উপর থাকেন আবার কখনো নীড়ে অর্থাৎ জলে ভাসেন।

রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর             

১) “আমি বাঞ্ছা …… তারি।“  বক্তা কাকে দেখতে চান? কিভাবে তার দর্শন পাওয়া সম্ভব ?     অথবা- “ আমি কেমনে…… যাইরে।“ বক্তা সেই গাঁয়ে কীভাবে যেতে পারেন বলে মনে করেন ?
উঃ “বাড়ির কাছে আরশীনগর” গীতিকাটিতে বাউল সাধক লালন ফকির তার জীবন দেবতা “সাঁই” তথা মনের মানুষের সন্ধান করেছেন। তার “পড়শী” তার কাছে থেকেও তাকে তিনি দেখতে পাচ্ছেন না। আলোচিত এই অংশে বক্তা তথা লালন ফকির তার এই “পড়শী” তথা “মনের মানুষকে” দেখার ইচ্ছা বা বাঞ্ছা প্রকাশ করেছেন।

*গীতিকার লালন ফকির বিশ্বাস করেন যে, তার বাড়ি স্বরূপ দেহের মধ্যেই তার “সাঁই” তথা  “মনের মানুষ” অবস্থান করেন। কিন্তু তার প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তিনি তাঁর দর্শন থেকে বঞ্চিত। তার মনের মধ্যেই এই “পড়শী” বসবাস করেন। এই “পড়শী” তার কাছে থাকলেও তাঁর দর্শন পাওয়া অত সহজ কাজ নয়। কারণ -“গ্রাম ….. অগাধ পানি / ও তার নাই ….. তরণী পারে-“

লালন কঠিন জীবন পথ পাড়ি দিয়ে তার মনের মানুষের কাছে পৌঁছাতে চেয়েছেন কিন্তু তার মনের মানুষের কাছে পৌঁছাতে গেলে “অগাধ পানি” স্বরূপ মায়ার বন্ধন, লোভ-লালসা , পার্থিব বস্তু ইত্যাদির প্রতি মোহ ত্যাগ করে তবেই তার কাছে পৌঁছানো সম্ভব। লালন ফকির জানেন, ভক্ত আর ভগবানের কাছে পৌঁছাতে বা  দর্শন পেতে হলে কঠোর তপস্যার পথ পেরিয়ে যেতে হবে। অর্থাৎ অগাধ পানির বাধা তাকে বেরোতে হবে যা খুবই কঠিন কাজ। আধ্যাত্ম পথের বাধা তাকে বঞ্চিত করছে তার মনের মানুষের সঙ্গে দর্শন পাওয়ার ক্ষেত্রে।

২) “আমার যম- যাতনা যেত দূরে।“  যম-যাতনা কি? কিভাবে এই “যম- যাতনা” দূরে যেতে?| অথবা –  “পড়শী যদি আমায় ছুঁত।“   এই পড়শী কে? পড়শী ছুঁলে কি হতো?
উঃ) “বাড়ির কাছে আরশীনগর” শীর্ষক গীতিকায় বাউল সাধক লালন ফকির সারা জীবন তার পরম আরাধ্য দেবতা তথা “সাঁই” বা “মনের মানুষের” সন্ধান করেছেন। তার বাড়ি স্বরূপ দেহের মধ্যেই “মনের মানুষ” অবস্থান করলেও, তাকে তিনি দেখতে পাননি। আলোচিত এই অংশে “সাঁই” বা “মনের মানুষকেই” লালন “পড়শী” বলেছেন।

যম-যাতনা কি-মানুষের সবচেয়ে বড় যন্ত্রণা হলো- মৃত্যুযন্ত্রণা ।এই মৃত্যু যন্ত্রণাই  শেষ যন্ত্রনা। জীবদ্দশায় মানুষকে রোগ- শোক- জরা- ব্যাধি- যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। লালন এই জীবন- যন্ত্রণাকেই যম- যাতনা বলেছেন।

মরমিয়া বাউল সাধক লালন ফকির তার পড়শীর কাছে এই আরতি প্রকাশ করেছেন তার সাধনার কথা মনের মানুষ তার দেহের মধ্যেই অতি সন্নিকটে বিরাজ করছেন কিন্তু তার কাছে তিনি আজও অধরা তার দেখা পাননি কারণ তার দেখা পেতে গেলে-“গ্রাম বেড়িয়ে … পানি / ও তার …. তরণী পারে।“- অর্থাৎ কঠিন তপস্যার জীবন পথ পাড়ি দিতে হবে। লোভ-লালসা, পার্থিব  বস্তুর প্রতি মোহ , আত্মকেন্দ্রিকতা ইত্যাদি তার সাধনার পথের বাধা বা “অগাধ পানি”। তাই তার “পড়শী” তার কাছে থেকেও তাকে ধরা দেন না। তাই লালন তার পড়শীর কাছে আবেদন করেছেন, তার সাঁই বা মনের মানুষ যদি তাকে ছুঁয়ে দিতেন বা তাকে দেখা দিতেন বা তাকে স্পর্শ করতেন তাহলে তার এই জীবন যন্ত্রণা  দূর হয়ে যেত

৩) “তবু লক্ষ যোজন ফাঁক রে।“- কার সঙ্গে এই ব্যবধান? “লক্ষ যোজন ফাঁক” কথাটির তাৎপর্য কি? বা “ লক্ষ যোজন ফাঁক” বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উঃ ভক্ত এবং ভগবানের মধ্যে দুস্তর ব্যবধান । “বাড়ির কাছে আরশীনগর” শীর্ষক গীতিকায় লালন ফকির তার মনের মানুষ নিজের দেহের মধ্যে অবস্থান করলেও তার মধ্যে দুস্তর ব্যবধান অর্থাৎ লালন এবং তার জীবন দেবতা তথা সাঁই বা মনের মানুষ এর মধ্যে দুস্তর ব্যবধান।

পারিপার্শ্বিক মোহ- মায়া- আত্মকেন্দ্রিকতা- সাংসারিক বন্ধন, ইত্যাদির বাধা মানুষকে তার আরাধ্য দেবতার কাছে পৌঁছাতে বাধা সৃষ্টি করে বা তার সাধনার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। বাউল সাধক লালন ফকির তার পরম আরাধ্য দেবতার সঙ্গে দর্শন পেতে চান বা তাকে কাছে পেতে চান। কিন্তু লালন জানেন যে, তার মনের মানুষ তার দেহের মধ্যে অবস্থান করছেন। কিন্তু যেহেতু তিনি অসীম। শূন্যে অবস্থান করেন, তাই তাকে ধরা বা ছোঁয়া যায় না । কারণ তার মনের মানুষের সঙ্গে তার দূরত্ব লক্ষ যোজন ফাঁক। এই লক্ষ যোজন ফাঁক হলো- সাধনার পথ, কঠিন তপস্যার পথ। মায়ার বন্ধন, সাংসারিক বাধা, আত্মকেন্দ্রিকতা পার্থিব বস্তুর প্রতি মোহ ইত্যাদি বাধা হল লক্ষ যোজন ফাঁক।

বিশেষজ্ঞ পরামর্শ-  ১) “বাড়ির কাছে আরশিনগর” কবিতাটি একটি গান। কবিতাটির বিষয়বস্তু ভালো করে আয়ত্ত করতে পারলে যে কোন প্রশ্নের উত্তর লেখা খুবই সহজ হবে।
২) কবিতাটিতে প্রতিটি লাইন বিশেষ অর্থ বহন করে। এই বিশেষ অর্থ ভালোভাবে জানতে হবে।
৩) বিভিন্ন লাইনের জন্য বিভিন্ন রকম উত্তর না করে বিষয়বস্তুটিকে ভালো করে পড়লে দেখা যাবে, বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রায় একই রকম, তাই যেকোন প্রশ্ন উত্তর লিখতে গেলে, বিষয়বস্তুটিকে বেশি করে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ প্রতিটি লাইনে প্রায় একই রকম কথা বলা হয়েছে।
৪) কবিতাটির ভাববস্তু খুবই সহজ। তাই পাঁচ নম্বরের প্রশ্নের উত্তর লেখা খুবই সহজ হবে।

৫) পাঁচ নম্বরের প্রশ্নের উত্তরের জন্য প্রাসঙ্গিক লাইন অবশ্যই ব্যবহার করবে। নাহলে উত্তরটির গুণগত মান ভালো হবেনা বা বানানো বা বানিয়ে বানিয়ে লেখা বলে মনে হবে। তাই প্রাসঙ্গিক লাইন অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। আর প্রাসঙ্গিক লাইন দুটো- তিনটে মুখস্থ করতেই হবে বা মনে রাখতে হবে।
৬) পাঁচ নম্বরের প্রশ্নের উত্তরের জন্য কমপক্ষে দুটি প্যারা অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে । তিনটি প্যারা লিখলে উত্তরটি আরো ভালো হবে এবং দেখতে সুন্দর হবে । তাই পাঁচ নম্বরের প্রশ্নের উত্তরের জন্য প্যাঁরা ভিত্তিক অবশ্যই লিখবে।

৭) বানিয়ে বানিয়ে বা গল্প করে উত্তর লিখলে উত্তরটি গুণগতমান অনেক কম হবে। এবং নম্বর খুব কম পাওয়া যাবে। তাই বানিয়ে বানিয়ে উত্তর লেখা চলবে না।
8) বিকল্পধর্মী প্রশ্নের উত্তর এবং অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তরের জন্য পাঠ্যবইটি ভালোভাবে পড়তে হবে । তাহলে তোমরা নিজেরাই সহজেই উত্তর করতে পারবে। পাঠ্য বই ভালো করে না পড়লে অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর লেখা সহজ হবে না ।তাই পাঠ্যবইয়ের লাইনগুলি ভালো করে পড়লে নিজেরাই অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর লিখতে পারবে। এর জন্য কোন বড় ধরনের সহায়িকা বই প্রয়োজন পড়বে না।।

Leave a Comment

Discover more from Qবাংলা

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading