> বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি- বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস Class11 Bengali » Qবাংলা

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি- বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস Class11 Bengali

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস- প্রিয় ছাত্র-ছাত্রী এই সিরিজে বাংলা পাস এবং অনার্স বিষয়ের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর খুব সুন্দর ভাবে সংক্ষিপ্ত আকারে উপস্থাপনা করা হয়েছে | বিশেষ করে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য মনসামঙ্গল দৌলত কাজী তুর্কি আক্রমণ এবং ভাষার অংশ থেকে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর সহজ ভাবে দেওয়া আছে | বাংলা class 11 আরও প্রশ্ন-উত্তর জানতে click here

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের সংক্ষিপ্ত পরিচয়

1) “শ্রীকৃষ্ণকীর্তন” কাব্যের “রাধাবিরহ” অংশকে প্রক্ষিপ্ত বলা যায় কিনা যুক্তিসহ সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উঃ একথা অনস্বীকার্য যে, মধ্যযুগের প্রায় প্রতিটি কাব্য কবিতায় কিছু না কিছু অংশ প্রক্ষিপ্ত আছে। কারণ সেই সব কাব্য কবিতার যথার্থ প্রামাণ্য পুঁথি পাওয়া যায়নি। এক্ষেত্রে বড় চন্ডীদাসের “শ্রীকৃষ্ণকীর্তন” কাব্যটিও ব্যতিক্রম নয়। এই কাব্যের শেষ খন্ড “রাধাবিরহ” অংশটিকে অনেকেই প্রক্ষিপ্ত বলেছেন। এই নিয়ে প্রথম সংশয় তোলেন যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি এবং বিমান বিহারী মজুমদার বিভিন্ন প্রমাণ দেখিয়ে শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের সর্বশেষ অংশ “রাধাবিরহে” প্রক্ষিপ্ত বলেছেন।

প্রক্ষিপ্ত বলা যায় কিনা যুক্তি- আমাদের মতে, রাধাবিরহ অংশ কাব্যের অন্য খন্ড থেকে পৃথক ভাবে অবস্থান করেনি। রাধা বিরহ কাব্যের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবেই জড়িত। অন্যান্য খন্ডের মত এ খন্ডেও নির্দিষ্ট স্থানে সংস্কৃত শ্লোকের ব্যবহার ঘটেছে। পদগুলির মাথায় রাগ, রাগির উল্লেখ আছে। বিভিন্ন খন্ডের ঘটনাসমূহ বিভিন্ন ঋতুতে ঘটলেও একটি পারম্পর্য রক্ষিত হয়েছে। কাহিনীর মধ্যে কোথাও কালের বিচ্ছিন্নতাবোধ নেই। যা থেকে একটি খণ্ডকে অন্য খণ্ড থেকে পৃথক করা যাবে। প্রথমে রাধা নিজের বয়স বলেছে ১১। আর রাধা বিরহে ১৫ কারণ বড়াই যুবতী রাধার বর্ণনা দিয়েছে এই বলে “লুনি সম দেহ তার রসের সাগরে / সংপুন্ন যৌবনে রতি ভুঞ্জ দামোদরে” অর্থাৎ রাধা এখন পূর্ণ যুবতী। বলা যায়  রাধাবিরহ সমেত, রাধার বয়স সীমা ধরা যাচ্ছে।

কবি ক্রমেই ভাবের গভীরতার দিকে এগিয়েছেন এবং রাধাবিরহে সেই গভীরতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং কবির প্রতিভাও পূর্ণ পরিণত বলে চিহ্নিত হয়েছে। সুতরাং কি কাহিনী নির্মাণ, কি আঙ্গিক নির্মাণ, চরিত্র সৃষ্টি, কোন দিক দিয়েই রাধাবিরহ অংশকে সমগ্র শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না।

2) বাংলার সমাজ ও সাহিত্যের তুর্কি আক্রমণের ফলাফল সংক্ষেপে আলোচনা কর।    অথবা-বাংলার সমাজ সংস্কৃতি ও সাহিত্যের তুর্কি আক্রমণের গুরুত্ব সংক্ষেপে বিচার করো। 
উঃ) বাংলার সমাজ ও সাহিত্যে তুর্কি আক্রমণ এবং তুর্কি শাসন নিঃসন্দেহে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ত্রয়োদশ শতকের শুরুতেই বাংলায় তুর্কি আক্রমণ ঘটে। তুর্কি আক্রমণের ফলে হিন্দুদের মন্দির, মঠ, বিহার ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং জোর করে অন্য ধর্মের মানুষদের মুসলমান ধর্মে দীক্ষিত করা হয়। এর ফলে বাংলার সমাজ জীবনে নেমে এসেছিল এক চরম অরাজকতার কাল। 

প্রথমত- উচ্চ ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির ধারক ও বাহকেরা নিজেদের আত্ম অহংকার ত্যাগ করে নিম্ন সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে এক ভূমিতে এসে দাঁড়ালো। ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির সঙ্গে অব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির মিলন ঘটলো। এই তুর্কি আক্রমণ থেকে বাংলার ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির কর্ণধাররা শিক্ষা নিলেন। এতদিন পর্যন্ত তারা উচ্চ কটিতে বিরাজ করেছিলেন। জনগণের সঙ্গে তাদের কোন যোগ ছিল না। 

দ্বিতীয়তঃ- হিন্দু সমাজ সংস্কৃতিক প্রতিরোধ সৃষ্টিতে গুরুত্ব দিল। সাংস্কৃতিক সমন্বয় গড়ে ওঠার ফলে, এবার দেখা দিল সংস্কৃতিক প্রতিরোধের প্রয়োজন। যে দরিদ্র জনসাধারণ এত কাল অভিজাত শ্রেণীর ঘৃণা ও অপমান সহ্য করে এসেছে তারা নব্য ইসলাম ধর্মের চেতনার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে দলে দলে স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় ধর্মান্তরিত হতে শুরু করলো। ফলে হিন্দু সমাজের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ল।

তৃতীয়তঃ- নতুন করে হিন্দু শাস্ত্র ও পুরান চর্চা শুরু হলো। উচ্চ সম্প্রদায়ের দেবদেবী শিব চন্ডীর পাশাপাশি নিম্ন সম্প্রদায়ের দেবদেবী মনসা, ধর্ম প্রভৃতি পূজিত হতে থাকলো।  সাধারণত অল্প শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত মানুষদের বোধগম্য করার জন্য রামায়ণ, মহাভারত, ভাগবত, পুরাণ ইত্যাদি অনুবাদ হতে শুরু করল।

চতুর্থ- পঞ্চদশ শতাব্দী থেকে বিভিন্ন মঙ্গল দেব দেবীর মহিমা বিষয়ক কাব্যগুলি এই মুসলিম আক্রমণের ফলেই অঙ্কুরিত হয়। সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে নিম্ন বর্ণের মানুষদের  পূজিত দেবদেবীর সঙ্গে উচ্চবর্ণের দেব দেবীর সমন্বয় ও সম্পর্ক গড়ে তুলতে তৎপর হলেন। এই ভাবেই মঙ্গলকাব্যের মনসা, চন্ডী, ধর্ম ঠাকুর প্রমুখ লৌকিক দেবতা উচ্চ হিন্দুস্তরের সম্মানের আসল লাভ করলেন।

পঞ্চম- বস্তুত বাংলা সাহিত্যের অনুবাদ কাব্য শাখা সুলতানদেরই প্রেরণাসঞ্জাত। মুসলিম বিজয়ের ফলে নানাভাবে সংস্কৃতির সমন্বয় ক্রমশ নিবিড় হয়েছে পঞ্চদশ শতাব্দীতে সুলতানগঞ্জ এদেশের ধর্ম সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার আগ্রহ থেকে রাজসভায় কবি পন্ডিতদের আহ্বান জানালেন। 

3) চন্ডীদাস সমস্যা কি? এই সমস্যা সমাধানের কি উপায় হয়েছে ? 
উঃ বাংলা সাহিত্যে একটি অন্যতম বিতর্কিত বিষয় হল চন্ডীদাস সমস্যা। ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে বড়ু চন্ডীদাস নামে এক মধ্যযুগীয় কবির “শ্রীকৃষ্ণকীর্তন” কাব্য প্রকাশিত হবার পর থেকে পন্ডিত মহলে বিতর্ক শুরু হয় যে, চন্ডীদাস আসলে কজন ব্যক্তি, কি তাদের পরিচয়, কখন তারা রচনা-কর্মে নিযুক্ত ছিলেন, তারা কোন সময়ের কবি- এইসব বিষয় নিয়ে যে বিতর্কের সূত্রপাত হয় তাকেই  বলা হয়ে থাকে চন্ডীদাস সমস্যা।

বাংলা সাহিত্যে এযাবত মোট চারজন চন্ডীদাসের নাম পাওয়া গেছে। এই একাধিক চন্ডীদাস কে নিয়ে বিতর্কের মীমাংসা আজও হয়নি। আর কোনদিন হবে বলে, এমন কথাও জোর দিয়ে বলা যায় না। তবে এইটুকু বলা যেতেই পারে পঞ্চদশ শতাব্দী থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত ৪০০ বছর সময়কালে চারজন চন্ডীদাসের আবির্ভাব হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। বড়ু চন্ডীদাস চতুর্দশ শতাব্দীর আখ্যান কাব্যকার। তার রুচি ও বিষয় নির্বাচন, ভাষা প্রয়োগ, ছন্দ নির্মিতি পদাবলীর চন্ডীদাসের থেকে এতটাই আলাদা যে, দুজনকে পৃথক ব্যক্তি মানতেই হয়।

অন্যদিকে মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেব কার পদ আস্বাদন করতেন সেই বিষয়েও বিতর্ক আছে। তবে অনেকেই মনে করেন তিনি পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রতিভাসম্পন্ন পদকর্তা চন্ডীদাসের পদ আস্বাদন করতেন। তার পদের মান অতি উৎকৃষ্ট। আবার বিংশ শতাব্দীতে মণীন্দ্রমোহন বসু আবিষ্কৃত পালা গানের কবি চন্ডীদাস কখনোই পঞ্চদশ শতাব্দীর পদকার চন্ডীদাস হতে পারেন না। সম্ভবত ইনি দিন চন্ডীদাস। চৈতন্য পরবর্তীকালে  আর এক চণ্ডীদাস হলেন সহজিয়া চন্ডীদাস। যার রামি রজকিনীর সঙ্গে প্রণয় কাহিনী অনেকেরই জানা। পদাবলী রচনা করেছেন ইনিও। এই চন্ডীদাস আর প্রাচীন চন্ডীদাস কে নিয়ে অনেকেরই বিভ্রান্ত হন।

অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় এঁকে সহজিয়া চন্ডীদাস বলেছেন অর্থাৎ মোট চারজন চন্ডীদাসের নাম পাওয়া যাচ্ছে। চন্ডীদাসের নামে বিভিন্ন পদ আবিষ্কৃত হওয়ার ফলেই বাংলা সাহিত্যে এই সমস্যার উদ্ভূত হয়েছে। যার সমাধান আজও হয়নি, যতদিন না উপযুক্ত প্রমাণ পন্ডিত মহলের হাতে আসবে ততদিন এই  এই সমস্যা চলতেই থাকবে।

4) কৃত্তিবাসী রামায়ণের জনপ্রিয়তার কারণগুলি কি কি?
উঃ বাংলা ভাষায় সর্বশ্রেষ্ঠ রামায়ণ হল কৃত্তিবাসের “শ্রীরাম পাঁচালী”। বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রচারিত রামায়ণ হল কৃত্তিবাসী রামায়ণ। মূলত কৃত্তিবাস বাল্মিকী রামায়ণকে অনুসরণ করে “শ্রীরাম পাঁচালী’ লিখলেও তা হয়ে উঠেছে একেবারে বাঙালির নিজস্ব সম্পদ। কৃত্তিবাসের পরে অনেকেই বাংলায় রামায়ণ রচনা করেছেন কিন্তু জনপ্রিয়তায় তার ধারে কাছে কেউই আসতে পারেনি। কৃত্তিবাসের রামায়ণের জনপ্রিয়তার পিছনে বহু কারণ বিদ্যমান-

১) কৃত্তিবাস বাঙালির জনসাধারণের উপযোগী করে পাঁচালী ঢঙ্গে মূল রামায়ণকে পরিবেশন করেছেন। তাই এতে আর্য রামায়ণের সুগভীর ভাষাবৈদগ্ধ, চিত্রকল্পের বৈচিত্র, রাম- লক্ষণ চরিত্র ততটা শিল্পসমুৎকর্ষ লাভ করেনি। মূলত রামায়ণের বীর রাম চরিত্র কৃত্তিবাসী রামায়ণে, ভক্তের ভগবানের পরিণত হয়েছেন। ক্ষত্রিয় বধু সীতা সর্বংসহা বাঙালি কুলবধূ, হনুমানের রঙ্গরস প্রভৃতিও বাঙালির সংস্কৃতির পরিচয়ক। এক কথায় কৃত্তিবাস মূল রামায়ণকে অনেকটা বাঙালির মনঃপ্রকৃতির অনুকূলে সাজিয়েছেন- তাই তার গ্রন্থ বাঙালির জীবনে এত গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে।

২) বাঙালি জীবনের চিরন্তন যে প্রবৃত্তি, পিতা-মাতাকে ভক্তি, স্বামী প্রেম, স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা, ভাতৃ প্রেম, কৃত্তিবাসের রামায়ণে স্বাভাবিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে। রামের সমস্ত রকম দুঃখবরণ, সংসারের সুখ সমৃদ্ধির জন্য সীতার আত্মত্যাগ, ভাতৃ প্রেমের জন্য লক্ষণ হাসিমুখের সব কিছু ত্যাগ করেছেন। এঁরা যেমন একদিকে বাঙালির ঐতিহ্য অন্যদিকে তেমন বাঙালির প্রেরণা।

৩) বাঙালির চালচিত্র, জীবন বোধ, মূল্যবোধ কৃত্তিবাস তার রামায়ণের স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রকাশ করেছেন। বাঙ্গালীর পারিবারিক জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি কান্না- কৃত্তিবাস আন্তরিকতার সঙ্গে পরিবেশন করেছেন।

৪) ভক্তি রসের স্বতঃস্ফূর্ত প্রবাহ কৃত্তিবাসের কাব্যে দেখা যায়। কৃত্তিবাসের রাম নবরূপী নারায়ণ। রাবণও যুদ্ধক্ষেত্রে রামের মধ্যে নারায়ণকে দেখেছেন। মৃত্যুর পর স্বর্গ লাভের আশায় রাবণ বলেছেন-
“অনাথের নাথ তুমি পতিত পাবন /  দয়া করে মস্তকেতে দেহ শ্রীচরণ”
এই ভক্তি একান্ত ভাবেই, বাঙালি ভক্তি। যেন একেবারে বাঙালি চরিত্রই প্রতিফলন- যার জন্য বাঙালি হৃদয় স্পর্শ করে যায়।

5) কাশীরাম দাসের কবি প্রতিভার পরিচয় দাও  / অথবা- কাশীরাম দাস কোন সময়ের কবি? তার কাব্যের নাম কি? তার কবি প্রতিভার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। অথবা- কাশীরাম দাসের কবি কৃতিত্ব সংক্ষেপে আলোচনা কর
উঃ কবি রবীন্দ্রনাথ বলেছেন “শতাব্দীর পর শতাব্দি যাইতেছে কিন্তু রামায়ণ মহাভারতের স্রোত ভারতবর্ষে আর লেসমাত্র শুষ্ক হইতেছে না”-এ কথা সত্য যে, কৃত্তিবাসী রামায়ণের মতো বাংলাদেশে কাশীদাসী মহাভারতেও  জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। বিশাল আকার মহাভারত গ্রন্থকে কবি কাশীরাম দাস বাঙালির উপযোগী করে নতুন রূপ দিয়েছিলেন। 

কবি কৃতিত্ব- সংস্কৃত মহাভারতের পাণ্ডিত্যপূর্ণ জ্ঞানগর্ভ রচনাকে কাশীরাম দাস সযত্নে বর্জন করেছেন। দীর্ঘ বর্ণনার পরিবর্তে আকর্ষণীয় গল্পগুলিকে বাঙালি জীবনের উপযোগী করে তিনি পরিবেশন করেছেন। সংস্কৃত মহাভারতের প্রথম দুটি  উপপর্বে মূল মহাভারতের আখ্যানের আভাস মেলে। কাশীরাম দাস এই দুটি বর্জন করেছেন। কখনোই তিনি আদি বংশের ধারাবাহিক বিবরণ দিয়ে পাঠকের মনে বিরক্তি সঞ্চয় করতে চাননি, পরিবর্তে কাশীরাম সমুদ্র মন্থন, পারিজাত হরণ, অর্জুন-সুভদ্রার আখ্যান প্রভৃতি চিত্রকর্ষণ যুক্ত করেছেন।  কাশীরাম দাস চরিত্র চিত্রনে যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। সংস্কৃত মহাভারত কে অবলম্বন করে বাঙালির জীবন অনুভূতি ও ধ্যান ধারণা অনুযায়ী চরিত্রকে গড়ে নিয়েছেন। 

বাঙালির জীবনচর্চা, ধ্যান ধারণা, বাঙালির চরিত্র বৈশিষ্ট্য, প্রতিফলিত হয়েছে কাশীরাম দাসের মহাভারতে। মূল মহাভারতের ক্ষাত্র তেজ এখানকার চরিত্রদের মধ্যে পরিলক্ষিত হয় না। ক্রোধে অভিমানে আনন্দ দুঃখে তারা বাঙালির সমধর্মী হয়ে উঠেছেন। সভা পর্বে দ্রৌপদী ও হিড়িম্বার ঝগড়া সমকালের বাঙালির দুই সতীনের ঝগড়াকে মনে করিয়ে দেয়। কাশী রামের মহাভারতে ভক্তি রস প্রাধান্য লাভ করেছে। বাঙালি জীবনের সর্বকালীন আদর্শকে প্রকাশ করতে কাশীরাম অধিক যত্নশীল হয়েছেন। সংস্কৃত মহাভারতের জ্ঞানগর্ভ উপদেশাত্ম আলোচনাকে কাশীরাম যথা সম্ভব সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ করেছেন।

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস দ্বিতীয় পর্ব  

(মনসামঙ্গল-নারায়ন দেব, বিজয় গুপ্ত চন্ডীমঙ্গল-কবিকঙ্কন মুকুন্দ চক্রবর্তী, ধর্মমঙ্গল-ঘনরাম চক্রবর্তী এবং মুসলিম সাহিত্য- দৌলত কাজী, সৈয়দ আলাওল এবং শাহ মুহাম্মদ সগির)

১) মনসামঙ্গল কাব্যের আদি কবির নাম কি? তিনি কোন শতাব্দীর কবি তার কাব্যের নাম কি?
উঃ মনসামঙ্গল কাব্য ধরার আদি কবি হলেন- কানা হরিদত্ত তিনি চতুর্দশ শতাব্দীর শেষ দিকের কবি।
তার কাব্যের নাম “কালিকাপুরান”

১) নারায়ন দেব কোন সময়ের কবি? তার কাব্যের নাম কি? তিনি কোন কাব্য ধরার কবি?
উঃ মনসামঙ্গল কাব্যের অন্যতম কবি নারায়ণ দেব পঞ্চদশ শতাব্দীর কবি। তার কাব্যের নাম “পদ্মাপুরাণ”
 তিনি মনসামঙ্গল কাব্য ধরার সুপরিচিত কবি।

৩) “জালু মালু” কাহিনী কোন কাব্যে পাওয়া যায়? সেই কাব্যধারার একজন কবির নাম ও কাব্যের নাম লেখ।
উঃ “জালু মালু” কাহিনী মনসামঙ্গল কাব্যে পাওয়া যায়। মনসামঙ্গল কাব্য ধারার একজন সুপরিচিত কবি হলেন বিজয় গুপ্ত তার কাব্যের নাম “পদ্মা পুরাণ”।

৪) “ঋতু শূন্য বেদ শশী পরিমিত শক / সুলতান হোসেন সাহ নৃপতি তিলক”
– এই কালগাপক শ্লোকটি কার কাব্যের রচনা? তার কাব্যটির নাম কি? উক্ত সালটি নির্ণয় কর?
উঃ এই কাল ব্যাপক শ্লোকটি মনসামঙ্গল কাব্য ধারার কবি বিজয় গুপ্তের রচনা।
তার কাব্যের নাম “পদ্মাপুরাণ”  | উক্ত শ্লোক থেকে যে সালটি পাওয়া যায় তা হল ১৪৮৪।
(ঋতু =৬ শূন্য= ০ বেদ=৪ শশী=১  =৬০৪১শক
অঙ্কস্য  বামাগতি হলে হবে- ১৪০৬ শক  | অতএব  সালটি হলো- ১৪০৬+৭৮= ১৪৮৪)  

৫) বিজয় গুপ্ত কোথাকার অধিবাসী ছিলেন তিনি কোন সময়ের কবি তার কাব্যের নাম কি
উঃ বিজয় গুপ্ত বরিশাল জেলার গৈলা তথা ফুল্লশ্রী গ্রামের অধিবাসী ছিলেন।
তিনি পঞ্চদশ শতাব্দীর কবি
তার কাব্যের নাম “পদ্মাপুরাণ”

৬) মনসামঙ্গল কাব্যের কোন কবি পৌরাণিক কাহিনী উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন? তার কাব্যের নাম কি? কাব্যটি কটি খন্ডে বিভক্ত?
উঃ পঞ্চদশ শতাব্দীর সুপরিচিত মনসামঙ্গল কাব্য ধারার কবি নারায়ন দেব তার কাব্য রচনা ক্ষেত্রে পৌরাণিক কাহিনীর উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
তার কাব্যের নাম “পদ্মাপুরাণ”
কাব্যটি তিনটি খন্ডে বিভক্ত।

৭) বিজয় গুপ্তের কাব্য কোন অঞ্চলে অধিক প্রচারিত হয়েছিল? তার পিতামাতার নাম কি? তার কাব্যের ব্যবহৃত  কালজ্ঞাপক শ্লোকটি উল্লেখ কর।
উঃ মনসামঙ্গল কাব্য ধারার সুপরিচিত কবি বিজয় গুপ্তের কাব্য পূর্ববঙ্গে অধিক প্রচারিত হয়েছিল।
তার পিতার নাম সনাতন এবং মাতার নাম রুক্মিণী
তার কাল জ্ঞাপক শ্লোকটি হল-“ ঋতু শূন্য বেদ শশী পরিমিত শক/সুলতান হোসেন সাহ নৃপতি তিলক।“ 

৮) পঞ্চদশ শতাব্দীর মনসামঙ্গল কাব্য ধারার দুজন কবির নাম ও তাদের কাব্যের নাম উল্লেখ কর।
উঃ পঞ্চদশ শতাব্দীর মনসামঙ্গল কাব্য ধারার দুজন কবির নাম নারায়ন দেব কাব্য নাম “পদ্মা পুরাণ” এবং বিজয় গুপ্ত কাব্য নাম “পদ্মা পুরাণ”

৯) মঙ্গলকাব্য কাকে বলে? কোন সামাজিক প্রেক্ষাপটে মঙ্গল কাব্য রচিত হয়?
উঃ মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে, সামাজিক মানুষের কল্যাণের উদ্দেশ্যে কোন দেবতা বা দেবীর পূজা ও মহাত্ম্য প্রচারের জন্য দেব দেবী নির্ভর যে আখ্যান কাব্য রচিত হয়েছিল তাকেই মঙ্গলকাব্য বলা হয়।
মুসলমান শাসনাধীন ধর্ম ও অর্থনৈতিক দিক থেকে অবক্ষয়িত হিন্দু সমাজে অনার্য দেবতাদের পূজা ও মঙ্গল কামনাই মঙ্গলকাব্যের রচনার সূত্রপাত হয়।

১০) মঙ্গলকাব্যের প্রধান কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।
উঃ মঙ্গলকাব্যের প্রধান কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হলো-

  • ১) নর খন্ড ও দেব খন্ডে কাহিনী ভাগ করা থাকে।
  • ২)  একজন দেবতা বা দেবীকে সাপগ্রস্থ হয়ে মর্তে জন্ম নিতে হয়। এই সাপগ্রস্থ ব্যক্তি মর্তে বিশেষ দেবতার পূজা প্রচার করে স্বর্গে ফিরে যাবেন।
  • ৩) অভিশপ্ত দেবতারাই কাব্যের নায়ক নায়িকা হন
  • ৪) কাব্যগুলিতে সমকালীন সমাজ ও রাজনীতির চিত্র পুরস্কৃত হয়।

১১) পঞ্চদশ শতাব্দীর জনপ্রিয় মঙ্গলকাব্য কি? এই কাব্য ধারার দুজন কবি ও তাদের কাব্যের নাম উল্লেখ কর।
উঃ পঞ্চদশ শতাব্দীর জনপ্রিয় মঙ্গলকাব্য হল মনসামঙ্গল কাব্য। এই কাব্যধারার অন্যতম শ্রেষ্ঠ দুজন কবি হলেন নারায়ন দেব। তার কাব্যের নাম “পদ্মাপুরাণ” এবং বিজয়গুপ্ত তার কাব্যের নাম “পদ্মাপুরান”

১২) মঙ্গলকাব্য গুলির গঠন সংক্ষেপে লেখ
উঃ  পঞ্চদশ শতাব্দীর মঙ্গল কাব্যগুলি গঠন নিম্নরূপ-
মঙ্গলকাব্যগুলির চারটি খন্ডে বিভক্ত। যেমন

  • ১)বন্দনা- এখানে গণেশ ইত্যাদি পঞ্চ দেবতার বন্দনা করা হয়
  • ২) গ্রন্থ উৎপত্তির কারণ এবং আত্মপরিচয়- এখানে গ্রন্থ উৎপত্তির কারণ এবং কবির আত্মপরিচয় থাকে
  • ৩) দেবখণ্ড – এখানে লৌকিক ও পৌরাণিক দেবদেবীর সমন্বয় সাধন হয়েছে
  • ৪) নর খন্ড- এই অংশে মঙ্গল কাব্যের প্রকৃত কাহিনী শুরু হয়েছে।

চন্ডীমঙ্গল কাব্য মুকুন্দরাম চক্রবর্তী

১) চন্ডীমঙ্গলের আদি কবি কে? তিনি কোন অঞ্চলের মানুষ?
উঃ চন্ডীমঙ্গলের আদি কবি বলা হয় মানিক দত্তকে।
তিনি পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলার ফুলবাড়ি গ্রামের মানুষ ছিলেন বলে জানা যায়।

২) চন্ডীমঙ্গল কাব্যের দুজন সার্থক কবি ও তাদের কাব্যের নাম লেখ।
উঃ চন্ডীমঙ্গল কাব্য ধারার দুজন সার্থক কবি হলেন দ্বিজমাদব তার কাব্যের নাম- “সারদামঙ্গল” এবং মুকুন্দরাম চক্রবর্তী তার কাব্যের নাম- “অভয়ামঙ্গল”

৩) চন্ডীমঙ্গল কাব্য ধারার শ্রেষ্ঠ কবি কে? তিনি কোন সময়ের কবি? তার রচিত কাব্যের নাম কি?
উঃ চন্ডীমঙ্গল কাব্য ধারার শ্রেষ্ঠ কবি হলেন কবিকঙ্কন মুকুন্দ চক্রবর্তী।
তিনি আনুমানিক ষোড়শ শতাব্দীর শেষ ভাগে কাব্য রচনা করেন।
তার রচিত কাব্যের নাম “অভয়ামঙ্গল” বা “অম্বিকামঙ্গল”

৪) মুকুন্দ চক্রবর্তী কোথাকার অধিবাসী ছিলেন তিনি কোন সময়ের কবি?
উঃ মুকুন্দ চক্রবর্তী বর্ধমানের দামিন্যা বা দামুন্যা গ্রামের অধিবাসী ছিলেন।
তিনি আনুমানিক ষোড়শ শতাব্দীর কবি ছিলেন।

৫) মুকুন্দ চক্রবর্তী উপাধি কি ছিল? কে এই উপাধি প্রদান করেন?
উঃ মধ্যযুগের চন্ডীমঙ্গল কাব্যধারার শ্রেষ্ঠ কবি মুকুন্দ চক্রবর্তীর উপাধি ছিল “কবিকঙ্কন”
এই উপাধি প্রদান করেন তার আশ্রয়দাতা রঘুনাথ রায়।

৬)  “শাকে রস রস বেদ শশাঙ্ক গনিতা
কত দিনে দিলা গীত হরের বনিতা” -এই কালজ্ঞাপক শ্লোকটি কোন কবির রচনা? তার কাব্যের নাম কি?
উঃ উক্ত কাল জ্ঞাপক শ্লোকটি মধ্যযুগের চন্ডীমঙ্গল কাব্য ধারার সুপরিচিত কবি কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর
তার কাব্যের নাম- “অম্বিকামঙ্গল”

৭) মধ্যযুগের কোন কবির কাব্যে প্রথম উপন্যাসের লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়েছে? কাব্যটির নাম কি? তিনি কোন শতাব্দীর কবি?
উঃ মধ্যযুগের চন্ডীমঙ্গল কাব্য ধারার শ্রেষ্ঠ কবি কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর কাব্যে প্রথম উপন্যাসের লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়েছে।
তার রচিত কাব্যটির নাম- “অম্বিকামঙ্গল”
তিনি ষোড়শ শতাব্দীর কবি।

৮) শ্রীমন্ত এবং দুর্বলার চরিত্রটি কোন কাব্যে পাওয়া যায়? এই কাব্য ধারার একজন কবির নাম এবং কাব্যের নাম কি?
উঃ শ্রীমন্ত এবং দুর্বলা চরিত্রটি মধ্যযুগের চন্ডীমঙ্গল কাব্য ধারার কাব্যে পাওয়া যায়।
 এই কাব্য ধরার একজন কবি হলেন কবিকঙ্কন মুকুন্দ চক্রবর্তী। তার কাব্যের নাম “অভয়ামঙ্গল”

৯) মুকুন্দ চক্রবর্তী কার আশ্রয় লাভ করেন? তার কাল জ্ঞাপক শ্লোকটি উল্লেখ কর।  
উঃ মুকুন্দ চক্রবর্তী মেদিনীপুরের আরড়া গ্রামে বাঁকুড়া রায়ের আশ্রয় লাভ করেন এবং তার পুত্র রঘুনাথ রায়ের গৃহে শিক্ষক নিযুক্ত হন।
 তার কাল জ্ঞাপক শ্লোকটি হলো- “শাকে রস রস বেদ শশাঙ্ক গনিতা/কত দিনে দিলা গীত হরের বনিতা”

ধর্মমঙ্গল কাব্যের শ্রেষ্ঠ কবি কে

১) ধর্ম মঙ্গল কাব্যের আদি কবির নাম কি? তার কাব্য কি নামে পরিচিত?
উঃ ধর্ম মঙ্গল কাব্য ধারার আদি কবি বলে পরিচিত ময়ূরভট্ট
তার কাব্যের নাম “শ্রীধর্মপুরাণ” বা “হাকন্দপুরাণ”

২) সপ্তদশ শতকের ধর্মমঙ্গল কাব্য ধারার একজন কবির নাম লেখ। তার কাব্যের নাম কি?
উঃ সপ্তদশ শতকের ধর্মমঙ্গল কাব্যধারার একজন অন্যতম কবি হলেন রূপ রাম চক্রবর্তী তার কাব্যের নাম- “অনাদ্যমঙ্গল”

৩) রূপরাম চক্রবর্তী কোন শতকের কবি? তিনি কোন জেলার অধিবাসী ছিলেন? তার পিতার নাম কি?
উঃ রূপরাম চক্রবর্তী আনুমানিক সপ্তদশ শতকের কবি ছিলেন
তিনি বর্ধমান জেলার কাইতি শ্রীরামপুরে অধিবাসী ছিলেন।
তার পিতার নাম শ্রীরাম চক্রবর্তী

৪) “তিন বান চারি যুগে বেদে যত রয়/শাকে সনে জড় হইলে কত শক হয়”- এই কাল জ্ঞাপক শ্লোকটি কোন কবির রচনা? তার কাব্যের নাম লেখ। তিনি কোন সময়ের কবি?
উঃ উক্ত কাল জ্ঞাপক শ্লোকটি ধর্মমঙ্গল কাব্য ধারার কবি রূপরম চক্রবর্তীর লেখা
 তার কাব্যের নাম “অনাদ্য মঙ্গল”
তিনি সপ্তদশ শতকের কবি ছিলেন।

৫) ঘনরাম চক্রবর্তীর উপাধি কি ছিল? কে এই উপাধি প্রদান করেন?
উঃ ঘনরাম চক্রবর্তীর উপাধি ছিল কবিরত্ন কবির শিক্ষাগুরু তাকে এই উপাধি দিয়েছিলেন

৬) ধর্মমঙ্গল কাব্য ধরার শ্রেষ্ঠ কবির নাম কি? তার কাব্যের দুটি নাম উল্লেখ কর।
উঃ ধর্মমঙ্গল কাব্য ধরার শ্রেষ্ঠ কবি হলেন ঘনরাম চক্রবর্তী।
তার কাব্যের দুটি নাম হলো- “ধর্মসঙ্গীত”, “ধর্মমঙ্গল”

৭) ঘনরাম চক্রবর্তী কার নির্দেশে কাব্য রচনা করেন! তিনি কোন শতাব্দীর কবি ?তার কাব্যের নাম কি?
উঃ ঘনরাম চক্রবর্তী তার পৃষ্ঠপোষক কীর্তি চন্দ্রের আদেশে কাব্য রচনা করেন।
তার কাব্যের নাম “ধর্মসঙ্গীত”
তিনি অষ্টাদশ শতকের শ্রেষ্ঠ ধর্ম মঙ্গল কবি।

৮) “শক লিখে রাম গুন রস সুধাকর”- এই কাল জ্ঞাপক শ্লোকটি, কার রচনা? তার কাব্যের নাম কি? কাব্যটি কটি পালায় বিভক্ত?
উঃ উক্ত কালজ্ঞাপক শ্লোকটি ধর্মমঙ্গলের শ্রেষ্ঠ কবি ঘনরাম চক্রবর্তীর রচনা।
তার কাব্যের নাম ধর্মসঙ্গীত
তার কাব্যটি 24টি পালায় বিভক্ত।

মুসলিম সাহিত্য  ( দৌলত কাজী এবং সৈয়দ আলাওল) 

১) দৌলত কাজী কোন রাজসভার কবি ছিলেন? তার কাব্যের নাম কি?
উঃ দৌলত কাজী আরাকান রাজসভার কবি ছিলেন
তার কাব্যের নাম “লোরচন্দ্রানী” বা “সতীময়না”

২) দৌলত কাজী কার পৃষ্ঠপোষকতায় কাব্য রচনা করেন? তিনি কোন অঞ্চলের অধিবাসী ছিলেন?
উঃ দৌলত কাজী আরাকানের সমরসচিব আসরফ খানের উপদেশে ও পৃষ্ঠপোষকতায় ১৬২১ থেকে ১৬৩৮ সালের কোন এক সময়ে তার কাব্য রচনা করেন।
তিনি চট্টগ্রামের রাউজান থানার অন্তর্গত সুলতানপুর গ্রামের অধিবাসী।

৩) দৌলত  কাজীর “সতীময়না” কাব্যটির উৎস কি? তিনি কার রাজসভায় স্থান লাভ করেন?
উঃ দৌলত কাজীর “সতীময়না” কাব্যটি মিয়া সাধন রচিত “মৈনা-কো-সত” নামক কাব্যর থেকে কাহিনী সংগ্রহ করেছেন।
তিনি আরাকান রাজ থিরি- থু- ধম্মার রাজসভায় স্থান লাভ করেন।

৪) দৌলত কাজীর লোরচন্দ্রানী কাব্যের কটি খন্ড? গুলির নাম কি কি?
উঃ “লোরচন্দ্রানি” কাব্যের দুটি খন্ড‌।
প্রথম খন্ডের নাম- লোরচন্দ্রানী
দ্বিতীয় খন্ডের নাম- “সতীময়না”

৫) “লোরচন্দ্রানি” কাব্যের শেষ অংশ কে রচনা করেন? কার নির্দেশে তিনি এই রচনা করেছিলেন? তার একটি কাব্যের নাম লেখ।
উঃ লোরচন্দ্রানি কাব্যের শেষ অংশ রচনা করেন মধ্যযুগের মুসলমান সাহিত্যের আরেক কবি সৈয়দ আলাওল
তিনি আরাকান রাজের মহামাত্য সোলেমানের নির্দেশে “সতীময়নার” শেষ অংশ সমাপ্ত করেন

৬) সৈয়দ আলাওলের “পদ্মাবতী” কাব্যটির উৎস কি? কার নির্দেশে তিনি এই কাব্যটি রচনা করেছেন?
উঃ সৈয়দ আলাওলের রচিত “পদ্মাবতী” কাব্যটি হিন্দি কবি মুহাম্মদ জয়সির রচিত “পদুমাবৎ” কাব্যের অনুবাদ করেছেন।
তিনি আরাকানের প্রধানমন্ত্রী মাগন ঠাকুরের নির্দেশে কাব্যটি অনুবাদ করেন।

৭) সৈয়দ আলাওলের রচিত জনপ্রিয় কাব্যটির নাম কি? তিনি কোথাকার অধিবাসী ছিলেন?
উঃ সৈয়দ আলাওলের রচিত জনপ্রিয় কাব্যটির নাম “পদ্মাবতী”
তিনি চট্টগ্রাম  মতান্তরে ফরিদপুরে অধিবাসী ছিলেন।

৮) সৈয়দ সৈয়দ আলাওল কোন রাজসভার কবি ছিলেন? তার রচিত দুটি কাব্যের নাম লেখ।
উঃ সৈয়দ আলাওল আরাকান রাজসভার কবি ছিলেন।
তার রচিত দুটি কাব্যের নাম “পদ্মাবতী” এবং “সায়ফুল মূলক বদিউজ্জামান”

৯) রচনা কালসহ সৈয়দ আলাওলের গ্রন্থ গুলির নাম। লেখ।
উঃ আলাওলের গ্রন্থগুলি হল –

  • ১)পদ্মাবতী – ১৬৪৬
  • ২) লোরচন্দ্রানীর শেষ অংশ- ১৬৫৯
  • ৩) সয়ফুল মূলক বদিউজ্জামান -১৬৫৮-৭০
  • ৪) হপ্তপয়কর ১৬৬০
  • ৫) সেকেন্ডের নামা -১৬৭২
  • ৬) তোহফা-১৬৬৩-৬৯

১০) মধ্যযুগের প্রাচীনতম মুসলমান কবির নাম কি? তার কাব্যের নাম কি?
উঃ মধ্যযুগের বাঙালি মুসলমান কবিগনের মধ্যে প্রাচীনতম হলেন সাহ মোহাম্মদ সগির
তার কাব্যের নাম “ইউসুফ জোলেখা”

সংক্ষিপ্ত রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর (প্রতিটি প্রশ্নের মান-৫)  

১) মধ্যযুগে মঙ্গলকাব্য ধারা উৎপত্তির কারণগুলি সংক্ষেপে লেখ/অথবা- মঙ্গলকাব্য সৃষ্টির সামাজিক প্রেক্ষাপটটি সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উঃ মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো মঙ্গলকাব্য। পঞ্চদশ শতাব্দী থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত বিভিন্ন গ্রাম্য দেব-দেবীর পূজা-প্রচার সম্বন্ধীয় যে একপ্রকার একখান কাব্য রচিত হয়েছিল তা মঙ্গলকাব্য নামে পরিচিতি। মধ্যযুগের মঙ্গলকাব্য উৎপত্তির একটা বড় কারণ হলো তুর্কি আক্রমণ।

সামাজিক প্রেক্ষাপট – বিদেশি মুসলমানদের হাত থেকে বাঁচার জন্য বাংলায় আর্য ও অনার্যের মিশ্রণ ঘটে। উচ্চবর্ণের সমাজ এতদিন নিম্নতর জনগোষ্ঠীর লোকিক সংস্কৃতিকে গুরুত্ব না দিলেও রাজনৈতিক দূর্বিপাকে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য উচ্চবর্ণের সমাজ নিম্ন বর্ণের সমাজকে কাছে টেনে নিল। উচ্চবর্ণের হিন্দু সমাজের সঙ্গে নিম্ন বর্ণের লুকো জীবনের মিলন ইতিহাস ব্যক্ত আছে এই মঙ্গলকাব্য। ভয়ে ভীত বাঙালির আত্মশক্তিতে  উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠার ইতিহাস হল মঙ্গলকাব্য।

লৌকিক দেবতাদের বাঙালি সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভের কাহিনী হল মঙ্গলকাব্য। দেবতারা পূজা আদায়ের জন্য সব রকম ছলা কলার আশ্রয় নিয়েছেন। নানান সংঘর্ষের জড়িয়ে পড়েছেন চন্ডী, মনসা। মঙ্গলকাব্য সৃষ্টির আদি যুগে অনার্য লৌকিক দেব দেবী শুধু কাব্যের বিষয় হয়েছে। কিন্তু সমাজের উচ্চতর সম্প্রদায়ের সঙ্গে নিম্নত সম্প্রদায়ের সমন্বয় সাধন হলে লৌকিক দেবদেবীর সঙ্গে পৌরাণিক দেবদেবী ও মঙ্গলকাব্যে ভিড় করতে থাকে। অনার্য দেব-দেবীরা ক্রমশ আর্য সংস্কৃতির মধ্যে ঢুকে পড়ে।

২) মনসামঙ্গল কাব্য ধারার সর্বাধিক জনপ্রিয় কবি কে? তার কাব্যের নাম কি? তার কবি প্রতিভার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উঃ বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের একটি অন্যতম  বিষয় মঙ্গল কাব্য। মঙ্গলকাব্যের একটি অন্যতম শাখা হলো মনসামঙ্গল কাব্য। মধ্যযুগে মনসামঙ্গল কাব্য ধারার সর্বাধিক জনপ্রিয় কবি বলে পরিচিত লাভ করেছেন বিজয় গুপ্ত। তার রচিত কাব্যটির নাম “পদ্মাপুরাণ”। তিনি আনুমানিক পঞ্চদশ শতাব্দীর কবি বলে জানা যায়। তিনি বরিশাল জেলার গৈলা তথা ফুল্লশ্রী গ্রামের অধিবাসী ছিলেন।

তার কবি প্রতিভা- বিজয় গুপ্ত তার কাব্যের স্বপ্নাধ্যায় পালায় গ্রন্থ উৎপত্তির কারণ স্বরূপ দেবীর মনসার স্বপ্নাদেশের কথা বলেছেন-“ মোর বরে পুত্র তুমি হও সাবহিত/ ননা ছন্দে নানার রাগে রচ মোর গীত”
এ থেকে বোঝা যায় যে, কাব্যের আঙ্গিক সৌন্দর্য ও মাধুর্য সম্পর্কে বিজয় গুপ্ত খুবই সচেতন ছিলেন। সংস্কৃত সাহিত্যেও তিনি সুপন্ডিত ছিলেন। তার কাব্য পাঠ করলে বোঝা যায়, গভীর ভাবানুভূতির চেয়ে বিদগ্ধ  পাণ্ডিতের উপরেই তার নির্ভর ছিল বেশি। বাক চাতুর্যের দ্বারা চটকদার রসিকতা সৃষ্টিতে তার নৈপূণ্য ছিল। কিন্তু বিশুদ্ধ কাব্য লক্ষণ তার কাব্যে বেশি নেই। তবে মনসার ঈর্ষা কুটিল চরিত্রটি ভালই ফুটিয়ে তুলেছেন। দেবখন্ডে শিবের হাস্যকর  ভাঁড়ামি ধুলিধূসর মঙ্গলকাব্যের আদর্শকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। 

চরিত্রের প্রচন্ড পৌরুষের সঙ্গে স্থূলতার সমাবেশ, চরিত্রটির গৌরব কিছুটা ক্ষুন্ন হয়েছে বটে। তবে তার বাস্তবতা যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়েছে। বেহুলার চরিত্র অঙ্কনে কবি যেন সমস্ত মাধুর্য ও পবিত্রতা ঢেলে দিয়েছেন। স্থূল রঙ্গ রস সৃষ্টি করতে গিয়ে কোথাও কোথাও শ্লীলতার গণ্ডি মেনে চলতে পারেননি।কিন্তু জনপ্রিয়তা ও প্রথম মুদ্রণ সৌভাগ্য লাভ করায় বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বিজয়গুপ্তের পদ্মা পূরণের যথেষ্ট গুরুত্ব স্বীকার করতেই হয়।

ভাষা ও বাংলা ভাষার উৎপত্তি যুগবিভাগ

১) ভাষার সংজ্ঞা দাও। ভাষার দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর। 
উঃ মনের ভাব প্রকাশের জন্য, বাক যন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত ধ্বনির দ্বারা নিষ্পন্ন কোন বিশেষ জনসমাজের ব্যবহৃত, স্বতন্ত্রভাবে অবস্থিত, তথা বাক্যে প্রযুক্ত শব্দসমষ্টিকে ভাষা বলে।
ভাষার দুটি বৈশিষ্ট্য হলো-

  • ১), ভাষা হবে মানুষের উচ্চারিত- মানুষ তা তার যন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারণ করে
  • ২) মানুষের উচ্চারিত ধ্বনি গুলি হবে অবশ্যই অর্থ যুক্ত। প্রতিটি ধ্বনিগুচ্ছ বা শব্দের এক একটি সুনির্দিষ্ট অর্থ থাকবেই।

২) প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষার সময়কাল নির্দেশ করে, দুটি ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।
উঃ প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষার সময়কাল আনুমানিক ১৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ – ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ।
প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষার দুটি ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য হলো,

  • ১)  প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষায় ঋ, এ,ঐ,ও,ঔ  প্রভৃতি স্বরধ্বনিগুলির বর্তমান ছিল।
  • ২) প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষায় শব্দের আদি স্থান ছাড়া অন্যত্র বিবিধ যুক্ত ব্যঞ্জন এর প্রচুর ব্যবহার ছিল যেমন- ক্ত,ক্ব,ক্ষ,ক্ষ্ণ,ঞ্জ
  • ২) প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষায়, শ,ষ,স, প্রভৃতি ব্যঞ্জনধ্বনিগুলির বর্তমান ছিল।

৩) প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষার সময়কাল উল্লেখ করে একটি নিদর্শন এর নাম লেখ।
উঃ প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষার সময়কাল হল আনুমানিক ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ – ৬০০ খ্রিস্টপূ | প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষার প্রধান নিদর্শন হল বেদ

৪) প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষার একটি ধ্বনিতাত্ত্বিক এবং একটি রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য লেখ।
উঃ প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষার দুটি ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য হলো,
১)  প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষায় ঋ, এ,ঐ,ও,ঔ  প্রভৃতি স্বরধ্বনিগুলির বর্তমান ছিল।
একটি রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য হলো
১)  প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষায় বচন ছিল তিনটি যথা একবচন দ্বিবচন এবং বহুবচন

৫) নব্য ভারতীয় আর্য ভাষার দুটি ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য লেখ।
উঃ নব্য ভারতীয় আর্য ভাষার দুটি ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য হল-
১)  পদ মধ্যস্থ যুক্ত ব্যঞ্জন একক ব্যঞ্জনে পরিণত হয়েছে এবং সেই সঙ্গে তার পূর্ববর্তী হ্র স্বর ক্ষতিপূরণ বাবদ দীর্ঘস্বর হয়েছে যেমন কার্য>কজ্জ> কাজ ১) পদান্ত স্থিত স্বরধ্বনি নব্য ভারতীয় আর্য ভাষায় লোপ পেয়েছে অথবা বিকৃত হয়েছে যেমন-  রামঃ> রাম্

৬) প্রাচীন বাংলা ভাষার একটি রূপতাত্বিক এবং একটি ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য লেখ
উঃ প্রাচীন বাংলা ভাষার একটি ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য হলো- ১) পদের অন্তস্থিত স্বরধ্বনি বর্তমান ছিল যেমন- ভনতি>ভনই ২) প্রাচীন বাংলার পাশাপাশি অবস্থিত দুটি ব্যঞ্জনধ্বনির মাঝে শ্রুতিধ্বনি হিসেবে য় , ব ধ্বনি এসে গেছে। যেমন- নিকটে> নিঅডি>নিয়ড্ডি।
প্রাচীন বাংলা ভাষার একটি রূপতাত্বিক বৈশিষ্ট্য হলো- ১)  প্রাচীন বাংলা ভাষায় কর্তৃকারকে শূন্য বিভক্তি হয়। যেমন-পইঠো কাল। ২)  প্রাচীন বাংলায় সমাপিকা এবং অসমাপিকা এই দুই ক্রিয়ায় ছিল। যেমন- দেখিলো, করিব।

৭) I.PA বলতে কী বোঝো? এর সম্পূর্ণ কথা কি?
উঃ যে  সুনির্দিষ্ট ধ্বনি মূলক বর্ণমালার সাহায্যে সারা পৃথিবীর সমস্ত ভাষার ধ্বনি বা বর্ণমালার প্রতিরূপ স্থাপন করা যায়- তাকে আন্তর্জাতিক ধ্বনিমূলক বর্ণমালা বা আই.পি.এ বলা হয়। I.P.A এর সম্পূর্ণ নাম “International Phonetic Alphabets”.

1 thought on “বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি- বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস Class11 Bengali”

Leave a Comment

Discover more from Qবাংলা

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading