রূপনারানের কূলে কবিতার প্রশ্নোত্তর 2023
সারসংক্ষেপ:
রবি ঠাকুর তার শেষ লেখা কাব্যগ্রন্থের ১১ সংখ্যক কবিতা “রূপনারায়ণের কূলে” শীর্ষক পাঠ্য কবিতাংশে, জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই জীবনকে উপলব্ধির কথা ব্যক্ত করেছেন। কবি আসলে রূপনারানের কূলে বলতে কবি নিজের জীবন নদীকেই বুঝিয়েছেন। জীবনের অন্তিম পর্বে পৌঁছে কবির অন্তরের যে আত্মোপলব্ধি তা, আমাদের আলোচ্য কবিতায় পরিস্ফুটিত হয়েছে।
***কবি তার প্রবাহমান জীবনের শেষ প্রান্তে উপনীত হয়ে জাগ্রত হয়েছেন নবচেতনায়। কবি প্রত্যক্ষ করেছেন নিজেকে এবং পারিপার্শ্বিকতাকে। কবির চেতনা সমৃদ্ধ হয়েছে জীবনব্যাপী পাওয়া ব্যথা-বেদনা ও সংঘাতে। রক্তের অক্ষরে সামাজিক ও রাজনৈতিক সংঘাতের মধ্যেই জীবনের প্রকৃত সত্য উপলব্ধি করেছেন । সত্য কঠোর বাস্তবের মূর্ত প্রতীক। সত্য কাউকেই বঞ্চিত করে না। কবি সত্যকে কঠিন বলে বর্ণনা করেছেন। কারণ তা প্রমাণিত এবং অনিবার্য। কঠোর সত্যের মুখোমুখি দাঁড়ানোর মধ্য দিয়েই মানবজীবন সার্থকতা লাভ করে। এই সত্যের স্বরূপ এর মধ্যেই জীবনের গতিশীলতা প্রকাশ পায়। এই বঞ্চনা হীন কঠিন সত্যকেই কবি ভালোবেসে গ্রহণ করেছেন তার জীবনে। কবির কাছে জীবন আসলে দুঃখের তপস্যা।
নামকরণ
আমাদের পাঠ্য “রূপনারানের কূলে” কবিতাটি নামকরণ যথোপযুক্ত হয়েছে কিনা তা কবিতাটির ভাববস্তু তথা বিষয়বস্তুর উপর আলোকপাত করলে পরিস্ফুট হবে। “শেষলেখা” কাব্য গ্রন্থটি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সর্বশেষ কাব্যগ্রন্থ। এই কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলিকে শিরোনামের পরিবর্তে সংখ্যা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে এবং রূপনারায়ণের কূলে কবিতাটি শেষ লেখা কাব্যগ্রন্থের ১১ সংখ্যক কবিতা। প্রথম প্রকাশের সময় কবিতাটির নাম ছিল “কঠিনেরে ভালোবাসিলাম”। যেটি প্রকাশ পেয়েছিল জয়শ্রী পত্রিকায় ১৩৪৮ বঙ্গাব্দে। বর্তমানে আমাদের পাঠ্য কবিতাটির নামকরণ করা হয়েছে “রূপনারাণের কূলে” । স্বপ্নময় পৃথিবীতে জীবনের অন্তিম ক্ষণে কবি অনন্য জীবন দর্শনের মুখোমুখি হয়েছেন।
সমগ্র জীবনের ব্যথা-বেদনা আঘাত তার চেতনাকে সমৃদ্ধ করেছে। এ কবি রূপনারায়ণের কূলে অর্থাৎ নিজের জীবন নদীর অন্তিম পর্বে পৌঁছে, জীবনের মূল সত্য আবিষ্কারের মাধ্যমে আত্মউপলব্ধি ঘটিয়েছেন তথা বলা যায় যে, জীবনের কঠিন বাস্তব সত্যি কে তিনি নিজের মনের গভীরে উপলব্ধি করেছেন। এবং তিনি এও উপলব্ধি করেন যে, দুঃখের তপস্যায় সত্যের দারুন মূল্য দিয়ে জীবনের সকল দেনা শোধ করে মৃত্যুর কাছে সমর্পণ করতে হয়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে “রূপনারানের কূলে” কবিতাটির বিষয়বস্তুর আলোকে নামকরণ যথোপযুক্ত হয়েছে বলা যায়। ( রূপনারানের কূলে কবিতার প্রশ্নোত্তর 2023)
প্রশ্ন উত্তর পর্ব (রূপনারানের কূলে কবিতার প্রশ্নোত্তর 2023)
১) নিচের প্রশ্নগুলির উত্তর বাছাই করে নিয়ে লেখ।
১.১) “ চিনিলাম আপনারে ” – রবীন্দ্রনাথ যেভাবে নিজেকে চিনেছচিনেছন-
ক) আঘাতে ও বেদনায় খ) আঘাতে আঘাতে বেদনায় গ) আঘাত ও বেদনায় ঘ) আঘাতে আঘাতে বেদনায় বেদনায় ।
উঃ ঘ) আঘাতে আঘাতে বেদনায় বেদনায়
১.২) ‘ এ জীবন ’ হল —
ক ) দুঃখের তপস্যা খ ) আমৃত্যু তপস্যা গ) আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা ঘ) তপস্যা ।
উঃ গ) আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা ( রূপনারানের কূলে কবিতার প্রশ্নোত্তর 2023)
১.৩) “ সে কখনো করে না ___________ ।”
ক) বিভ্রান্ত খ) বঞ্চনা গ) আশাহত ঘ) দুঃখ ।
উঃ খ) বঞ্চনা
১.৪) “রক্তের অক্ষরে দেখিলাম”- রক্তের অক্ষরে কবি কি দেখলেন ?
ক) আপনার রূপ খ) নিজের রূপ ঘ) দুঃখের তপস্যা ঘ) নিজের চেহারা
উঃ) আপনার রূপ
১.৫) রূপনারানের কূলে ’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত?
ক) শেষের কবিতা খ) শেষলেখা ঘ) মানসী ঘ) শেষ চিঠি
উঃ খ) শেষলেখা
১.৬) “সে কখনো করে না বঞ্চনা” –‘সে’ হলো—
ক)) মৃত্যু খ) সত্য গ) কঠিন সত্য ঘ) কঠিন মিথ্যা
উঃ খ) কঠিন সত্য
১.৭) ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় কবি ভালোবেসেছেন—
ক)) কঠিনকে খ) সত্যকে গ) নিজেকে ঘ) কঠিন সত্যকে
উঃ ঘ) কঠিন সত্যকে ( রূপনারানের কূলে কবিতার প্রশ্নোত্তর 2023)
আরও পড়-
বাংলা ভাষা ও শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির ইতিহাস প্রশ্নোত্তর
১.৮) “সত্যের দারুণ মূল্য লাভ করিবারে…” –কিভাবে সত্যের মূল্য লাভ করবেন?
ক) সকল দেনা শোধ করে দেবেন খ) মৃত্যুবরণ করবেন গ) মৃত্যুর মাধ্যমে সকল দেনা শোধ করে দেবেন (ঘ) নতুন করে জন্মাবেন
উঃ গ) মৃত্যুর মাধ্যমে সকল দেনা শোধ করে দেবেন
৯) কবি নিজের রূপ দেখেছিলেন —–
ক) বেদনায় খ) মনের গভীরে গ)রক্তের অক্ষরে ঘ) আঘাতে
উঃ গ) রক্তের অক্ষরে
১০) “সে কখনো করেন বঞ্চনা”-‘সে’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে?
ক)কঠিনকে খ)মৃত্যুকে গ)সত্যকে ঘ)জীবনকে
উঃ ক) কঠিনকে
১২) ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় রূপনারান হল –
ক) একটি নদীর নাম খ) স্বপ্নময় জগৎ সংসার গ) একটি জায়গার নাম ঘ) নদীর তীর
খ) স্বপ্নময় জগত সংসার
অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর ধর্মী প্রশ্ন উত্তর
২.১) “সে কখনো করে না বঞ্চনা”– এখানে ‘সে’ বলতে কার কথা বলা হয়েছে?
উঃ ‘রূপনারানের কূলে’ শীর্ষক কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ ‘সে’ বলতে ‘কঠিনকে’ বুঝিয়েছেন। এই কঠিন চরম সত্য। কাউকে সে বঞ্চনা করেনা।
২.২) “সত্য যে কঠিন”– কবি ‘সত্য’কে ‘কঠিন’ বলেছেন কেন ?
উঃ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নানা ঘাত-প্রতিঘাত ও বেদনার মধ্যে দিয়ে চরম সত্যকে উপলব্ধি করেছেন। এই সত্য চরম বাস্তব এবং কঠিন। তা কিন্তু স্বপ্নময় জগত নয়,- এজন্য তিনি সত্যকে ‘কঠিন’ বলেছেন।
২.৩) “সত্যের দারুন মূল্য লাভ করি বারে”-“সত্যের দারুণ মূল্য” বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উঃ জীবনের অন্তিম পর্বে পৌঁছে কবি এই জগত সংসারকে চিনতে পেরেছেন। কঠিন আঘাত এবং বেদনায় তথা দুঃখের তপস্যায় তিনি নিজেকে চিনেছেন। সত্যে যে কত বাস্তব এবং কঠিন- সেই উপলব্ধিকে ব্যক্ত করতে গিয়ে আলোচিত মন্তব্যটি করেছেন।
২.৪) “রক্তের অক্ষরে দেখিলাম।” “রক্তের অক্ষরে’ কবি কী দেখেছিলেন ?
উঃ “রূপনারানের কূলে” শীর্ষক কবিতায়, কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘রক্তের অক্ষরে’ দেখেছিলেন তার নিজের রূপকে। অর্থাৎ জীবনের অন্তিম পর্বে পৌঁছে, কবি নিজের মনের গভীরে নিজেকে চিনতে পেরেছিলেন। ( রূপনারানের কূলে কবিতার প্রশ্নোত্তর 2023)
২.৫) “চিনিলাম আপনারে” – কবি আপনাকে কীভাবে চিনেছিলেন?
উঃ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর জীবনের অন্তিম পর্বে পৌঁছে এই বাস্তব জগতকে চিনে ছিলেন। জীবন নদীর প্রবাহ পথে তিনি নানা ঘাত-প্রতিঘাত এবং বেদনায় নিজেকে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। নিজের আত্মোপলব্ধি অর্থাৎ নিজেকে চিনতে পেরেছিলেন।
২.৬) “রূপনারানের কূলে জেগে উঠলাম।” কে রূপনারানের কূলে জেগে, কি জেনেছিলেন?
উঃ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রূপনারানের কূলে জেগে উঠেছিলেন। এবং জেনেছিলেন এই জগৎ স্বপ্ন নয় অর্থাৎ তার জীবনের অন্তিম পর্যায়ে পৌঁছে, তিনি বাস্তব জগত কে চিনে ছিলেন।
২.৭) “আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন।” জীবন’-কে দুঃখের তপস্যা’ বলা হয়েছে কেন?
উঃ জীবন নদীর চলার পথে সুখের পাশাপাশি দুঃখ আমাদের সঙ্গী হয় অর্থাৎ মৃত্যু পর্যন্ত আমাদের দুঃখের সঙ্গে লড়াই করতে হয়, তাই কবি রবীন্দ্রনাথ বলেছেন এই জীবন যেন দুঃখের তপস্যা।
২.৮) “জানিলাম এ জগৎ স্বপ্ন নয়”– কীভাবে কবি একথা জেনেছিলেন?
উঃ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রূপনারায়ণের কূলে অর্থাৎ জীবন নদীর শেষ পর্বে পৌঁছে, তিনি জেনেছিলেন এই জগত স্বপ্নময় নয়। বরং তা কঠিন বাস্তব।
২.৯) রূপনারানের কূলে কবিতায় মৃত্যুতে সকল দেনা’ কীভাবে শোধ করা সম্ভব বলে কবি মনে করেছিলেন?
উঃ জীবনের প্রতি পদে, নানা দুঃখ-বেদনার, আঘাতে প্রতিঘাতে কঠিন সত্যকে স্বীকার করে অর্থাৎ মৃত্যুকে বরণ করলেই, জীবনের ঋণ শোধ করা সম্ভব।
২.১০) “রূপনারানের কূলে জেগে উঠিলাম”—জেগে ওঠার অর্থ কী?
উঃ জেগে ওঠা বলতে আত্মোপলব্ধির পথ ধরে জগৎ ও জীবন সম্পর্কে বাস্তব কঠিন সত্যকে উপলব্ধি করাকে বোঝানো হয়েছে।
২.১১) “সে কখনো করে না বঞ্চনা”– এখানে ‘সে’ বলতে কার কথা বলা হয়েছে?
উঃ ‘শেষলেখা’ কাব্যের অন্তর্গত ‘রূপনারানের কূলে’ নামাঙ্কিত কবিতায় ‘সে’ বলতে ‘কঠিনের কথা বলা হয়েছে। যা সত্য এবং বাস্তব। ( রূপনারানের কূলে কবিতার প্রশ্নোত্তর 2023)
২.১২) “সত্য যে কঠিন”– কবি ‘সত্য’কে ‘কঠিন’ বলেছেন কেন ?
উঃ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সত্যকে উপলব্ধি করেছেন কঠিন আঘাত ও চরম বেদনার মধ্যে দিয়ে। তাই কল্পনায় স্বপ্নময় যে জগত, সেই জগতের প্রত্যাশা করেননি কবি। তাই তিনি সত্যকে খুঁজেছেন কঠিন এর মধ্যে দিয়ে।
২.১৩) “রক্তের অক্ষরে দেখিলাম”—‘রক্তের অক্ষরে’ কথাটির অর্থ কী?
উঃ “রক্তের অক্ষরে” বলতে কবির ক্ষতবিক্ষত হৃদয়ের উপলব্ধিকেই বোঝানো হয়েছে |
২.১৪) “সত্যের দারুণ মূল্য” বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উঃ মৃত্যুপথযাত্রী কবি জগৎকে সত্য হিসেবে দেখেছেন। দুঃখের তপস্যায় তিনি নিজেকে চিনেছেন। সত্যের সাধনা যে কত কঠিন এবং তার জন্যে কতখানি ত্যাগ করতে হয় সেই উপলব্ধিকে ব্যক্ত করতে গিয়ে উদ্ধৃত উক্তিটি করেছেন কবি।
২.১৫) “চিনিলাম আপনারে”—কবি কীভাবে নিজেকে চিনেছেন?
উঃ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনের অন্তিম পর্যায়ে পৌঁছে নানা ঘাত প্রতিঘাত এবং বেদনায় ক্ষতবিক্ষত হতে হতে তিনি নিজের রূপকে উপলব্ধি করলেন অর্থাৎ নিজেকে চিনতে পারলেন।
২.১৬) “রক্তের অক্ষরে দেখিলাম।” “রক্তের অক্ষরে’ কবি কী দেখেছিলেন ?
উঃ জীবন নদীর শেষ পর্যায়ে পৌঁছে, কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘রক্তের অক্ষরে’ দেখেছিলেন তার আত্মরুপ তথাৎ ‘আপনার রূপ’ দেখেছিলেন রক্তের অক্ষরে।
২.১৭) “কঠিনেরে ভালোবাসিলাম”–কঠিনকে কবি ভালোবেসেছেন কেন?
উঃ সত্য হল কঠিন। কঠিন হলেও সে কখনও মানুষকে বঞ্ছনা করে না। তাই কবি কঠিনকেই ভালোবেসেছেন |
২.১৮)“আমৃত্যু দুঃখের তপস্যা এ জীবন।” জীবন’-কে দুঃখের তপস্যা’ বলা হয়েছে কেন?
উঃ কবি রবীন্দ্রনাথ তার জীবন নদীর শেষ পর্যায়ে পৌঁছে, এই বাস্তব কঠিন সত্যকে উপলব্ধি করলেন এবং তিনি বুঝতে পারলেন এই জগত স্বপ্ন নয় এবং জীবন হলো দুঃখের তপস্যা যা সারা জীবন ধরে চলে।
২.১৯)রূপনারানের কূলে কবিতায় “মৃত্যুতে সকল দেনা’ কীভাবে শোধ করা সম্ভব বলে কবি মনে করেছিলেন?
উঃ জীবনের পদে পদে বিচিত্র দুঃখ-বেদনার আঘাতে আঘাতে কঠিন সত্যকে স্বীকার করে মৃত্যুকে বরণ করলেই জীবনের ঋণ শোধ করা সম্ভব। (রূপনারানের কূলে কবিতার প্রশ্নোত্তর 2023)
রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তর ( রূপনারানের কূলে কবিতার প্রশ্নোত্তর 2023)
৩.১) “ আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন , ” — কবি জীবনকে কেন ‘ দুঃখের তপস্যা ’ বলেছেন? কবির আত্মদর্শনের যে ছবি পাওয়া যায় তা সংক্ষেপে লেখ।
অথবা– “ আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন ” – কবি কেন এমন কথা বলেছেন? উক্তিটির মর্মার্থ সংক্ষেপে লেখ।
উঃ “শেষ লেখা” কাব্যগ্রন্থের ১১ সংখ্যক কবিতা “রূপনারানের কূলে” শীর্ষক কবিতায়, কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনকে, “আমৃত্যু দুঃখের তপস্যা” বলেছেন। কবি তার জীবন নদীর অন্তিম পর্যায়ে পৌঁছে, এই ভবসংসারকে তথা কঠিন বাস্তব জীবনকে চিনতে পেরেছেন । তিনি উপলব্ধি করেন দুঃখের নির্মমতাকে উপলব্ধি করে, কঠিন সাধনার মাধ্যমে সত্যকে জানা সম্ভব।
***কল্পনার স্বপ্নময় জগতে সত্যকে কখনই অনুভব করা যায় না। বাস্তবের কঠিন দুঃখ-যন্ত্রণার মাধ্যমে, জীবনে সত্যের স্বরূপ উপলব্ধি হয় । কবি জীবনের নানান ঘর প্রতিঘাত এবং বেদনায় সত্যের কঠিন রূপকে চিনতে পেরেছিলেন। এই কঠিন কি তিনি ভালোবেসে ছিলেন। এই সত্য কঠিন কখনোই বঞ্চনা করে না। সত্যের এমন কঠিন বাস্তব রূপ উপলব্ধির কারণেই, তিনি জীবনকে “আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা” বলেছেন ।
সত্যের এই জীবনবোধে পৌঁছাতে গিয়ে কবির আত্মদর্শন তথাগত উপলব্ধি ঘটেছে । জীবন নদীর প্রবাহ পথে, কবি স্বপ্নময় কল্পনার মায়ার বন্ধন থেকে বাস্তবের নির্মম সত্য কে লাভ করেছেন। কবি এই সত্যে উপনীত হয়েছেন, জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত বেদনার, অর্থাৎ জীবন তপস্যার মধ্যে দিয়ে। তাই কবি পরবর্তীতে এই কঠিন সত্য, বাস্তবকেই ভালোবাসলেন। কারণ তিনি জানেন, এই কঠিন সত্য কাউকেই বঞ্চনা করেনা। এই কঠিন সত্যের লড়াই চলে আমৃত্যু অর্থাৎ আমৃত্যু দুঃখের তপস্যার মধ্যে দিয়েই কঠিন সত্যকে উপলব্ধি করা যায়। তাইতো কবি বলেছেন-
আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন,
সত্যের দারুন মূল্য লাভ করি বারে,
৩.২) “রক্তের অক্ষরে দেখিলাম/ আপনার রূপ” — বক্তা কে ? তিনি “রক্তের অক্ষরে” কীভাবে আপনার রূপ দেখেছেন ?
অথবা , “ রক্তের অক্ষরে দেখিলাম / আপনার রুপ ” — বক্তা কে ? উক্তিটিতে কবির কী ভাবনা প্রকাশ পেয়েছে ?
উঃ “শেষ লেখা” কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ১১ সংখ্যক কবিতা “রূপনারানের কূলে” শীর্ষক কবিতায়, উল্লেখিত উক্তিটির বক্তা হলেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। স্বপ্নময় জগৎ থেকে বেরিয়ে বাস্তব জগতের অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতেই এমন মন্তব্য করেছেন।
**এই উক্তিটির মধ্যে দিয়ে কবি রবীন্দ্রনাথের জীবন দর্শন তথা আত্ম উপলব্ধি ধরা পড়েছে। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর জীবন নদীর অন্তিম পর্যায়ে পৌঁছে, বাস্তব পৃথিবীর যে অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন তার ফলশ্রুতি আমাদের আলোচ্য কবিতাটি। তিনি নানা ঘাত-প্রতিঘাত এবং বেদনার মধ্যে দিয়ে বাস্তব জীবন সম্পর্কে কঠিন সত্যে উপনীত হন । এই বাস্তব জীবন কঠিন সত্য । বাস্তব সত্যকে উপলব্ধি করে কবি নিজের রূপকে চিনতে পেরেছেন । তিনি উপলব্ধি করেন এই পৃথিবী স্বপ্নময় নয় বরং তা সত্য কঠিন আবরণে ঢাকা।
***কবি কল্পনায় ভেসে ওঠা স্বপ্নময় পৃথিবীর বাস্তব অস্তিত্বকে নিজের মনের গভীরে প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি জীবন নদীর প্রবাহ পথের সংগ্রামে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে নিজের রূপকে প্রত্যক্ষ করলেন। এবং তিনি জানতে পারলেন এই পৃথিবী কঠিন বাস্তব। তাই পরবর্তীতে তিনি এই কঠিনকেই আপন করে নিলেন। তাই কবি বলেছেন-
চিনিলাম আপনারে
আঘাতে আঘাতে
বেদনায় বেদনায়,
৩.৩) “মৃত্যুতে সকল দেনা শোধ করে দিতে” — উক্তিটির তাৎপর্য কি ? মৃত্যুতে কিভাবে সকল দেনা শোধ হয়?
অথবা– কার কাছে, কিসের দেনা? কিভাবে তার শোধ হবে ? ( রূপনারানের কূলে কবিতার প্রশ্নোত্তর 2023)
উঃ “রূপনারানের কূলে” নামাঙ্কিত কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনের অন্তিম পর্যায়ে পৌঁছে আত্মদর্শন অর্থাৎ নিজের মনের গভীরে প্রবেশ করে নিজেকে চিনতে পারলেন। তিনি নানা ঘাত- প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে উপলব্ধি করেন যে, মৃত্যুর মাধ্যমে সকল দেনা শোধ করতে হয় । অর্থাৎ বিশ্বপ্রকৃতির কাছে নিজের দেনা শোধ করতে হবে।
***কবি জানেন, বাস্তব পৃথিবীর কঠিন সত্য কাউকেই বঞ্চনা করবে না। আমাদের জীবন আমৃত্যু দুঃখের তপস্যার মধ্যে দিয়ে চলে। তবুও আমাদের জীবনের উত্থান পতনের মধ্যে দিয়ে সেই সত্যকে খুঁজে পাওয়াই হলো চরম দেনা, সেই সত্য চরম মূল্যবান— এই সত্য লাভই হচ্ছে দেনা।
সেই দেনা তা শোধ করবার একমাত্র পন্থা অনিবার্য মৃত্যুতে। বিশ্বপ্রকৃতিই যেখানে সত্য–মিথ্যার পার্থক্য নিরূপণ করে, মানুষের জীবনে সমৃদ্ধি ঘটায় , তাই সে প্রকৃতিতে স্বাভাবিক মৃত্যুর মধ্য দিয়েই শোধ হয় সমস্ত দেনা ।
৩.৪) রূপনারায়ণের কূলে কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবন সায়াহ্নে উপনীত হয়ে যা উপলব্ধি করেছেন তা নিজের ভাষায়
অথবা– রূপনারায়ণের কূলে কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মউপলব্ধি এবং সত্য দর্শন কিভাবে হয়েছে তা সংক্ষেপে লেখ।
অথবা– “সে কখনো করে না বঞ্চনা”- কে কখনও বঞ্চনা করেনা? কিভাবে সেই ভাবনায় কবি উপনীত হলেন?
উঃ “শেষ লেখা” কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ১১ সংখ্যক কবিতা “রূপনারানের কূলে” কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর নিজের জীবনের অন্তিম পর্বের আত্মোপলব্ধি এবং সত্য দর্শন ব্যক্ত করেছেন। জীবন নদের নদের কূলে পৌঁছে, কবি নিজেকে এবং এই বাস্তব কঠিন জীবনকে চিনতে পেরেছিলেন। নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে জীবন সায়াহ্নে পৌছে কবি জানতে পারলেন, এই জগত বাস্তব কঠিন। তা কখনোই স্বপ্নময় নয়।
***কবি রবীন্দ্রনাথ জীবনের বহু পর্বে মৃত্যুকে অত্যন্ত কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন। জীবন পর্বের প্রতি ক্ষণে ক্ষণে নানা আঘাত প্রতিঘাত তিনি সহ্য করেছেন। জীবন পর্বের উঠানামার মধ্যে দিয়েই তিনি পৃথিবীকে বেঁচে থাকার স্বপ্নময় জগত ভেবেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে জীবন পর্বের এই রাস্তা দিয়ে অর্থাৎ জীবন নদীর প্রবাহ পথের শেষ রাস্তায় পৌঁছে, অবশেষে মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে, তিনি নিজেকে উপলব্ধি করেছেন। নিজের মনের গভীরে নিজেকে চিনতে পারলেন। নিজের আত্মাকে উপলব্ধি করলেন এবং এই বাস্তব সত্যকে চিনলেন। তখন তার কাছে জগৎ আর স্বপ্নময় রইল না। তার মনে হল-
রক্তের অক্ষরে দেখিলাম
আপনার রূপ
জীবনের এই সত্য সবসময় কঠিন। জীবনের নানা আঘাতে প্রতিঘাতে বেদনায় যন্ত্রণায় তিনি এই সত্যকে চিনলেন। তাই তিনি স্বপ্নময় জগত ছেড়ে এই কঠিন বাস্তব কেই ভালোবাসলেন
*** আসলে জীবনের পথ হল দুঃখের তপস্যা। সারা জীবন ধরে এই তপস্যা চলতে থাকে। সেই দুঃখের মধ্যে দিয়ে মানুষ সিদ্ধি লাভ করে। কেননা কঠিন জীবন কাউকে বঞ্চনা করে না। দুঃখের তপস্যাই সত্যের দারুন মূল্য দিয়ে জীবনের সকল দেনা শোধ করে কবি নিজেকে মৃত্যুর কাছে সমর্পণ করতে চান।
বিগত বছরের প্রশ্ন ( রূপনারানের কূলে কবিতার প্রশ্নোত্তর 2023)
২০১৯
“ মৃত্যুতে সকল দেনা শোধ করে দিতে “ – বক্তা কে ? “ মৃত্যুতে সকল দেনা “ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? সে দেনা কিভাবে শোধ করতে চেয়েছিলেন কবি ? ৫
“ চিনিলাম আপনারে “ – কবি কিভাবে নিজেকে চিনলেন ? ১
“ রক্তের অক্ষরে দেখিলাম “ কি দেখলেন –
ক) আপনার স্বপ্ন খ) আপনার জগৎ গ) আপনার বেদনা ঘ) আপনার রূপ
২০২২
“ রক্তের অক্ষরে দেখিলাম “ কি দেখলেন –
ক) আপনার স্বপ্ন খ) আপনার জগৎ গ) আপনার বেদনা ঘ) আপনার রূপ
“ আমৃত্যু দুঃখের তপস্যা এ জীবন “ কবি জীবনকে “ দুঃখের তপস্যা “ বলেছেন কেন ?
২০২০
“ জেগে উঠিলাম “ – কবি কিভাবে কোথায় জেগে উঠলেন ?
“ এ জগত…” –
ক) মিথ্যা নয় খ) সত্য নয় গ) স্বপ্ন নয় ঘ) কঠিন নয় ( রূপনারানের কূলে কবিতার প্রশ্নোত্তর 2023)
২০১৮
“ আমৃত্যু দুঃখের তপস্যা এ জীবন “ কবি জীবনকে “ দুঃখের তপস্যা “ বলেছেন কেন ?
“ এ জগত…” –
ক) মিথ্যা নয় খ) সত্য নয় গ) স্বপ্ন নয় ঘ) কঠিন নয়
২০১৭
“ রূপনারায়ণের কূলে / জেগে উঠিলাম “- কে জেগে উঠলেন ? জেগে ওঠার আসল অর্থ কবিতাটির মধ্যে কিভাবে প্রকাশিত হয়েছে তা লেখ ।
“ কঠিনেরে ভালোবাসিলাম “ – কবি কঠিনকে ভালোবাসলেন কেন ?
২০১৬
সে কখনো করে না বঞ্চনা সে বলতে বোঝানো হয়েছে
ক) কঠিন কে খ) মৃত্যু কে গ) সত্য কে ঘ) জীবন কে
“ চিনিলাম আপনারে “ – কবি কিভাবে নিজেকে চিনলেন ? ১
২০১৫ ( রূপনারানের কূলে কবিতার প্রশ্নোত্তর 2023)
“ সে কখনো করে না বঞ্চনা “- কে কখনও বঞ্চনা করে না ? কবি কিভাবে এই ভাবনায় উপনীত হলেন ? ৫
“ রক্তের অক্ষরে দেখিলাম – “
ক) মৃত্যুর রূপ খ) প্রকৃতির রূপ গ) অপনার রূপ ঘ) রূপ নারানের রূপ
you may like it –
https://en.wikipedia.org/wiki/India
রূপনারানের কূলে কবিতার প্রশ্নোত্তর 2023 রূপনারানের কূলে কবিতার প্রশ্নোত্তর 2023 রূপনারানের কূলে কবিতার প্রশ্নোত্তর 2023 রূপনারানের কূলে কবিতার প্রশ্নোত্তর 2023 রূপনারানের কূলে কবিতার প্রশ্নোত্তর 2023 রূপনারানের কূলে কবিতার প্রশ্নোত্তর 2023 রূপনারানের কূলে কবিতার প্রশ্নোত্তর 2023 রূপনারানের কূলে কবিতার প্রশ্নোত্তর 2023 রূপনারানের কূলে কবিতার প্রশ্নোত্তর 2023 রূপনারানের কূলে কবিতার প্রশ্নোত্তর 2023 রূপনারানের কূলে কবিতার প্রশ্নোত্তর 2023 রূপনারানের কূলে কবিতার প্রশ্নোত্তর 2023 রূপনারানের কূলে কবিতার প্রশ্নোত্তর 2023 রূপনারানের কূলে কবিতার প্রশ্নোত্তর 2023