> নদীর বিদ্রোহ প্রশ্ন উত্তর class 10 pdf » Qবাংলা

নদীর বিদ্রোহ প্রশ্ন উত্তর class 10 pdf

মাধ্যমিক বাংলা বিষয়ের পাঠ্য নদীর বিদ্রোহ| রচয়িতা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় | এই গল্প থেকে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আলোচনা করা হয়েছে| এই সিরিজে এ বছর মাধ্যমিকের যে প্রশ্নগুলি আসার সম্ভাবনা প্রবল সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুব সুন্দর ভাবে সাজিয়ে উপস্থাপনা করা হয়েছে।প্রশ্নের উত্তরগুলি দেখার পাশাপাশি উত্তর লেখার কৌশল গুলি ভালোভাবে লক্ষ্য কর | মাধ্যমিক বাংলা বিষয়ে আরো অন্যান্য বিষয়ের প্রশ্ন উত্তর জানতে অবশ্যই  click here

নদীর বিদ্রোহ গল্পের বিষয়বস্তু

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নদীর বিদ্রোহ গল্পে আমরা স্টেশনমাস্টার নদীর চাঁদের কথা জানতে পারি। নদেরচাঁদ নদীর ধারেই জন্মগ্রহণ করেছে। নদীর ধারেই মানুষ হয়েছে। চিরকাল নদীকে সে ভালোবেসেছে। নদীর প্রতি তার ভালোবাসা শিশুসুলভ। পেশায় স্টেশনমাস্টার নদেরচাঁদ যে স্টেশনে কর্মে নিযুক্ত, সেখানে এক নদীর সঙ্গে তার পরিচয়। সেই নদীকে দেখার জন্যই উদগীব হয়ে থাকে। তার নতুন সহকারিকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে স্টেশন থেকে এক মাইল দূরে, নদীকে দেখার জন্য রেললাইন ধরে হাটতে শুরু করে। পাঁচদিন ধরে টানা অবিরত বৃষ্টির ফলে  নদীকে দেখতে পায়নি। গ্রামে একসময় ক্ষীণ ও খরস্রোতা নদীকে দেখে নদের চাঁদ প্রায় কেঁদে ফেলেছিল। ফলে বর্ষণ-পুষ্ট নদী দেখার জন্য তার মন উৎসুক হয়ে ওঠে।

নদীর ওপর ইট, সিমেন্ট সুরকি দিয়ে মানুষের হাতে নির্মিত ব্রিজের অপরদিকে ধারক স্তম্ভের শেষ প্রান্তে বসে নদীকে লক্ষ্য করে। প্রবল বৃষ্টির জলে পরিপূর্ণ নদীর জলোচ্ছ্বাস দেখে নদের চাঁদের মনে ভারী আমোদ লাগে। পকেটে একখানা চিঠি বের করে তার মধ্যে ছুড়ে ফেলে দেয়। মুহূর্তের মধ্যে সেই চিঠি নদীর জলে লুকিয়ে পড়ে । এরপর নদীর সঙ্গে খেলার লোভ সামলাতে পারেনি। স্ত্রীর জন্য লেখা পাঁচ পৃষ্ঠা ব্যাপী চিঠি পকেট থেকে বার করে ছিঁড়ে ছিঁড়ে নদীর জলে ফেলে। প্রবল বর্ষণে নদীর চেহারা ভয়ংকর হয়ে উঠেছে।

তারপর আবার বৃষ্টি নামলো কিন্তু সে তার জায়গা থেকে উঠলো না । সে বৃষ্টির জল পড়ে নদীর উচ্ছলতা কে উপভোগ করতে লাগলো। প্রবল বৃষ্টিতে দিনের আলো আসতে আসতে ঝাপসা হয়ে যায়। এমন সময় নদীকে তার ভয় করতে লাগলো। কারণ নদীর প্রবল গতিবেগ ব্রিজকে যেন ভেঙে বয়ে চলতে চায়। নদী যেন বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে এই ব্রিজে ভেঙে ফেলার জন্য। এরপর সেখান থেকে উঠে পড়ে। সে লাইন ধরে স্টেশনের দিকে হাঁটতে শুরু করে। তখনি তার জীবনে নেমে আসে চরম আঘাত । সাত নম্বর ডাউন প্যাসেঞ্জার ট্রেন তাকে পিষে চলে যায়। নদেরচাঁদের মৃত্যু ঘটে।

নদীর বিদ্রোহ প্রশ্ন উত্তর mcq

১।   নদেরচাঁদ কোন ট্রেনটিকে রওনা করিয়ে দিয়েছিল?

  1. ছটা পঁয়তাল্লিশের
  2. পাঁচটা পঁয়তাল্লিশের
  3. তিনটে পঁয়তাল্লিশের
  4. চারটে পঁয়তাল্লিশের উঃ।  ঘ । চারটে পঁয়তাল্লিশ

২।  নদীর চাঁদ যে ট্রেনটিকে রওনা করিয়ে দিয়েছিল সেটি ছিল-

  1. প্যাসেঞ্জার ট্রেন
  2. মেইল ট্রেন
  3. মালগাড়ি
  4. মেসেঞ্জার মেইল ট্রেন  উঃ ক। প্যাসেঞ্জার ট্রেন

৩। “ আমি চললাম হে ”- নদের চাঁদ যাকে বলেছিল-

  1. সহকারীকে
  2. স্টেশন মাস্টারকে
  3. স্টেশনগার্ডকে
  4. নতুন সহকারীকে উ। ঘ। নতুন সহকারীকে

৪।  ” নদীর বিদ্রোহ “- গল্পে স্টেশন থেকে নদীর উপরকার ব্রিজের দূরত্ব হল-

  1. চার মাইল
  2. তিন মাইল
  3. এক মাইল
  4. দুই মাইল উঃ গ। এক মাইল

৫। “নদীর বিদ্রোহ”-গল্পে অবিরত বৃষ্টি হয়েছিল-

  1. পাঁচ দিন
  2. ছয় দিন
  3. আট দিন
  4. চারদিন  উঃ। পাঁচ দিন

৬। “নদীর বিদ্রোহ”-গল্পে নদেরচাঁদ স্টেশন মাস্টারি করেছিল-

  1. চার বছর
  2. তিন বছর
  3. আট বছর
  4. দুই বছর  উঃ  ক।‌ চার বছর

৭। “নদীর বিদ্রোহ”-গল্পে নদের চাঁদের বয়স ছিল-

  1. পঁয়তাল্লিশ বছর
  2.  চল্লিশ বছর
  3. ত্রিশ বছর
  4. পঁচিশ বছর উঃ গ। ত্রিশ বছর

৮। নদেরচাঁদের মৃত্যু হয়েছিল যেভাবে-

  1. নদীর ব্রিজের উপর থেকে পড়ে
  2. ৭নং ডাউন প্যাসেঞ্জার ট্রেনের ধাক্কায়
  3. মাল গাড়ির ধাক্কায়
  4. মেল ট্রেনের ধাক্কায়  উঃ খ। ৭নং ডাউন প্যাসেঞ্জার ট্রেনের ধাক্কায়

৯।‌ নদেরচাঁদকে পিষিয়া দিয়া চলিয়া গেল-

  1. ৭ নং আপ প্যাসেঞ্জার ট্রেন
  2. ৪ নং ডাউন প্যাসেঞ্জার ট্রেন
  3. ৭ নং ডাউন প্যাসেঞ্জার ট্রেন
  4. ২ নং ডাউন প্যাসেঞ্জার ট্রেন  উঃ গ। ৭ নং ডাউন প্যাসেঞ্জার ট্রেন

১০।  নদেরচাঁদ প্রতিদিন কোথায় বসে নদীকে দেখত?

  1. ব্রিজের উল্টোদিকে স্তম্ভের উপরে
  2. ব্রিজের একদিকে স্তম্ভের নিচে
  3. ধারক স্তম্ভের অন্য প্রান্তে বসে
  4. নদীর ব্রিজের ধারক স্তম্ভের শেষ প্রান্তে বসে  উঃ। ঘ। নদীর ব্রিজের ধারক স্তম্ভের শেষ প্রান্তে বসে

১০।‌ “নদীর বিদ্রোহ” গল্পে নদের চাঁদের জন্ম হয়েছিল-

  1. গ্রামে
  2. নদীর ধারে
  3. শহরে
  4. শহরের গলিতে উঃ খ। নদীর ধারে

১১। “…… কিছুক্ষণের জন্য নদীর চাঁদকে দিশেহারা করিয়া রাখিল ”- যার জন্য এমন হল-

  1. প্রবল বৃষ্টির আওয়াজের
  2. নদীর প্রবল জলের আওয়াজে
  3. একটা ট্রেন চলে যাওয়ার শব্দ
  4. প্রবল ঝড়ের শব্দে  উঃ। গ। একটা ট্রেন চলে যাওয়ার শব্দে

১২। নদেররচাঁদ যে জন্য গর্ব অনুভব করে এসেছে-

  1. গ্রামের নদী জলে পরিপূর্ণ হওয়ার জন্য
  2.  প্রবল জলে নদী পরিপূর্ণ হওয়ার জন্য
  3. নদীর জলের জন্য
  4. নতুন রং করা ব্রীজের জন্য   উঃ ঘ। নতুন রং করা ব্রিজের জন্য

১৩। “নদীর বিদ্রোহ”- গল্পে নদেরচাঁদের দেশের সেই ক্ষীণস্রোতা নির্জীব নদীটি ছিল –

  1. আত্মীয়ার মতোই সবার ঘৃণা পেয়েছিল
  2. আত্মীয়ার মতোই তার মমতা পেয়েছিল
  3. আত্মীয়ার মতোই সকলের দুর্বলতা পেয়েছিল
  4. আত্মীয়ার মতোই সকলের অনাদর পেয়েছিল  উঃ খ। আত্মীয়ার মতোই তার মমতা পেয়েছিল

১৪। “নদীর বিদ্রোহ”- গল্পে নদের চাঁদের দেশের নদীটি ছিল-

  1. ক্ষীনস্রোতা ও নির্জীব
  2. ক্ষীনস্রোতা ও সজীব
  3. ক্ষীণস্রোতা ও দুর্বল
  4. ক্ষীণস্রোতা ও সবল   উঃক। ক্ষীণস্রোতা ও নির্জীব।

১৫। “নদীকে দেখা হয় নাই” – নদীকে দেখা হয়নি, যতদিন-

  1. একদিন
  2. দুদিন
  3. চার দিন
  4. পাঁচ দিন    উঃ ঘ। পাঁচদিন

১৬।  “অবসন্ন হইয়া আসিতেছে”- যে জন্য অবসন্ন হয়ে আসছিল-

  1. ভীষণ মধুর শব্দের
  2. নদীর জল এবং বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজে ভীষণ মধুর শব্দে
  3. নদীর জলের ভীষণ শব্দে
  4. বৃষ্টির জলের ভীষণ শব্দের  উ। খ। নদীর জলের এবং বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজে ভীষণ মধুর শব্দে

১৭।  “নদেরচাঁদ বসিয়া বসিয়া ভিজিতে লাগিল”- নদেরচাঁদের ভেজার কারণ-

  1. নদের চাঁদ বৃষ্টির শব্দ শুনছিল
  2. বৃষ্টিতে ভিজতে তার ভালো লাগে
  3.  ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছিল
  4. নদীর জলের শব্দে   উঃ ক‌। সে নদীর শব্দ শুনছিল

১৮।  “ নদেরচাঁদের মন হইতে ছেলেমানুষী আমোদ মিলাইয়া গেল ”— কারণ –

  1. বৃষ্টির কারণে চারিদিকে অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল
  2. প্রবল নদীর জলের শব্দে
  3. প্রবল বৃষ্টির শব্দে
  4. নদীর জলের শব্দের সঙ্গে বৃষ্টির ঝমঝম শব্দ মিশে একটা সঙ্গত সৃষ্টি করেছিল।  উ।  ঘ। নদীর জলের শব্দের সঙ্গে বৃষ্টির ঝমঝম শব্দ মিশে একটা সঙ্গত সৃষ্টি করেছিল।

আরও মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর  দেখতে  click here

১৯।  ” নদীর বিদ্রোহ “- গল্পে নদের চাঁদ তার বউকে যে চিঠি লিখেছিল সেটি-

  1. পাঁচ পৃষ্ঠাব্যাপী বিরহ-বেদনাপূর্ন চিঠি
  2. বিরহ-বেদনাপূর্ণ চিঠি
  3. একখানা বিরহ-বেদনাপূর্ণ চিঠি
  4. ব্যথা – বেদনাময়  চিঠি  উঃ। ক। পাঁচ পৃষ্ঠাব্যাপী বিরহ-বেদনাপূর্ন চিঠি

২০।  “…সে প্রায় কাঁদিয়া ফেলিয়াছি ”- কারণ-

  1. নদীর ওপর বাধা ব্রিজ দেখে
  2. নদীর প্রবল জলোচ্ছ্বাস দেখে
  3. নদীর পরিপূর্ন জলধারা দেখে
  4. অনাবৃষ্টির বছরে নদীর ক্ষীন স্রোতধারা দেখে  উঃ।  ঘ। অনাবৃষ্টির বছরে নদীর ক্ষীন স্রোতধারা দেখে

২১।  “ বড়ো ভয় করিতে লাগিল নদেরচাদের ”  – ভয়ের কারণ ছিল—

  1. নদীর আর্তনাদি জলরাশির জন্য
  2. প্রবল বৃষ্টির কারণে
  3. প্রবল বৃষ্টির অন্ধকার দেখে
  4. নদীর প্রবল জলস্ফীতি   উ।ক । নদীর আর্তনাদি জলরাশির জন্য

নদীর বিদ্রোহ প্রশ্ন উত্তর saq

১।   “ আমি চললাম হে! ” – কে , কাকে এ কথা বলেছে ?
উঃ। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের   “নদীর বিদ্রোহ ” গল্পে স্টেশনমাস্টার নদেরচাঁদ চারটে পঁয়তাল্লিশের প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি রওনা করিয়ে দিয়ে আলোচিত মন্তব্যটি বলেছে, তার নতুন সহকারীকে।

২।  “ আজ্ঞে হ্যাঁ ”   — কে , কোন্ প্রসঙ্গে এই কথাটি বলেছিল ?
উঃ।  “নদীর বিদ্রোহ ” গল্পে নদেরচাঁদ চারটে পঁয়তাল্লিশের প্যাসেঞ্জার ট্রেনটিকে রওনা করিয়ে দিয়ে,  নতুন সহকারীকে তার দায়িত্ব বুঝিয়ে চলে যাবার সময়, নতুন সহকারি সম্মতি জানিয়ে আলোচিত মন্তব্যটি করেছেন।

৩।  “ আজ্ঞে  না ”- কোন প্রসঙ্গে; বক্তা এমন বলেছে ?
উ:  নদেরচাঁদ চারটে পঁয়তাল্লিশের ট্রেনটিকে রওনা করিয়ে দিয়ে, যাবার সময় তার নতুন সরকারীকে বৃষ্টি হবে কিনা। জানতে চাইলে সহকারি তার উত্তরে- এই মন্তব্যটি করে।

৪।  “ পাঁচ দিন নদীকে দেখা হয় নাই ” — ভক্তর নদীকে পাঁচ দিন দেখা হয়নি কেন ?  অথবা:- এই উক্তিটির মধ্যে দিয়ে নদেরচাঁদের যে আন্তরিক আকুতি ফুটে উঠেছে ?
উঃ। “নদীর বিদ্রোহ” গল্পে নদেরচাঁদ নদীকে বড়োই ভালবাসে। পাঁচ দিন টানা অবিরাম বৃষ্টির কারণে নদেরচাঁদ নদীকে দেখা হয়ে ওঠেনি। তাই বৃষ্টি থামলেই নদীকে দেখার জন্য সে উদগীব হয়ে ওঠে।

৫।  “ নদেরচাঁদ ছেলেমানুষের মতো ঔৎসুক্য বোধ করিতে লাগিল ”-  নদীরচাঁদ এমন উৎসুক বোধ করতে লাগল কেন ? অথবা তার ছেলেমানুষীর  কারণ কি ?
উঃ “নদীর বিদ্রোহ”  গল্পে অবিরাম বৃষ্টির কারণে নদীকে দেখতে না পেয়ে নদেরচাঁদের মধ্যেৎ নদীকে দেখার জন্য তীব্র ব্যাকুলতা সৃষ্টি হয় ।‌ নদীর জন্য তার এমন ব্যাকুলতা প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে থাকা উচিত নয়। তাই এমন মন্তব্য করা হয়েছে।

৬।  “….. কিছুক্ষণ নদীকে না দেখিলে সে বাঁচিবে না ” –  কে ;  কেন নদীকে না দেখলে বাঁচবে না ?
উ। নদেরচাঁদ নদীকে না দেখলে বাঁচবে না। কারণ সে নদীর ধারেই জন্মগ্রহণ করেছে। নদীকে সে বড়ই ভালবাসে। পাঁচ দিন অবিরত বৃষ্টির কারণে সে নদীকে দেখতে পায়নি। তাই নদীকে না দেখতে পেলে, সে বাঁচবে না।

৭। “নদীর বিদ্রোহ”- গল্পে নদেরচাঁদের উপর কিসের দায়িত্ব ছিল ?
উ:। “নদীর বিদ্রোহ” গল্পে নদেরচাঁদ পেশায় স্টেশনমাস্টার। দিবারাত্রি মেল, প্যাসেঞ্জার, আর মালগাড়ির তীব্র বেগে ছোটাছুটি নিয়ন্ত্রিত করবার দায়িত্ব তার ওপর।

৮।  “ রেলের উঁচু বাঁধ ধরিয়া হাঁটিতে হাঁটিতে …”-  নদেরচাঁদ কী ভাবছিল ?
উ। পাঁচদিন অবিরত বৃষ্টির কারণে নদেরচাঁদের নদীকে দেখা হয়নি। তাই রেলের উঁচু বাঁধ ধরে হাঁটতে হাঁটতে দু’পাশের চেয়ে চেয়ে নদেরচাঁদ নদীর বর্ষণপুষ্ট মূর্তি কল্পনা করছিল।

৮। “ …সে প্রায় কাঁদিয়া ফেলিয়াছিল ”- কে ; কেন কেঁদে ফেলেছিল ?
উঃ “নদীর বিদ্রোহ” গল্পে নদেরচাঁদ তার দেশের অনাবৃষ্টি বছরে নদীর ক্ষীণ স্রোতধারা দেখে কেঁদে ফেলেছিল। কারণ শৈশব থেকেই তার নদীর প্রতি ভালোবাসা ছিল।

আরও মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর  দেখতে  click here 

১০। “ চিঠি পকেটেই ছিল ”- এখানে কোন চিঠির কথা বলা হয়েছে ?
উঃ। “নদীর বিদ্রোহ” নামক গল্পে স্টেশনমাস্টার নদেরচাঁদ তার স্ত্রীকে একখানা পাঁচ পৃষ্ঠাব্যাপী বিরহ বেদনাপূর্ণ চিঠি লিখেছিল। আলোচিত অংশে- এই চিঠির কোথায় বলা হয়েছে।

১১। “ বড়ো ভয় করিতে লাগিল নদেরচাঁদের। ” – কীসের ভয় করছিল নদেরচাঁদের ?
উ।  “নদীর বিদ্রোহ” নামাঙ্কিত গল্পে, বর্ষণপুষ্ট নদীর অর্থনাদি এবং প্রবল বৃষ্টির শব্দে এবং ব্রিজের ওপর দিয়ে দ্রুতবেগে ট্রেন যাওয়ার শব্দ- এমন ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল যে,  নদেরচাঁদের ভয় পেয়েছিল।

১২। “ হঠাৎ তাহার মনে হইয়াছে ”— হঠাৎ কার, কী মনে হয়েছে ?
উঃ।  নদেরচাঁদের হঠাৎ মনে হয়েছে যে, বর্ষণপুষ্ট নদীর অর্তনাদি জলরাশির কয়েক হাত উঁচুতে এমনভাবে নিশ্চিন্ত মনে বসে থাকা তার উচিত হয়নি।

১৩। “এত কাল নদেরচাঁদ গর্ব অনুভব করিয়াছে ”—কার জন্য নদেরচাঁদ এতকাল গর্ব অনুভব করেছে 
উঃ। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত “নদীর বিদ্রোহ” শীর্ষক গল্পে  যে স্টেশনে স্টেশনমাস্টার সেখানে নতুন রং করা রেলের ব্রিজের জন্য নদেরচাঁদ গর্ব অনুভব করে এসেছেন।

১৪।‌  “…নদেরচাঁদ স্তম্ভিত হইয়া গেল ”-  নদেরচাঁদের কখন এমন পরিস্থিতি হয়েছিল ?  অথবা:- নদেরচাঁদ কেন স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল ?
উঃ। “নদীর বিদ্রোহ” নামাঙ্কিত গল্পে নদেরচাঁদ ব্রিজের কাছাকাছি এসে প্রথমবার নদীর দিকে তাকিয়ে নদীর দর্শনপুষ্ট চেহারা দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেল।

১৫। নদেরচাঁদ প্রতিদিন কোথায় বসে নদীকে দেখতো ?
উঃ। নদেরচাঁদ প্রতিদিন ব্রিজের মাঝামাঝি ইট, সুরকি ও সিমেন্ট দিয়ে নির্মিত ধারকস্তম্ভের শেষ দিকে বসে নদীকে দেখতো।

১৬। “এক একখানি পাতা ছিঁড়িয়া দুমড়াইয়া মুচড়াইয়া জলে ফেলিয়া দিতে লাগিল।”—কে কিসের পাতা জলে ফেলতে লাগল?
উঃ। নদেরচাঁদ তার স্ত্রীকে একটি পাঁচ পৃষ্ঠাব্যাপী বিরহ বেদনাপূর্ণ চিঠি লিখেছিল । নদীর সঙ্গে খেলার লোভ সামলাতে না পেরে চিঠির পাতাগুলোই ছিড়ে দুমড়ে জলে ফেলছিল।

১৭। নদী আসলে কী চায় বলে নদেরচাঁদ মনে করেছিল ?
উঃ “নদীর বিদ্রোহ”- নামক গল্পে নদেরচাঁদ মনে করেছিল যে ; মানুষের হাতে তৈরি ব্রিজ আর উঁচু বাঁধ ভেঙে ফেলে নদী নিজের গতি ফিরে পেতে চায়।

১৮।  “ নিজের এই পাগলামিতে যেন আনন্দই উপভোগ করে ”-এখানে কার কিসের পাগলামির কথা বলা হয়েছে ?
উ:  ত্রিশ বছর বয়সে  নদেরচাঁদের নদীর জন্য তার একটু মায়া অস্বাভাবিক। এই বয়সে নদীর জন্য ভালোবাসা যেন পাগলামির সমান। কিন্তু নদের চাঁদ এই পাগলামিতেই আনন্দ উপভোগ করে।

১৯। “পারিলেও মানুষ কি তাকে রেহাই দিবে ? ”-  মানুষ কিসে রেহাই দিবেনা  ?
উঃ “নদীর বিদ্রোহ”  গল্পে নদী তার প্রচন্ড জলের গতিবেগে তার ওপরে বাঁধা ব্রিজ যদি ভেঙে ফেলে তাহলেও মানুষ তাকে রেহাই দেবে না। কারণ আবার তারা সেই ব্রিজ গড়ে তুলবে।

২০।‌ “ অস্বাভাবিক হোক ” –কোন্ বিষয়কে অস্বাভাবিক বলা হয়েছে ?
উঃ। নদেরচাঁদ একজন স্টেশন মাস্টার । স্টেশনমাস্টারের মতো পদে কাজ করা সত্ত্বেও, বর্ষণপুষ্ট নদীকে একটানা পাঁচ দিন না দেখার জন্য তার মধ্যে যে শিশুসুলভ উন্মাদনা দেখা দিয়েছিল – সেটাই অস্বাভাবিক।

নদীর বিদ্রোহ প্রশ্ন উত্তর

১। …. ট্রেনটিকে রওনা করাইয়া দিয়া …– কোন্ ট্রেনটির কথা বলা হয়েছে ? ট্রেনটিকে রওনা করানোর পর কী ঘটল ?
উঃ: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত  “নদীর বিদ্রোহ “-  গল্পে, চারটে পঁয়তাল্লিশ মিনিটের প্যাসেঞ্জার ট্রেনটির কথা এখানে বলা হয়েছে। এই ট্রেনটিকে স্টেশন মাস্টার নদের চাঁদ রওনা করিয়ে দিয়েছিলেন।

ট্রেনটিকে রওনা করানোর পর কী ঘটল- ট্রেনটিকে রওনা করানোর পর স্টেশনমাস্টার নদেরচাঁদ তার নতুন সহকারীকে বলেন-  “আমি চললাম হে!” । এই কথা বলে নদের চাঁদ , আর হয়তো বৃষ্টি হবে না , এই অনুমান ব্যক্ত করে সহকারীর সমর্থন জানতে চাই । নতুন সরকারি সম্মতি জানিয়ে দেয়। তারপর নদীর চাঁদ লাইন ধরে এক মাইল দূরে নদীর উপরের ব্রিজের দিকে হাঁটতে লাগলেন । গত পাঁচ দিন অবিরাম বৃষ্টি হওয়ার পর আজ বিকেলে একটু বর্ষণ থেমেছে। তাই নদীর চাঁদ পাঁচ দিন নদীকে দেখেননি । এজন্য নদীকে দেখার জন্য তিনি উৎসুক হয়ে পড়েন।

২ । “ কী প্রয়োজন ছিলো ব্রিজের ? ”-এখানে কোন ব্রিজের কথা বলা হয়েছে ?  বক্তার তা অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয়েছে কেন ?   অথবা:-  বক্তার কখন এবং কেন এমন মনে হয়েছে ?
উঃ। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বীরোচিত নদীর বিদ্রোহ নামক গল্পে স্টেশন মাস্টার নদের চাঁদের এমন মনে হয়েছে। নদের চাঁদ যে স্টেশনের কাজে নিযুক্ত ছিলেন, সেই স্টেশনে এক মাইল দূরে, একটি নদীর উপর ইট, বালি, সুরকি দিয়ে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা ছিল। আলোচিত এই অংশে এই ব্রিজের কথাই বলা হয়েছে।

অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয়েছে কেন ?-নদেরচাঁদ নদীর ওপর তৈরি নতুন রং করা ব্রিজকে নিয়ে গর্ববোধ করতেন। কিন্তু টানা কয়েক দিন বর্ষণের ফলে নদী জলে পরিপূর্ণ।  নদী যেন সেই ব্রিজকে ভেঙে বয়ে চলতে চায়। নদীর গতিপথে এই ব্রিজ যেন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদীর চাঁদের কাছে তাই এই ব্রিজ ভালো লাগেনি। সেজন্য নদীর চাঁদের কাছে এই ব্রিজ অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয়েছে।

আরও মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর  দেখতে  click Here

৩।  “ নদেরচাঁদের ভারী আমোদ বোধ হইতে লাগিল ”—কী কারণে, নদের চাঁদের আমোদ হয়েছিল ?
উঃ- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত নদীর বিদ্রোহ নামক গল্পে নদীর জল পরিপূর্ণ অবস্থাকে দেখে নদের চাঁদের এমন আমোদ বোধ হয়েছিল।

নদের চাঁদ নদীর ধারেই জন্মগ্রহণ করেছেন। তাই নদের চাঁদ নদীকে বড়ো বেশি ভালোবাসতেন |ব্রিজের মাঝামাঝি ইট সুরকি আর সিমেন্টে গাঁথা ধারক স্তম্ভের শেষ প্রান্তে নদের চাঁদ প্রতিদিন নদীকে দেখতেন ।অবিরাম বর্ষণের ফলে নদীর জল এতটাই ফুলে উঠেছে যে নদের চাঁদ হাত বাড়ালেই তাকে স্পর্শ করতে পারেন। নদীর জলের কোলাহল তাকে উৎসুক করে তুলেছিল। নদীর এমন জলে পরিপূর্ণ অবস্থাকে দেখেই নদের চাঁদের “ভারি আমোদ হইতে লাগিল”

৪। “ কিন্তু নদীর সঙ্গে খেলা করার লোভটা সে সামলাইতে পারল না নদীর সঙ্গে খেলা করার লোভ সামলাতে পারিল না ”- কেন নদীর সঙ্গে খেলা করার লোভটা সামলাতে পারল না ?  তার খেলাটা কেমন ছিল ?   অথবা:- নদেরচাঁদ নদীর সঙ্গে যে খেলায় মেতে উঠেছিল, সেই খেলাটি কীরকম ছিল?
উঃ। “নদীর বিদ্রোহ”- নামাঙ্কিত গল্পে নদেরচাঁদ নদীর ধারে জন্মগ্রহণ করেছে। নদীর ধারেই সে মানুষ হয়েছে। চিরদিন নদীকে ভালোবেসেছে। তাই পাঁচ দিন অবিরত বৃষ্টিতে বর্ষনপুষ্ট নদীকে দেখে, নদীর সঙ্গে খেলা করার লোভটা সামলাতে পারল না।

খেলাটা কেমন ছিল ? – বর্ষণপুষ্ট নদীর স্রোত ব্রিজের ধারক স্তম্ভবগুলিতে বাধা পেয়ে ফেনিল আবর্ত তৈরি করছে। এত উঁচুতে জল উঠে এসেছে যে, নদেরচাঁদ ইচ্ছা করলেই হাত বাড়িয়ে স্পর্শ করতে পারে। তার পকেটে একটা পুরাতন চিঠি ছিল, সেটাকে সে স্রোতের মধ্যে ছুড়ে ফেলে দিল। চোখের পলকের মধ্যে তা অদৃশ্য হয়ে গেল। তাছাড়া দুদিন ধরে বাইরের অবিশ্রান্ত বৃষ্টির সঙ্গে সুর মিলিয়ে নদেরচাঁদ তার স্ত্রীকে একখানা পাঁচ পৃষ্ঠা-ব্যাপি, বিরহ বেদনাপূর্ণ চিঠি লিখেছিল। সেই চিঠিটির এক একটি পাতা ছিড়ে দুমড়ে নদীর জলে ফেলতে লাগলো।এইভাবেই নদীর চাঁদ নদীর সঙ্গে খেলতে লাগলো।

৫। “ কী প্রয়োজন ছিল ব্রিজের ? ”— প্রসঙ্গসহ এমন মন্তব্যের কারণ উল্লেখ কর ?  অথবা:- কোন্ ব্রিজের কথা বলা হয়েছে ? উদ্দিষ্ট ব্যক্তির তা অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয়েছে কেন ?
উঃ। কথা সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত নদীর বিদ্রোহ নামক গল্পে নদেরচাঁদ পেশায় একজন স্টেশনমাস্টার। সে যে স্টেশনে কাজে নিযুক্ত ছিল- সেই স্টেশন থেকে এক মাইল দূরে নদীর উপরে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা ছিল। আলোচিত অংশে সেই ব্রিজের কথাই বলা হয়েছে

অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয়েছে কেন- নদেরচাঁদ নদীর ওপর নির্মিত নতুন রং করা ব্রীজটার জন্য আগে গর্ব অনুভব করত। কিন্তু পাঁচ দিন অবিরত বৃষ্টির কারণে নদী জলে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে এবং নদীর প্রবল জলোচ্ছ্বাস সেই ব্রিজকে ভেঙে বয়ে এগিয়ে যেতে চাই। নদেরচাঁদের মনে হয়েছে- এই ব্রিজ যেন নদীর স্বাভাবিক গতিকে বাঁধা দিচ্ছে। নদী যেন এই ব্রিজকে ভাঙতে বদ্ধপরিকর। ব্রিজ যেন নদীকে বন্দী করতে চাইছে। তাই নদেরচাঁদের এই ব্রিজের অপ্রয়োজন বলে মনে হয়েছিল।

নদীর বিদ্রোহ বড় প্রশ্ন উত্তর

১। “ নিজের এই পাগলামিতে যেন আনন্দই উপভোগ করে। ”—কার,  কোন্ পাগলামির কথা এখানে বলা হয়েছে ? কীভাবে সে পাগলামিতে আনন্দ উপভোগ করে লেখো।

উঃ কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পে  নদেরচাঁদের নদীর প্রতি ভালোবাসাকে তার পাগলামি বলা হয়েছে। আসলে ত্রিশ বছর বয়সেও নদীর প্রতি এমন শিশুসুলভ ভালোবাসা  এবং  মায়াকে একটু অস্বাভাবিক মনে হয় |

পাগলামিতে আনন্দ উপভোগ – নদীর চাঁদ নদীর ধারেই জন্মগ্রহণ করেছে। নদীর ধারেই সে মানুষ হয়েছে। চিরকাল নদীকেই সে ভালবেসে এসেছে। স্টেশনমাস্টার নদেরচাঁদ যে ষ্টেশনে কাজে নিযুক্ত সেই স্টেশনেও নদীর সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। পাঁচ দিন অবিরত বৃষ্টির কারণে সেই নদী জলে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। প্রবল নদীর জলোচ্ছ্বাস- নদেরচাঁদের মন আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে। নদীর জলের চঞ্চলতা তাকে পাগল করে তোলে। কিন্তু ত্রিশ বছর বয়সে নদেরচাঁদের নদীর প্রতি এমন ভালোবাসা তাকে মানায় না। কেননা, সে একজন স্টেশন মাস্টার।

অথচ এই স্টেশনমাস্টার নদেরচাঁদ নদীর প্রতি  পাগল। নদীর চাঁদ এই সব কিছু বোঝে। কিন্তু নিজেকে বোঝাতে পারে না। নদীর প্রতি তার এই পাগলামিতেই যেন সে আনন্দ উপভোগ করে। অর্থাৎ নদেরচাঁদের নদীর প্রতি এমন শিশুসুলভ ভালবাসা। নদীর প্রতি এমন আবেগ। আত্মীয়তা তাকে পাগলামি বলে মনে হয়েছে।

 2 । “নদীর বিদ্রোহের কারণ সে বুঝিতে পারিয়োছে। ”—নদী কখন বিদ্রোহ করেছিল ? কে, কিভাবে নদীর বিদ্রোহের কারণ বুঝতে পেরেছিল ?  অথবা:- নদীর বিদ্রোহের কারণ কি ছিল  ? এই বিদ্রোহের কারণ নদেরচাঁদের কিভাবে  বুঝতে পেরেছিল ?

উঃ।মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত নদীর বিদ্রোহ নামাঙ্কিত গল্পে-পাঁচ দিন অবিরত বৃষ্টির কারণে নদেরচাঁদ নদীতে দেখতে পায়নি। বৃষ্টি থামলে বর্ষণপুষ্ট নদীর চেহারা দেখতে নদেরচাঁদ বড়োই উৎসুক হয়ে ওঠে। ব্রিজের কাছাকাছি এসে জলপূর্ণ নদীর উচ্ছ্বাস দেখে নদেরচাঁদকে মুগ্ধ করেছিল ।

নদীর বিদ্রোহের কারণ বুঝতে-  জলপূর্ণ নদীর স্রোত ব্রিজের ধারকস্তম্ভের দিকে বাধা পেয়ে ফেনিল আবর্ত তৈরি করছে। নদীর এমন ভয়ঙ্কর রূপ দেখে তার আমোদ লাগলো এবং নদীর সঙ্গে খেলা করার লোভ সামলাতে পারল না। তারপর প্রবল মুষলধারায় বর্ষণ শুরু হয়। মেঘের যেন নতুন শক্তি সঞ্চিত হয়। ‌ আস্তে আস্তে দিনের আলো মিলিয়ে চারিদিক অন্ধকার হয়ে যায় এই সময় প্রবল বৃষ্টির শব্দ এবং নদীর জলোচ্ছ্বাসের শব্দে নদীর চাঁদের সর্বাঙ্গ অবসন্ন হয়ে আসে । নদেরচাঁদের নদীর ভয়ংকর উন্মুক্তা দেখে ভয় করতে লাগলো এবং সেই নদীর এই তীব্র উন্মুক্ততাকেই নদীর বিদ্রোহ বলে মনে হয়।

নদেরচাঁদ নদীর এই বিদ্রোহের কারণ বুঝতে পারে। বর্ষণকষ্ট নদীর এই প্রবল জলোচ্ছ্বাস এবং জলস্রোত যেন মানুষের হাতে গড়া ইট, সিমেন্ট, লোহা লক্করে নির্মিত ব্রিজকে ভেঙে ফেলতে চায়।প্রবল জলোচ্ছ্বাসে নদী যেন সেই বাধা ঠেলে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। নদীর দুপাশে মানুষের তৈরি এই ব্রিজ যেন ভেঙে ফেলার উদ্দেশ্যে নদীর বিদ্রোহ।  “কিন্তু পারিবে কি?”- কারণ, যদি  নদী ভেঙে ফেলে, তাহলে মানুষ আবার তার ওপর ব্রিজ নির্মাণ করে তাকে বাধার চেষ্টা করবে।

৩। “ ত্রিশ বছর বয়সে নদীর জন্য নদেরচাঁদের এত বেশি মায়া একটু অস্বাভাবিক ” – মায়াকে ‘ অস্বাভাবিক ‘ বলা হয়েছে কেন ? এই অস্বাভাবিকত্বের পিছনে নদেরচাঁদ কী কৈফিয়ত পেশ করত ?

উঃ।মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত নদীর বিদ্রোহ শিরোনামাংকিত গল্পে নদেরচাঁদের নদীর প্রতি ভালোবাসাকে, নদীর প্রতি তার ব্যাকুলতাকে , নদীর প্রতি তার মায়াকে অস্বাভাবিক বলা হয়েছে।

নদেরচাঁদ কী কৈফিয়ত পেশ করত- নদেরচাঁদ পেশায় একজন স্টেশনমাস্টার। ত্রিশ বছর বয়সে নদীর প্রতি তার এমন ভালোবাসা- ছেলেমানুষী বলে মনে হয় । কারণ যে রাত দিন মেল ট্রেন, প্যাসেঞ্জার ট্রেন, মালগাড়ির- ছোটাছুটি নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব যার ওপর তার নদীর প্রতি এমন পাগলামো ছেলে মানুষীর মতোই আচরণ। অর্থাৎ তার মত একজন গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিযুক্ত ব্যক্তির নদীর প্রতি এমন আচরণ স্বাভাবিক নয়। নদেরচাঁদের নদীর প্রতি এমন উন্মাদনা, নদীর প্রতি এমন ভালোবাসা, মায়া- যে ছেলেমানুষী- তা নদের চাঁদ নিজেও জানে।  নিজের এমন নদীর প্রতি ভালোবাসা বা পাগলামোতেই আনন্দই উপভোগ করে। নিজের এমন অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে কোন চিন্তা ছিল না। কারণ “..নদীকে এভাবে ভালোবাসিবার একটা কৈফিয়ৎ নদেরচাঁদ দিতে পারে”

অর্থাৎ সে নিজে থেকেই কৈফিয়ৎ দিতে পারে।  নদীর ধারেই মানুষ হয়েছে। শৈশব কাল থেকেই নদীকেই ভালোবাসেয়েছে। দেশের নদীটি হয়তো তার এই স্টেশনের নদীর মতো এত বড় ছিল না। তার দেশের ক্ষীনস্রোতা নির্জীব নদীটি দুর্বল। তার কাছে মমতা পেয়েছিল। এজন্য অনাবৃষ্টির কালে তার ক্ষীন স্রোতধারা দেখে নদেরচাঁদ “প্রায় কাদিয়া ফেলিয়াছিল” স্টেশনে নদীর তীরে চলো নদীটি দেখে তার মনে আনন্দের ধারা বয়েছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে মৃত্যুর মুখে পতিত হতে হয় ।

Leave a Comment

Discover more from Qবাংলা

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading